দুরূদ ও সালামের মাস মাহে রবিউল আউয়াল

দুরূদ ও সালামের মাস মাহে রবিউল আউয়াল

ইয়া নবী সালামু আলায়কা, ইয়া রাসূল সালামু আলায়কা,
ইয়া হাবীব সালামু আলায়কা, সালাওয়াতুল্লাহ আলায়কা।
দরূদ ও সালামের মাস, ঈদ-এ মীলাদুন্নবীর মাস মাহে রবি‘উল আউয়াল প্রিয়নবীর আগমন মাসে বেশি বেশি দরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে।

দুরূদ শরীফ পাঠের ফযিলত
বিশুদ্ধ হাদীসে দুরূদ পাঠের অসংখ্য ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় ফযিলত হল দুরূদ পাঠকারীর উপর আল্লাহ্র রহমত নাযিল হয়। কেননা আল্লাহর এক বিন্দু রহমত সমগ্র পৃথিবীর চেয়েও বড় ও প্রশস্ত। হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ পাঠ করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন, দশটি গুনাহ্ ক্ষমা করে দেন এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।
[নাসাঈ শরীফ, সূত্র: মিশকাত শরীফ: পৃষ্ঠা- ৮৬, শেফা শরীফ,খণ্ড-২য়, পৃষ্ঠা-৫৫]
হযরত আবু তালহা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট তাশরীফ আনলেন তখন তাঁর চেহারা মুবারকে আনন্দের ভাব পরিলক্ষিত হয়েছিল। অতঃপর বললেন, আমার কাছে জিব্রাঈল (আলায়হিস্ সালাম) এসেছিলেন আর বললেন, হে মুহাম্মদ! আপনার প্রভু বলেছেন, আপনি কি খুশী হবেন না? আপনার কোন উম্মত আপনার উপর একবার দুরূদ পাঠ করলে আমি তার উপর দশবার রহমত নাযিল করবো, আপনার কোন উম্মত আপনার উপর একবার সালাম পেশ করলে আমি তার উপর দশবার শান্তি বর্ষণ করবো।
[নাসাঈ ও দারেমী, সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৮৬, ফযলুস সালাত আলান নবীয়্যি, পৃষ্ঠা- ২, হাদীস নম্বর-২৪]
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উপর একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য দশটি নেকী লিপিবদ্ধ করেন, তার দশটি গুনাহ্ মুছে দেন এবং তার জন্য দশটি মরতবা বৃদ্ধি করেন।
[কাযী আবু ইসহাক মালেকী (রাহ.), ফযলুস্ সালাত আলান নবীয়্যি, পৃষ্ঠা-২, হাদীস নম্বর-২৪]
হযরত আম্মার বিন ইয়াসার রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা ফেরেশতাদের থেকে একজন ফেরেশতাকে সকল সৃষ্টির কথা শ্রবণের ক্ষমতা দিয়ে আমার ইন্তেকালের পর ক্বিয়ামত পর্যন্ত আমার কবরে দাঁড়িয়ে থাকার দায়িত্ব অর্পন করেন। যখন আমার উম্মত আমার উপর দুরূদ পাঠ করে তখন সে ফেরেশতা বলে হে আহমদ! অমুকের ছেলে অমুক তার নাম ও পিতার নাম সহ আপনার উপর এরূদ দুরূদ পাঠ করেছে। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর রহমত নাযিল করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন। আর যদি সে দুরূদ আরো বৃদ্ধি করে তাহলে আল্লাহ্ তা‘আলা রহমতও বৃদ্ধি করেন।
[কিতাবুস্ সালাত আলান্ নবীয়্যি, দামেস্ক, পৃষ্ঠা-৫১, জিলদুল ইফহাম: পৃষ্ঠা-৯৫, কাশফুল গুম্মাহ্: পৃষ্ঠা২৭০, জাওয়াহিরুল বিহার: পৃষ্ঠা-১৬৫]
এ মাস হচ্ছে গুনাহগার বান্দাদের আত্মসংশোধনের মাস। পাপাচার, অন্যায় হতে তাওবা করার প্রকৃত সময়। রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উসিলা দিয়ে এ মাসে যে সব মুসলমান দো’আ করবেন খোদার অনুগ্রহে তাদের দো‘আ কবুল হবার সৌভাগ্য নসিব হবার পূর্ণ আশা। স্মরণযোগ্য যে, আবু লাহাব কাফির হওয়া সত্ত্বেও আঁ হযরত সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে আগমনের সংবাদ শুনে একজন বাঁদীকে আজাদ করার কারণে যদি খোদা তা‘আলার বিশেষ অনুগ্রহ অর্জন করার অধিকারী হতে পারে তবে নবীয়ে আক্বদাস সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শের প্রকৃত অনুসারীগণ যে, আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করবেন তাতে সন্দেহের কি অবকাশ থাকতে পারে? অধিকন্তু এ মাসে আল্লাহ্ তা‘আলার বিশেষ রহমত ও বরকত সারা জাহানে বর্ষিত হয় বিধায় দ্বীন ও দুনিয়া উভয় জাহানের কামিয়াবী হাসিলের মাস হিসেবে এ মাসকে যথাযোগ্য সমাদর ও গুরুত্ব দেয়া অপরিহার্য।

এ মাসের নফল নামায ও দো‘আ
রবি‘উল আউয়াল মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর মাগরীব ও আওয়াবীনের নামায আদায়ের পরে দুই রাকাত নফল নামায পড়বেন। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর তিনবার সূরা ইখলাস পড়বেন। সালাম ফিরানোর পর ১০০ বার নিম্নের দুরূদ শরীফটি পাঠ করবেন-

আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ’লা আলে সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ওয়া বারিক ওয়া সাল্লিম, বিরাহমাতিকা ইয়া আরহার্মা রাহিমীন।

অতঃপর মুনাজাত করবেন ইন্শাআল্লাহ হাজত পূর্ণ হবে। এরূপ একই নিয়মে দুই রাকাত করে ষোল রাকাত নামায আদায় করা অত্যন্ত উপকারী। অতঃপর ১০০০ বার দুরূদ শরীফ পড়বেন। তৃতীয় ও চতুর্থ সন্ধ্যায় চার রাকাত করে নামায আদায় করতে পারেন। প্রতি রাকাতে আয়াতুল কুরসী ৯ বার, তোয়াহা ১ বার, ইয়াসীন ১ বার এবং ৩ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবেন। অতঃপর দুরূদ পাঠান্তে মুনাজাত করবেন। বর্ণিত আছে যে মাসের প্রথম তারিখ হতে আরম্ভ করে শেষাবধি প্রত্যহ ইশার নামাযান্তে এক হাজার পাঁচশত পঁচিশবার নিম্নের দুরূদ শরীফ পাঠ করলে স্বপ্নযোগে হুজূর আন্ওয়ার সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দীদার নসীব হবে। দুরূদ শরীফ নিম্নরূপ-

আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ’লা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লায়তা আ’লা ইব্রাহীমা ওয়া আ’লা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।
এ মাসের বার তারিখে হুজূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর রূহ মোবারকের প্রতি নিবেদন করে দুই রাকাত বিশিষ্ট ২০ রাকাত নফল নামায প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস ১১বার পাঠান্তে আদায় করবেন। এর ফলে আঁ হযরত সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দীদার নসীব হবে।
উক্ত দিন জশ্নে জুলূসে ঈদ-এ মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এ শরীক হওয়াও আল্লাহ্র প্রতি শোকর গুজারির নিদর্শন। এ দিন ৩৬০ বার সূরা ইখলাস পাঠ করা বুজুর্গানে কেরামের প্রদর্শিত আমলের অন্তর্ভূক্ত। ২১ তারিখ ২রাকাত করে নফল নামায আদায় করবেন। সম্ভব হলে প্রতি রাকাতে সূরা মুজাম্মিল কিংবা অপর কোন সূরা দ্বারা। সালাম ফিরানোর পর সাজদায় পতিত হয়ে আল্লাহ্র কাছে স্বীয় প্রার্থনা নিবেদন করবেন। তাছাড়া একাগ্রচিত্তে নি¤েœর দো’আ পড়বেন-

এয়া গাফূরু গার্ফাতা বিল গুফ্রি ওয়াল গুফ্রু ফি গুফরি গুফরিকা এয়া গাফূরু।

বিশেষত: এ মাসে মুসলিম বিশ্বের কল্যাণ, সংহতি ও ঐক্যের জন্য মুনাজাত করবেন এবং স্বীয় দেশ ও দশের কল্যাণে খোদার দরবারে প্রার্থনা জানাবেন। আর এ কথাও বলা বাহুল্য যে, এ মাসের আয়োজিত মীলাদ মাহফিল, আলোচনা, জশ্নে জুলূস ইত্যাদিতে শরীক হওয়া অতীব পূণ্যময় এবং উভয় জগতের উন্নতি, বরকত ও সাফল্যের মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত।

এ মাসে ওফাত প্রাপ্ত ক‘জন অলী
১. রবি‘উল আউয়াল: খাজা বাহাউদ্দীন নক্সবন্দী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি।

১৩. রবি‘উল আউয়াল: হযরত সাবির কল্য়রী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি।

১৪. রবি‘উল আউয়াল: খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কা‘কী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি।

২১. রবি‘উল আউয়াল: শায়খ আবদুল হক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি।