আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরলভী (রহ.)’র জীবনের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য

আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরলভী (রহ.)’র জীবনের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য

ড. মাওলানা মুহাম্মদ ইছমাইল নোমানী <>

পীরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন
আলা হযরত স্বীয় পীর-মুর্শিদ হযরত সায়্যিদ শাহ্ আলে রসূল আহমদ মারহারভী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হিকে কতই ইজ্জত-সম্মান ও ভক্তি প্রদর্শন করতেন যে, তাঁর দরবার মারহারা শরীফে যাওয়ার প্রাক্কালে জুতা খুলে খালি পায়ে হেঁটে চলতেন। পীরের দরবারের অলিতে-গলিতে এত শিষ্টাচারের সাথে চললে মুর্শিদের প্রতি কতই না আদব ও মুহাব্বত প্রদর্শন করতেন তা সহজেই অনুমেয়। আলা হযরত পীর ও মুর্শিদের রাস্তা ঘাটকে এত সম্মান-আদব প্রদর্শন করলে সে দয়ালু নবীর শহর মদীনা তৈয়্যবার অলি-গলিকে কি পরিমাণ আদব-সম্মান প্রদর্শন করতেন তা ধারণাতীত। তিনি স্বয়ং বলছেন-
حرم كي زمين اور قدم ركھكےچلنا -ارےسركا موقعه هے اوجانے والے
রাসূল বংশীয় লোকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ইমাম আহমদ রেযা ফাযিলে বেরলভী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি দারুল ইফতায় ফাত্ওয়া ও কিতাবাদিতে লেখালেখিতে মশগুল থাকেন। পার্শ্ববর্তী বাড়িতে এক রাসূল বংশীয় লোক স্বীয়-পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। সে সায়্যিদ বংশীয় লোকের এক শিশু আশেপাশের খেলাধুলা করতো। খেলাচ্ছলে আহমদ রেযার দারুল ইফতার সামনে চলে আসলে তিনি সে সৈয়্যদযাদাহ্র সম্মানার্থে দোয়াত-কলম ও কাগজ রেখে বিনয়ের সাথে দাঁড়িয়ে যেতেন। এভাবে যতবার শিশুটির আনাগোনা হতো ততবার তিনি আদবের সাথে দাঁড়িয়ে যেতেন। একবারের জন্যও চেহারা মলিন করেননি।

মদীনা শরীফে আশ্রিত ব্যক্তির কদমবুচি
ইমাম আহমদ রেযা অতুলনীয় এক নবী প্রেমিক। কেউ হজ্ব সম্পন্ন করে তাঁর সাথে দেখা করতে এলে তিনি জিজ্ঞেস করতেন, আপনি কি আমার প্রিয় রাসূলের দরবারে হাজিরী দিয়েছেন? হাজী সাহেব হ্যাঁ বললে আলা হযরত তৎক্ষণাত তার কদমবুচি করে ধন্য হতেন।

নবীপ্রেম
আলা হযরত সব কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন নবীপ্রেমকে। হযরত মুহাম্মদ ইব্রাহীম ফারুকী মুজাদ্দিদী বলেছেন, মাওলানা আহমদ রেযা নবীপ্রেমে এতই বিভোর ছিলেন যে, তাঁর অন্তর সদা নবীপ্রেমে বিদ্যমান যার উপর তার নাতিয়া কালাম সাক্ষ্য বহন করে, তিনি স্বীয় না’তে রাসূল দ্বারা বিশ্বের নারী-পুরুষকে নবীপ্রেমে উজ্জ্বীবিত করেছেন। মাওলানা আবুল কালাম আযাদ মোম্বাই এক প্রোগ্রামে প্রকৃত সত্যকে স্বীকার করে বলেছেন, মাওলানা আহমদ রেযা একজন সত্যিকারের নবীপ্রেমিক ছিলেন।
জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদী ও নাযির মাওলানা গোলাম আলীম সাহেব ইমাম আহমদ রেযার কতিপয় লিখিত গ্রন্থ পড়ে মন্তব্য করেছেন, জ্ঞানে তাঁর যে গভীরতা আমি লক্ষ্য করেছি এমন পা-িত্য খুব কম আলেমের নিকট থাকে। আর নবীপ্রেম তাঁর প্রতিটি ছত্রে ছত্রে প্রস্ফূটিত হয়েছে।

রাসূলের নামে পাকের আকৃতিতে শয়ন
আ’লা হযরত রাহমাতুল্লিল আলামীনের জাতি নাম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নকশা হয়ে শয়ন করতেন। শয়ন অবস্থায় হস্তদ্বয় মাথার নিচে এবং পা কুড়িয়ে ঘুমাতেন। তখন মাথা মীম, হাতের কনুই হা, কোমড় মীম এবং পাদ্বয় দাল আকৃতি হয়ে যেতো। পুরো দেহ محمد নকশা রূপধারণ করতো।

তুফান থেকে বেঁচে যাওয়া
আলা হযরত প্রথম বারের মতো স্বীয় মাতা-পিতাকে সাথে নিয়ে হজ্জে যাত্রা শুরু করলেন ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে বোম্বাই থেকে পানির জাহাজে করে জিদ্দার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। সমুদ্র পথে হঠাৎ তুফান আরম্ভ হলে জাহাজ ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যাওয়ার উপক্রম। জাহাজের ক্যাপ্টেন ও কর্মচারীরা অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। জাহাজকে রক্ষার সব তদবীর ব্যর্থ হলে ক্যাপ্টেন ঘোষণা করল, হজ্জ যাত্রী ভাইয়েরা! জাহাজ ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা। প্রত্যেকে নিজ জান-মালের নিরাপত্তায় সতর্ক থাকবেন। এ ঘোষণা শুনে সবাই বিচলিত হয়ে পড়ে। কতেক তখন পরস্পর পরামর্শ করে ইমাম আহমদ রেযার নিকট গিয়ে দোয়া করার জন্য বললেন। তাদের কান্নাকাটি দেখে আলা হযরত তাদেরকে সান্ত¦না দিয়ে বললেন, -আপনারা শান্ত থাকুন। সবাই যিকর ও দোয়া দরূদ পড়–ন। আল্লাহ্ ও রসূল যদি চান আমরা নিরাপদে জিদ্দায় পৌঁছে যাবো, ইনশা-আল্লাহ। তুফান জাহাজকে ডুবাতে পারবে না। কেননা মহানবীর কথা মতো আমরা জাহাজে উঠতে بِسْمِ اللهِ مَجْرَاهَا وَمُرْسَهَا اِنَّ رَبِّىْ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْم এ দোয়া পড়েছি। মনে রেখো! চন্দ্র-সূর্যের গতি বন্ধ হতে পারে, বাতাসের গতি পাল্টাতে পারে, আঁধার আলো ও আলো আধাঁর হতে পারে, পৃথিবীর সব শৃঙ্খলা বদলে যেতে পারে কিন্তু সরকারে দো‘আলমের ফরমান এদিক ওদিক হতে পারে না। ক্যাপ্টেনের বারংবার ঘোষণা শুনে যাত্রীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। আর আলা হযরত তখন জাহাজের ছাদে উঠে মদীনা পাকের দিকে মুখ করে ভক্তি ও একনিষ্ঠতার সাথে রসূল অভিমুখী হয়ে ফরিয়াদ জানাতে লাগলেন। ওদিকে তুফানের শংকা কেটে গিয়ে নিরাপদে জিদ্দায় পৌঁছে গেল জাহাজ।

আলা হযরতের ললাটে নুর
ইমাম আহমদ রেযা প্রথমবার হজ্জে গিয়ে মকামে ইব্রাহীমে নামায আদায় শেষে সাক্ষাত হলো শাফিয়ী ইমাম হযরত হোসাইন ইবনে সালেহ রহমাতুল্লাহি আলায়হির সাথে। তিনিও বড় বুযুর্গ ছিলেন। আলা হযরতকে দেখে সসম্মানে হাতে ধরে নিজ বাসভবনে নিয়ে গেলেন। আতিথেয়তা সেরে অনেক্ষণ আলা হযরতের ললাটের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে বললেন- اِنِّىْ لَاَجِدُ نُوْرَ اللهِ فِىْ هذَا الْجِيْنِ নিশ্চয় আমি এ কপালে আল্লাহর নূর দেখতে পাচ্ছি। অতঃপর খুশি হয়ে আলা হযরতকে সিহাহ্ সিত্তাহ্ (ছয়টি বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থ) ও সিলসিলায়ে কাদেরিয়া আলিয়ার অনুমতি ও খেলাফত দান করলেন সহস্তে লিখিতাকারে।

দীদারে মোস্তফা লাভ
ইমাম আহমদ রেযা দ্বিতীয় বার ১৩২৩হি./১৯০৬ খ্রি. হজ্ব আদায়ের পর নিজ স্ত্রী-পুত্রকে ফিরে আসার জন্য জাহাজে তুলে দিয়ে তিনি আসল উদ্দেশ্য দীদারে মোস্তফা লাভে ব্যাকুল হয়ে পড়েন। রাওযা আকদাস সামনে নিয়ে দরুদ পড়ে দীদারে মোস্তফা লাভের আশায় অস্থিরতায় মগ্ন। প্রথম রাজধানীতে দর্শন-লাভ হয়নি। তখন না’ত আবৃত্তিতে মগ্ন হয়ে গেলেন-
وه سوۓلا له زارپر تے هيں- تيرے دن اے بهارےهر تےهيں
না’ত পরিবেশন করে দর্শন লাভের আগ্রহে উপবিষ্ট। তখন হযরত হুযূর আকদাসের দর্শন লাভে ধন্য হলেন।

তাঁর দৈনন্দিন অভ্যাস
১. কখনো অট্টহাসি দিতেন না।
২. হাঁচি আসলে দাঁতে আঙ্গুল কামড়িয়ে দমিয়ে দিতেন।
৩. চুলে চিরুনি করতে আয়না ব্যবহার করতেন।
৪. অধিকাংশ সময় ঘর থেকে ওযু করে মসজিদে যেতেন।
৫. ওযু করতে দ্ইু বদনা পানি ব্যবহারের প্রয়োজন হতো।
৬. নামায শেষে সোজা ঘরে ফিরতেন।
৭. আসরের নামাযের পর বারান্দায় চকির উপর উপবিষ্ট হয়ে আম জনতার সাথে সাক্ষাত দিতেন মাগরিব পর্যন্ত সাক্ষাতকারীদের জন্য চতুর্দিকে চেয়ার বিছানো থাকতো।

সুন্নাতের পূর্ণ অনুসরণ
ইমাম আহমদ রেযা মহানবীর সুন্নাতের পুরোপুরি অনুসরণ করে যেতেন। পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে উপস্থিত হয়ে তাকবীরে উলার সাথে জামা‘আত সহকারে আদায় করতেন। পাগড়ী পড়ে নামায আদায় করতেন। কোন দিন পাগড়ী ছাড়া শুধু টুপি পরে নামায আদায় করেননি। কযেক মাস গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে এমতাবস্থায়ও তিনি জামা‘আতে নাময আদায় করা ত্যাগ করেননি। কয়েক ব্যক্তি চেয়ারে বসে তাঁকে মসজিদে পৌঁছিয়ে দিলে তিনি নামায আদায় করতেন। তিনি ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত এমনকি মুস্তাহাব পর্যন্ত যথাযথভাবে আদায় করতেন। রাসূলের প্রত্যেকটি সুন্নাত যথাযথ পালনে সচেষ্ট ছিলেন সর্বদা।
একদা আলা হযরত দু’ ব্যক্তির কাঁধে ভর দিয়ে মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামাতে শরীক হলেন। এতদ্ দৃশ্য দেখে উপস্থিত ওলামা-কেরাম, মুফতি, মুরীদ ও খাদেমগণ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। আলা হযরত দুর্বল, অসুস্থ বা অক্ষম কিছুই নয়; তারপরও দু’ ব্যক্তির কাধে ভর দিয়ে মসজিদে আসার রহস্য কী?
সুন্নাতের পূর্ণ অনুসারী আলা হযরত বলেছেন, আমার প্রিয় রসূল দুই সাহাবী হযরত আলী ও হযরত আব্বাসের কাঁধে ভর দিয়ে মসজিদে জামা‘আতে উপস্থিত হয়েছিলেন। চিন্তা করলাম, হঠাৎ আমার মৃত্যু এসে গেলে রাসূলের এ একটি সুন্নাত অনাদায় থেকে যাবে। তাই দু’জনের কাঁধে ভয় দিয়ে মসজিদে উপস্থিত হয়ে সেই সুন্নাত আদায় করে নিলাম।

সম্ভ্রান্তকে আদবের সাথে শিক্ষাদান
শাহাদাত-ই শাহ বরকাত হযরত সৈয়দ শাহ্ মেহেদী হাসান মিয়া (মারহারা দরবারের সাজ্জাদানশীন সরকারে কাঁলা) বর্ণনা করেছেন, আমি একদা বেরলভী শরীফে আলা হযরতের দরবারে উপসিথত হলে নিজ হাতে খানা পরিবেশন করতেন এবং হাত ধুইয়ে দিতেন। হাত ধোয়ানোর সময় আমার হাতে স্বর্ণের আংটি দেখে অত্যন্ত আদবের সাথে ফরমালেন, হুযুর! আমাকে এ আংটি দান করুন। তখন আমি হযরত সায়্যিদ মেহেদী মিয়া তৎক্ষণাৎ আংটি খুলে আলা হযরতকে দিয়ে দিলাম। আতিথেয়তা গ্রহণের পর মোম্বাইর দিকে আমি চলে গেলাম। আর আলা হযরত সে স্বর্ণের আংটিটি সায়্যিদ মেহেদী মিয়া সাহেবের কন্যা ফাতিমাকে একটি চিঠিসহ প্রেরণ করে বললেন, শাহযাদী! স্বর্ণের আংটিটি আপনার জন্য। নারীদের জন্য স্বর্ণের ব্যবহার বৈধ: পুরুষের জন্য নয়। বোম্বাই থেকে হযরত মেহেদী হাসান মিয়া মারহারা শরীফে ফিরে এলে কন্যা বললেন, আমার জন্য আলা হযরত আংটি পাঠিয়েছেন। তখন হযরত মেহেদী হাসান বললেন, প্রিয় কন্যা! মূলতঃ আলা হযরত আংটিটি প্রেরণ করে আমাদেরকে মাসআলা শিক্ষা দিয়েছেন।

দাড়িবিহীন ব্যক্তিকে সবক না দেয়া
এক ব্যক্তি আলা হযরতের নিকট বায়আত গ্রহণ করেন। আসা-যাওয়া করেন বটে কিন্তু ওযীফা দেয়া হয়নি। কিছুদিন পর তাঁর নিকট সবক প্রদানের আবেদন জানালে আলা হযরত বললেন, তোমার দাড়ি শরয়ী সীমার চেয়ে ছোট। শরীয়ত মোতাবেক দাড়ি রাখ। ইনশা-আল্লাহ! ওযীফা বলে দেয়া হবে। ওযীফা নফল, দাড়ি রাখা ওয়াজিব। সেটাকে প্রথমে আমল করো।

আ’লা হযরতের অর্ন্তদৃষ্টি
মাওলানা সায়্যিদ নাঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী রহমাতুল্লাহি আলায়হির এক বন্ধু ছিল হযরত মাওলানা সায়্যিদ দীদার আলী শাহ্। মুরাদাবাদী স্বীয় বন্ধুকে আলা হযরতের দরবারে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন। তখন সে বন্ধু দীদার আলী শাহ্ বললেন, ভাই! আমি শুনেছি তিনি পাঠান বংশের। পাঠানিয়া একটু কঠোর স্বভাবের হয়ে থাকে। একদিন তিনি মুরাদাবাদীর সাথে বেরলভী শরীফ পৌঁছলেন। আলা হযরতের সাথে সাক্ষাত হলে তিনি ইমাম আহমদ রেযাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হুযূর! আপনার তবীয়ত (শারীরিক অবস্থা) কেমন? আপনার মেজাজ কেমন? আলা হযরত তদুত্তরে বললেন, ভাই! কি জিজ্ঞেস করলেন? পাঠান মানুষ, স্বভাব কঠোর প্রকৃতির। ইমাম আহমদ রেযার অর্ন্তদৃষ্টি উপলব্ধি করে তিনি অশ্রু ভাসালেন। আর মনে মনে ভাবতে লাগলেন, এ কথা তো আমি কখন বলেছি, কোথায়ে বলেছি! আর এদিকে সবকিছু তাঁর জানা হয়ে গেল। কি আশ্চর্য!

কবরকে সুপ্রশস্থ করতে অসীয়ত
আলা হযরত কতই উঁচু মাপের নবী প্রেমিক ছিলেন। তিনি ইন্তেকালের পূর্বে অন্তীম উপদেশ দিয়েছেন যে, আমার কবরকে দাঁড়াতে পারি এমন সুপ্রশস্ত করা হোক। কারণ, আমার দয়াল নবী কবরে আসলে যাতে আমি আদবের সাথে দাঁড়িয়ে নবীজিকে সালাম দিতে পারি।

ওফাত শরীফ
ইমাম আহমদ রেযা ১৩৪০হি. ২৫ সফর/১৯২১খ্রি. ২৮ অক্টোবর জুমার দিন ২টা ৩৮ মিনিট মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে হাইয়া আলাল ফালাহ্ উচ্চারিত হওয়ার মুহূর্তে মাওলায়ে হাকিকীর সাথে মিলে যান। মৃত্যু শয্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে মাওলানা হাসনাইন রেযা খান বলেছেন, আমি তাঁর মৃত্যু শয্যা পার্শ্বে ছিলাম। তিনি অসীয়তনামা লিখায়েছেন এবং তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন। ওফাতের সময় ২টা ৪ মিনিট পূর্বে বলেছেন, ছবিগুলো দূর কর। উপস্থিত সকলে বলতে লাগলেন এখানে ছ বি কোথায়? তখন স্বয়ং নিজে বলে উঠলেন, কার্ড, খাম, রুপি ও পয়সা সব দূর করে দাও। অতঃপর নিজ ছেলে মোস্তফা রেযা ও হামিদ রেযাকে সম্বোধন করে বললেন, ওযূ করে কুরআন নিয়ে সূরা ইয়াসিন ও সূরা রা’দ তিলাওয়াত করো। এদিকে তিনি উক্ত সময়ের পূর্ব মুহূর্তে কালিমা তৈয়্যবাহ্ لااله الا الله محمد رسول الله পূর্ণ পড়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেলেন। ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজেউন।

ওফাতোত্তর কারামত
মাওলানা মুহাম্মদ হোসাইন রেযভী বলেছেন, আমি একদা খুবই অসুস্থ হয়ে আলা হযরতের মাযারে উপস্থিত হয়ে প্রার্থনা করলাম, হুযূর! আমার সব বাচ্ছারা ছোট্ট, কনিষ্ট মেয়েটা মাত্র সোয়া মাসের বয়স্ক। এ অবস্থায় মারা গেলে আমার ঘর তছনছ হয়ে যাবে। আমার জন্য দোআ করুন হায়াত দারাজির।
হুযূর! জীবদ্দশায় আপনি বলতেন পীর-মুর্শিদ কবরে, হাশরে এবং সব বিপদে মদদ করতে পারে। আমার জন্য এ মুহূর্তের চেয়ে বড় বিপদের আর নেই। কান্নাকাটি করে দোয়া মোনাজাত করে বাসায় ফিরলাম। রাত্রে আমার প্রিয় মেয়ে স্বপ্নে আলা হযরতকে দেখে কুশল বিনিময়ের পর বললেন, তোমার আব্বা খুবই বিচলিত। তাকে বলে দাও অতি সত্তর সুস্থ হয়ে যাবে। বাস্তবে কয়েকদিন পর তিনি পরিপূর্ণ আরোগ্য লাভ করেন।

সাহাবাসহ রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের স্বাগতম জ্ঞাপন
আলা হযরতের ওফাত মুহূর্তে রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সাহাবা কিরামসহ দরবারে মোস্তফায় নিশ্চুপ উপবিষ্ট রইলেন। তখন এক সিরিয়াবাসী বুযুর্গ রাসূলের মহান দরবারে আবেদন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ فداك ابى وامى (আমার মা-বাপ আপনার খেদমতে কোরবান হোক) আপনি কার জন্য অপেক্ষমান রয়েছেন? তদুত্তরে রসূলে মোস্তফা ফরমালেন আহমদ রেযার জন্য। আবারো আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আহমদ রেযা কে? রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, ভারতবর্ষের বেরলভী শরীফের বাসিন্দা আহমদ রেযা। স্বপ্ন ভঙ্গের পর যাচাইপূর্বক জানতে পারলেন, আলা হযরত আহমদ রেযা ভারতবর্ষের বড়ই সম্মানিত আলিম। তাঁর সাক্ষাত লাভে ধন্য হওয়ার জন্য তিনি বেরলভী শরীফে ছুটে যান। সে নবী প্রেমিকের খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, তিনি ২৫ সফর ১৩৪০হি. ইহজগত ত্যাগ করে চলে গেছেন। তিনি নিশ্চিত হলেন যে, স্বপ্নে রাসূলের দীদার ঠিক সেদিন হয়েছিল। বুঝা যায়, আহমদ রেযাকে স্বাগতম জানানোর জন্য ওফাত মুহূর্তে দয়ালু নবী সাহাবা কিরাম অপেক্ষায় ছিলেন।

লেখক: অধ্যক্ষ, আল-আমিন বারিয়া মডেল কামিল মাদরাসা, চট্টগ্রাম।