মু’মিন বান্দাদের সারাদিনের আমল ও ইবাদত

মু’মিন বান্দাদের সারাদিনের আমল ও ইবাদত

মাওলানা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দিন ক্বাদেরী>

মু’মিন মুসলমান ইহকালে শান্তি চাই এবং পরকালে চাই মুক্তি। তাই উভয় জগতে শান্তি ও মুক্তির জন্য আমাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় মাহবুব নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামার নির্দেশ পালন করতে হবে প্রতিটি মূহুর্তে। দুনিয়াবী সফলতার জন্য আমাদের পরিকল্পনা ও ব্যস্ততার অন্ত নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্ষেত-খামার, চাকুরীসহ আরো অনেক কিছু। কিন্তু প্রকৃত ও স্থায়ী সফলতা হচ্ছে পরকালের সফলতা। পরকালের সফলতার জন্য মূল অবলম্বন হচ্ছে কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত ইবাদত-বন্দেগী। যেমন: নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, যিকির, দোয়া-দরূদ, ইস্তেগফার, তাওবা, তাসবীহ, তাহলীল, কোরআন-হাদিস তিলাওয়াত ইত্যাদি। উভয় জগতে পরিপূর্ণ সফলতার জন্য প্রিয় নবীজির ব্যবহারিক জীবনের আমলসমূহ আমাদের জন্য একান্ত অনুসরণীয়। কোন শায়ের বলেন-
‘আমল ছে জিন্দেগী বন্তী হ্যায় জান্নাত ভী জাহান্নাম ভী,
ইয়ে খাকী আপনি ফিতরত মে না নূরী হ্যায় না না-রী।
অর্থাৎ আমল দ্বারা জীবন গঠিত হয়, তা জান্নাতী হোক বা জাহান্নামী হোক। জন্মগতভাবে এই শরীর নূরেরও নয়, নারেরও নয়। এ কথা সকলের নিকট সুষ্পষ্ট যে, বিশুদ্ধ ঈমান ছাড়া আমলের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই আল্লাহর কাছে। যেমনিভাবে একজন বেদ্বীন-বেঈমানের কোন আমল কোন মূল্য নেই আল্লাহর দরবারে। সুতরাং আমল বলতে খাঁটি ও নির্ভেজাল ঈমান সহকারে আমলই উদ্দেশ্য। আমাদের ঈমানে যেমন দূর্বলতা রয়েছে, আমলের দূর্বলতা আরো অধিক। ক্ষণস্থায়ী মানব জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত মণিমুক্তার চেয়েও অনেক মূল্যবান। তাই পার্থিব জীবনের মূল্যবান সময় অযথা নষ্ট না করে নেক আমলের মাধ্যমে নিজের জীবনকে সাজানোর মধ্যেই নিহিত রয়েছে উভয় জগতের প্রকৃত সফলতা। আলোচ্য পরিসরে মু’মিন বান্দাহদের সারাদিনের আমলের একটি নাতিদীর্ঘ তালিকা উপস্থাপনের প্রয়াস পাব।

ইবাদতপ্রিয় মু’মিন বান্দাহর সারাদিনের আমল ও ইবাদত
১. কষ্ট হলেও উত্তমরূপে ওযু করা
শারীরিক পবিত্রতা অর্জনের তিনটি মাধ্যম হলো- ওযু, গোসল ও তায়াম্মুম। ওযু হচ্ছে নামাযের চাবি, আর নামায হচ্ছে বেহেস্তের চাবি। কিয়ামতের দিন মু’মিনের ওযুর অঙ্গগুলো চকচক করবে। ওযুর পানির ফোটার সাথে সগীরা গুনাহসমূহ ঝরে যায়। নিয়মিতভাবে উত্তমরূপে ওযুকারী নামাযী বান্দাহকে হাশরের মাঠে আলাদাভাবে চেনে যাবে। সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকলে শয়তান সহজে পথভ্রষ্ট করতে পারে না। নামায আদায়ে বিলম্ব হয় না। সর্বোপরি মৃত্যুর সময় ঈমান নসীব হয়। ঘুমানোর পূর্বে ওযু করা সম্পর্কে নবীজি ইরশাদ করেন, ‘যখন তুমি ঘুমানোর ইচ্ছা করবে, তখন নামাযের ওযুর ন্যায় ওযু করে ডান কাত হয়ে শয়ন করবে।’ যে ব্যক্তি ওযু অবস্থায় ঘুমায় তার সাথে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে। অতঃপর সে ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে ফেরেশতাটি আল্লাহর কাছে আবেদন করে, হে আল্লাহ্! তোমার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দাও। কেননা, সে পবিত্রাবস্থায় ঘুমিয়েছিল।’

২. কালেমাসমূহ সকাল-সন্ধ্যা পাঠ করা
তাওহীদ ও রিসালতের স্বীকারোক্তি সম্বলিত ঈমানের কালেমাসমূহ সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ করলে ঈমান তাজা হয় এবং ঈমানীশক্তি বৃদ্ধি পায়। ঈমান তাজা ও শক্তিশালী থাকলে আমল করতে ভাল লাগে। ঈমানের কালেমাগুলো হলো- কালেমায়ে তাইয়্যেবা, কালেমায়ে শাহাদাত, কালেমায়ে তামজীদ, কালেমায়ে তাওহীদ, কালেমায়ে তামজীদ, কালেমায়ে রাদ্দে কুফর, ঈমানে মুজমাল ও ঈমানে মুফাসসাল। ঈমানদার মুসলামান পুরুষ-মহিলা সবাইকে ঈমানের এই কালেমাগুলো অবশ্যই চর্চা করতে হবে।

৩. সকাল-সন্ধ্যা ইস্তেগফার ও তাওবা করা
সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার ও তাওবা করলে অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন: দো‘আ বেশি কবুল হয়, গুনাহ মাফ হয়, রিযিক প্রশস্ত হয়, আল্লাহর শাস্তি ও অনেক বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রিয় নবীজি নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও দৈনিক ৭০ থেকে ১০০ বার ইস্তিগফার ও তওবা করতেন উম্মতের শিক্ষার জন্য। তাই উম্মত হিসাবে নবীজির আমল থেকে আমাদেরকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

৪. যথাসময়ে ফরজ ও সুন্নাত নামায আদায় করা
প্রাপ্ত বয়স্ক সকল নর-নারীকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায যথা সময়ে অবশ্যই আদায় করতে হবে। তাছাড়া ফজর নামাযের ফরযের আগে দুই রাকা‘আত, জোহর নামাযের ফরযের আগে চার রাকা’আত ও পরে দুই রাকা‘আত, মাগরিব নামাযের ফরযের পর দুই রাকা‘আত, এশার নামাযের ফরযের পর দুই রাকা‘আত সুন্নাত নামায আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। যা ওয়াজিবের কাছাকাছি বিধায় আদায় করতে হবে।

৫. অধিক পরিমাণে নফল নামায আদায় করা
প্রতিদিন ফরজ ও সুন্নাত নামাযের পর যতটুকু সম্ভব নফল নামায আদায় করা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সহজ মাধ্যম। যেমন: তাহিয়্যাতুল ওযুর নামায, তাহিয়্যাতুল মসজিদ/দুখুলুল মসজিদ এর নামায, তাওবার নামায, আওয়াবীনের নামায, ইশরাকের নামায, দোহা বা চাশতের নামায, তাহাজ্জুদের নামায, সালাতুত তাসবীহ, সালাতুল ইস্তাখারা, সালাতুল হাজত, সালাতুল খাইর, সালাতুল আছরার, সালাতু হেফজিল ঈমান ইত্যাদি। মাগরিবের ফরয ও সুন্নাত নামাযের পর এক নিয়তে দুই রাকা‘আত করে তিন নিয়তে মোট ছয় রাকা‘আত নামায ‘সালাতুল আউয়াবীন’ আদায় করা। ‘তাহাজ্জুদ নামায’ ভোর রাতের নামায। তাহাজ্জুদ নামাযের সময় আল্লাহর কাছে দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়। এ সময় আল্লাহ পাক বান্দাহর খুব নিকটে আসেন। নবীজি ইরশাদ করেন, “যে মুসলমান উত্তমরূপে ওযু করার পর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি তার প্রতি নিবিষ্ট রেখে দুই রাকা‘আত ‘তাহিয়্যাতুল ওযু’র নামায আদায় করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।” তাছাড়া নফল ইবাদত কিয়ামতের দিন ফরযের ঘাটতি পূরণ করবে।

৬. ‘উমরী কাযা’ এর নামায আদায় করা
জীবনে অনেক ফরয বিভিন্ন কারণে আদায় করা হয়নি। জীবনে ছুটে যাওয়া এই নামাযগুলো আদায়ের উপায় কী? এই জিজ্ঞাসা অনেকের। ইসলামী শরীয়তের আইন বিশারদগণ-এর সহজ সমাধান দিয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি ওয়াক্ত ফরয নামায আদায়ের পূর্বে বা পরে এক ওয়াক্ত ফরয নামায কাযা আদায় করে নেয়া যায়। এভাবে দৈনিক পাঁচবারে পাঁচ ওয়াক্ত উমরী কাযা বা জীবনে ছুটে যাওয়া নামায আদায়ের সহজ সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে পারি।

৭. ফরয নামাযের পর যিকির করা
প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর ‘সুবহা-নাল্লাহ’্, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ এই তিনটি যিকির ৩৩ বার অথবা ১০ বার করে পড়তে হবে। উভয় বর্ণনা হাদিস শরীফে এসেছে। ৩৩ বা ১০ যেটাই হোক, নিয়মিত আমল করতে হবে। অনিয়মিত ৩৩ এর চেয়ে নিয়মিত ১০ অনেক ভালো। যিকির আত্মার প্রশান্তি আনে। যিকির আত্মার খোরাক। যে আল্লাহর যিকির করে আল্লাহও তার যিকির করেন। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাযের পর নিচের দোয়াটি ১ বার পাঠ করাও বিশেষ ফযিলতের আমল।
اللهم أَعِنِّي عَلى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আ‘ঈন্নী ‘আলা যিকরিয়কা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা।

৮. ফরজ নামাযের পর এবং ঘুমানোর পূর্বে ‘আয়াতুল কুরছি তিলাওয়াত করা
নবীজি ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরছি পাঠ করে তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাঁধা থাকে না।
اَللهُ لَاإِلَهَ إِلَّاهُوَالْحَيُّ الْقَيُّومُ لَاتَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَانَوْمٌ لَهُ مَافِي السَّمَاوَاتِ وَمَافِي الْأَرْضِ مَنْ ذَاالَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّابِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَابَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَاخَلْفَهُمْ وَلَايُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّابِمَاشَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَايَئُودُهُ حِفْظُهُمَاوَهُوَالْعَلِيُّ الْعَظِيمُ-

৯. ফজর ও আসর নামাযের পর সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তিলাওয়াত করা
هُوَ اللهُ الَّذِي لَاإِلَهَ إِلَّاهُوَعَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ.هُوَاللهُ الَّذِي لَاإِلَهَ إِلَّاهُوَالْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُالْجَبَّارُالْمُتَكَبِّرُسُبْحَانَ اللهِ عَمَّايُشْرِكُونَ.هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُلَهُ الْأَسْمَاءُالْحُسْنَ ىيُسَبِّحُ لَهُ مَافِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَالْعَزِيزُالْحَكِيمُ-

১০. রাতে ঘুমানোর পূর্বে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস তিলাওয়াত করা
রাতে ঘুমানোর পূর্বে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস তিলাওয়াত করা অনেক উপকারী। নবীজি প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর উভয় হাতে ফুঁক দিতেন এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়তেন। তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমন্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন। এতে অনিষ্টকারী জ্বীন ও শয়তানের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

১১. রাতে ঘুমানোর পূর্বে সুরা বাক্বারার শেষ আয়াত দুটি তিলাওয়াত করা
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَاأُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَانُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍمِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَعْنَاوَأَطَعْنَاغُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ.لَايُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًاإِلَّاوُسْعَهَالَهَامَاكَسَبَتْ وَعَلَيْهَامَااكْتَسَبَتْ. رَبَّنَا لَاتُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْأَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلَاتَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًاكَمَاحَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَاتُحَمِّلْنَا مَالَا طَاقَةَلَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْلَنَا وَارْحَمْنَاأَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ-
নবীজি ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি রাতের বেলায় সুরা বাক্বারার শেষের আয়াত দুইটি তিলাওয়াত করবে সেটা তার জন্য যথেষ্ট।”

১২. ফজর ও মাগরিব নামাযের পর সূরা তাওবার শেষ আয়াত দুটি তিলাওয়াত করা
ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর ৭ বার সুরা তাওবার শেষ আয়াত দুটি তিলাওয়াত করলে আল্লাহ্ তার সকল চিন্তা, উৎকণ্ঠা ও সমস্যা মিটিয়ে দিবেন।
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيْصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ-

১৩. নিয়মিত কুরআন মজিদ তিলাওয়াত করা
কুরআন মজিদ তিলাওয়াতে প্রতিটি হরফের বিনিময়ে ১০টি সওয়াব বরাদ্দ আছে। ফজর নামাযের পর অন্তত: ৫/১০ মিনিট কুরআন মজিদ তিলাওয়াত করা উচিত। দেখে দেখে তিলাওয়াতের সময় না থাকলে মুখস্ত আয়াত ও সূরা তিলাওয়াত করা যায়। দিনরাত ২৪ ঘন্টার মধ্যে নামায ব্যতীত কমপক্ষে ৩০ আয়াত তিলাওয়াতে অনেক সওয়াব রয়েছে। রাতে ঘুমানোর পূর্বে ‘সূরা মুলুক’ তিলাওয়াতে অনেক ফযিলতের কথা হাদিস শরীফে বর্ণিত রয়েছে। নবীজি ইরশাদ করেন ‘‘পবিত্র কুরআনে ৩০ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে, যা তার তিলাওয়াতকারীকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত তার জন্য সুপারিশ করতে থাকবে।” সূরাটি হলো সূরা মুলুক, যা নবীজি ঘুমানোর আগে কখনোই বাদ দিতেন না। বিশেষত: সূরা ইয়াছিন, সূরা আর রাহমান, সূরা মুলুক, সূরা ওয়াকেয়া ইত্যাদি বিশেষ ফযিলতপূর্ণ সূরাগুলো তিলাওয়াত করা।

১৪. নিয়মিত দরূদ শরীফ পাঠ করা
সকাল সন্ধ্যা সব সময় দরূদ শরীফ পাঠ করা ইবাদত ও দো‘আ কবুলের অন্যতম উসিলা। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দরূদ শরীফ হলো-

১. দরূদে শেফা
اللهم صَلِّ عَلى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَ عَلَى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ بِعَدَدِ كُلِّ دَاءٍ وَدَوَاءٍ وَبِعَدَدِ كُلِّ عِلَّةٍ وَّشِفَاءٍ وَ بَارِكْ وَسَلِّمْ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়িদিনা মুহাম্মাদিওঁ ওয়াআলা আলে সাইয়িদিনা মুহাম্মাদিন বিআদাদি কুল্লি দায়িন ওয়া দাওয়া ওয়া বিআদাদি কুল্লি ইল্লাতিন ওয়া শিফা ওয়া বারিক ওয়া সাল্লিম।

২. দরূদে তুনাজ্জিনা
اَللهم صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلوةً تُنَجِّيْنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ الْأَهْوَالِ وَالآفَاتِ وَتَقْضِيْ لَنَا بِهَا جَمِيْعَ الْحَاجَاتِ وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيْعِ السَّيِّئَاتِ وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ أَعْلَى الدَّرَجَاتِ وَتُبَلِّغُنَا بِهَا أَقْصَى الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيْعِ الْخَيْرَاتِ فِيْ الْحَيَاةِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ إِنَّكَ عَلَى كُّلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٌ.
৩. দরূদে নারিয়া/কামিলা
اَللّٰهُمَّ صَلِّ صَلَوةً كاَمِلَةً وَسَلِّمْ سَلَامًا تَامًّا عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدِنِ الذَّيْ تَنْحَلُّ بِهِ الْعُقَدُ وَتَنْفَرِجُ بِهِ الْكُرَبُ وَتُقْضَى بِهِ الْحَوَائِجُ وَتُنَالُ بِهِ الرَّغَائِبُ وَحُسْنُ الْخَوَاتِيْمِ وَيُسْتَسْقَى الْغَمَامُ بِوَجْهِهِ الْكَرِيِمِ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ فِيْ كُلِّ لَمْحَةٍ وَنَفَسٍ بِعَدَدِ كُلِّ مَعْلُوْمٍ لَكَ.
১৫. দরূদ শরীফসহ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত আযানের দো‘আ পাঠ করা
প্রিয় নবীজি ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আজানের পর আল্লাহুম্মা রব্বা হা-যিহিদ দাওয়াতিত তা-ম্মাহ’ এ দো‘আটি পাঠ করবে, তার জন্য আখিরাতে আমার সুপারিশ অবধারিত।’ দরূদ শরীফ সহ আযানের দো‘আ নিম্নরূপ:
اللهم صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَ عَلَى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّ بَارِكْ وَ سَلِّمْ. اللهم رَبَّ هذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ القَائِمَةِ آتِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدَنِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَالدَّرَجَةَ الرَّفِيْعَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُوْدَ نِ الَّذِيْ وَعَدْتَه وَارْزُقْنَا شَفَاعَتَه يَوْمَ الًقِيَامَةِ إِنَّكَ لَآ تُخْلِفُ الْمِيْعَادِ.

১৬. শরীয়তের আমলের পাশাপাশি “তরিকতের সবক” আদায় করা
সিলসিলায়ে কাদেরিয়ার সবক নিম্নরূপ:
ফযরের নামাযের পর পুরুষের জন্য: ১. দরূদ শরীফ ১০০ বার। ২. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র যিকির ২০০ বার ৩.‘ইল্লাল্লাহ’র যিকির ২০০ বার ৪. ‘আল্লাহু’র যিকির ২০০ বার।

মহিলার জন্য: ১. দরূদ শরীফ ১০০ বার। এশার নামাযের পর পুরুষের জন্য: ১. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র যিকির ২০০ বার ২.‘ইল্লাল্লাহ’র যিকির ২০০ বার ৩.‘আল্লাহু’র যিকির ২০০ বার। মহিলার জন্য: ২. প্রত্যেকবার ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ সহকারে ‘কালেমায়ে ত্বায়্যিবাহ’র যিকির ১০০ বার।
لَآ إلهَ إِلَّا اللهُ مُحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ. উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ।

১৭. প্রতি সপ্তাহের সোমবার, বৃহস্পতিবার এবং প্রতি মাসে আইয়্যামে বীযের রোযা রাখা
প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখা নবীজির নিয়মিত আমল ছিল এবং তিনি প্রতি চাঁদের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ আইয়্যামে বীযের রোযা রাখতেন। এই রোযা হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম-এর সুন্নাত। অন্যান্য নফল রোযা হলো- শাওয়াল মাসের ছয় রোযা, আশুরার রোযা, শা‘বান মাসের রোযা, জিলহজ্ব মাসে আরাফার দিনের রোযা ইত্যাদি।

১৮. নিয়মিত দান-সাদকা করা
কুরআন-হাদিসে দানের অনেক ফযিলত রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় দিনে অন্তত এক টাকা হলেও দান করা প্রয়োজন। দানের কারণে অনেক বিপদাপদ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। দানের জন্য ধনী হওয়ার প্রয়োজন নেই। সামর্থ্য অনুযায়ী অল্প দানই যথেষ্ট।

১৯. দৈনিক ১০০ বার করে নিম্মোল্লিখিত যিকির করা
দৈনিক ১০০ বার করে ‘সুবহানাল্লাহ’ ও ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম’ পাঠ করার মধ্যে রয়েছে অনেক ফযিলত। প্রতিদিন ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’্ পাঠ করলে ১,০০০ সাওয়াব লিখা হয় এবং ১,০০০ গুনাহ ক্ষমা করা হয়। যে ব্যক্তি প্রতিদিন ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ ১০০ বার পাঠ করবে সমূদ্রের ফেনা পরিমাণ (সগীরা) গুনাহ থাকলেও তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে।

২০. সকাল-সন্ধ্যা প্রদত্ত দো‘আগুলো পাঠ করা
رَضِيْتُ بِاللهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِيْنًا وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّىاللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا وَّ رَسُوْلًا.
بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لَايَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْئٌ فِيْ الْأَرْضِ وَلَا فِيْ السَّمَاءِ وَ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় ৩ বার করে উক্ত দো‘আটি পাঠ করবে, আল্লাহ পাকের দায়িত্ব হয়ে যায় কিয়ামতের দিন তাকে সন্তুষ্ট করা।

২১. আল্লাহর কাছে দো‘আ-মুনাজাত করা
আল্লাহর কাছে যে কোন জায়েজ হাজত পূরণের জন্য কায়মনোবাক্যে দো‘আ-মুনাজাত করা। কয়েকটি দো‘আ-মুনাজাত নিম্নরূপ:
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ۝ رَبَّنَا آتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّ فِىْ الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ۝ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَماَ رَبَّيَانِى صَغِيْرًا۝

লেখক: মুহাদ্দিস, গহিরা এফ. কে. জামেউল উলূম বহুমুখী কামিল মাদরাসা, রাউজান, চট্টগ্রাম।

Share:

1 Comment

  1. Chowdhury

    Says Jumada Al Oula 15, 1445 at 4:56 am

    জাজাক আল্লাহ। আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উছিলায় আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুক।আমিন

Leave Your Comment