ভয়াবহ ফিতনা এবং মুসলমানদের করণীয়

ভয়াবহ ফিতনা এবং মুসলমানদের করণীয়

মাওলানা মুহাম্মদ আনিসুর রহমান রিজভি

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের সময় থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। নবীজির জীবদ্দশায় দেয়া ভবিষ্যৎবাণীগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বাস্তবায়ন আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি। ক্বিয়ামত খুব বেশি দূরে নয়, অতি সন্নিকটে। নবীজির ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী ক্বিয়ামতের আগে পৃথিবীতে অহরহ ফিতনার আবির্ভাব ঘটবে। বিশেষ করে আলিমদের কাছ থেকে ফিতনা ছড়ানোর কথা হাদিস শরীফে রয়েছে। আর বর্তমানে আমরা সে সময়ে এসে পৌঁছে গেছি। এখন আমরা চতুর্দিকে ফিতনা দেখতে পাচ্ছি। ফিতনা শব্দটি আমাদের কাছে বহুল ব্যবহৃত ও পরিচিত হলেও এর সঠিক অর্থ আমরা অনেকেই জানি না। ফিতনা থেকে বাঁচতে হলে ফিতনা সম্পর্কে গভীর ধারণা থাকতে হবে। ফিতনার আলামতগুলো সম্পর্কে আমাদের সবিস্তারে জানতে হবে। নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্বীয় উম্মতদেরকে এসব ফিতনার ব্যাপারে অধিকতর সতর্ক করেছেন। সাথে সাথে এসব ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়ও বলে দিয়েছেন। এ প্রবন্ধে ফিতনার ভয়াবহতা এবং এসব ফিতনা থেকে বাঁচতে মুসলমানদের করণীয় সম্পর্ক আলোচনা করা হলো।

ফিতনার সংজ্ঞা
‘ফিতনা’ শব্দটি আরবি। এর অর্থ নৈরাজ্য, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, অন্তর্ঘাত, চক্রান্ত, বিপর্যয়, পরীক্ষা প্রভৃতি। ‘আরবি ভাষায় ফিতনার সামগ্রিক অর্থ পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আগুনে পুড়িয়ে সোনার আসল-নকল ও মান যাচাই প্রক্রিয়া বোঝাতে ফিতনা শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতেও এরূপ অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। ‘সেদিন তাদের আগুনে পোড়ানো হবে।’ [তাহযীবুল লুগাহ: ১৪/২৯৬]

এ পরীক্ষা আমাদের প্রিয় কোনো কিছু যেমন- অর্থ, সম্পদ, ক্ষমতা, পুরুষের জন্য নারী, নারীর জন্য পুরুষ দিয়ে হতে পারে। আবার হতে পারে আমাদের অপছন্দনীয় কিছু দিয়ে যেমন অকস্মাৎ বিপদ, গৃহযুদ্ধ, বিশৃঙ্খলা, অত্যাচারী শাসক ইত্যাদির মাধ্যমে। ইবনুল আরাবী ফিতনার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ফিতনা মানে পরীক্ষা, ফিতনা মানে দুর্যোগ, ফিতনা মানে সম্পদ, ফিতনা মানে সন্তান, ফিতনা মানে কুফর, ফিতনা মানে মতপার্থক্য, ফিতনা মানে আগুনে জ্বলা।

পবিত্র কুরআনের আলোকে ফিতনা
সাধারণ মানুষ ফিতনা বলতে মারামারি, হানাহানি, হত্যা ইত্যাদি বুঝে থাকেন। তাদের উক্ত ধারণাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। বরং ফিতনা একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। আল্লাহ তাআলা ফিতনার মাধ্যমে তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দাদেরকে অকৃতজ্ঞ মানুষ থেকে পৃথক করেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ ‘তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষা বিশেষ’। [আত-তাগাবুন: ১৫]
তিনি আরো বলেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ فَإِذَا أُوذِيَ فِي اللَّهِ جَعَلَ فِتْنَةَ النَّاسِ كَعَذَابِ اللَّهِ وَلَئِنْ جَاءَ نَصْرٌ مِنْ رَبِّكَ لَيَقُولُنَّ إِنَّا كُنَّا مَعَكُمْ أَوَلَيْسَ اللَّهُ بِأَعْلَمَ بِمَا فِي صُدُورِ الْعَالَمِينَ. ‘আর কিছু লোক আছে যারা বলে, ‘আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। অতঃপর যখন আল্লাহর ব্যাপারে তাদের কষ্ট দেওয়া হয়, তখন তারা মানুষের নিপীড়ন-পরীক্ষাকে আল্লাহর আযাবের মতো গণ্য করে। আর যদি তোমার রবের পক্ষ থেকে কোনো বিজয় আসে, তখন অবশ্যই তারা বলে, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাদের সাথে ছিলাম’। সৃষ্টিকুলের অন্তরসমূহে যা কিছু আছে, আল্লাহ কি তা সম্পর্কে সম্যক অবগত নন?’। [আল-আনকাবূত: ১০]
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ ‘আর ফিতনা হত্যার চেয়েও কঠিনতর’। [আল-বাক্বারা: ১৯১]
তিনি আরো বলেন, وَالْفِتْنَةُ أَكْبَرُ مِنَ الْقَتْلِ ‘আর ফিতনা হত্যার চেয়েও বড়’। [আল-বাক্বারা: ২১৭]
তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, وَقَاتِلُوهُمْ حَتّٰى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلّٰهِ ‘তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকো, যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয়’। [আল-বাক্বারা: ১৯৩] এই আয়াতে ফিতনা বলতে শিরক বুঝানো হয়েছে।
মহান আল্লাহ আরো বলেছেন, وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْكُمْ خَاصَّةً
‘আর তোমরা ভয় করো ফিতনাকে, যা তোমাদের মধ্য থেকে বিশেষভাবে শুধু যালিমদের উপরই আপতিত হবে না’। [আল-আনফাল: ২৫]

হাদীসের আলোকে ফিতনা
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَالَ بَادِرُوا بِالأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا أَوْ يُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا يَبِيعُ دِينَهُ بِعَرَضٍ مِنَ الدُّنْيَا‏.
আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘অন্ধকার রাতের মতো ফিতনা আসার আগেই তোমরা নেক আমলের প্রতি অগ্রসর হও। সে সময় সকালে একজন মুমিন থাকলে বিকেলে কাফির হয়ে যাবে। বিকেলে মুমিন থাকলে সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার সামগ্রীর বিনিময়ে সে তার দ্বীন বিক্রি করে দিবে’।

ফিতনা বলতে অনেক সময় নিদর্শনকেও বুঝানো হয়ে থাকে। যেমন : সহীহ বুখারী ও মুসলিমে ক্বিয়ামতের আলামত অধ্যায়কে كتاب الفتن বলা হয়েছে। আবার খারাপ অর্থ বুঝাতেও ফিতনা ব্যবহৃত হয়। ক্বিয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে অনেক ফিতনা-ফাসাদ দেখা দেবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে উম্মতকে সতর্ক করে গিয়েছেন। পবিত্র হাদীসে রয়েছে, হযরত হুযায়ফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে সবকিছু বর্ণনা করলেন। তারপর যে স্মরণ রাখার, সে স্মরণ রাখল। আর যে ভুলে যাওয়ার, সে ভুলে গেল। আমার এ সঙ্গীগণ জানে যে, তন্মধ্যে কতেক বিষয় এমন আছে, যা আমি ভুলে গেছি। কিন্তু সেটা সংঘটিত হতে দেখে তা আবার মনে পড়ে যায়। যেরূপ কোনো লোক দূরে চলে গেলে তার চেহারা মানুষ ভুলে যায়। অতঃপর সে তাকে দেখামাত্রই চিনে ফেলে।

হাদীসে আরো এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَالَ وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدِ اقْتَرَبَ، أَفْلَحَ مَنْ كَفَّ يَدَهُ.
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আরববাসীদের জন্য আফসোস! কেননা তাদের উপর অকল্যাণ ঘনিয়ে এসেছে। যে ব্যক্তি তা থেকে হাত গুটিয়ে রাখবে, সে সফল হবে’। [সুনানু আবি দাউদ: ৪২৪৯]
উপরে বর্ণিত এসব আয়াত ও হাদীসগুলো দ্বারা বুঝা যায় যে, অবস্থাভেদে ফিতনার অর্থের মধ্যে ভিন্নতা আসে।
সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের জন্য সেসব বিষয় জানা জরুরী, যেসব বিষয় মানুষকে ইসলাম হতে বিমুখ করে দেয়; যেসব বিষয় মুমিনের ঈমানী চেতনাকে হ্রাস করে দেয়। বিশেষত ইসলামের পথের বাধাগুলোকে চিহ্নিত করা অতীব জরুরী। কেননা কেউ যদি ক্ষতিকর বস্তু, গোমরাহির বিষয়গুলো হতে অজ্ঞ থাকে, তাহলে তা তাকে অজান্তে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে ফেলবে এবং আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
نُوَلِّهِ مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
‘আমি তাকে ফিরাব সেদিকে, যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসাবে তা খুবই মন্দ’। [আন-নিসা: ১১৫]
মুমিনগণ শত বাধা, যুলুম-নির্যাতন ও আল্লাহর পক্ষ হতে সকল পরীক্ষায় ধৈর্যধারণ করে ঈমানের উপর অটুট থাকে। আর মুনাফিকরা সাময়িক যুলুম-নির্যাতনের ভয়ে দ্বীনের পথ হতে পলায়ন করে এবং তারা ধারণা করে যে, তারা মুক্তি পাবে। পক্ষান্তরে তারা নিজেদের উপর বিপদ ডেকে আনে এবং আল্লাহর নাজাত হতে দূরে সরে যায়। যেমন কোনো মানুষ কয়লার ভয়ে ভীত হয়ে পলায়ন করে আগুনে ঝাঁপ দেয়। বস্তুত দুনিয়ার যুলুম-নির্যাতন, দুঃখ-কষ্ট ক্ষণস্থায়ী আর আখিরাতের শাস্তি অসহনীয় এবং চিরস্থায়ী।

ফিতনার বৈশিষ্ট্যসমূহ
কুরআন ও হাদীছ পর্যালোচনা করলে আমরা ফিতনার কিছু বৈশিষ্ট্য পাই। ফেতনার মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো :
১. ফিতনা প্রচণ্ড আকর্ষণ সৃষ্টি করে।
যে কোনো ফিতনাই মানুষকে চুম্বকের মতো টানে। যে লোক কোনো দিন খবরের কাগজ পড়ে না, ফিতনার সময় সেও সবাইকে জিজ্ঞেস করে- আচ্ছা এরপর কী হয়েছিল?
২. ফিতনা মানুষকে আল্লাহর ইবাদত থেকে দূরে সরিয়ে দেয় ।
কিছু কিছু ফিতনা আছে, যেগুলোর উপস্থিতিতে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে মানুষের পক্ষে আল্লাহর ইবাদত করা কঠিন হয়ে পড়ে যেমন- যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি।
৩. অন্যদিকে কিছু কিছু ফিতনা আছে যেমন- খেলাধুলা, যেগুলোতে মানুষ এতটাই আচ্ছন্ন হয়ে যায় যে, সে ভুলে যায় তার উপর তার প্রতিপালকের দেয়া দায়িত্ব। নামায আদায়কারী ব্যক্তি ফিতনার আকর্ষণে সময় মতো নামায পড়তে পারে না। মা-বাবা ও পরিবারের উপর দায়িত্বের কথা ভুলে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ফিতনার আপডেট জানার জন্য। ফিতনার সময় গীবত বেড়ে যায়, বেড়ে যায় মিথ্যাবাদিতা, চোগলখোরি আর কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি।

পর্যায়ক্রমে ফিতনার উদ্ভব
ফিতনাগুলো একটি অপরটির চেয়ে ভয়াবহ হবে। এমনকি ফিতনায় পড়ে মানুষ দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إِنَّ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ فِتَنًا كَأَنَّهَا قِطَعُ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ فِيهَا مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا وَيَبِيعُ فِيهَا أَقْوَامٌ خَلَاقَهُمْ بِعَرَضٍ مِنَ الدُّنْيَا
‘নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের পূর্বে অন্ধকার রাত্রির মতো ঘন কালো অনেক ফিতনার আবির্ভাব হবে। সকালে একজন লোক মুমিন অবস্থায় ঘুম থেকে জাগ্রত হবে, বিকেলে সে কাফিরে পরিণত হবে। বহু সংখ্যক লোক ফিতনায় পড়ে দুনিয়ার সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে তাদের চরিত্র ও আদর্শ বিক্রি করে দিবে। অপর বর্ণনায় এসেছে, তোমাদের একজন দুনিয়ার সামান্য সম্পদের বিনিময়ে তার দ্বীন বিক্রি করে দিবে। [আল-মুজামুল আওসাত: ২৪৩৯]
أَيُّهَا النَّاسُ أَظَلَّتْكُمُ الْفِتَنُ كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ، أَيُّهَا النَّاسُ لَوْ تَعْلَمُوْنَ مَا أَعْلَمُ بَكَيْتُمْ كَثِيْرًا وَضَحِكْتُمْ قَلِيْلًا.
‘হে লোক সকল! অন্ধকার রাতের টুকরার ন্যায় ফিতনা তোমাদের আচ্ছাদিত করবে। হে লোক সকল! আমি যা জানি, তোমরা যদি তা জানতে, তাহলে অধিকহারে কাঁদতে ও অল্প হাসতে। [মুসনাদ আহমদ: ২৪৫৬০]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
أَظَلَّتْكُمَ الْفِتَنُ كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ أَنْجَى النَّاس فِيهَا صَاحِبُ شَاهِقَةٍ، يَأْكُلُ مِنْ رِسْلِ غَنَمِهِ، أَوْ رَجُلٌ مِنْ وَرَاءِ الدَّرْبِ آخِذٌ بِعَنَانِ فَرَسِهِ، يَأْكُلُ مِنْ فِيء سَيْفِهِ.
‘অন্ধকার রাতের টুকরার ন্যায় ফিতনা তোমাদের আচ্ছাদিত করবে। লোকদের মাঝে উঁচু পাহাড়ে আরোহণকারীই কেবল সেই ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে। যে তার ছাগলের দুধ পান করে দিনাতিপাত করবে। অথবা এমন লোক রক্ষা পাবে, যে তার ঘোড়ার লাগাম ধরে সর্বদা রাস্তায় প্রস্তুত থাকবে। তার তরবারী যা উপার্জন করে দিবে, তা থেকে সে খাবে’। অর্থাৎ ক্বিয়ামতের পূর্বে ফিতনার ছড়াছড়ি শুরু হবে এবং বৃষ্টিপাতের ন্যায় ফিতনার আবির্ভাব ঘটবে। প্রত্যেক পরবর্তী যুগ পূর্বের যুগের চেয়ে খারাপ হবে। এমনকি ক্বিয়ামতের পূর্বে ফিতনার ভয়ে মানুষ মৃত্যু কামনা করবে।
উল্লেখ্য, সাধারণভাবে বিপদ-আপদের কারণে মৃত্যু কামনা করা যাবে না।

ফিতনাই ভয়ঙ্কর এক শাস্তি
ভূমিকম্প এক ধরনের আযাব ও আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি স্বরূপ। বর্তমান সময়ে ভূমিকম্প দিন দিন বেড়েই চলছে। আর ভূমিকম্প হওয়ার ব্যাপারে হাদিসে পাকে এসেছে ফিতনার সময় অধিকতর ভূমিকম্প হয়ে থাকে। যেমন হযরত আবু মুসা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
أُمَّتِىْ هَذِهِ أُمَّةٌ مَرْحُوْمَةٌ لَيْسَ عَلَيْهَا عَذَابٌ فِى الآخِرَةِ عَذَابُهَا فِى الدُّنْيَا الْفِتَنُ وَالزَّلاَزِلُ وَالْقَتْلُ
‘আমার এ উম্মত দয়াপ্রাপ্ত, পরকালে এদের কোনো শাস্তি হবে না, আর ইহকালে তাদের শাস্তি হলো ফিতনাসমূহ, ভূমিকম্প ও যুদ্ধবিগ্রহ’। [সুনানু আবু দাউদ: ৪২৭৮]
ইবনু ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَامَ عِنْدَ بَابِ حَفْصَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا فَقَالَ بِيَدِهِ نَحْوَ الْمَشْرِقِ الْفِتْنَةُ هَا هُنَا مِنْ حَيْثُ يَطْلُعُ قَرْنُ الشَّيْطَانِ قَالَهَا مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا.
‘একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম হাফসা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এর দরজার নিকট দণ্ডায়মান ছিলেন। এ সময় তিনি তাঁর আঙ্গুল দ্বারা পূর্বদিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ফিতনা এ দিক থেকে আসবে, যেদিক থেকে শয়তানের শিং উদিত হবে। এ কথাটি তিনি দুই বা তিনবার বলেছেন’।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম পূর্বের দিকে ইঙ্গিত করে ইরাকসহ পুরো প্রাচ্যকে বুঝিয়েছেন। কারণ ইরাক থেকেই খারেজী, শিয়া, মু‘তাযিলা, জাহমিয়া, মাজূসী, মানুবিয়া, মুযদাকিয়াসহ বহু ভ্রান্ত দলের আবির্ভাব ঘটেছে। অপরদিকে চীন ও ভারত থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, কাদিয়ানী, বাহাইয়া ও তাতারদের আবির্ভাব ঘটেছে এবং পরবর্তীতে দাজ্জাল ও ইয়াজূজ-মাজূজের ফিতনার আবির্ভাবও ঘটবে পূর্বদিক হতে।
সালিম ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত তিনি বলতেন, হে ইরাকবাসী! আশ্চর্য! সাগীরা গুনাহ সম্পর্কে তোমাদের কতই না প্রশ্ন। অথচ কবীরা গুনাহ করতে তোমাদের দ্বিধা নেই। আমি আমার পিতা ইবনু ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে শুনেছি, তিনি বলতেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে তাঁর হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইঙ্গিত করে বলতে শুনেছি, ফিতনা এদিক থেকে আসবে, যেদিক থেকে শয়তানের দুই শিং উদিত হয়। অথচ তোমরা পরস্পর হানাহানি করছ’।

ইলম উঠে যাওয়া
ইলম উঠে যাওয়া কিয়ামতের অন্যতম আলামতগুলোর একটি। পাশাপাশি এটি উম্মতের মাঝে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ একটি ফিতনা। মানুষ আলেমদের অবমূল্যায়ন করতে শুরু করবে। ফলে প্রকৃত ইলম আস্তে আস্তে উঠে যাবে। মানুষ বিভ্রান্ত হতে থাকবে। সবাই নিজেকে আল্লামা ভাবতে শুরু করবে।
حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ مُوسَى عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ شَقِيقٍ قَالَ كُنْتُ مَعَ عَبْدِ اللهِ وَأَبِي مُوسٰى فَقَالَا قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ لَأَيَّامًا يَنْزِلُ فِيهَا الْجَهْلُ وَيُرْفَعُ فِيهَا الْعِلْمُ وَيَكْثُرُ فِيهَا الْهَرْجُ وَالْهَرْجُ الْقَتْلُ
হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অবশ্যই কিয়ামতের আগে এমন একটি সময় আসবে যখন সব জায়গায় মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে এবং ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং হত্যা বেড়ে যাবে’ [সহিহ বুখারি : ৭০৬২]

হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়া
হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন, দুনিয়া ধ্বংস হবে না যে পর্যন্ত না মানুষের কাছে এমন এক যুগ আসবে, যখন হত্যাকারী জানবে না যে, কি কারণে সে অন্যকে হত্যা করেছে এবং নিহত লোকও জানবে না যে, কি কারণে তাকে হত্যা করা হচ্ছে। জিজ্ঞেস করা হলো, কিভাবে এমন অত্যচার হবে? তিনি জবাবে বললেন, সে যুগটা হবে হত্যার যুগ। এরূপ যুগের হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামি হবে। [সহিহ মুসলিম : ৭১৯৬]

বড় বড় দালান
ফিতনার যুগে প্রযুক্তিগত দিক থেকে মানুষ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। বড় বড় দালানকোঠা হবে, পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ পথ নির্মাণ করা হবে। যা বর্তমানে আমরা খুব স্বাভাবিক বিষয় হিসেবেই দেখছি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন মক্কা শরিফের টিলার উদর বিদীর্ণ করা হবে আর নির্মিত ভবনগুলো মক্কা শহরের পাহাড়গুলোর চেয়ে উঁচু হবে তখন মনে কর ফিতনার সময় সন্নিকটে। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৭/৪৬১]

পূর্বেকার হাদিসের ব্যাখ্যাকাররা আলোচ্য হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এখন তো মক্কা শরিফ পাথুরে ভূমি এবং পাহাড়ি এলাকা, তবে ভবিষ্যতে কোনোকালে আল্লাহ এ শহরে নদী এবং খাল-বিল সৃষ্টি করবেন। কিন্তু আজকের সুরঙ্গ পথগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, কিভাবে মক্কা নগরীর টিলাগুলো বিদীর্ণ করা হয়েছে।

হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন আমার উম্মতের মাঝে বারোটি (কোনো কোনো বর্ণনায় পনেরোটি) কাজ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে তখন তাদের ওপর মুসীবতের পাহাড় ভেঙে পড়বে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ কাজগুলো কী? উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ১. যখন রাষ্ট্রীয় সম্পদকে লুটের মাল মনে করা হবে। ২. যখন আমানতের মালকে লুটের মাল মনে করা হবে এবং তাতে খেয়ানত করবে। ৩. যখন লোকেরা জাকাতকে জরিমানা এবং ট্যাক্স মনে করবে। ৪. মানুষ স্ত্রীর আনুগত্য করবে এবং মায়ের অবাধ্যতা করবে অর্থাৎ মানুষ স্ত্রীকে খুশি করার জন্য মাকে অসন্তুষ্ট করবে। ৫. মানুষ বন্ধুর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে এবং বাবার সঙ্গে অসদ্ব্যবহার করবে অর্থাৎ বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করবে কিন্তু বাবার সঙ্গে রূঢ় ও কঠোর আচরণ করবে। ৬. মসজিদে শোরগোল হবে। ৭. সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও নীচ ব্যক্তিকে নেতা বানানো হবে। ৮. অনিষ্টের ভয়ে মানুষকে সম্মান করা হবে। ৯. ব্যাপকভাবে মদ পান করা হবে। ১০. ব্যাপকভাবে রেশমি কাপড় পরিধান করা হবে। ১১. ঘরে নর্তকী ও গায়িকা রাখা হবে এবং বাদ্যযন্ত্র ও নাচ-গানের উপকরণকে যতœসহকারে রাখা হবে। ১২. এ উম্মতের পরবর্তী লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের ওপর অভিসম্পাত করবে।

ফিতনার সময় মুসলমানদের করণীয়
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিতনার সময় মুমিনদের করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়ে গেছেন। ফিতনার সময় যেহেতু যুদ্ধরত ও বিবাদমান দলগুলোর কোনটির দাবী সত্য তা নির্ণয় করা কঠিন হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে একটি হাদীস উল্লেখ করা যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন,
بَادِرُوا بِالأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِى كَافِرًا أَوْ يُمْسِى مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا يَبِيعُ دِينَهُ بِعَرَضٍ مِنَ الدُّنْيَا.
‘আধার রাতের ন্যায় ফিতনা আসার পূর্বেই তোমরা নেক আমলের দিকে ধাবিত হও। কেননা এমন এক সময় আসবে যে সময় সকালে একজন মুমিন থাকলে সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যাবে। সন্ধ্যায় মুমিন থাকলে সকালে কাফের হয়ে যাবে। দুনিয়ার সামগ্রীর বিনিময়ে সে তার দ্বীন বিক্রি করে দিবে’। [সহিহ মুসলিম: ১১৮]
সর্বোপরি ফিতনার সময় আমাদরেকে সর্বাধিক দু‘আ করতে হবে। আর তাই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম সালাতের মধ্যে আল্লাহর কাছে ফিতনা থেকে আশ্রয় চেয়েছেন এবং বেশি বেশি দু‘আ করেছেন।
তন্মধ্যে একটি দু‘আ হলো-
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেভাবে এ দু‘আটি শিক্ষা দিতেন, যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন,
قُولُوا اللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ.
‘তোমরা বলো, হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট জাহান্নামের শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, কবরের শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, মাসীহ দাজ্জালের সম্মোহিত বিপর্যয় থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং জীবন-মরণের পরীক্ষা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’। [সহিহ মুসলিম: ৫৯০]

ফিতনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদেরকে কতিপয় কাজ করতে হবে। সেগুলো হলো-
ক. ফিতনা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর ভবিষ্যৎ বাণী বাস্তবায়ন করতে হবে।
খ. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খোলাফায়ে রাশেদীনের পথকে আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে।
গ. ফিতনার সময় ধৈর্যধারণ করতে হবে।
ঘ. বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ফিতনার সময় ইবাদতের মর্যাদা হিজরতের সমান।
ঙ. ফিতনার সময় বেশি বেশি দু‘আ করতে হবে।
চ. নিজেকে সংশোধন করার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
ফিতনা যেহেতু উম্মতের জন্য ভয়াবহ এক সময়। এ কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ঈমান নিয়ে বাঁচতে হলে আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত শক্তভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আলেম-ওলামার দ্বারস্থ হতে হবে। আমাদের কোনো বিষয় বুঝে না আসলে যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকাবির যারা সত্যিকার অর্থে ক্বোরআন ও সুন্নাহের ইলম রাখেন, তাদের কাছ থেকে সমাধান খুঁজে বের করে নিতে হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ‘যদি তোমরা না জানো, তবে জ্ঞানীদের কাছে জিজ্ঞেস করো’। [আন-নাহল: ৪৩]

আল্লাহ তা‘আলার নিকট আমাদের প্রার্থনা এই যে, তিনি যেন আমাদের সঠিক পথের হেদায়াত দান করেন এবং আমাদেরকে অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্টদের পথ অবলম্বন করা হতে হিফাযত করেন। اَلْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ অভিশপ্ত হলো তারা, যারা তাদের ইলম অনুযায়ী আমল করে না। আর الضَالُّوْنَ পথভ্রষ্ট হলো, যারা ইলম ছাড়া আমল করে। আর পুরস্কারপ্রাপ্ত হলো তারা, যারা আহলে ইলম ও ইলম অনুযায়ী আমলকারী। যেমন তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا .
‘আর যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তারা তাদের সাথে থাকবে, আল্লাহ যাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন নবী, সিদ্দীক্ব, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে। আর সাথী হিসাবে তারা হবে উত্তম’। [আন-নিসা: ৬৯]

লেখক: আরবি প্রভাষক, চরণদ্বীপ রজভীয়া ইসলামিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম।

Share:

Leave Your Comment