সমাজসেবী ও ধর্মানুরাগী আলহাজ্ব ছালেহ্ আহমদ সওদাগর

সমাজসেবী ও ধর্মানুরাগী আলহাজ্ব ছালেহ্ আহমদ সওদাগর

 
তরজুমান ডেক্স: 
আওলাদে রাসূল আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও তাঁর সফল উত্তরসূরী আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এদেশে শরীয়ত ও তরিকতের প্রচার-প্রসারে বহু দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও খানকাহ্ শরীফ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁদের এ দ্বীনি মিশনের কাজ বাস্তবায়নে এতদঞ্চলের সৌভাগ্যবান ব্যক্তিবর্গ উদারভাবে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসে স্মারণীয়-বরণীয় হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আলহাজ্ব ছালেহ্ আহমদ সওদাগর রাহমাতুল্লাহি আলায়হি অন্যতম। মহররম মাসে তাঁর ওফাত বার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদনার্থে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবন আলোচনা করা হলো।
চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে ১৯২১ সালে ২১ মার্চ আলহাজ্ব মুহাম্মদ ইসমাইল সওদাগরের ঔরশে এই নিভৃতচারী আশেকে রাসূলের জন্ম। স্থানীয় বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর চট্টগ্রাম শহরের সরকারি হাই স্কুল হতে এন্ট্রাস পাশর করেন। চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ হতে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
 
পড়ালেখার পাঠ শেষ করে জীবিকার অন্বেষণে তিনি ব্যবসায় নেমে পড়েন। ১৯৪২ সালে চট্টগ্রামের বক্সিরহাট  থেকে তাঁর ব্যবসায়িক জীবনের সূচনা। ক্যামিকেল ব্যবসার জগতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে সততা, নিষ্ঠা, মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি বক্সিরহাট-খাতুনগঞ্জের অন্যতম বৃহৎ আমদানিকারকে পরিণত হন। যার বিস্তৃতি পুরান ঢাকার ইসলামপুর, মৌলভী বাজার, ইমামগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি তিনি ঠিকাদারী ব্যবসায়ও সফলতার সাথে অবতীর্ণ হন। কক্সবাজার বিমানবন্দরে প্রাথমিক নির্মাণ কাজ তাঁর হাতে সূচনা হয়েছিল। আর্থিক  উন্নতির পাশাপাশি তিনি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান অত্যন্ত নিষ্ঠা ও মহব্বতের সাথে পালন করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় আওলাদে রাসূল, গাউসে জামান, আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র হাতে বায়আত গ্রহণ করে সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়ায় দাখিল হন।
 
হুজুর কেবলা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র মায়া-মমতায় আপ্লুত হয়ে শরীয়ত তরকিতের খেদমতে তিনি নিজেকে বিলিয়ে দেন। যার ফল স্বরূপ ইন্তেকালের পূর্ব সময় পর্যন্ত তিনি আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট ও জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা চট্টগ্রাম’র পরিচালনা পরিষদের সম্মনিত সদস্য পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। আনজুমান ট্রাস্টের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিনির্মাণে তাঁর অংশগ্রহণ ও খেদমত মাশায়েখে হযরাতে কেরাম ও পীর ভাইদের নিকট অত্যন্ত প্রশংসিত। তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য খেদমত নিম্নরূপঃ
* কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া (কামিল) মাদ্রাসা, ঢাকার উদ্যোক্তাদের অন্যতম হিসেবে প্রতিষ্ঠাকালে আর্থিক ও নির্মাণ কাজের সহায়তা প্রদান।
* জামেয়া আহমদিয়া সুুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা, ষোলশহর, চট্টগ্রাম’র সাবেক অধ্যক্ষ অফিসসহ ত্রিতল ভবন তাঁর অর্থায়নে নির্মাণ- ১৯৮৪ ইংরেজীতে।
* মাদ্রাসা-এ তৈয়্যবিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া চন্দ্রঘোনা, চট্টগ্রাম’র হেফজখানাসহ মূল ভবনের অর্ধাংশ ত্রিতল পর্যন্ত নিজ অর্থায়নে নির্মাণ- ১৯৮৪ ইংরেজীতে।
* জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা, ষোলশহর, চট্টগ্রাম’র বর্তমান ৬ (ছয়) তলা বিশিষ্ট (১৭০’ ঢ ৩৫’) একাডেমিক ভবন নিজ অর্থায়নে নির্মাণ- ১৯৯৮-২০০০ ইংরেজী।
* সিরিকোট শরীফ, পাকিস্তানে জামেয়া তৈয়্যবিয়া মাদ্রাসা (তৈয়্যব-উল-উলুম এডুকেশনাল কমপ্লেক্স) প্রতিষ্ঠাকালে আর্থিক অনুদান প্রদান।
* মাদ্রাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া হালিশহর, চট্টগ্রাম-এ আর্থিক অনুদান প্রদান।
* জমিয়তুল ফালাহ্ জাতীয় মসজিদ, চট্টগ্রাম’র প্রতিষ্ঠাকালীন কার্যকরী পরিষদের সহকারী সম্পাদক হিসেবে মসজিদ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন।
* বদরপাতি জামে মসজিদ বক্সিরহাট’র দ্বিতীয় তলা সম্পূর্ণ নিজ অর্থায়নে নির্মাণ।
* নিজ গ্রামের নোয়াপাড়া ডিগ্রী কলেজ ও নোয়াপাড়া হাইস্কুল প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
 
এ ছাড়া আপন মুর্শিদ হুজুর কেবলা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এবং দরবারে আলিয়া কাদেরিয়ার বর্তমান সাজ্জাদানশীন হুজুর কেবলাদ্বয়ের সন্তুষ্টির আশায় যখন যেখানে যতটুকু সম্ভব আর্থিক সহযোগিতা তিনি করে গেছেন।
জীবদ্দশায় তাঁর নয় বার হজ্বব্রত পালন এবং অসংখ্য বার সিরিকোট শরীফ দরবারে যিয়ারতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়। এ ছাড়া সমসাময়িক কালের অন্যান্য পীর ভাইদের সাথে হুজুর কেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি’র সফরসঙ্গী হিসেবে হজ্ব ও ওমরাহ্ পালনার্থে মক্কা ও মদিনা শরীফ যিয়ারত, বাগদাদ শরীফে বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র মাজার জিয়ারত, আজমীর শরীফে খাজা গরীব-ই নাওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র মাজার যিয়ারত ও বার্মা (মিয়ানমার) সফরে যান। তাঁর সন্তান আলহাজ্ব এস. এম. গিয়াস উদ্দিন শাকের বর্তমানে আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’র এসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। আরেক সন্তান আলহাজ্ব মুহাম্মদ মনোয়ার হোসেন মুন্না আনজুমান ট্রাস্ট’র ওরস কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরের অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়োজিত আছেন। 
হুজুর কেবলা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এবং দরবারে আলিয়া কাদেরিয়ার বর্তমান সাজ্জাদানশীন হুজুর কেবলাদ্বয়ের অত্যন্ত স্নেহভাজন এই আশেকে রাসূল ২১ মর্হরম ১৪২৮ হিজরী মোতাবেক, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০০৭ ইংরেজী শনিবার সকাল ১০:১৭ ঘটিকায় ইন্তেকাল করেন। জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন দায়েম নাজির জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে চিরশায়িত আছেন। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এবং আওলাদে রাসূলগণের উসিলায় তাঁর রাফ্’ঈ দারাজাত নছিব করুন। আ-মী-ন, বিহুরমতে সায়্যিদিল মুরসালিন। 
 
 
 

Share:

Leave Your Comment