আসমানী কিতাবগুলোর উপর ঈমান

আসমানী কিতাবগুলোর উপর ঈমান

৩. আসমানী কিতাবগুলোর উপর ঈমান 

ইসলামের পরিভাষায় ‘কিতাব’ বলতে বুঝায় এমন গ্রন্থকে, যা মানব জাতির হিদায়ত তথা পথ নির্দেশের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ হতে নবী-রসূলের উপর যুগে যুগে অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত আবূ যর গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত হাদিস শরীফ থেকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হতে জানা যায়-হযরত আদম আলায়হিস্‌ সালাম হতে আরম্ভ করে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত মোট ১০৪ খানা কিতাব ও সহীফা নাযিল হয়েছে। এর মধ্যে চারটি প্রধান-

এক. তাওরীত, যা হযরত মূসা আলায়হিস্‌ সালাম-এর উপর নাযিল হয়েছে।

দুই. যাবূর, যা হযরত দাউদ আলায়হিস্‌ সালাম-এর উপর নাযিল হয়েছে।

তিন. ইন্‌জীল, যা হযরত ঈসা আলায়হিস্‌ সালাম-এর উপর নাযিল হয়েছে।

চার. ক্বোরআন মজিদ, যা নাযিল হয়েছে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উপর। অবশিষ্ট ১০০খানা সহীফার মধ্যে ১০ খানা নাযিল হয়েছে হযরত আদম আলায়হিস্‌ সালাম-এর উপর। ৫০ খানা হযরত শীস্‌ আলায়হিস্‌ সালাম-এর উপর, ১০ খানা হযরত ইবরাহীম আলায়হিস্‌ সালাম -এর উপর এবং ৩০ খানা নাযিল হয়েছে হযরত ইদরীস আলায়হিস্‌ সালাম-এর উপর।  [তাফসীরে কবীরঃ ইমাম রাযী]

ক্বোরআন মজীদের শুরুতে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন-وَالَّذِیْنَ یُؤْمِنُوْنَ بِمَآ اُنْزِلَ اِلَیْکَ وَمَآ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِکَ

তরজমাঃ  এবং তারাই (মুত্তাক্বী), যারা ঈমান আনে সেটার উপর, যা হে মাহবূব! আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে। [সূরা বাক্বারা, আয়াত-৪, তরজমা- কান্‌যুল ঈমান।]

তবে আসমানী কিতাবগুলোর মধ্যে অনেক কিতাব এখন অনুপস্থিত। আর যেগুলো বর্তমানে পাওয়া যায়, সেগুলোর মধ্যে পবিত্র ক্বোরআন ছাড়া আর কোন কিতাবই মূল ভাষা ও অর্থে সুরক্ষিত নেই।

৪. নবী-রসূলগণের উপর ঈমান

আল্লাহ তা’আলা মানব জাতির হিদায়তের জন্য যুগে যুগে নবী ও রসূলগণকে প্রেরণ করেছেন। ইসলামের মৌলিক বিধানের মধ্যে নবী-রসূলগণের উপর ঈমান আনা অন্যতম। আল্লাহ তা’আলা হযরত আদম আলায়হিস্‌ সালাম হতে আরম্ভ করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত অসংখ্য নবী ও রসূল প্রেরণ করেছেন। পবিত্র ক্বোরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে-

وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلاً مِّنْ قَبْلِکَ مِنْہُمْ مَّنْ قَصَصْنَا عَلَیْکَ وَ مِنْہُمْ مَّنْ لَّمْ نَقْصُصْ عَلَیْکَ

তরজমাঃ  এবং নিশ্চয় আমি আপনার পূর্বে রসূল প্রেরণ করেছি, যাদের মধ্যে কারো অবস্থাদি আপনার নিকট বর্ণনা করেছি এবং কারো কারো অবস্থাদি বর্ণনা করি নি।

[সূরা মু’মিন, আয়াত-৭৮, তারজমা- কান্‌যুল ঈমান]

আল্লাহ তা’আলা তাঁর স্বীয় সত্তার উপর ঈমান আনার সাথে সাথে নবী ও রসূলগণের উপর ঈমান আনার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

পবিত্র ক্বোরআনে এরশাদ হয়েছে-

کُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰہِ وَمَلَآءِکَتِہٖ وَکُتُبِہٖ وَرُسُْلِہٖ لاَنُفَرِّقُ بَیْنَ اَحَدِ مِّنْ رُّسُلِہٖ وَقَالُوْا سَمِعْنَا وَ اَطَعْنَا غُفْرَانَکَ رَبَّنَا وَ اِلَیْکَ الْمَصِیْرُ

অর্থাৎ-সবাই মেনে নিয়েছে আল্লাহ, তাঁর ফিরিশ্‌তাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রসূলগণকে একথা বলে যে, ‘আমরা তাঁর কোন রসূলের উপর ঈমান আনার মধ্যে তারতম্য করি না।’ আর আরয করেছে, ‘আমরা শুনেছি ও মান্য করেছি।’ তোমার ক্ষমা হোক হে আমাদের রব এবং তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। [সূরা বাক্বারা, আয়াত-২৮৫, তরজমা- কান্‌যুল ঈমান] (এ বিষয়ে রেসালত অংশে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।) [গাউসিয়া তরবিয়াতী নেসাব, পৃ.৪৫-৪৭]