সাদকায়ে জারিয়া প্রসঙ্গে

সাদকায়ে জারিয়া প্রসঙ্গে

অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভি

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ مِمَّا يَلْحَقُ الْمُؤْمِنَ مِنْ عَمَلِهِ وَحَسَنَاتِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ عِلْمًا عَلَّمَهُ وَنَشَرَهُ، وَوَلَدًا صَالِحًا تَرَكَهُ، أَوْ مُصْحَفًا وَرَّثَهُ، أَوْ مَسْجِدًا بَنَاهُ، أَوْ بَيْتًا لابْنِ السَّبِيلِ بَنَاهُ، أَوْ نَهْرًا أَجْرَاهُ، أَوْ صَدَقَة أَخْرَجَهَا مِنْ مَالِهِ فِي صِحَّتِهِ وَحَيَاتِهِ يَلْحَقُهُ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِ “(رَوَاهُ اِبْنُ مَاجَه)

অনুবাদ : হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই মু’মিনদের মৃত্যুর পর তাদের যে উত্তম আমলগুলো আমলনামায় যুক্ত হবে তা হলো, এমন ইলম যা সে শিখেছে এবং তা প্রচার প্রসার করেছে অথবা কোনো নেককার সন্তান রেখে গেছে, অথবা কুরআন বা কিতাব কাউকে দান করেছে অথবা মসজিদ নির্মাণ করেছে, অথবা মুসাফিরদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করেছে, অথবা প্রবহমান নালা খনন করেছে, অথবা সুস্থ ও জীবিত অবস্থায় তার ধন সম্পদ থেকে দান সাদকা করেছে এগুলোর সওয়াব মৃত্যুর পরও তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। [ইবনে মাযাহ, মুকাদ্দিমা, বাব ২০, হাদীস নম্বর ২৪২]

রাবী পরিচিতি-
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু, হাদীস বিশারদদের নিকট তার প্রকৃত নাম ও বংশের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে প্রসিদ্ধ মতে ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তাঁর নাম ছিল আবদে শামস বা আবদে আমর। ইসলাম গ্রহণের পর নাম রাখা হয়েছে আবদুল্লাহ্ বা আবদুর রহমান, বংশের নাম, দাওস, তাঁকে দাওসীও বলা হয়। উপনাম: আবু হুরায়রা, পিতার নাম সখর, মাতার নাম মায়মুনা। মূল নামের চেয়ে উপনামেই তিনি অধিক খ্যাত, আরবিতে আবু অর্থ পিতা, হুরায়রা অর্থ বিড়াল ছানা, আবু হুরায়রা অর্থ বিড়াল ছানার পিতা। কথিত আছে, তিনি আদর করে একটি বিড়াল ছানা পুষতেন। একদিন রাসূলুল্লাহর সামনে তাঁর চাদরের ভেতর থেকে বিড়াল ছানাটি বেরিয়ে আসে, তা দেখে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁকে রসিকতা করে আবু হুরায়রা তথা বিড়ালছানার পিতা বলে সম্বোধন করেছিলেন, তখন থেকেই তিনি এ উপনামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি হিজরতের প্রায় ২২/২৩ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন, সপ্তম হিজরি মোতাবেক ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে খায়বার যুদ্ধের বছর ৩৪ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত তোফাইল ইবনে আমর আদদাওসীর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি সর্বদা রসূলুল্লাহর সাহচর্যে থাকতেন। রসূলুল্লাহ্র সাথে সকল যুদ্ধেই তিনি অংশগ্রহণ করেন। রসূলুল্লাহর দোয়ার বরকতে তিনি অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন। নিজের ব্যাপারে বলেছেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি আপনার নিকট যা কিছু শ্রবণ করি সবকিছু স্মরণ রাখতে পারিনা। রসূলুল্লাহ্ এরশাদ করলেন, হে আবু হুরায়রা তোমার চাদরখানা প্রসারিত কর। আমি প্রসারিত করলাম। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাতে দুআ করেন। এরপর আমি যা কিছু শুনতাম আর ভুলতাম না। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে হাজর আসকালানীর মতে তিনি তার সামসময়িকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হাফিজে হাদীস ছিলেন। ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন প্রায় ৮০০ সাহাবী এবং তাবিঈ এর নিকট থেকে তিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনিই সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ৫৩৭৪টি। তন্মধ্যে মুত্তাফাক আলায়হি হাদীস ৩২৫টি। বোখারীতে ৭৯টি। মুসলিমে ৯৩টি হাদীস স্থান পেয়েছে। তিনি মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরি ৫৭ সালে ৭৮ বছর বয়সে ওফাতপ্রাপ্ত হন। হাদীস শাস্ত্রে এ মহান সাহাবীর অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
[সূত্র. মিরআতুল মানাজীহ, ১ম খন্ড. পৃ. ২৪]
প্রাসঙ্গিক আলোচনা-
বর্ণিত হাদীস শরীফে কতগুলো উত্তমকাজ যা সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে পরিগণিত তার বর্ণনা আলোকপাত হয়েছে, মুসলমানদের জন্য ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে এমন কতগুলো আমল বা মহৎকর্ম রয়েছে যা সম্পাদন করলে জাগতিকভাবে যেমন উপকৃত হওয়া যায় তেমনিভাবে এ কাজগুলো পুণ্যময় আমল হওয়ার কারণে এগুলোর সওয়াব মৃত্যুরপরও অব্যাহতভাবে কবরের জগতে ও পরকালে মৃত ব্যক্তির কল্যাণে পৌঁছতে থাকবে। কুরআন ও সুন্নাহর অসংখ্য আয়াত ও বর্ণনায় সাদকাহ শব্দটি এসেছে, এতদবিষয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও সাদকায়ে জারিয়ার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও উপকারিতা সম্পর্কিত কতিপয় হাদীস উপস্থাপন করার প্রয়াস পাব। আরবীতেصدقة جارية বাক্যটি দু’টি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। প্রথমটি صدقة দ্বিতীয়টি جارية ।
শাব্দিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সাদকাহ্ শব্দটি আরবী সিদকুন শব্দ থেকে নির্গত। এর অর্থ হলো সততা, সত্যবাদিতা, সত্য কথা বলা, প্রচলিত অর্থে ভিক্ষা দান, অনুদান, খায়রাত বিবিধ অর্থে ব্যবহৃত। মুসলমানদের অন্তরে ধর্মের প্রতি যে সত্য বিশ্বাস আছে, তার প্রমাণ ও প্রতিফলন ঘটে থাকে দান সাদকার মাধ্যমে, সাদকাহ’র অর্থ প্রসঙ্গে আল্লামা মুফতি আমীমুল ইহসান রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর রচিত কাওয়ায়েদুল ফিক্বহ্ গ্রন্থে বলেন- هى العطية التى تبتغى بها المتوبة من الله تعالى অর্থাৎ: মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পুণ্য লাভের আশায় যা দান করা হয় তা সাদকাহ্।
কোন ব্যক্তি, যখন জনকল্যাণ ও সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ডে নিজকে নিয়োজিত রাখে জীবদ্দশায় মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাবে, মানুষ তা থেকে উপকার ও কল্যাণ ভোগ করতে থাকবে।
যেমন, রাস্তাঘাট, সেতু কালভার্ট নির্মাণ করা, মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, হেফজখানা, মুসাফিরখানা, আশ্রয় কেন্দ্র, বিশ্রামাগার নির্মাণ করা, যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা, অসহায়, দুস্থ মানবতার জন্য দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করা, গণ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা, মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত কবরস্থান প্রতিষ্ঠা করা, এভাবে দ্বীনি ইলম অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও কিতাবপত্র দান করা, অভাবগ্রস্ত অসহায় লোকদেরকে অর্থ সহায়তা দিয়ে সহযোগিতা করা, চলার পথে পিপাসার্ত পথিকদের পিপাসা নিবারণে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা, টিউবওয়েল স্থাপন করা, বেওয়ারিশ লাশের কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি সেবামূলক কর্মকান্ড, সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। নেক্কার পরহেজগার সন্তান-সন্তুতি পিতা-মাতার জন্য দুআ করা, ঈসালে সাওয়াব করা, কবর জিয়ারত করা, গরীব মিসকিন দুস্থ মানুষদের জন্য খাবারের আয়োজন করা, সাদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। এসব মহৎকাজে আত্মনিয়োগকারী বান্দারা মৃত্যুর পরও তাঁদের এসব নেক আমলের মাধ্যমে বান্দারা সাদকায়ে জারিয়ার সওয়াব পরকালেও পেতে থাকবে। এ পুণ্যময় আমলের কারণে তাদের উত্তরসূরিরাও ইহকাল ও পরকালে সম্মানিত হবে। মুসলমান ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে কথা বলা এটিও সাদকাহ্।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
تبشمك في وجه أخيك لك صدقة وأمرك بالمعروف ونهيك عن المنكر صدقة وإرشادك الرجل في أرض الضلال لك صدقة ونصرك الرجل الردّى البصر لك صدقة واما طتك الحجر والشوك والعظم عن الطريق لك صدقة وإفراغك من دلوك في دلو أخيك لك صدقة (رواه الترمذى)
হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত উপরোক্ত হাদিসে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমার ভাইয়ের সাক্ষাৎ হলে মুসকি হেসে মিলিত হওয়া এটিও সাদকাহ। কাউকে ভাল কাজের আদেশ করা এটিও সাদকাহ। কাউকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা, নিষেধ করা এটিও সাদকাহ্, পথ হারানো মানুষকে পথের সন্ধান দেওয়া, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী লোককে সাহায্য করা, পথের পাথর, কাঁটা ও হাড় (অর্থাৎ কষ্টদায়ক বস্তু) পথ থেকে সরিয়ে ফেলা এগুলোও তোমার জন্য সাদকা, তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের বালতিতে পানি ঢেলে দেওয়া এটাও তোমার জন্য সাদকা। [তিরমিযী]
উপরোক্ত হাদীস শরীফে মানবজাতির জন্য জীবন চলার পথে মানবতার কল্যাণে, অন্য ভাইয়ের জীবন যাত্রাকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ রাখা ও অপরের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল ও কল্যাণ কামনায় নিজকে নিবেদিত করার মহান শিক্ষা ও নির্দেশনা রয়েছে। আজকের সমাজে অধিকাংশ মুসলিম পরিবারগুলোতে ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের সম্পর্কের অবনতি লক্ষ্য করা যায়। এমনকি অনেক পরিবারে মুসলিম ভাই তো দূরে থাক, আপন সহোদর ভাইবোন পর্যন্ত নিজেদের পারিবারিক অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। হৃদ্যতা ভ্রাতৃত্ববোধ ও ভালোবাসার বন্ধন ক্রমশ লুপ্ত হতে চলেছে। নিজের ভাইয়ের সুখে দুঃখে আপদে বিপদে, অভাব অনটনে, সাড়া দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার এ মহান ইসলামী আদর্শ ও শিক্ষার কথা আমরা আজ ভুলতে বসেছি। সমাজের বিপথগামী সত্যচ‚্যত নষ্ট মানুষগুলোকে সৎ উপদেশের মাধ্যমে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার মহান ব্রতে ভালকাজে তাদেরকে আকৃষ্ট করা, উদ্বুদ্ধ করা, প্রেরণা দেওয়া, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা এটিও সদকায়ে জায়িার অন্তর্ভুক্ত।

মসজিদ নির্মাণ সাদকায়ে জারিয়া-
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, সুনাম ও খ্যাতি অর্জনের জন্য নয়, প্রতিযোগিতামূলক প্রদর্শনীর জন্য নয়, একমাত্র সওয়াবের নিয়তে ইখলাস নিয়ে যে ব্যক্তির উদ্যোগে অথবা সম্মিলিত উদ্যোগে যে মসজিদ নির্মাণ করা হবে, অথবা নির্মাণ কাজে যারা অর্থ সহায়তা দেবে, মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ সংস্কার ও সৌন্দর্যবৃদ্ধি ও সম্প্রসারণে যারা উদ্যোগ গ্রহণ করবে, উদ্যোগ বাস্তবায়নে সার্বিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে, তাও সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে গণ্য হবে।
হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে-
وعن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول من بنى مسجدا الله مسجدًا يذكر فيه اسم الله بنى الله له بيتا في الجنة (مسند احمد)
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাঁর যিকর করার জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ্ তাঁর জন্য বেহেশতে একটি ঘর নির্মাণ করবে। [সূত্র. মুসনাদ আহমদ, ১ম খন্ড, হাদীস নম্বর ১২৬]
হাদীস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে-
عن عثمان بن عفان رضى الله عنه يقول وانى سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول من بنى مسجدًا يبتغى به وجه الله بنى الله له مثله فى الجنة (رواه البخارى)
হযরত ওসমান ইবনে আফফান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন। [বোখারী শরীফ]

কুপ খনন ও পানির ব্যবস্থাকরণ উত্তম সাদকাহ্
পিতামাতা ও ঘনিষ্টজনের মৃত্যুর পর ইসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে ক‚প খনন ও পানি পানের ব্যবস্থা করা উত্তম সাদকাহ্ হিসেবে নিম্নে বর্ণিত হাদিস শরীফে এরশাদ হয়েছে-
عن سعد بن عبادة رضى الله عنه انه قال : يا رسول الله ان ام سعد ماتت فاى الصدقة افضل قال الماء ـ قال فحفر بئرًا وقال هذه لام سعد (رواه ابوداود)
হযরত সা’দ বিন উবাদাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! সা’দের মা ইন্তেকাল করেছে, কোন বস্তু সাদকাহ্ করা উত্তম হবে? তিনি এরশাদ করলেন, পানি। অতঃপর তিনি ক‚ফ খনন করলেন, এবং বললেন এটি সা’দের মায়ের জন্য।
[সূত্র. সুনানে আবু দাউদ, ১ম খন্ড, পৃ. ৩৪৬]
হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মুসলমানদের পানি সংকট দূর করার জন্য জনৈক ইয়াহুদি থেকে রওমা নামক কুপ ক্রয় করে মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। আজকের সমাজেও বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি সমস্যা প্রকট। এ সমস্যা নিরসনে পিতা-মাতা, আত্মীয় স্বজন, পীর-মুর্শিদ ও বুযুর্গানে দ্বীনের ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে মসজিদ মাদ্রাসা অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈদ্যুতিক ওয়াটার কুলার স্থাপন ও টিউবওয়েল স্থাপনের মাধ্যমে সাদকায়ে জারিয়ার সওয়াব অর্জনের সুযোগ লাভ করা যায়।

জীবদ্দশায় সাদকা করা অধিক উত্তম
হযরত আবু সাঈদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত
রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
لان يتصدق المرء فى حيوته خير له من ان يتصدق بمائة عنه موته (رواه ابوداود)
কোন ব্যক্তির জীবদ্দশায় এক দিরহাম দান করা মৃত্যুকালে একশ দিরহাম সাদকাহ্ করার চেয়ে উত্তম। [আবু দাউদ]

বৃক্ষরোপন করাও সাদকায়ে জারিয়া
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
ما من مسلم يغرس غرسًا اويزرع ذرعًا فيا كل منه انسان اوطير او بهيمة الا ك انت له صدقة وما سرق منه له صدقة
যে মুসলমান কোনো বৃক্ষরোপন করল বা কোন শস্য বপন করল, তারপর তা থেকে কোন মানুষ, প্রাণি বা জীবজন্তু ভক্ষণ করলো তাও ঐ ব্যক্তির জন্য সাদকাহ্ হবে।
আল্লাহ্ আমাদেরকে সাদকায়ে জারিয়ার আমল করার তাওফিক নসীব করুন। আমিন।

Share:

Leave Your Comment