দ্বীন ও শরীয়ত বিষয়ক বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাব

দ্বীন ও শরীয়ত বিষয়ক বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাব

প্রশ্নোত্তর: অধ্যক্ষ মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান>
 মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।
প্রশ্ন: ব্যাংক হতে প্রাপ্ত ডিপিএস’র লাভের টাকা- আমি ব্যবহার করতে পারব কিনা? ব্যবহার করতে না পারলে মা-বাবা সহ আত্মীয়স্বজনকে দেয়া যাবে কিনা?
উত্তর: বর্তমান সময়ে ব্যাংকিং লেনদেনে ব্যাংকে টাকা জমা দানকারী (ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান)কে (ডিপিএস ও এফডিআর ইত্যাদি) আমানতের উপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নির্দিষ্ট হারে শতকরা হিসেবে যে ইন্টারেস্ট/সুদ প্রদান করে, তা বর্তমান যুগের কোন কোন মুফতি/ফক্বীহ্ যদিও সুদের অন্তর্ভুক্ত নয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তবে মুহাক্কিক্ক ফোকাহায়ে কেরামের মতে তা সুদের অবকাশ হতে মুক্ত নয় বিধায় ব্যাংকে জমাকৃত টাকার উপর শতকরা হারে যে অতিরিক্ত লভ্যাংশ দেয়া হয় তা গ্রাহক গ্রহণ করে নিজের জন্য অথবা স্বীয় পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যবহার না করে গরীব-মিসকিন এবং অসহায় আত্মীয় স্বজন বা যে কোন অসহায় ব্যক্তিকে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দিয়ে দেবে। এটাই সতর্কতা ও নিরাপদ। তাছাড়া ঋণ/ধারের টাকার সাথে স্বইচ্ছায় লাভ/মুনাফা হিসেবে কিছু দাবী করে গ্রহণ করলে সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা হাদীসে পাকে বর্ণিত আছে- প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ঋণ কোনো মুনাফা/লাভ নিয়ে আসে তাও রিবা বা সুদের অন্তর্ভুক্ত।  [সুনানে বায়হাক্বী, ৫/৩৫০]
সুতরাং ব্যাংক কর্তৃক অতিরিক্ত প্রদানকৃত টাকা নিজে ব্যবহার না করে দুনিয়াবী কোন লাভ/ফায়দা বা সওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্য ব্যতীত গরীব, মিসকিন ও অসহায়কে দিয়ে দেয়াই শ্রেয়। স্বীয় মাতা স্ত্রী-ছেলে সন্তান ও পরিবারের সদস্যদেরকে দিবে না। তবে ভাই, বোন, শ্বশুর-শাশুড়ীসহ মামা, খালা, ফুফা এবং তাদের পরিবার যদি অভাবগ্রস্থ হয় তখন সওয়াবের নিয়ত ছাড়া তাদেরকে দিতে পারবে।
[অকারুল ফতোয়া, কৃত. মুফতি অকারুদ্দিন বেরলভী রহ. ও আমার রচিত যুগ জিজ্ঞাসা ইত্যাদি]
 মুহাম্মদ তানবীর-নাজিরহাট, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: নামাজে হাসলে ও কাঁদলে নামাজ ফ্যাসেদ হবে কিনা? জানালে উপকৃত হব। 
উত্তর: নামাজে আওয়াজ করে হাসলে ও কাঁদলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। তদ্রুপ মুসিবত ও দরদ-ব্যথার কারণে নামাযে শব্দ করে উফ্, আহ্ করলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। অবশ্য শব্দ ছাড়া শুধু অশ্রু বের হলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে না। তবে নামাযে কোরআনে পাকের তেলাওয়াত শুনে অথবা জান্নাতের বিবরণ সম্পর্কিত আয়াত তেলাওয়াতে আবেগে বা জাহান্নাম সম্পর্কিত আয়াতের বিবরণ শুনে ইমাম/মুসল্লীদের যদি মহান আল্লাহর প্রেমে/ভয়ে ও জাহান্নামের আযাবের ভয়ে অথবা আখিরাতকে স্মরণ করে অনিচ্ছাকৃত কান্নার শব্দ মুখ দিয়ে বের হয় তখন নামায ভঙ্গ হবে না।
[আদ্দুররুল মোখতার, কৃত. ইমাম আলাউদ্দীন খাসকপী হানাফী, ২য় খ-, পৃ. ৪৫, ওরদ্দুল মোহতার, কৃত. ইমাম ইবনে আবেদীন শামী  হানাফী, ২য় খ-, পৃ. ৪৫, শরহুল বেকায়া, ১ম খন্ড, ১৫৩ ও ১৫৫ পৃ.]
  মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: ১০ তলা বিল্ডিংয়ের নিচে এক পাশে মসজিদ করে জুমার নামায চালু করেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ব্যাংক-বীমার অফিস হবে এবং উপরে ফ্যামেলির জন্য ফ্লাটের কাজ চলছে। উক্ত ফ্ল্যাট ও বাসায় বিভিন্ন লোকজন স্থায়ীভাবে থাকবে। সুতরাং উক্ত মসজিদে জুমুআ-জামাত আদায় করা শরীয়ত সম্মত কিনা? জানালে ধন্য হব।  
উত্তর: মসজিদের জন্য কোন নির্ধারিত স্থানে মসজিদ বানানোর সময় উক্ত মসজিদের উপরে বা নিচে ইমাম-মুয়াযযিনের জন্য থাকার ঘর বা মসজিদের উপকারার্থে দোকান বা ভাড়ার ঘর ইত্যাদি মসজিদের স্বার্থে বা মসজিদের উপকারার্থে নির্মাণ করা জায়েয। তবে মসজিদ হয়ে যাওয়ার পর তথা উক্ত মসজিদে জুমা-জামাত কায়েম হওয়ার পর সোজা তার নিচে বা উপরে ভাড়ার ঘর, অফিস-আদালত, ইমাম-মুয়াজ্জিনের জন্য বা গাড়ী পার্কিং ইত্যাদি তৈরি করা বৈধ হবে না। আর পুরাতন মসজিদের নিচের জায়গায় গাড়ি পার্কিং ইত্যাদি করা বৈধ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। কেননা তখন জমি থেকে আসমান পর্যন্ত ওই নির্ধারিত স্থান মসজিদ হিসেবে গণ্য হয়ে গেছে। যেমন- আদ্দুরুল মুখতার ও ফতোয়ায়ে আলমগীরীর বরাতে বাহারে শরীয়তে উল্লেখ আছে-
مسجد كےنيچےكرايه كي دكانيں بنائى گئ يا اوپر مكان بنايا گيا جن كى امدنى مسجد ميں صرف هوگى تو حرج نهيں يا مسجد كے نيچےضرورت مسجد كيلۓ ته خانه بنايا كه اسميں پانى وغيره ركھا جائيگايا مسجد كا سامان اسميں رهيگا تو حرج نهيں مگر يه اس وقت هے كه قبل تمام مسجد دكان يا مكان بناياهو اور مسجد هوجانےكے بعد نه اس كے نيچے دكان بنائى جاسكتى نه اوپر مكان يعنى مثلا ايك مسجد كو منهدم كركےپھر اسكى تعمير كرانا چاهيں اور پهلے اس كےنيچے دكانيں  نه تھى اور اب اس جديد تعمير ميں دكان بنوانا چاهيں تو نهيں بنوا سكتے كه يه توپهلے سے هى مسجد هےاب دكان بنانے كے يه معنى هےمسجد كو دكان بنايا جاۓ
অর্থাৎ-মসজিদের নিচে ভাড়ার জন্য দোকান বানানো হল যার ইনকাম মসজিদের জন্য খরচ হবে তাতে কোন অসুবিধা নেই বা মসজিদের নিচে মসজিদের প্রয়োজনের জন্য টাংকি বা পানি রাখার পাত্র বানানো হলো যাতে পানি ইত্যাদি রাখা হবে বা মসজিদের আসবাবপত্র রাখা হবে তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে তা ঐ মুহূর্তে  বৈধ যখন দোকান ও ঘর বানানো মসজিদ হওয়ার আগে হয়ে থাকে। মসজিদ হয়ে যাওয়ার পরে মসজিদের জায়গার নিচে দোকান বানানো যাবে না এবং উপরেও অন্য কিছু করা যাবে না। এটাই অধিকাংশ হানাফী ফকিহ্গণের অভিমত। অর্থাৎ উদাহরণ স্বরূপ একটি পুরাতন মসজিদকে ভেঙ্গে যদি পুনরায় সংস্কার করা হলে এমতাবস্থায় পূর্বে এর নিচে কোন দোকান না থাকলে এখন পুনরায় সংস্কারের মুহূর্তে মসজিদের জায়গার নিচে দোকান বানানো যাবে না কেন না এটা আগ হতে মসজিদ হয়ে গেছে এখন দোকান বানানোর অর্থ হল একটি মসজিদকে দোকানে রূপান্তরিত করা। যা মসজিদের সাথে বেহুরমতি ও বেয়াদবির নামান্তর। [বাহারে শরীয়ত]
এটাই অধিকাংশ ইমামের নির্ভরযোগ্য মত। ইমাম গণের মধ্যে কয়েকজন যারা মসজিদের বিশেষ প্রয়োজনে জায়েজের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন তার উপর ফতোয়া প্রদান করা হয় নাই। ফতোয়া হল অধিকাংশ ইমামের চূড়ান্ত অভিমতের উপর। দুররে মোখতার ৬ষ্ঠ খন্ডে আছে-
بنى بيتا فوقه للامام لايضر لانه من المصالح اما لوتمت المسجدية ثم اراد البناء منع ولو قال عينت ذالك لم يصدق
অর্থাৎ যদি কেউ মসজিদের উপরে ইমামের জন্য ঘর তৈয়ার করে, কোন ক্ষতি হবে না যেহেতু তা মসজিদের উপকারার্থে করা হয়েছে। তবে মসজিদ হয়ে যাওয়ার পর যদি কেউ মসজিদের (উপরে বা নীচে) ঘর বা দোকান ইত্যাদি বানানোর ইচ্ছা করে তবে তা নিষিদ্ধ। যদি বলে আমি তা মসজিদ তৈয়ার করার সময় নির্দিষ্ট করেছি তার পরেও তার কথা সত্য হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। ‘ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া’তেও এ ধরণের ফায়সালা উল্লেখ করা হয়েছে সুতরাং যদি কেউ বা মসজিদ কমিটি পুরাতন মসজিদকে ভেঙ্গে পুনঃসংস্কার করার সময় উক্ত পুরাতন মসজিদের নীচে বা উপরে ভাড়ার ঘর, দোকান ও গাড়ী পার্কিং ইত্যাদি নির্মাণ করে তবে অবশ্যই শক্ত গুনাহগার হবে ও গজবের আশঙ্কা আছে। এ বিষয়ে তরজুমান প্রশ্নোত্তর বিভাগে পূর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পরম কুরণাময় সবাইকে হেফাজত কুরক! আমিন!  [দুররুল মোখতার ও হিন্দিয়া ইত্যাদি।
সুতরাং ১০ তলা বিল্ডিং-এর ২য় ও ৩য় তলায় ব্যাংক/বীমার অফিসের জন্য এবং ৩য় তলার উপরে ফ্ল্যাট বাসায় বিভিন্ন ফ্যামেলির লোকজনের বসবাসের জন্য নির্ধারণ করে উক্ত ১০ তলা বিল্ডিং-এর নিচ তলায় এক পার্শ্বে মসজিদ করে জুমা ও পঞ্জেগানা জমাত চালু করলে নামাজে জুমা ও পঞ্জেগানা নামায শুদ্ধ হবে যদি জুমার জন্য সকল মুসল্লিদের জুমা আদায় করার اذن عام তথা সাধারণ অনুমতি দেয়া হয় তথা উক্ত বিল্ডিং-এর মালিক কর্তৃপক্ষের পক্ষ হতে কোন বাঁধা যেন না হয় আর জুমা শুদ্ধ হওয়ার অন্যান্য শর্তাবলী যদি পাওয়া যায়। উক্ত ১০ তলা বিল্ডিং-এর নিচ তলার এক পার্শে নামাজ (জুমা-জামাত) শুদ্ধ হবে তবে ওটাকে مسجد شرعى বা ইসলামের বিধান মতে শরঈ মসজিদ বলা যাবে না, যেহেতু ২য় তলা থেকে উপরে ১০ তলা পর্যন্ত মালিক পক্ষ মালিকানা আল্লাহর ওয়াস্তে মসজিদের জন্য ছেড়ে দেয় নাই। সম্পূর্ণ ১০ তলা বিল্ডিং আল্লাহর ওয়াস্তে মসজিদের জন্য দান করার পর নির্মাণের সময় উক্ত জায়গার মালিক পক্ষ নিচ তলা মসজিদের জন্য নির্ধারণ করে অবশিষ্ট তলা মসজিদের স্বার্থে ব্যাংক/বীমা ও ফ্যামিলিকে ভাড়া দিয়ে উক্ত ভাড়া /ইনকাম মসজিদের জন্য ব্যয় করা হলে তখন উক্ত মসজিদ ইসলামী শরীয়ত মতে মসজিদের শরয়ী হবে। যা উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
প্রশ্ন: ফজরের নামাযের সময় নামাযরত অবস্থায় অনেক মুসল্লি হু হু করে আওয়াজ করে কাঁদে। আবেগ নাকি ধরে রাখতে পারে না। আসলে কি নামাজে আওয়াজ করে কাঁদা যাবে? মক্কা শরীফের ইমামরাও অনেক সময় নামাজে কেরাত পড়া অবস্থায় কাঁদেন, অনেক সময় তারাও নাকি আবেগ ধরে রাখতে পারে না। এগুলো শরীয়ত সম্মত কিনা? জানালে ধন্য হব।
উত্তর: ব্যথা বা বিপদের কারণে যদি এ রকম শব্দাবলী যেমন “আহ্, উহ্, উফ, তুফ ইত্যাদি মুখ থেকে নামায অবস্থায় বের হয় অথবা কান্না করতে গিয়ে শব্দ সৃষ্টি হয়ে যায় তাহলে নামায ভঙ্গ হয়। আর যদি কান্নার সময় শুধু চোখের পানি বের হয়, শব্দ ও বর্ণ উচ্চারিত না হয় তাহলে কোন ক্ষতি নেই। [আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ- ১০১]
আর যদি নামাযের মধ্যে ইমামের তিলাওয়াতের কারণে আল্লাহর ভয়ে কান্না আসে আর এ সময় মুখ থেকে আবেগে ও জান্নাতের বিবরণ শুনে ও জাহান্নামের বিষয়াদি শুনে আল্লাহর ভয়ে কান্না বের হয়ে যায় তবে কোন ক্ষতি নেই। কারণ এটা হয়েছে আখিরাতের স্মরণে একাগ্রতা ও বিনয়ের কারণে। আর যদি ইমামের সুন্দর কণ্ঠের কারণে মুগ্ধ হয়ে এসব শব্দাবলী বলে তবে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। [আদ্ দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, খন্ড-২য়, পৃ-৪৫,  শরহুল বেকায়া, ১ম খ-, পৃ. ১৫৩, ১৫৫পৃ]]
 মুহাম্মদ ইমন
চৌধুরী নগর, আ/এ,
টেক্সটাইল, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: আসর ও এশার ফরয নামাযের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা এবং জোহরের ফরযের পূর্বে চার রাকআত সুন্নাতে মোয়াক্কাদা রেফারেন্সসহ আদায়ের সঠিক নিয়ম জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।  
উত্তর: এশার ও আসরের ফরয নামাযের পূর্বে যে চার রাকআত সুন্নাত রয়েছে তা সুন্নাতে যায়েদা বা সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা। এই নামাযগুলো এক সালামের মাধ্যমে আদায় করা হবে। এর সঠিক নিয়ম হলো দু’ রাকআত আদায় করে প্রথমে বৈঠকে বসে ‘আত্তাহিয়্যাতু’ এর পর দরূদ শরীফ ও দোয়া পড়বে। আর সালাম না ফিরিয়ে যখন তৃতীয় রাকআতের জন্য দাঁড়াবে তখন দুআ-এ সানা এবং আয়ূযুবিল্লাহ্ ও বিসমিল্লাহ্সহ সূরা কেরাত পড়ে চার রাকআত নামায পরিপূর্ণভাবে আদায় করবে। কেননা সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ্ নফল নামাযের মত। তাই প্রত্যেক বেঠকই শেষ বৈঠকের হুকুমে। এ জন্যে প্রত্যেক বৈঠকেই ‘আত্তাহিয়্যাতু’র পর দরূদ শরীফ ও দোয়া পড়বে এবং প্রথম বৈঠকের পর ৩য় রাকআতের শুরুতে সানা (সোবহানাকা) আউয়ুবিল্লাহ্, বিসমিল্লাহ্ পড়বে। এ ছাড়া প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরাও মিলাতে হবে। এটাই সুন্নাতে যায়েদা এবং নফল নামায আদায়ের শুদ্ধ এবং সঠিক তরিকা।
[আদদুররুল মুখতার, বাহারে শরীয়ত: ৪র্থ খন্ড, ফতোয়ায়ে রজভীয়াহ: ৩য় খন্ড ও মুমিন কি নামায ইত্যাদি]
উল্লেখ্য উপরোক্ত মাসআলার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে অনেক মুসল্লি গাফেল ও বে-খবর। সুতরাং অবগত হওয়ার পর উপরোক্ত সঠিক নিয়মে আসর ও এশার ফরযের পূর্বে চার রাকআত সুন্নাতে যায়েদা বা সুন্নাতে গাইরে মোয়াক্কাদাহ্ আদায় করার অনুরোধ রইল। আর চার রাকআত বিশিষ্ট সুন্নাতে মোয়াক্কাদাহ্ যেমন জোহরের ফরজের পূর্বের চার রাকাআত সুন্নাতে মোয়াক্কাদাহ্ প্রথম বৈঠকে শুধু আত্তাহিয়াতু শেষ পর্যন্ত পড়ে দরুদ শরীফ ও দোয়া না পড়ে, কাল-বিলম্ব না করে ৩য় রাকাতের জন্য দাড়িয়ে যাবে যদি সুন্নাতে মোয়াক্কাদাহ্ চার রাকআতের ১ম বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পাঠের পর দরুদ শরীফ ‘আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মদ’ পর্যন্ত বা তার চেয়ে বেশী পড়ে তখন পরবর্তী দু’ রাকআত শেষ করে সাহু সাজদা দিতে হবে।
[রাদ্দুল মোহতার, ২য় খন্ড, ৮১ পৃ. সাজদা সাহু অধ্যায়]
 মুহাম্মদ সরওয়ার আলম 
শিক্ষার্থী- জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা
চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: ফরজ নামাযের পর হাত তুলে মুনাজাত করা জায়েজ কি না? নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কি এভাবে হাত তুলে মুনাজাত করেছেন? দলিল সহকারে জানালে উপকৃত হব। 
উত্তর: ফরয নামায সহ প্রত্যেক নামাযের পর মুনাজাত করা আল্লাহ্ তা’আলার হুকুম ও নবী করীম রাউফুর রাহীম, রহমতে দো’আলম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত। আল্লাহ তা’আলার দরবারে দু’আ/মুনাজাত করা সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন- اجيب دعوة الداع اذا دعان البقرة  অর্থাৎ আমি আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে ডাকে । [সূরা বাক্বারা, আয়াত ১৮৬]
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আরো ইরশাদ করেন- ادعونى استجب لكم অর্থাৎ তোমরা আমার কাছে দু’আ/মুনাজাত কর, আমি তোমাদের দু’আ কবুল করব । [সূরা আল গাফির: আয়াত ৬০]
আল্লামা ইমাম গাজ্জালী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি দু’আর যে সকল নিয়মাবলী বলেছেন হাত ওঠানো, ও দু’আর পরে হাত চেহারায় মাসেহ করা অন্যতম। তাই যে কোন নামায শেষে মুনাজাত করা শরিয়ত সম্মত।
মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন- فاذا فرغت اى من الصلوة فانصب اى اتعب فى الدعاء অর্থাৎ (হে প্রিয় হাবীব) যখন আপনি নামায থেকে অবসর হবেন, তখন দু’আর মধ্যে লেগে যান। এবং আপন রবের প্রতি মনোনিবেশ করুন।  [সূরা ইনশিরাহ্: আয়াত-৭-৮]
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে জালালাঈনে রয়েছে- আপনি যখন নামায হতে অবসর হবেন তখন দু’আয় মনোনিবেশ করুন। কোরআনুল করীম ও আয়াতের তাফসির হতে প্রতিয়মান যে, নামাযের পর আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করা মহান রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ।
আর হাদীসে পাকে হুযূর পূরনুর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতদেরকে দু’আর পদ্ধতি তালীম দিয়েছেন। হাদীসে পাকে উল্লেখ রয়েছে- عن مالك بن يسار قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا سألتم الله فاسئلوه ببطون اكفكم ولا تسالوه بظهورها فاذا فرغتم فامسحوا بها وجوهكم [رواه ابو داؤد] অর্থাৎ- হযরত মালিক ইবনে ইয়াসার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন তোমরা আল্লাহ্ তা’আলার দরবারে দু’আ ফরিয়াদ করবে অর্থাৎ কোন কিছু চাইবে তখন তোমাদের হাতের পেট/ভিতর দিয়ে দু’আ করবে, হাতের পৃষ্ঠ দিয়ে নয়। আর মুনাজাত হতে অবসর হয়ে উভয় হাতের তালু তোমাদের চেহরায় মাসেহ করবে।  [আবু মাউস ও মিশকাত, পৃষ্ঠা ১৯৬]
আর ফরজ নামাযের পর হাত তুলে মুনাজাত স্বয়ং নবীজি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম করেছেন। যেমন- عن الاسود العامرى عن ابيه قال صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجر فلما سلم انصرف ورفع يديه ودعا ـ الحديث] অর্থাৎ- হযরত আসওয়াদ আমেরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার পেছনে ফজরের নামায আদায় করেছি, যখন তিনি ফজরের নামাযের সালাম ফিরালেন তখন মুসল্লিগণের দিকে ফিরে বসলেন এবং উভয় হাত উপরের দিকে উঠিয়ে মুনাজাত করলেন। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা]
সহীহ বুখারী শরীফে উল্লেখ রয়েছে, প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু মুসা আশয়ারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন-دعا النبى صلى الله عليه وسلم رفع يديه حتى رايت بياض ابطيه অর্থাৎ-নবীয়ে দু’জাহাঁ, রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম (দু’আ/মুনাজাতের জন্য) হাত উত্তোলন করেছেন, (এমনভাবে যে) এমনকি আমি প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা’র বগল মুবারকের শুভ্রতা পর্যন্ত দেখেছি। [সহীহ বুখারী শরীফ কিতাবুদ দাওয়াত: হাদীস নম্বর ৫৯৮১]
সুতরাং এটাই প্রমাণিত যে, ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল প্রত্যেক নামাযের পরে হাত তুলে মুনাজাত করা এবং চেহেরায় হাত মাসেহ করা কোরআন হাদীস তথা ইসলামী শরীয়ত সম্মত তথা সুন্নাতে মোস্তাহাব্বা। এটাকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। মূর্খ ও জ্ঞান পাপীরাই শুধু এটাকে অস্বীকার করে।
[তাফসিরে ইবনে আব্বাস, তাফসিরে মাযহারী, সহীহ বুখারী শরীফ, সুনানি আবু দাউদ, মিশকাত শরীফ, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা এবং আমার রচিত যুগজিজ্ঞাসা]
 মুহাম্মদ আবুল হোসাইন
আল ফালাহ গলি, ২নং গেইট,
চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: বর্তমানে সন্তানেরা মা-বাবার অবাধ্য হওয়ার প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমরা জানি সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার কর্তব্য আছে আর মা-বাবার প্রতি সন্তানদেরও কর্তব্য/ হক আছে। তা পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বিস্তারিত বর্ণনা করার আবেদন রইল। 
উত্তর: কোরআন সুন্নাহর আলোকে সন্তানের প্রতি মাতা-পিতার কর্তব্য। যেমন-
১. মা তার সন্তান কে পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করাবে। এ বিষয়ে আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন- والو الدات يرضعن اولادهن حولين كاملين لمن اراد ان يتم الرضاعة অর্থ: মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে জন্মের পর দুধ খাওয়াবে পূর্ণ দু’বছর যে দুধ খাওয়ানোর সময়কাল পূর্ণ করতে চায়। [সূরা বাকারাহ্: আয়াত ২৩৩]
২. পিতা সন্তানের ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করবে। আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা’আলা বলেন- সচ্ছল ব্যক্তি তার সচ্ছলতা পরিমাণে (সন্তানের জন্য) ব্যয় করবে। আর যার রিযিক সংকীর্ণ করে দেয়া হয়েছে সে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে যা দিয়েছেন তা হতে সাধ্য পরিমাণে (সন্তানের জন্য) ব্যয় করবে।
৩. পিতা সন্তানের  জন্মের পর আকীকা করবে। এ বিষয়ে সরওয়ারে দু’আলম নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামা ইরশাদ করেন-كل غلام رهين بعقيقته تذبح عنه يوم سابعه ويحلق راسه ويسمى অর্থ: প্রত্যেক শিশু তার আকীকার সাথে আবদ্ধ যা তার জন্মের সপ্তম দিনে জবাই করা হবে। (যদি অসুবিধা না হয়) এবং তার মাথা মুন্ডাবে ও নাম রাখবে । [সুনানে নাসাঈ]
৪. তাদেরকে দয়া মায়া করবে। আল্লাহর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- احبوا الصبيان واحموهم الحيدث অর্থ: শিশুদেরকে ভালবাস ও তাদের প্রতি দয়া মায়া কর ।
৫. সাধ্যমতে তাদের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবে।واذا وعدتموهم فافوهم অর্থ: তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিলে (সাধ্যমত) তা পূর্ণ কর।
৬. নবী করীম রাউফুর রহীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন- যার কাছে কোন শিশু থাকে সে যেন তার সঙ্গে ভাল সুন্দর ও আচরণ করে । [ইবনে আসাকির]
৭. আল্লাহর প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন-مروا اولادكم بالصلوة وهم ابناء سبع سنين واضربوهم وهم ابناء عشر سنين وفرقوا بينهم فى المضاجع অর্থাৎ: তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সালাতের তথা নামাযের আদেশ দাও, যখন তারা সাত বছরে উপনীত হয়। এবং নামাযের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য মারধর কর যখন তারা দশ বছরে পে․ঁছে। এবং (দশ বছরে উপনীত হলে) তাদের বিছানা পত্র আলাদা করে দাও ।
[দারুকুতনী এবং মুসতাদরক লিল হাকিম- ১/১৯৭]
৮. সন্তানদেরকে উত্তম শিক্ষা দিবে। সরওয়ারে দু’জাহান রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-الزموا اولادكم واحسنوا ادبهم অর্থ: তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাথে লেগে থাক (সদা নজরে রাখ) এবং তাদেরকে উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দাও।
৯. পরিবারের ও ছেলে মেয়েদের ভরণ পোষণ প্রসংগে রসূলে আকরম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-دينار انفقته فى سبيل الله ودينار انفقته فى رقبة ودينار تصديقت به على مسكين ودينار انفقته على اهلك اعظمها اجرًا الذى انفقته على اهلك ـ  অর্থাৎ একটি দীনার (স্বর্ণ মুদ্রা) তুমি যা আল্লাহর পথে (জিহাদে ও দ্বীনের কাজে) ব্যয় করেছ, একটি দীনার তুমি দাস-দাসী মুক্তির জন্য ব্যয় করেছ; একটি দীনার তুমি মিসকিনকে দান করেছ, এবং একটি দীনার তুমি তোমার ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের জন্য ব্যয় করেছ, এগুলোর মধ্যে সর্বাধিক সাওয়াব হবে সেটি যেটি তুমি তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করেছ।
১০. সন্তানদের লালন পালন প্রসঙ্গে হুযূর পুরনূর রসূল পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- وادبه وضعه موضعًا حسنا অর্থ: তাকে (সন্তানকে) উত্তম শিষ্টাচার শিখাবে এবং তাকে উত্তম অবস্থানে স্থাপন করবে। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা মা-বাবার উপর সন্তানদের হক ও কর্তব্য সম্পর্কে অবগত হলাম। উপরোক্ত হাদীসে ছেলে-মেয়েকে উত্তম শিষ্টাচার অর্থাৎ শিক্ষা-দীক্ষা, আদব-কায়দা শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়। এবং তাদেরকে উত্তম অবস্থানে রেখে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
নিম্নে সন্তানের উপর মা – বাবার হক সম্পর্কে বিবরণ প্রদত্ত হল: ১. তাঁদের সাথে ভালো ও উত্তম ব্যবহার করা। ২. তাঁদের ইহসানকে ভুলে না যাওয়া এ প্রসঙ্গে রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-اِمَّا یَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ اَحَدُهُمَاۤ اَوْ كِلٰهُمَا فَلَا تَقُلْ لَّهُمَاۤ اُفٍّ وَّ لَا تَنْهَرْهُمَا وَ قُلْ لَّهُمَا قَوْلًا كَرِیْمًا অর্থাৎ তাঁদের কোন একজন অথবা তাদের (মাতা-পিতা) দু’জনই তোমার কাছে বার্ধ্যকে উপনীত হলে কখনও তাদেরকে ‘উফ’ বলবে না। অর্থাৎ কষ্ট দিও না। তাঁদেরকে ধমক দেবে না বরং তাদের সংগে মার্জিত (সম্মানজনক) কথা বলবে । [সূরা বণী ইসরাঈল-২৩]
৩. তাঁদের সাথে প্রত্যেক কাজে বিনয় প্রদর্শন করবে। ৪. প্রত্যেক নামাযের পর মা-বাবার জন্য দু‘আ করবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন-واخفض لهما جناح الذل من الرحمة وقل رب ارحمهما كما ربيانى صغيرًا অর্থাৎ – দয়াপরবশ হয়ে তাদের জন্য বিনয়ের বাহু বিছিয়ে দিবে এবং (দু’আ করার সময়) বলবে- হে আমার পালন কর্তা, তাঁদের দু’জনকে দয়া কর, যেরূপ তাঁরা আমাকে শিশুকালে (দয়া মায়ায়) লালন-পালন করেছেন। [সূরা বাণী ইসরাঈল: ২৪]
৫. তাঁদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ব্যবস্থা করা। মহান আল্লাহ্ বলেন -ان اشكرلى ووالوالديك  অর্থ: তোমরা আমার এবং তোমার পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। ৬. তাঁদের সেবা করা। ৭. তাঁদের সামনে উঁচু আওয়াজে (বেয়াদবীর সাথে) কথা না বলা। ৮. মা-বাবা শরিয়ত বিরোধী কার্য কলাপের নির্দেশ দিলে অমান্য করা। এবং এ বিষয়ে মা-বাবাকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিবে। ৯. মাতা-পিতার সেবা করা নফল নামাযের চেয়ে উত্তম। ১০. মাতা-পিতার সাথে যাদের ভাল সম্পর্ক ছিল তাঁদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। ১১. ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মা-বাবার সাথে বেয়াদবী করলে সাথে সাথে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া ইত্যাদি। [গুনিয়াতুত তালেবিন, পৃষ্ঠা ১৯, ১২০, ১২১ কৃত: গাউসুল আজম শেখ সাইয়্যেদ সুলতান পীর মীর মহিউদ্দীন সৈয়্যদুনা আবদুল কাদের জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ও রিয়াদুস্ সালেহনি ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা-১১২ কৃত ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলায়হি ইত্যাদি।]
 মুহাম্মদ খোরশদ আলম
গহিরা, রাউজান, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: বর্তমানে কিছু লোককে দেখা যায় মসজিদের মুয়াজ্জিন কে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার চেষ্টা করে এবং বিরূপ মন্তব্য করে? মুয়াজ্জিনের ফজিলত সম্পর্কে দলিল সহকারে জানালে উপকৃত হব। 
উত্তর: মুসলমানরা আজানের ধ্বনি শুনে সাধারণত নামায আদায়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। আজানের সূর মুমিন মুসলমানের অন্তরকে ঈমানী শক্তিতে উজ্জীবিত করে। আর যিনি আজান দেন তাকে মুয়াজ্জিন বলা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে মুয়াজ্জিনের মর্যাদা অতুলনীয়। বর্তমান সমাজের কিছু মানুষ হয়তো মুয়াজ্জিনের গুরুত্ব যথাযথভাবে অনুধাবন করে না। তাদেরকে যথাযথ সম্মান দেয় না। তাঁদেরকে অবহেলা করে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কিন্তু মুয়াজ্জিনের জন্য স্বয়ং প্রিয়নবী রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ঘোষণা করেছেন অপরিসীম ফজিলত ও মর্যাদা। যেমন- عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الامام ضامن والمؤذن مؤتمن اللهم ارشد الايمة واغفر للمؤذنين অর্থাৎ- প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “ইমাম হচ্ছেন জিম্মাদার এবং মুয়াজ্জিন হচ্ছেন (ওয়াক্তের) আমানতদার। হে আল্লাহ্! ইমামদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দিন।
[সুনানে আবু দাউদ: ৫১৭ নম্বর, মেশকাত পৃ. ৬৫, তিরমিযি শরীফ: ২০৭ নম্বর হাদীস]
অপর হাদীসে উল্লেখ রয়েছে- সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মুয়াজ্জিনের কন্ঠস্বর যতদুর পর্যন্ত যায় তাকে ততদুর ক্ষমা করে দেয়া হয়। তাজা ও শুষ্ক প্রতিটি বস্তু (কিয়ামতের দিন) তাঁর পক্ষে আল্লাহর দরবারে সাক্ষী প্রদান করবে। আর (আযান) শুনে কেউ নামাযের জামাআতে হাযির হলে তার জন্য পঁচিশ ওয়াক্ত নামায আদায়ের সাওয়াব লিখা হয় এবং এক সালাত থেকে আরেক সালাতের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়। [আবু দাউদ ও মেশকাত শরীফ, পৃ. ৬৫]
  মুয়াজ্জিনরা হাশরের ময়দানে সুঠাম ও দীর্ঘদেহের অধিকারী হবেন। তাদের ঘাড় সবার ঘাড়ের ওপরে থাকবে। ফলে মুয়াজ্জিনদেরকে সহজে চেনা যাবে। এ প্রসঙ্গে হাদীসে পাকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- কেয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনরা সর্বাপেক্ষা দীর্ঘ ঘাড় বিশিষ্ট হবেন। [সহীহ মুসলিম শরীফ]
উপরোক্ত হাদীসে নববী হতে প্রতীয়মান হল যে, মুয়াজ্জিনের জন্য তাজা ও শুষ্ক প্রতিটি গাছ-পালা, তরু-লতা, পাহাড়-পর্বত ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং সাক্ষ্য প্রদান করবে কিয়ামত দিবসে- এটা তাঁর জন্য পরম সৌভাগ্যের ও মর্যাদার বিষয়। তাছাড়া মুয়াজ্জিনের আযান শুনে মানুষ মসজিদে যায়- ইফতার করে- নামায আদায় সহ বহু নেক আমল করে থাকে এর সাওয়াবও তিনি পাবেন। কিন্তু আমলকারীর সাওয়াব বিন্দুমাত্র কমবে না। মুয়াজ্জিন হাশরের ময়দানে সুপারিশ করবেন মর্মেও বর্ণনা পাওয়া যায়। মানুষের প্রকাশ্য শত্রু শয়তান ও মুয়াজ্জিনের আযান শুনে পালিয়ে যায়। সর্বোপরি রাসূলুল্লাহ্ মুয়াজ্জিনের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন-এটা পরম সৌভাগ্যের। আল্লাহ্ আমাদের বুঝার তাওফীক দান করুন। আ-মী-ন।
উল্লেখ্য যে, মুয়াজ্জিনকে মহব্বত করলে কিয়ামত দিবসে তাঁর সুপারিশ নসিব হবে আর মুয়াজ্জিনকে নামাযের জন্য আহ্বান করার দরুন যদি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয় তখন ঈমান ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা আছে।
 নুর মুহাম্মদ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: শুক্রবার তথা জুমার দিন গোসল করার বিধান কি? ওয়াজিব না সুন্নাত। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব। 
উত্তর: জুমার দিনের ফজিলত বা মর্যাদা যেভাবে সপ্তাহের অন্যান্য দিবসের চেয়ে বেশী তদ্রুপ জুমার দিন জুমার নামাযের জন্য গোসল করার ফজিলতও অন্যান্য দিবসের গোসলের মর্যাদার চেয়ে বেশী। এ বিষয়ে হুযূর পুর নূর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- اذا اتى احدكم الجمعة فليغتسل [سنن ابى داؤد] অর্থাৎ তোমাদের কোন ব্যক্তি যদি জুমার নামায আদায় করতে আসে সে যেন গোসল করে নেয়। [সুনানে আবি দাউদ]
প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে সরওয়ারে কায়েনাত ফখরে মওজুদাত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- غسل يوم الجمعة واجب على كل محتلم ـ الحيدث  অর্থাৎ প্রত্যেক বালেগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) ব্যক্তির উপর জুমার দিন গোসল করা ওয়াজিব। সুনানে আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম খত্তাবী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন যে, এখানে জুমার দিনে গোসল করা ওয়াজিব বলে মূলত: রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম জুমার দিবসের গোসলের ব্যাপক ফজিলত বর্ণনা করাই উদ্দেশ্য। ওয়াজিবের অর্থ ফরয বা অপরিহার্য বিষয় নয় বরং অধিকাংশ ফক্হি ও ইমামগণের মতে জুমার দিন গোসল করা সুন্নাতে মুস্তাহাব্বা। হাফেজুল হাদীস ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, জুমার দিন গোসল করা সুন্নাতে মোস্তাহাব্বা বা অনেক অনেক ফজিলতময় ও বরকতমন্ডিত। এটাই ইবনে হুযাইফা রহমাতুল্লাহি আলায়হি, ইমাম তাবরানী রহমাতুল্লাহি আলায়হি, ইমাম আবু জাফর তাহাবী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলায়হি, ইবনে হিব্বান রহমাতুল্লাহি আলায়হি এবং ইবনে আবদুর রব রহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর অভিমত। অধিকাংশ সম্মানীত সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও তবে-তাবেয়ীন এ কথার উপর ঐক্যমত পোষণ করে বলেছেন যে, জুমার নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য গোসল করা শর্ত নয়। তবে জুমার দিন গোসল করা নারী-পুরুষ সকলের জন্য সুন্নাতে মুস্তাহাবা ও অনেক সওয়াব। যারা রোগাক্রান্ত অসুস্থ ও বৃদ্ধ তারা গোসল না করেও শুধু অযু করে জুমার নামায আদায় করতে পরবে। কোন অসুবিধা নাই।
[আউনুল মা’বুদ শরহে সুনানি আবি দাউদ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪,৫,৬। কৃত: আল্লামা আবু তৈয়্যব মুহাম্মদ শামসুল হক আজিম আবাদী ইত্যাদি]
দু’টির বেশি প্রশ্ন গৃহীত হবেনা  একটি কাগজের পূর্ণপৃষ্ঠায় প্রশ্ন লিখে নিচে প্রশ্নকারীর নাম, ঠিকানা লিখতে হবে
 প্রশ্নের উত্তর প্রকাশের জন্য উত্তরদাতার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বাঞ্ছনীয় নয়।  প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা:
প্রশ্নোত্তর বিভাগ, মাসিক তরজুমান, ৩২১, দিদার মার্কেট (৩য় তলা), দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম-৪০০০।