কোরবানির জরুরি মাসায়েল

কোরবানির জরুরি মাসায়েল

কোরবানি কার উপর ওয়াজিব
স্বাধীন ও মুক্বীম (অর্থাৎ নিজ শহরের বাসিন্দা হওয়া মুসাফির না হওয়া) ব্যক্তি যিনি মালেকে নেসাব অর্থাৎ এতটুকু সম্পদের অধিকারী হন যতটুকু সম্পদ হলে সাদক্বায়ে ফিত্র ও যাকাত প্রদান ওয়াজিব হয়, তার উপর কোরবানি ওয়াজিব। মালেকে নেসাব’র ব্যাখ্যা হল- মানুষের মৌলিক চাহিদা অর্থাৎ প্রয়োজনীয় খরচ ব্যতীত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য ও সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা ওই পরিমাণ অর্থের মালিক হওয়া। মৌলিক চাহিদা বলতে বাসস্থান, আসবাবপত্র, অন্ন, বস্ত্র, চাকর, সফরের বাহন, হাতিয়ার ও পেশার সরঞ্জাম ইত্যাদি।
মাসআলা : যে ব্যক্তি সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা এ পরিমাণ অর্থ অথবা এমন কোন সামগ্রীর মালিক হয়, যার মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য পরিমাণ হয়, তাহলে সে ধনী হিসেবে বিবেচিত, তাঁর উপর কোরবানি ওয়াজিব। [আলমগীরী]

যেসব পশু দ্বারা কোরবানি দেয়া যায়েজ
গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা ইত্যাদি চতুস্পদ হালাল গৃহপালিত পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েয।

কোরবানির পশুর বয়স
কোরবানির ছাগল কমপক্ষে ১ বছর, গরু ২ বছর এবং উট ৫ বছর বয়সের হতে হবে। কোরবানির জন্য সুন্দর ও নিখুঁত পশু বাছাই করা উত্তম। যেসব পশু অন্ধ ও খোঁড়া এমন যে, যবেহ করার স্থানে যেতে অক্ষম, শিং ভাঙ্গা, লেজ এবং কান কাটা বা দুর্বল ইত্যাদি পশু কোরবানির উপযুক্ত নয়।

কোরবানির সময়
চান্দ্র মাস যিলহজ্বের ১০ হতে ১২ তারিখ পর্যন্ত অর্থাৎ তিনদিন দুই রাত।
মাসআলা : কেউ যদি বলে আমার ঐ কাজটি হয়, তাহলে আমি কোরবানি করব। অথবা আল্লাহ্র কসম এ পশুটিকে আমি অবশ্যই আল্লাহ্র ওয়াস্তে কোরবানি করব- এ দু’শ্রেণীর লোক ধনী হোক কিংবা গরীব হোক, এদের উপর কোরবানি ওয়াজিব। [বাদায়ে’: ৫:৬২]
মাসআলা : কোন ধনী লোক মান্নতের কোরবানি দিলে, তার উপর যে কোরবানি ওয়াজিব, তা থেকে অব্যাহতি পাবেনা; বরং তার উপর পৃথকভাবে কোরবানি ওয়াজিব হবে; অর্থাৎ তাকে দু’টি কোরবানি দিতে হবে- একটি মান্নতের অপরটি মালেকে নেসাব হওয়ার কারণে। যদি কোরবানির দিন শপথ করে তাহলে শপথের কোরবানি দ্বারা ওয়াজিব কোরবানিও আদায় হয়ে যাবে।
মাসআলা: কোরবানির পশু ক্রয়ের আগে কোরবানির পশুর অংশীদার ঠিক করা উত্তম। পশু ক্রয়ের পর অন্য কাউকে অংশীদার বানাতে চাইলেও পারবে; কিন্তু তা মাকরূহ।
মাসআলা: কোন গরীব লোক কোরবানির নিয়্যতে পশু ক্রয় করলে ঐ পশু হারিয়ে যাওয়ার পর যদি আবার ফিরে আসে, তবে ওই পশুতে অংশীদার নেয়া মাকরূহ।
মাসআলা: জীবিতের কোরবানি, মৃত ব্যক্তির (ওসিয়তের) কোরবানি এবং আক্বীক্বাকারী কোরবানির পশুতে অংশীদার হতে পারবে; কিন্তু শর্ত হলো সবার উদ্দেশ্য যেন আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার জন্য হয়। কেউ যেন শুধু গোশ্ত খাওয়ার উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে।
মাসআলা : কেউ যদি তার মৃত মা-বাবা ও দাদা-দাদীর রূহে সাওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে এক অংশ কোরবানি করতে চায়, তাহলে পারবে। এতে কোরবানিদাতা একজন হলেও সবাই সাওয়াবের অংশীদার হবে।
মাসআলা: প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ে অথবা স্ত্রীর অথবা এমন ব্যক্তির, যার উপর কোরবানি করা ওয়াজিব হয়েছে, ওয়াজিব কোরবানি তাদের অনুমতি ব্যতিরেকে তাদের পক্ষ হয়ে কেউ কোরবানি করলে কোরবানির ওয়াজিব আদায় হবে না। এমনকি তার কোরবানির পশুর শরীকদার ব্যক্তিদের কোরবানিও হবে না। কিন্তু‘ যার প্রতি বছর কোরবানি করার অভ্যাস আছে, তার কোরবানি জায়েয হবে। কিন্তু এ অবস্থায়ও অনুমতি বা পরামর্শ করা বেশী ভাল। [ফাত্ওয়া-এ কাযী খান : ২০২পৃষ্ঠা]
মাসআলা : কেউ কোরবানির পশু ক্রয় করার পর পশুটি হারিয়ে গেছে। এমতাবস্থায় আরেকটি পশু ক্রয় করার পর প্রথমে হারিয়ে যাওয়া পশুটিও আবার পেয়ে গেল। এ অবস্থায় নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হলে অর্থাৎ যার উপর কোরবানি ওয়াজিব হয়নি, তার উপর দুটিই কোরবানি দেয়া ওয়াজিব। যদি মালেকে নেসাব হয়, তাহলে একটি যবেহ করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে প্রথমটির চেয়ে দ্বিতীয়টির মূল্য যাতে কম না হয়। কম হলে ওই পরিমাণ অর্থ সাদক্বা করে দেয়া ওয়াজিব।
[বাদায়ে’: ৫ : ৬৬]
মাসআলা : কেউ যিলহজ্বের ১০-১২ তারিখ পর্যন্ত তিন দিন দুই রাতের মধ্যে যদি কোরবানি করতে সক্ষম না হয়, তাহলে তিনদিন পর ভেড়া বা ছাগলের মূল্য পরিমাণ অর্থ সাদক্বা করে দেয়া ওয়াজিব। যদি মুমূর্ষু হয়, তাহলে ওসিয়ত করা কর্তব্য।
মাসআলা: কোরবানি কাযা হয়ে যাওয়ার পর যদি কেউ কোন পশু যবেহ করে, তবে তা সাদক্বা করে দেয়া ওয়াজিব। যদি মূল্য কম হয়েছে বলে মনে হয় তবে যে পরিমাণ মূল্য কম হয়েছে বলে মনে হবে, সে পরিমাণ মূল্য সাদক্বা করে দেয়া ওয়াজিব। ওই পশুর যে পরিমাণ গোশ্ত নিজে অথবা বন্ধু-বান্ধবদের খাইয়েছে ওই পরিমাণ গোশ্তের মূল্য সাদক্বা করে দেয়া ওয়াজিব।
মাসআলা: কোরবানির ৩ দিনের মধ্যে অর্থাৎ যিলহজ্বের ১০-১২ তারিখের মধ্যে পশুর দাম সাদক্বা করে দেয়া হলে, কোরবানির ওয়াজিব আদায় হবে না এবং সব সময় গুনাহগার থেকে যাবে। কেননা কোরবানি তেমনই একটি ইবাদত, যেমন- নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাত। যেভাবে নামায দ্বারা যাকাতের ফরজ আদায় হয় না, সেভাবে সাদক্বা দ্বারা কোরবানিও আদায় হয় না।
মাসআলা: কোরবানির দিনসমূহের মধ্যে কোরবানির নিয়তে মোরগ-মুরগী ইত্যাদি যবেহ করা মাকরূহ। [আলমগীরী – ৪:১০৫]

অংশীদারিত্বে কোরবানির নিয়ম
গরু, মহিষ ও উট এ তিন প্রকার পশুর প্রত্যেকটিতে এক হতে সাতজনের নামে কোরবানি করা যায়। তবে শর্ত হল সব ক’টি অংশ শুধুমাত্র আল্লাহ্র ওয়াস্তে হতে হবে; নিছক গোশত খাওয়ার খেয়ালও থাকতে পারবে না। এক পশুতে কয়েকজন শরীক থাকলে, গোশ্ত পাল্লা দিয়ে ওজন করে সমপরিমাণে ভাগ করে নিতে হবে।
কোন শরীকদার বেশী পেয়ে থাকলে অন্যরা মাফ করে দিলেও কারো কোরবানি বৈধ হবে না। সম্মিলিত কোরবানির পশু ক্রয় করার পর তাতে ভাগ বা অংশ অবশিষ্ট থাকলে অন্য লোককে শামিল করতে কোন অসুবিধা নেই। কেউ একা কোরবানি করার মানসে পশু ক্রয় করলেও তাতে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে ক্রয় করার পূর্বে অংশীদার ঠিক করে নেয়া উত্তম; অন্যথায় মাকরূহ।

রাসূলে পাকের পক্ষ থেকে কোরবানি
আমাদের প্রিয় আক্বা ও মাওলা হযরত আহমদ মুজতাবা মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সার্বজনীন মেহেরবানী দেখুন। তিনি স্বয়ং তাঁর উম্মতের পক্ষ থেকে কোরবানি করেছেন এবং ওই সময়ও উম্মতের কথা স্মরণ রেখেছেন। তাই এটা সৌভাগ্যের বিষয় হবে, যার পক্ষে সম্ভব, সে যেন হুযূর আকরামের জন্য কোরবানি করে। [বাহারে শরীয়ত]
গরু, উট দ্বারা কোরবানি করলে নফল হিসেবে এক ভাগ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে কোরবানি দেয়া অতি উত্তম। শরীকদারী কোরবানিতে শরীকগণ সবাই মিলে এক বা একাধিক অংশ হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র পক্ষ থেকে কোরবানি দিতে পারবে।

কোরবানির গোশ্ত ভাগ করার নিয়ম
কোরবানির গোশ্ত ৩ ভাগে ভাগ করে এর ১ ভাগ গরীব ও ইয়াতীম-মিসকীনদের দান করা, ১ ভাগ আত্মীয়-স্বজনকে দেয়া এবং অন্য ভাগ নিজে রাখা মুস্তাহাব। কোরবানির পশু যবেহকারী ও গোশ্ত প্রস্তুতকারীকে কোরবানির পশুর গোশ্ত থেকে পারিশ্রমিক স্বরূপ দেয়া যাবে না।

চামড়া
কোরবানির পশুর চামড়া, নাড়িভূঁড়ি, রশি ও ফুলের মালা প্রভৃতি সাদক্বা করে দিতে হবে। চামড়া সাদক্বা না করে নিজেও ব্যবহার করতে পারবে; যেমন- জায়নামায, বিছানা ইত্যাদি বানাতে পারবে। কিন্তু কোরবানির চামড়া বিক্রি করে এর মূল্য নিজ কর্মে ব্যয় করতে পারবে না। এ টাকা গরীব মিসকীনদের মাঝে সাদক্বা করে দেয়া ওয়াজিব।
চামড়া দ্বীনী-সুন্নী মাদ্রাসায়ও সাদক্বা করে দেয়া যায়, যদি উক্ত মাদ্রাসায় লিল্লাহ ফাণ্ড বা মিসকীন ফাণ্ড থাকে। কোরবানির পশুর পেটে জীবিত বাচ্চা হলে সেটিকেও যবেহ করে দিতে হবে। তখন সেটার গোশ্তও আহার করা যাবে। যদি মৃত হয় তাহলে ফেলে দিতে হবে। কোরবানির উদ্দেশ্যে ক্রয় করা পশু কোরবানির পূর্বে বাচ্চা দিলে সেই বাচ্চাকেও যবেহ করে দিতে হবে। অথবা বাচ্চা বিক্রি করে টাকাগুলো সাদক্বা করে দিতে হবে। বাচ্চা যদি কোরবানির দিনসমূহে যবেহ করা না হয়, তাহলে সাদক্বা করে দিতে হবে।
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি
যদি মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি দেয়া হয় তাহলে গোশ্ত উপরোল্লিখিত নিয়মে বন্টন করতে হবে। তবে যদি মৃত ব্যক্তির অসিয়ত পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি করা হলে তার সবটুকু সাদক্বা করে দেয়া ওয়াজিব।

কোরবানির পশু যবেহ করার নিয়ম
যবেহ করার নিয়ম জানা থাকলে কোরবানির পশু নিজ হাতে যবেহ করা মুস্তাহাব। যদি নিজে করতে না পারে, তাহলে অন্যের মাধ্যমেও তা সমাধা করা যাবে। তবে যবেহ্’র সময় নিজে সামনে থাকা উত্তম।

যবেহ্’র সময় নিম্বের রগসমূহ কাটার ব্যাপারে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে-
শ্বাসনালী, খাদ্যনালী এবং রক্ত চলাচলের রগ দু’টি। বক্ষস্থল হতে গলদেশের মধ্যবর্তী কোন স্থানে যবেহ করা বাঞ্ছনীয়। যবেহ্’র পূর্বে ছুরি খুব ধারালো করে নিতে হবে। তারপর কোরবানির পশুর মাথা দক্ষিণে এবং পেছনের দিক উত্তর দিকে রেখে ক্বেবলামুখী করে শায়িত করে এ দু’আ পড়তে হবে।
ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস সামাওয়াতী ওয়াল আরদ্বা হানীফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন, ইন্না সালাতী ওয়ানুসুুকী ওয়া মাহ্য়ায়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রব্বিল আলামীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বলে কোরবানির পশু যবেহ করার পর পাঠ করবেন- ‘আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন্নী (অংশীদার থাকলে- ‘ওয়া মিন’ বলার পর প্রত্যেকের নাম ও বাপের নাম) কামা তাকাব্বালতা মিন খলীলিকা ইব্রাহীমা আলায়হিস্ সালাম ওয়া হাবীবিকা মুহাম্মাদিনিল মুস্তফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম।’
এ দু‘আ জানা না থাকলে যাদের জন্য কোরবানি হবে তাদের নামগুলো স্মরণ করে মনে মনে নিয়ত করে নিয়ে কোরবানি করলেও দুরস্ত হবে।

ঈদুল আযহা নামাযের নিয়ম
সূর্য ওঠার পর হতে দুপুরের পূর্ব পর্যন্ত ঈদুল আযহার নামাযের সময়। এ দিন মিস্ওয়াক ও গোসল করবেন। তারপর ভাল কাপড় পরিধান করে, খোশ্বু লাগিয়ে তাকবীর বলতে বলতে ঈদগাহের দিকে রওয়ানা হবেন।

নামাযের নিয়ত
নাওয়াতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্‘আতায় সালাতি ঈদিল আদ্বহা মাআ‘সিত্তি তাকবীরাতিন ওয়াজিবিল্লাহি তা‘আলা ইক্বতিদায়তু বিহা-যাল ইমাম, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘আবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
যদি নামাযের নিয়্যত জানা না থাকে তাহলে এভাবে বাংলায় নিয়্যত করবেন- আমি ঈদুল আযহার ২ রাক্‘আত নামায ৬ তাকবীরের সাথে আল্লাহর ওয়াস্তে কেবলামুখী হয়ে এই ইমামের পিছনে ইক্বতিদা করে আদায় করছি তারপর ‘আল্লাহু আকবর’ বলে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে নাভীর নিচে হাত বেঁধে নামায শুরু করবেন। অতঃপর সানা (সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বি হামদিকা ওয়া তাবা-রকাস্মুকা ওয়া তা‘আ-লা- জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলা-হা গায়রুকা) পাঠান্তে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ৩টি অতিরিক্ত তাকবীর বলতে হবে এবং হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠিয়ে ছেড়ে দেবেন, বাঁধবেন না; কিন্তু তৃতীয় তাকবীরের পর হাত বেঁধে নেবেন এবং মনযোগ দিয়ে ইমামের ক্বিরাআত শুনবেন।
ক্বিরাআতের পর রুকূ’-সাজদার মাধ্যমে প্রথম রাক্‘আতের পরে দ্বিতীয় রাক্‘আতের রুকূ’তে যাওয়ার পূর্বক্ষণে ইমাম ৩টি অতিরিক্ত তাকবীর বলবেন তখন মুক্বতাদীগণ কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে প্রত্যেক বারই হাত ছেড়ে দেবে। অতঃপর যথারীতি রুকূ’-সাজদার মাধ্যমে ঈদুল আযহার নামায সমাপ্ত করবেন। নামাযের পর মন দিয়ে চুপচাপ ইমামের খুতবা শ্রবণ করবেন। ইমাম তাকবীর বলার সময় মুক্বতাদীগণও মনে মনে তাকবীর বলবেন।

কোরবানি দিবসের করণীয়
হাদীস শরীফ- হুযূর আক্বদাস সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিত্রের দিন মিষ্টি জাতীয় কিছু আহার করে ঈদগাহে তাশরীফ নিতেন; কিন্তু ঈদুল আযহার দিবসে নামায আদায় না করা পর্যন্ত কিছুই আহার করতেন না। [তিরমিযী, দারিমী ও ইবনে মাজাহ]
মাসআলা: ঈদুল আযহায়ও ঐসব বিষয়ই মুস্তাহাব, যেগুলো ঈদুল ফিত্রে ছিল। তবে ঈদুল আযহার ভিন্নতা হলো যে, নামাযের পূর্বে কিছু না খাওয়া, (খেলে কোন ক্ষতি হবে না বা মাকরূহও হবে না)। ঈদগাহে যাওয়ার সময় উঁচু আওয়াজে তাকবীর বলা, ঈদুল আযহার নামায কোন বিশেষ কারণ বশত ১২ যিলহজ্ব পর্যন্ত দেরী করা যাবে এরপর নয়। তবে বিনা কারণে ১০ যিলহজ্ব থেকে বিলম্ব করা মাকরূহ। [আলমগীরী]
মাসআলা: যারা কোরবানি করবে তাদের ১ যিলহজ্ব থেকে ১০ যিলহজ্ব পর্যন্ত দাঁড়ি, চুল না ছাঁটা ও নখ না কাটা মুস্তাহাব। [রদ্দুল মুখতার]

তাকবীর-ই তাশরীক্ব
যিলহজ্বের ৯ তারিখের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত জামা‘আতে শরীক সকল মুক্বতাদী ও ইমামের উপর ফরয নামায আদায়ের পর ১বার উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করা ওয়াজিব এবং ৩ বার পড়া উত্তম। ঈদুল আযহা ও জুম‘আর নামাযের পরও তাকবির পাঠ করবে।

তাকবীর
আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ।
মাসআলা: তাকবীর জমাআতে আদায়কৃত ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর পরপর পড়া ওয়াজিব। যদি কেউ সালামের পর পর তাকবীর না পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে যায়, অথবা ইচ্ছাকৃত ওযূ নষ্ট করে ফেলে, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে তাকবির না বলে আলাপ-আলোচনা শুরু করে দেয়, তবে সে গুনাহগার হবে। তখন তাকবির আর বলবে না। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত অযূ ভঙ্গ হয়ে গেলে তখন তাকবির বলবে। বিতির, সুন্নাত ও নফল নামাযের পর তাকবির ওয়াজিব নয়। জমাআত ছাড়া একাকি নামায আদায়কারী উক্ত দিনসমূহে ফরয নামাযের পর তাকবির পড়া উত্তম। [রদ্দে মোহতার ও জওহরা]

আক্বীকা
অনেককে কোরবানির সাথে আক্বীকাও আদায় করতে দেখা যায়। তাই নি¤েœ আক্বীকা সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হল।
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার শুকরিয়াস্বরূপ যে পশু (গরু-ছাগল) যবেহ করা হয় তাকে আক্বীকা বলে।
মাসআলা : আক্বীকা করা সুন্নাত এবং এর জন্য সন্তান জন্মের ৭ম দিনই উৎকৃষ্ট যদি সম্ভব না হয়, তাহলে ৭ম দিনে অথবা ৭ম দিবসে সম্ভব না হলে পরে ১৪তম দিবসে অথবা ২১তম দিবসে অথবা তার পরে যে কোন দিন আদায় করলেও সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।
মাসআলা: আক্বীকা ছেলে সন্তান হলে দুই অংশ আর মেয়ে সন্তান হলে এক অংশ আদায় করবে। এটা উত্তম ও সুন্নাত তরিকা।
মাসআলা: কোরবানির সাথে আক্বীকাও স¤পৃক্ত করা যাবে।
মাসআলা: কোরবানির পশুর জন্য যে শর্ত আক্বীকার পশুর জন্যও অনুরূপ শর্ত।
মাসআলা: আক্বীকার গোশ্ত আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কাঁচা অথবা রান্না করে জেয়াফত আকারে বিতরণ করা যায়।
মাসআলা : আক্বীকার গোশ্ত পিতা-মাতা, দাদা-দাদী সবাই খেতে পারবে; তাতে কোন বাধা নেই।
মাসআলা : আক্বীকার চামড়ার হুকুম কোরবানির পশুর চামড়ার অনুরূপ।

 

Share:

Leave Your Comment