রাসূলুল্লাহর অনুপম আদর্শ 

রাসূলুল্লাহর অনুপম আদর্শ 

সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আযহারী>
হযরত খারেজা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক দল লোক হযরত যায়দ বিন সাবিত রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, আপনি আমাদেরকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে  কিছু বলুন। তিনি বললেন, আমি তাঁর জীবনী মুবারক নিয়ে তোমাদেরকে কী শুনাব? আমি তাঁর প্রতিবেশী ছিলাম। যখন তাঁর উপর ওহী নাযিল হতো তখন তিনি আমাকে ডেকে পাঠাতেন, আমি তাঁর খেদমতে উপস্থিত হয়ে তাঁর নির্দেশানুসারে তা লিখে রাখতাম। যখন আমরা কোনও বিষয়ে আলোচনা করতাম তখনও তিনি আমাদের চিত্ত বিনোদনের জন্য আমাদের সঙ্গে সেই বিষয়ে আলোচনা করতেন। আবার যখন পরকাল নিয়ে আলোচনা করতাম; তখন তিনি আমাদের সাথে তা নিয়ে আলোচনা করতেন। (পরকালেন বিভিন্ন বিষয়ে দিক- নির্দেশনা দিতেন।) এমনকি আমরা যখন খানা-পিনা নিয়ে আলোচনা করতাম তখন তিনিও একই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন এবং তার আদব- কায়দা ও নিয়মাবলী শিক্ষা দিতেন। যা কিছু বলেছি তা প্রিয় নবীর জীবনী মুবারক থেকে সামন্য কিছুই বলেছি।( )
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সকলের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন
আমর ইবনে আস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সমাজের নিকৃষ্ট ব্যক্তির সাথেও পূর্ণ মনোযোগ সহকারে মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে কথা বলতেন। এমনকি আমার সঙ্গেও তিনি কথা বলতেন অনুরূপভাবে। তাতে আমার মনে হলো, আমি সমাজের উত্তম মানুষ। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উত্তম, না আবু বকর উত্তম? তিনি বললেন, আবু বকর! আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উত্তম, না হযরত ওমর উত্তম? তিনি বললেন, হযরত ওমর! আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আমি উত্তম না হযরত ওসমান? তিনি বললেন, হযরত ওসমান! আমি যখন বিস্তারিতভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, তখন আমাকে সঠিক কথা বলে দিলেন। পরে আমি মনে মনে কামনা করলাম, যদি আমি তাঁকে এরূপ প্রশ্ন না করতাম।
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম খাদেমদের সাথে সদয় আচরণ করতেন
হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ১০ বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের খেদমত করেছি; কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তিনি কখনো আমার কোন কাজে ‘উহ’ শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। আমি করেছি এমন কোন কাজের ব্যাপারে তিনি কখনো জিজ্ঞেস করেননি যে, কেন করেছি? আর না করার ব্যাপারেও তিনি কখনো জিজ্ঞেস করেননি যে, কেন করোনি? চরিত্র মাধুর্যে তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। কোন রেশমী কাপড় বা কোন বিশুদ্ধ রেশম বা অন্য কোন এমন নরম জিনিস স্পর্শ করিনি, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের বরকতময় হাতের তালুর চেয়ে নরম। আমি এমন কোন মিশক বা আতরের সুবাস পাইনি, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের ঘাম মুবারকের ঘ্রাণ হতে অধিক সুগন্ধিময়। ( )
হযরত আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের নিকট এক ব্যক্তি বসা ছিল। তার দেহে হলুদ রংয়ের খুশবু ব্যবহারের আলামত দেখা যাচ্ছিল। প্রিয় নবীর স্বভাব ছিল, তিনি কোন অপছন্দনীয় বিষয় দেখলে তা সামনা- সামনি বলে দিতেন না। তাই তিনি কিছু না বলে নিরব রইলেন। লোকটি চলে যাওয়ার পর প্রিয় নবীজি উপস্থিত লোকদের বললেন, যদি তোমরা তাকে এ রংয়ের খূশবু ব্যবহার ত্যাগের প্রতি তাগিদ দিতে তাহলে খুবই ভাল হত।( )
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ক্ষমায় ছিলেন অতুলনীয়
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কখনো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোন প্রকার অশোভনীয় কথা বলতেন না। বাজারেও তিনি উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতেন না। মন্দের প্রতিকার মন্দ দ্বারা করতেন না; বরং ক্ষমা করে দিতেন। অতঃপর কখনো তা আলোচনাও করতেন না। ( )
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কখনো কাউকে প্রহার করেননি
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ ছাড়া কখনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হাত মুবারক দ্বারা (ইচ্ছাকৃতভাবে) কাউকে প্রহার করেননি এবং কোন দাস-দাসী বা স্ত্রীলোককেও প্রহার করেননি।( )
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সহজ পন্থা অবলম্বন করা পছন্দ করতেন
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে কখনো নিজের জন্য প্রতিশোধ নিতে দেখিনি, যতক্ষণ না কেউ আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করত। অবশ্য যখন কেউ আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করত, তখন তাঁর ন্যায় অধিক ক্রোধান্বিত আর কাউকে দেখা যেত না। তাঁকে যদি দুটি কাজের মধ্যে যে কোন একটির অনুমতি দেয়া হতো, তবে তিনি সহজ কাজটি বেছে নিতেন, যতক্ষণ না কাজটি গুনাহের হতো। ( )
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সাবার সাথে  নম্র আচরণ করতেন
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের খেদমতে আসার অনুমতি চাইল। আমি সে সময় তাঁর কাছে বসা ছিলাম। তিনি বললেন, এ ব্যক্তি গোত্রের কতই না খারাপ লোক! অতঃপর তাকে আসার অনুমতি দেয়া হলো এবং তিনি ঐ লোকের সাথে অতিশয় ন¤্রভাবে কথা বললেন। অতঃপর লোকটি বের হয়ে গেলে আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! ব্যক্তিটি সম্পর্কে এরূপ কথা বললেন, আবার তাঁর সাথে বিনম্র ব্যবহার করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, হে আয়েশা! ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে খারাপ লোক যার খারাপ ব্যবহারের কারণে লোকজন তাকে পরিহার করে এবং তার থেকে দূরে থাকে । ( )
 হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর ভাষায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের চরিত্রিক মাধূর্যের বর্ণনা
হযরত হাসান ইবনে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত হুসাইন ইবনে  আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা বলেছেন, আমি আমার পিতাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের সাথীদের ক্ষেত্রে তাঁর আচরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। উত্তরে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সদা হাস্যোজ্জোল ও বিন¤্র স্বভবের অধিকারী। তিনি রূঢ়ভাষী বা কঠিন হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন না। তিনি উচ্চঃস্বরে কথা বলতেন না। অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করতেন না। অপরের দোষ খোঁজে বেড়াতেন না এবং কৃপণ ছিলেন না। তিনি অপছন্দনীয় কথা হতে বিরত থাকতেন। তিনি কাউকে নিরাশ করতেন না, আবার মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও দিতেন না। তিনটি বিষয় থেকে তিনি দূরে থাকতেন: ঝগড়া-বিবাদ ও অহংকার করা এবং অযথা কথাবার্তা বলা থেকে। তিনটি কাজ হতে লোকদেরকে বিরত রাখতেন- কারো নিন্দা করতেন না, কাউকে অপবাদ দিতেন না এবং কারো দোষ-ত্রুটি তালাশ করতেন না। যে কথায় সওয়াব হয়, শুধু তাই বলতেন। তিনি যখন কথা বলতেন তখন উপস্থিত শ্রোতাদের মনোযোগ এমনভাবে আকর্ষণ করতেন, যেন তাদের মাথার উপর পাখি বসে আছে।
তিনি কথা বলা শেষ করলে অন্যরা তাঁকে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা জিজ্ঞেস করতে পারত। তাঁর কথায় কেউ বাদানুবাদ করতেন না। কেউ কোন কথা বলা শুরু করলে তাঁর কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি চুপ থাকতেন। কেউ কোন কথায় প্রফুল্লতা বা বিস্ময় প্রকাশ করলে তিনিও অনুরূপ প্রফুল্লতা কিংবা বিস্ময় প্রকাশ করতেন। অপরিচিত ব্যক্তির রূঢ়-কর্কশ আচরণ কিংবা কঠোর উক্তি ধৈর্য্যরে সঙ্গে সহ্য করতেন। কখনো কখনো সাহাবীগণ অপরিচিত লোক নিয়ে আসতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করতেন, কারো কোন প্রয়োজন দেখলে তা সামাধা করতে তোমরা সাহায্য করবে। কেউ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে তিনি চুপ করে থাকতেন। কেউ কথা বলতে থাকলে তাকে থামিয়ে দিয়ে নিজে কথা আরম্ভ করতেন না। অবশ্য কেউ অযথা কথা বলতে থাকলে তাকে নিষেধ করে দিতেন, অথবা মজলিস হতে উঠে যেতেন, যাতে বক্তার কথা বন্ধ হয়ে যায়। ( )
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের নিকট কোন কিছু চাইলে তিনি কখনো ‘না’ বলতেন না
হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের নিকট কোন কিছু চাইলে তিনি কখনো না বলতেন না।( )
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দানশীলতায় প্রবল বাতাসের চেয়েও দ্রুত ছিলেন
হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ছিলেন লোকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দানশীল। বিশেষ করে রমযান মাসে তিনি উদারভাবে দান করতেন। এ মাসে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তাঁর খেদমতে আগমন করতেন এবং তাঁর খেদমতে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করে শুনাতেন। যখন তাঁর খেদমতে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আগমন করতেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এত বেশি দান খয়রাত করতেন, যেন প্রচ- বায়ু প্রবাহ কিংবা মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষিত হচ্ছে। ( )
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আগামীকালের জন্য কোন কিছু জমা করে রাখতেন না
হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের অভ্যাস ছিল, তিনি আগামীকালের জন্য কিছু জমা রেখে দিতেন না। ( )
হযরত ওমর ইবনু খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, একদা জনৈক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের নিকট কিছু সাহায্য প্রার্থনা করলে তিনি বললেন, এখন তো আমার কাছে তোমাকে দেবার মতো কিছুই নেই, তবে তুমি আমার নামে তোমার প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়ে করে নাও, যখন আমার হাতে অর্থ আসবে তখন আমি তা পরিশোধ করে দেব। হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আরয করলেন, এয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার নিকট যা ছিল তা আপনি দান করে দিয়েছেন। এখন আপনার নিকট যা নেই তার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা আপনাকে বাধ্য করেননি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের নিকট হযরত ওমরের এ কথাটি পছন্দনীয় হলো না। তখন এক আনসারী সাহাবী আরয করলেন, এয়া রসূলাল্লাহ! আপনার যা মন চাই খরচ করতে থাকুন। মহান আরশের অধিপতির কাছে অপ্রতুলতার আশংকা করবেন না। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মৃদু হাসলেন এবং তাঁর চেহারা মোবারকে আনন্দের চিহ্ন উদ্ভাসিত হল। তখন তিনি এরশাদ করলেন, আমি এভাবেই আদিষ্ট হয়েছি।
[জামে মা’মার ইবন রাশেদ: ১১/১০৮ হা-২০০৫৮, আল খারায়াতী: সাকারিমুল আখলাক: পৃ-১৮৮ হা-৫৬৫, ইবনুল মকরী আল মু’জাজ, পৃ- ১৮৩ হা- ৫৫৮ ইবনু আবী শায়বা: আল আরশ, পৃ- ৪৫৮ হা-৭৩]
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং প্রতিদানও দিতেন
রুবাইয়্যি বিনতে মু’আওভভিয ইবনে আফরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত। আমি এক পাত্র খেজুর এবং কিছু হালকা পাতলা শসা নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমাকে এক মুষ্ঠ মুবারক ভর্তি অলংকার ও স্বর্ণ দান করলেন।  [মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/২০১৫৭;  মুসনাদ এ ইমাম আহমদ, হা/২৭০৬৮।]
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং প্রতিদানও দিতেন।
[সহীহ বুখারী, হা/২৫৮৫; আবু দাউদ, হা/৩৫৩৮; মুজামুল আওসাত, হা/৮০৩১; মুসনাদ এ ইমাম আহমদ, হা/২৪৬৩৫; বায়হাকী, হা/১১৮০০; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৬১০; জামেউস সগীর, হা/৯১৩০। এ হাদীসের শিক্ষা হলো, হাদিয়া গ্রহণ করা এবং হাদিয়ার প্রতিদান প্রদান করা নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত।]
টিকা:
 । মুজামুল কবীর: ৫/১৪০, হা-৪৮৮২, মুজামুল আওসাত: ৮/৩০১, হা-৮৬৯৭, বায়হাক্বী: ৭/৮৩, হা-১৩৩৪০, শরহুস সুন্নাহ: ১৩/২৪৫, হা-৩৬৭৯
 –  শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৬৪; দারেমী, হা/৬২; মুসনাদ এ ইমাম আহমদ, হা/১৩০৫৭; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/২৮৯৪।
 । মুসনাদ-এ আহমদ ২০/৩৫, হা- ১২৭৫৩, মুসনাদ-এ আবু ইয়ালা: ৭/২৬৪, হা- ৪২৭৭, আত তাহাভী: শরহে মায়ানিল আসার: ২/১২৮, হা-৩৫৮৪
 –  মুসনাদ এ ইমাম আহমদ, হা/২৫৪৫৬; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৩৮৬২: মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৬২৩, শু’আবুল ঈমান, হা/৭৯৪৪ সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৬৪৪৩।
 –  সহীহ মুসলিম, হ/৬১৯৫; আবু দাউদ, হা/৪৭৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৯৮৪; মুসনাদ এ ইমাম আহমদ, হা/২৫৯৬৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৪৮৮; বায়হাকী, হা/২০৫৭৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৬৭; শু’আবুল ঈমান, হা/১৩৫৮।
 ‘হুদুদ’ হলো শরীয়তের নির্ধারিত শাস্তি এবং তা’যীর হলো শাসন করা যার প্রকৃতি নির্ধারিত নয় এবং যা বিচারকের উপর ন্যস্ত।
 প্রহার করা দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে রাগান্বিত হয়ে মারা উদ্দেশ্য। অনিচ্ছাকৃতভাবে আঘাত লেগে যাওয়াকে প্রহার বলে না।
 বিশেষভাবে খাদিম ও নারীর কথা এজন্য উল্লেখ করেছেন যে, সাধারণত মানুষ এদেরকে অল্পতে মেরে থাকে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কখনো এদেরকেও মারধর করেননি। যদিও শাসনের উদ্দেশ্যে হালকা মারধর বৈধ আছে।
 –  মুসনাদে হুমাইদী, হা/২৭৪; মুসনাদ এ ইমাম আহমদ, হা/২৫০২৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪২২৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫০৭; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯১১৮।
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে যখন আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে, দুটি বৈধ বিষয়ের যে কোন একটি গ্রহণের সুযোগ দেয়া হতো, তখন তিনি যে বিষয়টি উম্মতের জন্য সহজতর তা গ্রহণ করতেন।
 –  আবু দাউদ, হা/৪৭৯৩; আদাবুল মুফরাদ, হা/৩৩৮; শু’আবুল ঈমান, হা/৭৭৪৭; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৫৬৯৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১০৪৯; মুসনাদে আবু ই’আলা, হা/৪৮২৩।
 এ লোকটির নাম ছিল উয়াইনা। সে ছিল মুনাফিক । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর সে মুরতাদ হয়ে যায় এবং প্রকাশ্য কাফির হয়ে যায়। হযরত আবু বকর সিদ্দীক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর দরবারে তাকে গ্রেফতার করে আনা হয়। ফলে মদিনার অলি-গলিতে বালকরা তিরস্কার করে বলল, এও মুরতাদ হয়ে গেল! তখন সে বলল, আমি কখন মুসলমান ছিলাম? আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহে পরে সে খাঁটি মনে ইসলাম গ্রহণ করে এবং হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর খিলাফতকালে বিভিন্ন জিহাদে অংশ গ্রহণ করে।
 –  শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৭০৫৷
 –  সহীহ মুসলিম, হা/৬১৫৮; মুসনাদ এ ইমাম আহমদ, হা/১৪৩৩৩; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/২০০১; মুসনাদুত তায়ালুসী, হা/১৮২৬; মু’জামুল আওসানত, হা/১৩৩৯; মুসনাদে হুমাইদী, হা/১২৮২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৮৫।
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের কাছে কেউ কিছু প্রার্থনা করলে তিনি কারো প্রার্থনা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করতেন না। উপস্থিত থাকলে সাথে সাথে দিয়ে দিতেন, নতুবা পরবর্তী সময়ের জন্য ওয়াদা করতেন বা ঐ ব্যক্তির জন্য দুআ করতেন, যেন আল্লাহ তা’আলা অন্যভাবে তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন।
 –  সহীহ বুখারী, হা/১৯০২ সহীহ মুসলিম, হা/৬১৪৯; সুনানে নাসাঈ, হা/২০৯৫; মুসনাদ এ ইমাম আহমদ, হা/৩৪২৫; ইবনে খুযাইমা, হা/১৮৮৯; ইবনে হিব্বান, হা/৩৪৪০; আদাবুল মুফরাদ, হা/২৯২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৮৭।
 –  শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৯০; তাহযীবুল আছার, হা/২৪৯০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হ/৬৩৫৬ সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯৩০; জামেউস সগীর, হা/৮৯৭৭; শু’আবুল ঈমান, হা/১৩৯১।
 ব্যক্তিগত প্রয়োজনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কোন কিছু আগামী দিনের জন্য জমা করে রাখতেন না। সবই দান করে দিতেন। এটাই ছিল আল্লাহ তা’আলার উপর তাঁর পরিপূর্ণ তাওয়াক্কুলের নিদর্শন। তাঁর ওপর যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ছিল, (যেমন বিবিগণ) তাদের এক বছরের খরচ তিনি একত্রে দিয়ে দিতেন। তাঁরা প্রয়োজনে খরচ করতেন এবং আল্লাহর রাস্তায় দান করতেন। ফলে কখনো এমন হতো যে, ঘরে রান্না করার মতো কিছুই থাকত না।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ।