কি কি কারণে রোযা না রাখার অনুমতি আছে বা রোযা ভঙ্গ করতে পারে

কি কি কারণে রোযা না রাখার অনুমতি আছে বা রোযা ভঙ্গ করতে পারে

কি কি কারণে রোযা না রাখার অনুমতি আছে বা রোযা ভঙ্গ করতে পারে

১. মহিলাদের গর্ভাবস্থায়, ২. স্তন্য দান, ৩. সফর, ৪. অসুস্থতা, ৫. বার্ধক্য, ৬. জীবন নাশের আশংঙ্কা, ৭. মস্তিস্ক বিকৃতি ও ৮. জিহাদ.

এসব কারণে রমযানের রোযা না রাখার অনুমতি আছে এবং এসব কারণ দূরীভূত হওয়ার পর বাদ পড়া রোযাসমূহের প্রতিটি রোযার বদলে একটি করে ক্বাযা আদায় করতে হবে।

মাসআলাঃ গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী মহিলা রোযা রাখলে নিজের জীবনের বা গর্ভের শিশুর অথবা দুগ্ধপায়ী শিশুর জীবন নাশের আশঙ্কা হয়, তাহলে রোযা না রাখার অনুমতি আছে বা রোযা ভঙ্গ করতে পারে। স্তন্যদাত্রী শিশুর মা ও ধাত্রী একই বিধানের আওতাভুক্ত। তদ্রূপ অসুস্থতার দরূন রোযা না রাখার অনুমতি আছে তখনই, যখন রোগ বৃদ্ধির বা বিলম্বে আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সুস্থ ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হওয়ার নিছক খেয়াল অথবা বাহানা করে রোযা ছেড়ে দেয়ার অনুমতি নেই। দৃঢ় ধারণা ও পূর্ণ বিশ্বাসের তিনটি ধরন বা লক্ষণ আছেঃ এক. রোগ বৃদ্ধির বা জীবন নাশের বাহ্যিক লক্ষণ পাওয়া গেলে, দুই. নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং তিন. এমন অভিজ্ঞ ও পারদর্শী মুসলিম ডাক্তারের পরামর্শ; যে ফাসেক্ব নয়। উক্ত বিষয়সমূহের কোন একটি পাওয়া না গেলে বরং নিছক খেয়াল ও কল্পনার ভিত্তিতে বা ফাসিক্ব ডাক্তারের পরামর্শক্রমে রমযানের রোযা ভঙ্গ করলে ক্বাযা ও কাফ্‌ফারা উভয়টা আবশ্যক হবে। [রদ্দুল মুহতার ইত্যাদি]

উল্লেখ্য যে, কোন অনভিজ্ঞ চিকিৎসক সামান্য সর্দির মত রোগের কারণেও রোযা ভঙ্গের নির্দেশ ও পরামর্শ দিলে তার পরামর্শক্রমে রোযা ভঙ্গ করা যাবে না।

 মাস্‌আলাঃ  যে সফররত অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি আছে, তা দ্বারা শর’ঈ সফর বুঝানো হয়েছে। সাধারণ বা মা’মুলী ৮/১০ মাইলের সফরের কারণে রোযা ভঙ্গ করার অনুমতি নেই। শর’ঈ সফর বলতে তিন মঞ্জিল বা ৫৭/৬১ মাইল বা আরো অধিক পথ পায়ে হেঁটে বা যে কোন বাহনে চড়ে কিংবা যান্ত্রিক উপায়ে অতিক্রম করা এবং ১৫ (পনর) দিনের ভিতরে স্বীয় অবস্থানে ফিরে আসার কিংবা অন্যত্র সফর করার নিয়্যত করা। তবে মুসাফিরের যদি সফরের সময়ে কোন ক্ষতি না হয় তবে সফরে রমযানের রোযা রাখা উত্তম ও অনেক সাওয়াবদায়ক। অবশ্য কোন মুসাফির যদি শর’ঈ অর্ধদিবসের বা সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার আগে রমযান মাসে নিজ গৃহে বা স্বীয় অবস্থানে ফিরে আসে, কিন্তু তখনো সে কিছু আহার করে নি, তাহলে ওই দিনের রোযার নিয়্যত করে রোযা পূর্ণ করা তার উপর ওয়াজিব। [কানুনে শরীয়ত ইত্যাদি]

মাস্‌আলাঃ অধিক ক্ষুধা ও তৃঞ্চার দরুণ যদি প্রাণহানির বা মস্তিস্ক বিকৃতির নিশ্চিত আশঙ্কা হয় অথবা সর্প দংশনের ফলে প্রাণহানির দৃঢ় আশঙ্কা হয় তবে রোযা ভেঙ্গে ফেলবে। পরে ক্বাযা করবে। [রদ্দুল মুহতার বাহারে শরীয়ত ইত্যাদি]

মাস্‌আলাঃ অতিশয় বৃদ্ধ লোক, যে বয়স বৃদ্ধির কারণে এমন দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, রোযা রাখতে পারছে না, ভবিষ্যতেও রাখার আশা করতে পারে না, তবে তার জন্য রোযা না রাখার অনুমতি আছে। অবশ্য সে রমযানের প্রতিটি রোযার পরিবর্তে ফিদিয়া স্বরূপ একজনের ফিত্‌রা বরাবর দুই সের তিন ছটাক আধা তোলা=দুই কেজি পঞ্চাশ গ্রাম গম বা আটা অথবা সমপরিমাণ মূল্য একজন মিসকীনকে প্রদান করবে। হ্যাঁ, রোযার ফিদিয়া আদায় করার পর যদি পরবর্তীতে রোযা রাখার শক্তি এসে যায়, তবে রমযানের প্রতিটি রোযার বদলে একটি করে রোযার ক্বাযা করবে। তখন ফিদিয়া নফল সাদক্বাহ্‌ হিসেবে গণ্য হবে।          [হিদায়া ও আলমগিরী ইত্যাদি]

৯. দুই ঈদের দিন ও ক্বোরবানীর ঈদের পরের তিন দিন অর্থাৎ শাওয়াল মাসের ১ তারিখ ও জিলহজ্বের ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ, বৎসরে মোট ৫ (পাঁচ) দিন যে কোন রোযা রাখা হারাম। উক্ত দিনসমূহে কেউ নফল রোযা পালন করলে অবশ্যই ভঙ্গ করে ফেলবে। পরে উক্ত রোযার ক্বাযা আদায় করতে হবে না অবশ্য যদি কেউ উক্ত নিষিদ্ধ দিনসমূহে রোযা রাখার মান্নত করে, তবে উক্ত দিনসমূহের পরে মান্নতের রোযা পূর্ণ করবে। [বাহারে শরীয়ত ও কিতাবুল আশ্‌বাহ ইত্যাদি]

১০.মেহমান ও মাতা-পিতার সন্তুষ্টির জন্য নফল রোযা ভঙ্গ করতে পারে, তবে তা পরে ক্বাযা করবে। অবশ্য মেহমানের কারণে নফল রোযা ভঙ্গ করতে পারে দ্বি-প্রহরের পূর্বে, তার পরে নয়। মা-বাবার কারণে আসরের পূর্ব পর্যন্ত নফল রোযা ভঙ্গ করার অনুমতি আছে। উল্লেখ্য যে, মা-বাবা বা মেহমানের কারণে মাহে রমযানের ফরয রোযা ও ক্বাযা রোযা ভঙ্গ করার অনুমতি নেই। [আলমগীরী ও কানূনে শরীয়ত ইত্যাদি]

১১.কোন মুসলমানের দাওয়াতে অংশ গ্রহণের জন্য দ্বি-প্রহরের পূর্বে নফল রোযা ভঙ্গ করার অনুমতি আছে, তবে উক্ত নফল রোযার ক্বাযা করবে। অবশ্য দাওয়াতে অংশ গ্রহণের জন্য রমযানের ফরয ও ক্বাযা রোযা ভঙ্গ করার অনুমতি নেই। [কানূনে শরীয়ত]

১২.স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল ও মান্নতের রোযা রাখলে স্বামীর নির্দেশে স্ত্রী নফল ও মান্নতের রোযা ভঙ্গ করতে পারে। তবে পরে স্বামীর অনুমতি নিয়ে ক্বাযা করবে। অবশ্য রমযানের ফরয রোযা ও ক্বাযা রোযা স্বামীর আদেশে ভঙ্গ করবে না।                   [কিতাবুল আশবাহ ইত্যাদি]

১৩.হুঁশ ঐ জ্ঞানের মধ্যে যদি সত্যই ত্রুটি ও ব্যতিক্রম দেখা যায়, তবে রোযা ভঙ্গ করার অনুমতি আছে; কিন্তু পরবর্তীতে ক্বাযা করবে।               [বাহারে শরীয়ত]

১৪.রোযা ভঙ্গ করার জন্য যদি স্বামী বা অন্য কেউ বাধ্য করে, এমনকি ভঙ্গ না করলে প্রাণহানি বা অঙ্গহানির ভয় হয়, তবে যে কোন রোযা এমনকি রমযানের রোযা পর্যন্ত ভঙ্গ করার অনুমতি আছে। পরে অবশ্যই ক্বাযা করবে। [দুর্‌রে মোখতার ইত্যাদি]

১৫,যদি কোন ব্যক্তি শপথ করে বলে যে, যদি তুমি রোযা ভঙ্গ না করো, তবে আমার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে, তবে রোযা ভঙ্গ করার অনুমতি আছে। অবশ্য পরে ক্বাযা করবে।