সুদ-ঘুষ

সুদ-ঘুষ

= ঘুষ =

ইসলামে হালাল ও হারামের ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আল্লাহ পাকের নিকট ইবাদত কবূল হবার পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল জীবিকা, হালাল উপার্জন। হালাল উপার্জন ও তজ্জন্য চেষ্টা-ফিকির করাও ইবাদত। বান্দার উপার্জন যদি সৎপথে না হয় অর্থাৎ হালাল না হয়, তাহলে তার কোন ইবাদতই আল্লাহ তা’আলার নিকট গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই দয়াবান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর বান্দাদের জন্য হালালকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন এবং হারাম বিষয়গুলোকেও চিহ্নিত করে দিয়েছেন।

যে সব জিনিস পবিত্র, পরিচ্ছন্ন এবং উৎকৃষ্ট সে সবই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মানুষের জন্য হালাল করেছেন। পবিত্র ক্বোরআনে এরশাদ হয়েছে-یَسْءَلُوْنَکَ مَاذَا اُحِلَّ لَہُمْط قُلْ اُحِلَّ لَکُمُ الطَّیِّبٰتُ তরজমাঃ ‘‘লোকেরা আপনাকে প্রশ্ন করবে তাদের জন্য কি কি হালাল করা হয়েছে? বলুন, সমস্ত পবিত্র ও ভাল জিনিস তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে।’’ [সূরা মা-ইদাহ্‌, আয়াত-৪]

আরো এরশাদ হয়েছে- اَلْیَوْمَ اُحِلَّ لَکُمْ الطَّیِّبٰتُ তরজমাঃ আজ তোমাদের জন্য সমস্ত পবিত্র ও ভাল জিনিসগুলো হালাল করা হলো।’’  [সূরা মা-ইদাহ্‌, আয়াত-৫]

পবিত্র ক্বোরআনের বাণী- وَکُلُوْا مِمَّارَزَقَکُمْ حَلٰلاً طِیِّبًا وَاتَّقُوا اللّٰہَ الَّذِیْ اَنْتُمْ بِہٖ مُؤْمِنُوْنَ O তরজমাঃ আল্লাহ তোমাদেরকে যে হালাল ও উৎকৃষ্ট জীবিকা দিয়েছেন তা হতে ভক্ষণ করো এবং ভয় করো আল্লাহকে যার প্রতি তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছো।’’ [সূরা মা-ইদাহ্‌, আয়াত- ৮৮]

পবিত্র ক্বোরআনে আরো বলা হয়েছে- یَاَیُّہَا النَّاسُ کُلُوْا مِمَّا فِیْ الْاَرْضِ حَلاَلاً طَیِّبًا صلیز وَلاَ تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّیْطٰنِطاِنَّہُ لَکُمْ عَدُوُّ مُّبِیْنٌ O তরজমাঃ হে মানবজাতি! পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে তা হতে তোমরা আহার করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।    [সূরা বাক্বারা, আয়াত ১৬৮]

فَکُلُوْا مِمَّا رَزَقَکُمْ اللّٰہَ حَلاَلاً طَیِّبًاص وَّ اشْکُرُوْا نِعْمَتَ اللّٰہِ اِنْ کُنْتُمْ اِیَّاہُ تَعْبُدُوْنَ  তরজমাঃ আল্লাহ তোমাদেরকে হালাল ও পবিত্র যা দিয়েছেন তা থেকে তোমরা আহার করো এবং আল্লাহর অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করো।’’ [সূরা নাহ্‌ল, আয়াত-১১৪]

হযরত রাল~লুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-

طَلَبُ الْحَلَالِ فَرِیْضَۃٌ عَلٰی کُلِّ مُسْلِمٍ وَّ مُسْلِمَۃٍ অর্থাৎ প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর উপর হালাল জীবিকা অন্বেষণ করা ফরয। [আল হাদীস]

প্রিয় নবী রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, ‘‘যে হালাল দ্রব্যের মধ্যে হারামের সংমিশ্রণ নেই, এরূপ হালাল বস্তু যে ব্যক্তি একাধারে ৪০ দিন পর্যন্ত আহার করে, আল্লাহ তা’আলা তার হৃদয়কে জ্যোর্তিময় করে দেন এবং তার অন্তর হতে হিকমতের উৎস প্রবাহিত করে দেন।’’ একদিন হযরত সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র দরবারে আরয করলেন,  ‘‘এয়া রাসূলুল্লাহ! আমার জন্য দু’আ করুন, আমি যে বিষয়ের জন্য আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করি তা যেন কবূল হয়।’’ উত্তরে আল্লাহর প্রিয় রাল~ল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হালাল খাদ্য ভক্ষণ করো, তাতেই তোমার সকল দো’’আ কবূল হবে।’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন- اَلرَّجُلُ یُطِیْلُ السَّفْرَ اَشْعَثَ اَغْبَرَ یَمُدُّ یَدَیْہِ اِلٰی السَّمَآءِ یَا رَبَّ یَا رَبِّ وَمَطْعَمُہٗ حَرَامٌ وَمَشْرَبُہٗ حَرَامٌ وَ مَلْبَسَہٗ حَرَامٌ وَغُذِّیَ بِالْحَرَامِ فَانّٰیْ یُسْتَجَابُ لِذَالِکَ  অর্থাৎ এক ব্যক্তি দীর্ঘ পথ সফর করে, তার মাথার চুল এলোমেলো, ধূলিবালিময়, পদযুগল মলিন, সে তার দু’টি হাত উপরের দিকে তুলে দোঞ্চআ করে, হে আমার রব, হে আমার রব! কিন্তু তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিচ্ছদ হারাম, হারাম খাদ্যে সে লালিত পালিত হয়েছে। এহেন ব্যক্তির দো’আ আল্লাহর নিকট কি করে কবূল হতে পারে?    [সহীহ্‌ মুসলিম ও তিরমিযী]

হাদীস শরীফে রয়েছে- যদি কোন ব্যক্তি দশ দিরহাম মূল্যের বস্ত্র ক্রয় করে এবং তার মধ্যে এক দিরহাম হারাম মিশ্রিত থাকে তবে যতদিন পর্যন্ত হারাম বস্ত্রখানি  তার শরীরে থাকবে, ততোদিন তার নামায কবূল হবে না।’’ তিনি আরো বলেছেন: হারাম বস্তু ভক্ষণের ফলে শরীরে যে রক্ত, মাংস গঠিত হয় তা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে।          [বায়হাক্বী]

রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন- জীবিকা উপার্জন হালাল পন্থায় হচ্ছে, না হারাম পন্থায়, সেদিকে যার সতর্ক দৃষ্টি থাকে না, তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপের সময় কোন্‌ পথে নিক্ষেপ করা হবে আল্লাহ পাক সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করবেন না। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেন-

لاَ یَکْسِبُ عَبْدٌ مَالاً حَرَامًا فَیَتَصَدَّقُ بِہٖ فَیُقْبَلُ مِنْہُ وَلاَ یُنْفِقُ مِنْہُ فَیُبَارِکُ لَہُ فِیْہٖ وَلاَ یَتْرُکُہٗ خَلْفَ ظَہْرِہٖ اِلاَّ کَانَ زَادُہٗ اِلٰی النَّارِ

অর্থাৎ যে কোন বান্দাই হারাম সম্পদ উপার্জন করে অতঃপর তা সাদ্‌ক্বাহ্‌ করে, তা কবূল হবে না, তা থেকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করলে তাতে বরকত হবে না এবং যে সম্পদ সে রেখে যায়, তা তার জন্য জাহান্নামের পথেরই পাথেয় হবে। [মুসনাদে ইমাম আহমদ]