মাহে রবিউস্ সানী মাসের ফযায়েল ও আমল

মাহে রবিউস্ সানী মাসের ফযায়েল ও আমল

ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম‘র মাস রবিউল আউয়াল এসে পুনরায় চলে গেছে, কিন্তু আমরা এ মহান মাসে নিজেদের অক্ষমতা, দুর্বলতা, ব্যর্থতা ও হতাশা দুরীভূত করার কোন কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারিনি। তাই নয় শুধু, আমাদের ব্যর্থতা সম্পর্কে নিজেদের কোন অনুভূতি আছে বলেও মনে হয়না।
আমরা নবীর উম্মত বলে জোর গলায় বলতে পারি কিন্তু তার অনুবর্তন, অনুসরণ ও আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার বিন্দুমাত্র গরজও পরিলক্ষিত হয় না। সত্যিকারভাবে বলতে গেলে আজ মুসলমানগণ ভোগবাদে নিজেদের অস্তিত্বকে বিলীন করে সর্বনাশের পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। যে জাতি পৃথিবীর বুকে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও নৈতিক ক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্য, সুশৃংখল, শক্তিশালি জাতি হিসেবে মহান আদর্শ নিয়ে মানব জাতির নেতৃত্ব প্রদান করেছিল। সে জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য বিধর্মীরা কি সুকৌশলে অগ্রসরমান তা কি আমাদের কাছে খোলাসা হয় না?
মধ্যপ্রাচ্যের অঢেল বিত্তকে বিলাসিতা আর অচল অস্ত্রের পেছনে ব্যয় করতে সাম্রাজ্যবাদী ইহুদী-নাসারাসহ অমুসলিম শক্তিসমূহ কতো রকম যে ফন্দি করে তাতেও আমাদের বোধ হয়না।
আমাদের সামগ্রিক জীবনের সঙ্কট, সমস্যা ও দুর্দশা দুরীভূত করার জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম‘র কালজয়ী জীবনাদর্শের অনুসরণ এবং আউলিয়া কেরামের জীবনবোধ সম্পর্কে চর্চার কোন বিকল্প নেই।
এই জীবনবোধ সম্পর্কে চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমে অন্তরে যে খোদাভীতি সৃষ্টি হবে তাতে আমরা ভোগবাদী মনোবৃত্তিকে পরিহার করে নিজেদের আদর্শকে বিশ্বমাঝে সত্যিকারভাবে প্রতিষ্ঠিত করার উপযুক্তরূপে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।

এ মাসের নফল এবাদত
২৫ ও ২৯ তারিখ এশার নামাযের পর দুই রাকাত বিশিষ্ট চার রাকাত নামায আদায় করার জন্য অনেক বুজুর্গানে দ্বীন উৎসাহিত করেছেন, যাতে অনেক কল্যাণ নিহিত।
এর প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে পাঁচবার সূরা ইখলাস দ্বারা এ নামায আদায় করবেন। অন্যান্য রাতেও অধিকহারে দরূদ শরীফ, তিলাওয়াত ও নফল নামায আদায়ান্তে গুনাহ্র ক্ষমা প্রার্থনা এবং বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য ও সংহতির দোয়া করবেন।
সব সময় পবিত্র অবস্থায় বেশি বেশি দরূদ শরীফ পড়লে বেশুমার ফযিলত অর্জন হবে। রিজিক বৃদ্ধি হবে, অভাব দূর হবে, ঋণ গ্রস্থ হতে মুক্ত হবে, পরিবার পরিজনের আশা পুরণ হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নতি হবে।
বিশেষত: ১১তারিখ খতমে গাউসিয়া, গাউসে পাকের জীবনী আলোচনা, ওয়াজ মাহফিল এবং গরীব মিসকীনগণকে আহার করানোর ব্যবস্থা করে তার সাওয়াব গাউসে পাকের প্রতি প্রেরণের দু‘আ করা অতঃপর নিজের জন্য, দেশ ও জাতির জন্য বিশেষ মুনাজাত করবেন।

এ মাসে ওফাতপ্রাপ্ত ক‘জন আউলিয়া-ই কেরাম
১ রবিউস্ সানী: ইমাম বায়হাকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ৪৫৮ হিজরী।
৩ রবিউস্ সানী: খাজা হাবীব আজমী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি।
৭ রবিউস্ সানী: ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ১৭৯ হিজরী।
১১ রবিউস্ সানী: গাউসুল আজম আবদুল ক্বাদের জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ৫৬১ হিজরী।
১২ রবিউস্ সানী: শায়খ মহিউদ্দীন ইবনে আরবী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ৬৩৮ হিজরী।
১৮ রবিউস্ সানী: মাহবূবে ইলাহী খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ৭২৫ হিজরী।
১১ রবিউস্ সানী: হযরত সাইয়্যেদাহ বেগম (মাইসাহেবা) রাহমাতুল্লাহি আলায়হা।
[হুযূর কেবলা আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর আম্মাজান]
আগামী চাঁদ : মাহে জমাদিউল আউয়াল

এ মাসের নফল এবাদত
এ মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আপন সাহাবীগণকে নিয়ে বাদ মাগরীব বিশ রাকাত নফল নামায আদায় করেছেন বলে বর্ণিত রয়েছে।
দশবারে দুই রাকাত বিশিষ্ট বিশ রাকাত নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা ইখলাস পাঠ করা উত্তম। নামায শেষ করে ১০০ বার নিম্ন বর্ণিত দরূদ শরীফ পাঠ করবেন।
দুরূদ শরীফ
আল্লাহুম্মা সাল্লি আ‘লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিঁও ওয়া আ‘লা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লায়তা আ‘লা ইব্রাহীমা ওয়া আ‘লা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।
অতঃপর বিনয়ের সাথে আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন। এছাড়া এ মাসে অধিক হারে তিলাওয়াতে ক্বোরআন, দরূদ শরীফ পাঠ, তাহাজ্জুদ এবং অন্যান্য সুন্নাত ও নফল এবাদতের মাধ্যমে খোদার দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা ও তাওবা করবেন। বিশেষ করে এ মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোযা পালনের চেষ্টা করবেন। হে আল্লাহ্! আমাদের সবার্ঙ্গীণ সাফল্য সমৃদ্ধি ও কল্যাণের জন্য এ মাসের প্রতিটি মুহূর্ত যথাযথভাবে তোমার নির্দেশানুযায়ী চলার তাওফীক দান করুন।