ভাগ্যের সেরা মনযিল ‘শাহাদত’

ভাগ্যের সেরা মনযিল ‘শাহাদত’

তাহিয়্যা কুলসুম>

হিজরী বর্ষের পঞ্জিকা বদলে আবাহন ঘটল নববর্ষ ১৪৪৫। অতীতের গ্লানি ঝেড়ে শান্তি, সমৃদ্ধি ও নতুন প্রত্যাশার অবগাহনে উজ্জ্বল হোক আমাদের ভবিষ্যতের অভিযাত্রা। শুভ হোক এ নতুন বছর। ড. আল্লামা ইকবাল রাহমাতুল্লাহি আলায়হির ভাষায়-
‘‘গরীব ও সা-দাহ্ ও রঙ্গীন হ্যায় দা-সতানে হরম,
নিহা-য়াত উসকী হুসাইন, ইবতেদা হ্যায় ইসমাঈল।’’
অর্থাৎ : হারাম শরীফের এক অভিনব ইতিকথা, যা দুর্লভ, নিরলঙ্কার ও রক্তে রঞ্জিত। যার সূচনা হযরত ইসমাঈল আলায়হিস্ সালাম এবং সমাপ্তি ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। দা-সতানে হরম কেবল নয়, হিজরতের স্মারক হিজরী নববর্ষও উভয় প্রান্তে বহন করে আছে ত্যাগ-তিতিক্ষার ঐতিহ্য। শেষের মাস ‘যিলহজ্ব’, প্রিয় নবীর পূর্বপুরুষ হযরত ইসমাঈল আলায়হিস্ সালাম’র কুরবানীর স্মৃতি বহন করে এবং তাঁরই উত্তরপুরুষ প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর শাহাদাতের খুনে রাঙা মাস ‘মুহররম’ দিয়ে শুরু হয় চাঁদের এ শুভ নববর্ষ।
মাহে ‘মুহররম’ হারাম মাস, চন্দ্র-বর্ষের সূচনাকারী, পবিত্র আশুরার মাস, শাহাদতের মাস এবং ত্যাগের মাস। এ মাস মনে করিয়ে দেয়, আমরা ভোগের নই, ত্যাগের জাতি। যে ত্যাগে আছে মুসলিম মিল্লাতের জাতিগত গৌরব। মুসলমান কখনো ভুলতে পারবে না মুহররম মাসে সংঘটিত কারবালার সে ত্যাগ, সে শাহাদাত। শহীদানের সে অম্লান আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত, তাঁদের ধৈর্য, সংযম এবং নিষ্ঠা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি আজও অনুরণিত-
‘ফিরে এলো আজ সেই মুহররম মাহিনা,
ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না।’
শাহাদত এক অতুলনীয় মর্যাদার নাম। সৌভাগ্যের স্বর্ণ শিখর এ শাহাদত। খতীবে পাকিস্তান আল্লামা মুহাম্মদ শফী’ উকাড়ভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র কবিতায়-
‘‘শাহাদত আখেরী মানযিল হ্যায় ইনসানী সাআদাত কী,
উঅহ্ খোশ কিসমত হ্যাঁয় মিল জায়ে জিনহে দাওলাত শাহাদাত কী।’’
শাহাদত বরণকারীদের ‘শহীদ’ বলা হয়। আরবি অভিধান ‘আল মু’জাম আল-ওয়াসীত’ প্রণেতা ‘শহীদ’ শব্দের অর্থে লিখেছেন ‘যিনি আল্লাহর পথে নিহত হওয়ার জন্য নিজেকে পেশ করেন।’ আবদুর রহমান আল জাযাইরী তাঁর ‘কিতাবুল ফিকহ’ আলাল মাযাহিবিল আরবা’ নামক গ্রন্থে চার মাযহাবের দৃষ্টিকোণ থেকে ‘শহীদ’কে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
‘হানাফী’ মাযহাবের দৃষ্টিতে ‘শহীদ’ ঐ ব্যক্তি (মুসলমান) যিনি অত্যাচারিত বা নির্যাতিত অবস্থায় নিহত হয়েছেন, চাই তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হোন, কিংবা কোন বিদ্রোহী বা শত্রুর হাতে, অথবা চোর কিংবা ডাকাত কর্তৃক।
‘শাফেয়ী’ মাযহাব মতে, ঐ ব্যক্তি দুনিয়া ও আখেরাতে শহীদ, যাঁর মধ্যে গণীমতের মাল আত্মসাৎ বা মানুষের প্রশংসা পাওয়ার উদ্দেশ্য বিদ্যমান থাকে না বরং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই আল্লাহর কালিমাকে সমাসীন করার জন্য কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিযুক্ত হন এবং তাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন।
‘মালিকী’ এবং ‘হাম্বলী’ মাযহাবে ঐ মুসলিম ব্যক্তিকেই ‘শহীদ’ বলা হয় যিনি মুসলমান এবং কাফিরদের যুদ্ধে কাফির সৈন্য কর্তৃক নিহত হন।
ইসলামী পরিভাষায় ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি প্রদত্ত ‘শহীদ’-এর সংজ্ঞাটি বহুল ব্যবহৃত। তিনি বলেন, ‘শহীদ’ (শাব্দিক অর্থ সাক্ষ্যদাতা) বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যিনি আল্লাহর দ্বীনের বিশুদ্ধতা রক্ষায় ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে কখনো দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে ও যথার্থ প্রচারশক্তি দ্বারা, কখনো বা বর্শা-তরবারি দ্বারা সাক্ষ্য দেয়।’এ সংজ্ঞার ভিত্তিতে আল্লাহর রাহে যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেন, তাঁদেরও শহীদ বলা হয়। কারণ, তাঁরা নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে, আল্লাহর দ্বীনের সত্যতার সাক্ষ্য দেন।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর ঘোষণা-‘‘মুমিনদের মধ্যে কতেক মু’মিন আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা (রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জিহাদ করা) পূরণ করেছে। তাঁদের কেউ কেউ শাহাদত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তাঁরা তাঁদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি। এটা এ জন্য যাতে আল্লাহ সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদীতার কারণে প্রতিদান দেন এবং ইচ্ছা করলে মুনাফিকদের শাস্তি দেন অথবা ক্ষমা করেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’
[সূরা আহযাব, আয়াত-২৩-২৪]
উপরোক্ত আয়াত মোতাবেক আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও ঈমানদারিত্বের দাবি পূরণের সর্বোচ্চ পর্যায় শাহাদত, যার মাধ্যমে মানুষ অমরত্ব লাভ করেন। আত্মত্যাগের মহান বেদী শাহাদতের মর্তবা হাসিল করা অনেক কঠিন, যার জন্য কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। রব তা‘আলার সে মহান বাণীতে এ অগ্নি পরীক্ষার ঘোষণা স্পষ্ট হয়েছে। ‘‘মানুষ কি এটাই ধারণা করে যে, শুধুমাত্র ‘আ-মান্না’’ (অর্থাৎ আমরা ঈমান এনেছি) বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষায় ফেলা হবে না? আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরও পরীক্ষা নিয়েছি। আর (তাদেরও পরীক্ষা করে) দেখে নিতে হবে (এবং প্রকাশ ঘটাতে হবে) কারা সত্যবাদী আর দেখতে হবে কারা মিথ্যুক।’’
[সূরা আল আনকাবুত, আয়াত-২-৩]
আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, কিছু ভয়-ভীতি ও ক্ষুধা দিয়ে এবং সম্পদহানি, প্রাণহানি ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। আর (হে হাবীব!) আপনি সেসব ধৈর্য্যশীলদের জন্য সুসংবাদ দিন, যাঁরা কোন বিপদ আসলে (সন্তুষ্টচিত্তে) বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই জন্য এবং নিঃসন্দেহে তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।’’
[সূরা আল বাক্বারা, আয়াত- ১৫৫-১৫৬]
অন্যত্র মহান আল্লাহর ঘোষণা এসেছে এভাবে- ‘‘তোমরা কি একথা মনে করে নিয়েছ যে, তোমরা জান্নাতে এমনিই প্রবেশ করে যাবে? অথচ তোমাদের পূর্বে যারা ঈমান এনেছিল তাদের ওপর যে অবস্থা পতিত হয়েছিল, তোমরা তা এখনও ভোগ করোনি। তাদের ওপর এসেছে বিপদ ও কষ্ট। আর এমনিভাবে শিহরিত হতে হয়েছে যাতে নবী ও তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে পর্যন্ত একথা বলতে হয়েছিল যে, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য। তোমরা শুনে নাও, আল্লাহর সাহায্য একান্তই নিকটবর্তী।
[সূরা আল বাক্বারা, আয়াত-২১৪]
উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, মহান প্রভু তাঁর প্রিয় বান্দাদের থেকে কঠিন পরীক্ষা নেন। এ পরীক্ষা প্রেমময় প্রভুর সান্নিধ্য লাভের পরীক্ষা। যাঁরা পারবে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে, যাঁরা পারবে শাহাদতের মাধ্যমে প্রভুর প্রেমের বলি হতে তাঁরাই সফল, তাঁরাই সৌভাগ্যবান। ঈমানের এ অগ্নি পরীক্ষায় যাঁরা উত্তীর্ণ, তাঁদের প্রতিদানের স্বরূপ সত্যিই অভাবনীয়। নিঃসন্দেহে তাঁরা চিরঞ্জীব। চাঁদ-তারার মতো তাঁরা পৃথিবীর মাঝে চমকিত, সজীব।
আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন, ‘‘যাঁরা আল্লাহর পথে নিহত হন, তাঁদেরকে মৃত বলোনা, বরং তাঁরা জীবিত। কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পারো না।’’
[সূলা আল বাক্বারা, আয়াত-১৫৪]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ্ তা‘আলা শহীদগণকে অনন্ত জীবন দান করেন। তাঁদের নিকট রিযক উপস্থাপিত হয়, বিভিন্ন প্রকার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করা হয়। তাঁদের আমল চালু থাকে। ফলে তাঁদের সওয়াবও বাড়তে থাকে। [খাযাইনুল ইরফান]
রিযক প্রাপ্তির বিষয়টি পবিত্র কুরআনের অন্যত্র এভাবে বর্ণিত হয়েছে, ‘‘যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, কখনো তাঁদের মৃত বলে ধারণা করোনা বরং তাঁরা জীবিত এবং নিজ পালনকর্তার পক্ষ থেকে রিযক প্রাপ্ত হচ্ছেন। তাঁরা সন্তুষ্ট এরই ওপর, যা আল্লাহ্ তাঁদেরকে নিজ অনুগ্রহে দান করেছেন। তাঁদের না আছে কোন ভয়-ভীতি, না কোন দুঃখ। সে খুশীর সংবাদ তারা তাদের পরবর্তী আগমনকারী, যারা এখনো তাঁদের সাথে মিলিত হয়নি, তাদের শুনাতে চান।’’
[সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১৬৯-১৭০]
শহীদদের পুরস্কারের কথা শুধুমাত্র পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়নি, বিশ্বকুল সর্দার প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র পবিত্র জবানেও শহীদদের অনেক মর্যাদার কথা বর্ণিত হয়েছে।
হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমাদের ভাইগণ উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, আল্লাহ্ তাঁদের রূহগুলোকে সবুজ পাখির কাঠামো দান করেন, তাঁরা বেহেশতের নহর সমূহের ওপর উড়ে বেড়ায়, বেহেশতি ফলমূল আহার করে, আরশের নিচে ঝুলানো সোনালী প্রদীপের মধ্যে তাঁরা অবস্থান করে। তাঁদের পানাহার ও আবাসস্থানের জন্য পবিত্র ও আরামদায়ক ব্যবস্থা রয়েছে। তাঁরা বলে, আমাদের ভাইদের এ সংবাদ কে দেবে যে, আমরা জীবিত আছি? যাতে তারা জান্নাত লাভের ক্ষেত্রে অনাসক্ত না হয় এবং জিহাদ থেকে বিমুখ না হয়।’’
হযরত মিকদাম ইবনে মা’দির্কাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘‘আল্লাহর নিকট শহীদদের ছয়টি বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। ১. শহীদদের শরীরের রক্তের প্রথম বিন্দু মাটিতে পড়তেই তাঁর সমস্ত গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়, ২. জান্নাতে শহীদের আবাসস্থান দেখানো হয়, ৩. শহীদদের কবরের আযাব মাফ করে দেয়া হয়, ৪. ভয়ানক ও কষ্টদায়ক কিয়ামতের বিভীষিকা থেকে নিরাপদ থাকে, ৫. তাঁদের মাথায় এমন একটি টুপি পড়ানো হয়, যার একটি ইয়াকুত পাথর দুনিয়া ও দুনিয়ার অভ্যন্তরীণ সকল সম্পদ থেকে উত্তম এবং তাঁদের সাথে বাহাত্তর জন হুরের বিয়ে দেয়া হয় ও ৬. তাঁদের প্রত্যেককে সত্তরজনের সুপারিশ ক্ষমতা দান করা হয়।’’
[জামে’ আত-তিরমিযী, আবওয়াবু ফাদ্বায়িলিল জিহাদ]
সহীহ্ মুসলিম শরীফে শহীদদের গুনাহ্ মাফের কথা এভাবে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আমর ইবনুল আ’স রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘‘শহীদের ঋণ ছাড়া সকল গুনাহ্ তাঁর শাহাদত প্রাপ্তির কারণে ক্ষমা হয়ে যায়।’’
শহীদগণের মৃত্যু কষ্ট ও সকল বান্দাদের মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে সামান্যই। হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘‘শহীদ ব্যক্তি নিহত হওয়ার কষ্ট হলো। তোমাদের মধ্যে কেউ সামান্য একটু চিমড়ি কাটার মতো স্পর্শ অনুভব করবে মাত্র।’’ [জামে আত-তিরমিযী]
কতটা নিয়ামত, অনুগ্রহ, মর্যাদা লাভ করলে শহীদগণ পুনঃপুনঃ শাহাদাতের ইচ্ছা পোষণ করবে! হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘‘একমাত্র শহীদ ছাড়া এমন কোনো ব্যক্তি দুনিয়ায় ফিরে আসতে আনন্দ পাবে না, সে আল্লাহর নিকট এমন কল্যাণপ্রাপ্ত হয়েছে যা দুনিয়া ও তার সমস্ত সম্পদের সমান। কেননা সে বাস্তবে শাহাদতের মর্যাদা দেখতে পাবে, সুতরাং সে দুনিয়ায় ফিরে এসে আরও একবার আল্লাহর পথে প্রাণ দিতে আনন্দ অনুভব করবে।
[সহীহ্ আল-বুখারী]
শহীদানের ইচ্ছা তো সে অনেক দূর স্বয়ং প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বারবার শাহাদাতের ইচ্ছা জ্ঞাপন, শহীদের মর্যাদা আলাদা করে বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না।
হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘সেই সত্ত্বার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমার নিকট অত্যন্ত পছন্দনীয় হচ্ছে, আমি আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যাই। অতঃপর জীবন লাভ করি এবং পুনরায় আবার শহীদ হই, তারপর আবার জীবন লাভ করি এবং পুনরায় শহীদ হই, তারপর আবার জীবন লাভ করি এবং পুনরায় শহীদ হই।’’ [সহীহ্ আল-বুখারী]
সবশেষে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন শহীদদের তাঁর নেয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে সরাসরি ঘোষণা দিয়েছেন। এ মর্মে তিনি এরশাদ করেন, আর যাঁরা আল্লাহ্ ও রসূলের আনুগত্য করেন, তাঁরা সেই বান্দাদের সাহচর্যে থাকবেন, যাঁদের প্রতি আল্লাহ্ নেয়ামত নিয়ে অনুগ্রহ করেছেন। অর্থাৎ (তাঁরা হলেন) নবীগণ, সিদ্দীক বা সত্যনিষ্ঠগণ, শহীদগণ এবং সৎকর্মপরায়ণ প্রিয় বান্দাগণ, এঁরা কত উত্তম সঙ্গী! এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহই, আর আল্লাহ যথার্থই জ্ঞানী’’
[সূরা নিসা, আয়াত-৬৯-৭০]
যাঁরা আল্লাহর অনুগ্রহ লাভে ধন্য হয়েছেন সে চার শ্রেণির নেয়ামত প্রাপ্ত বান্দাদের মধ্যে তৃতীয় প্রকার হলেন শোহাদায়ে কেরাম। পবিত্র কুরআনের অকাট্য ঘোষণা অনুযায়ী, আখেরাতে অনুগত বান্দাদের পুরস্কার তাঁদেরই সাহচর্য। আর এটাও বলা হয়েছে, সঙ্গী হিসেবে এঁরা অতি উত্তম। যদি আল্লাহ্ ও রসূলের আনুগত্যের পুরস্কার পরকালে তাঁদের সাহচর্য হয়, তবে তাঁদের সঙ্গেই থাকা উচিত। দুনিয়াতে শাহাদাতের স্বাদ আস্বাদন থেকে বঞ্চিত হলেও শহীদানের প্রতি ভক্তি, মুহাব্বত ও স্মরণের পথ তো খোলা আছেই। সেই ভক্তি, ভালোবাসা, অনুরাগ, নিষ্ফল যাবে না। পরকালে তাঁদের সাহচর্য কাজে আসবে। তাঁরা তো অবশ্যই কতই না উত্তম সঙ্গী। মহান আল্লাহ্ সকল শহীদানকে ভালোবাসা ও তাঁদের আদর্শ থেকে দীক্ষা নিয়ে আল্লাহ্ ও রসূলের আনুগত্যে দৃঢ় থাকার তৌফিক দান করুন। আ-মী-ন।

লেখিকা: প্রাবন্ধিক।