অসাধারণ ক্ষমতার ধারক: গাউসে পাক

অসাধারণ ক্ষমতার ধারক: গাউসে পাক

অসাধারণ ক্ষমতার ধারক: গাউসে পাক –
মাওলানা মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান হাবিবী –

মাহবুবে সুবহানী কুতবে রব্বানী শাহবাযে লা-মকানী পীরানে পীর দস্তগীর আবদুল ক্বাদের জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আল্লাহ্ প্রদত্ত অসাধারণ বেলায়তী শক্তির অধিকারী। মানবতার মুক্তির দূত রাহমাতুল্লিল আলামীন সরকারে দো-আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসল্লামের ওফাত শরীফের সাড়ে চারশতাধিক বছর পর এ ধরাধামে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পন্ন হাদী বা পথ প্রদর্শক হিসেবে হুযূর শাহানশাহে বাগদাদ আবির্ভূত হন। তাঁর আবির্ভাবের প্রাক্কালে বিশ্বে এমন অবস্থা বিরাজ করছিল যে, ইসলামের সূর্য প্রায় ডুবু ডুবু হয়ে ছিলো, মুসলিম সমাজে বহুবিধ মতবাদের আবির্ভাব ঘটতে থাকলো। সমাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ইসলাম ও ঈমানের আলো হতে মানুষ দ্রুত সরে যাচ্ছিলো। ঠিক এমনি ক্রান্তিকালে রাব্বুল আলামীন দয়া পরবশ হয়ে মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেওয়ার নিমিত্তে গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র শুভ আবির্ভাব ঘটালেন। ফলে খোদাপ্রদত্ত দ্বীন-ইসলাম নব জীবন পেয়ে সঞ্জিবীত হয়ে উঠলো, এবং দিগ-দিগন্তে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন হতে লাগলো। তাঁর বেলায়তী শক্তির প্রভাব আজ অবধি বিশ্বময় বিরাজমান। এ নিবন্ধে এ প্রসেঙ্গে কিছুটা আলোকপাত করার প্রয়াস পাচ্ছি-
হযরত শায়খ হাম্মাদের মাযার যিয়ারত
গাউসুল আ’যম হযরত আবদুল ক্বাদের জীলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ৫২৯ হিজরীর জিলহজ্ব মাসের ২৭ তারিখ বুধবার ‘শূনীজী’ কবরস্থানে যিয়ারত করতে গেলেন। তাঁর সাথে বহু ফক্বীহ ও ফক্বীর দরবেশ ছিলেন। তখন তিনি হযরত শায়খ হাম্মাদের মাযারের নিকট অনেক্ষণ যাবৎ দাড়িঁয়ে রইলেন। এ পর্যন্ত যে, সূর্যের উত্তাপ বৃদ্ধি পেতে থাকলো, লোকেরা পেছনে দাড়িঁয়ে রইলেন। অতঃপর তিনি এমতাবস্থায় ফিরে এসেছেন যে, তাঁর চেহারার উপর খুশির চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল।
পরবর্তীতে তাঁর দীর্ঘক্ষণ দাড়িঁয়ে থাকার কারণ সম্পর্কে আরয করা হলে, তিনি বলেন, আমি বাগদাদে ১৫ শা’বান ৪৯৯ হিজরীতে জুমার দিনে শায়খ হাম্মাদ দরবেশের দলের সাথে এ জন্য বের হয়েছিলাম যে, জুমার নামায রাস-ফাহ্ জামে মসজিদে আদায় করবো। আমি শায়খ হাম্মাদের সাথে ছিলাম। যখন আমরা নদীর সেতুর উপর পৌঁছলাম, তখন শায়খ আমাকে ধাক্বা মেরে পানিতে ফেলে দিলেন। তখন প্রচঙ্গ শীতের মৌসুম ছিলো। আমি পানিতে পড়ার সময় বললাম, ‘বিসমিল্লাহি নাওয়াইতুল গোসলা।’ অর্থাৎ বিসমিল্লাহ্ বলে আমি গোসলের নিয়ত করে নিলাম। আমার গায়ে পশমের জুব্বা ছিলো আর আমার আস্তিনে (পকেটে) কিতাবের কিছু অংশ ছিলো। তখন আমি কিতাবের অংশগুলো হাতে নিয়ে নিলাম আর আমার হাত উচুঁ করে নিলাম, যাতে সেগুলো ভিজে না যায়। তাঁরা আমাকে রেখে চলে গেলেন। আমি নদী থেকে উঠলাম এবং জুব্বাটি মুছড়িয়ে নিলাম। তারপর তাঁদের পেছনে গিয়ে মিলিত হলাম। তবে আমি ঠান্ডায় খুব কষ্ট অনুভব করছিলাম। অতঃপর তার মুরীদগণ আমার পেছনে আসলো যেন আমাকে আরো কষ্ট দেয়। তিনি তাদেরকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘‘আমি তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য কষ্ট দিয়েছি; কিন্তু আমি তাঁকে এমন এক পাহাড়সম পেয়েছি, যা আপন জায়গা থেকে নড়ে না।’’
এবার গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, নিশ্চয়ই আজ আমি শায়খ হাম্মাদ দরবেশ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হিকে মাযারে দেখলাম যে, তাঁর গায়ে মনি-মুক্তা খচিত পোষাক এবং তাঁর মাথার উপর ইয়াকুতের তাজ শোভা পাচ্ছে। তাঁর বাম হাতে রয়েছে স্বর্ণের কংকন আর দু’পায়ে রয়েছে স্বর্ণের জুতা; কিন্তু তাঁর ডান হাত অবশ। আমি জিজ্জেস করলাম-এর কারণ কী? এ কেমন কথা? তিনি জবাবে বললেন ‘‘এটা হচ্ছে ওই হাত, যা দ্বারা আমি আপনাকে নদীতে ফেলে দিয়েছিলাম। তিনি আরয করলেন, হযরত! আপনি কি আমার এ অপরাধ ক্ষমা করবেন?’’ আমি বললা, ‘‘হাঁ।’’ তিনি বললেন, আপনি আল্লাহর দরবারে দো’আ করুন, তিনি যেন আমার এ হাত ঠিক করে দেন। অতঃপর আমি আল্লাহ্র দরবারে দো’আ করতে লাগলাম। আর ওই সময় পাঁচ হাজার ওলী আপন আপন মাযারে ছিলেন, তাঁরা ‘আমিন’ বলছিলেন। আমার দো’আর সাথে সাথে তাঁরাও সুপারিশ করতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর হাত ঠিক করে দিয়েছেন এবং ওই হাতে তিনি আমার সাথে মোসাফাহা করেছেন। তাঁর খুশি পূর্ণতা লাভ করলো। আর আমিও এ জন্য আজ আনন্দিত। যখন একথা বাগদাদে প্রসিদ্ধ হয়ে গেলো, তখন শায়খ হাম্মাদের মুরীদ ও ভক্তগণ যাঁরা বাগদাদে ছিলেন, সবাই একত্রিত হলেন এবং গাউসে পাকের দরবারে হাযির হলেন- শায়খ হাম্মাদের ব্যাপারে যা বলেছেন, তাঁর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য। তাঁরা সবাই মাদ্রাসায় সমবেত হলেন; কিন্তু তাঁর শান বা মহত্বের কারণে কেউ কথা বলতে সাহস করেনি। তিনি নিজেই তাঁদেরকে তাদের উদ্দেশ্যের কথা বলেছিলেন। আর তিনি তাদেরকে বললেন, ‘তোমরা দু’জন শায়খকে বেছে নাও, যাঁরা নিজেদের মূখে তোমাদেরকে আমি যা বলেছি তা সম্পর্কে বলে দেবেন। তারা শায়খ আবু ইয়াকুব ইউসুফ ইবনে আইউব হামদানী এবং শায়খ আবূ মুহাম্মদ আবদুর রহমান ইবনে শোয়াইব কুর্দীকে এ জন্য বেছে নিলেন। এ দু’জন হযরত কাশফ কারামত ও উন্নত অবস্থার ধারক ছিলেন।
তাঁরা গাউসে পাককে বললেন, ‘‘আমরা আপনাকে বিষয়টিতে আগামী জুমাবার পর্যন্ত অবকাশ দিলাম, যেন তাদের মুখে এর সত্যতা প্রকাশ পায়।’’ তিনি বললেন, তোমরা এখান থেকে উঠবে না, যতক্ষণ না তোমরা বিষয়টি জানতে পারবে। এটা বলতে না বলতে মাদ্রাসার বাইরে শোর-চিৎকার শুরু হয়ে গেলো। কারণ শায়খ ইউসুফ হামদানী চলে এসেছেন। তাও এমতাবস্থায় যে, তাঁর পা দুটি খোলা ছিল এবং খুব দ্রুতবেগে দৌঁড়ে আসছিলেন। এসে বলতে লাগলেন, আল্লাহ্ পাক আমার জন্য এক্ষুণি শায়খ হাম্মাদকে প্রকাশ করে দিলেন আর আর তিনি আমাকে বলেছেন, ‘‘হে ইউসুফ! তাড়াতাড়ি গাউসে পাকের দরবারে তাঁর মাদ্রাসায় যাও এবং সমবেত সকলকে বলে দাও, শায়খ আবদুল ক্বাদের আমার সম্পর্কে তোমাদেরকে যা বলেছেন; সত্য বলেছেন। শায়খ ইউসুফ আপন কথা পূর্ণ করতে পারেননি, ইত্যবসরে শায়খ আবদুর রহমান কুর্দীও এসে গেছেন। তিনিও একই কথা বললেন। তখন উপস্থিত সকলে গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র নিকট ক্ষমা চাইলেন। সুবহানাল্লাহ্! দেখুন, আল্লাহ্ তা‘আলা গাউসে পাককে কেমন বেলায়তী শক্তি দিয়েছেন। [বাহজাতুল আসরার] প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে তিনি অনন্য
শেখ আরিফ আবূ আমর ওসমান সরিফীনী এবং শায়খ সালেহ আবু মুহাম্মদ আবদুল হক্ব হারীমী বর্ণনা করেন, আমরা গাউসুল আ’যম আবদুল ক্বাদের জীলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে বলতে শুনেছি, তিনি কুরসির উপর বসা ছিলেন। তিনি ঘোষণা করেন, হে পৃথিবীবাসী! প্রাচ্যে থাকো কিংবা পাশ্চাত্যে! হে আসমানবাসী! আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন, ‘‘এবং তিনি এমন সব বস্তুও সৃষ্টি করেন, যেগুলো সম্পর্কে তোমরা জানো না।’’
[সূরা নাহল: আয়াত নম্বর ৮] গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আমি তাঁদেরই অন্তর্ভুক্ত, যাঁদের সম্পর্কে তোমরা জানো না। ওহে! পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিমের অধিবাসীরা, আমার নিকট এসো এবং শিখো। হে ইরাকবাসীরা! সকল আবস্থা আমার নিকট ওহী সব কাপড়ের ন্যায়, যেগুলো আমার ঘরে ঝুলছে। ওইগুলো থেকে যেটা আমার ইচ্ছা পরে থাকি। আমার ব্যাপারে তোমাদের সতর্ক থাকতে হবে, অন্যথায় আমি তোমাদের বিরুদ্ধে এমন সৈন্যদল নিয়ে আসবো; যার মোকাবেলা তোমরা করতে পারবে না।
হে বৎস! হাজার বছর পর্যন্ত একটি মাত্র সফর করো আমার কথা শোনার জন্য। হে বৎস! বেলায়াত এখানে রয়েছে, মর্যাদা এখানে রয়েছে। আমার মজলিশে আলখেল্লাসমূহ (অলীগণের বিশেষ পোষাক) বিতরণ করা হয়। এমন কোন অলী নেই, যিনি আামার মসজলিশে উপস্থিত হননি। জীবিত ওলীগণ সশরীরে আর ওফাতপ্রাপ্তগণ তাঁদের রূহসহকারে উপস্থিত হন।
[বাহজাতুল আসরার] গাউসে পাকের শরীরে মাছি বসতো না
শেখ আবূ আবদুল্লাহ্ মুহাম্মদ ইবনে হাজর হোসাইনী বর্ণনা করেন, আমার পিতা আমাকে বলেছেন, আমি গাউসে পাকের দরবারে তাঁর খেদমতে দীর্ঘ তের বৎসর নিয়োজিত ছিলাম। আমি কোন দিন তাঁর নাক বা গলা দিয়ে পানি বের হতে দেখিনি এবং তের বছরে তাঁর শরীরে কখনো মাছি বসতে দেখিনি। কোন দুনিয়াদার ব্যক্তির সম্মানার্থে তাঁকে দাঁড়াতে দেখিনি। আমি অনেক বাদশাহকে তাঁর দরবারে আসতে দেখেছি, তাঁরা তাঁর সাথে চাটাইতে বসতেন।
একবার তিনি তৎকালীন বাগদাদের খলীফাকে লিখলেন, ‘‘আবদুল ক্বাদের তোমাকে এ নির্দেশ দিচ্ছে যে, তোমার জন্য এটা পালন করা জরুরি। ’’ এ নির্দেশ বাদশাহ্র কাছে পৌঁছলে, তিনি তা পরিপূর্ণভাবে পালন করেন। গাউসে পাকের নিকট একদা এক ব্যক্তি আরয করলো, ‘‘কোন জিনিস দ্বারা আপনার কাজ প্রতিষ্ঠিত হয়? তিনি বললেন, সত্যবাদিতা দ্বারা। তিনি বলেন, আমি জীবনে কখনো মিথ্যা বলিনি।’’
এ ঘটনা খুবই প্রসিদ্ধ- গাউসে পাক তাঁর আম্মাজানের কাছে বাগদাদ যাবার অনুমতি চাইলে, তিনি তাঁকে অনুমতি দেন এবং তাঁর জামার ভিতরে চল্লিশটি স্বর্ণমুদ্রা সেলাই করে দেন। পথে ডাকাত দলের হাতে আক্রান্ত হন এবং মায়ের নসীহত মোতাবেক সত্য কথা বলেছেন। ডাকাত দলের সবাই তাওবা করে ওলী হয়ে গিয়েছিলেন। এটা তাঁর জীবনের প্রসিদ্ধ ঘটনা। [গাউসুল ওয়ারা] ওফাতের পরেও বায়আত
দামেস্কের অধিবাসী জনৈক ধনী ব্যক্তি মনে মনে গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে খুব ভালবাসতেন এবং শ্রদ্ধা করতেন। একদা অন্তরে বাসনা জাগলো তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে বায়আত গ্রহণ করবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সংসারের নানা ঝামেলার কারণে ‘আজ যাবে কাল যাবে’ করে সময় ঠিক করতে পারলো না। ইতোমধ্যে তিনি সংবাদ পেলেন যে, হযরত গাউসুল আ’যম শায়খ আবদুল ক্বাদের জীলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ওফাত বরণ করেছেন। এ সংবাদ শুনে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হলেন।
অতঃপর ওই ধনী ব্যক্তি সফরসঙ্গী নিয়ে গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র মাযার শরীফ যিয়ারত করতে বাগদাদের দিকে রওয়ানা হলেন। মাযারে উপস্থিত হয়ে তিনি ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন এর অঝোর নয়নে কান্না করতে করতে মাযার শরীফের মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন এবং কিছুক্ষণ এমতাবস্থায় থাকার পর সেখানেই ঘুমিয়ে পড়লেন। ক্রমে রাত গভীর হয়ে গেল, কিন্তু লোকটির নিদ্রাভঙ্গ হলো না। তাঁর সঙ্গীগণ অপেক্ষায় রইলেন কখন ঘুম থেকে জাগ্রত হবেন।
এদিকে তিনি স্বপ্নে দেখলেন- গাউসুল আ’যম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ওই ভক্তের মনোবাসা পূরণ করার জন্য মাযার পাক থেকে বের হয়ে এসে স্বীয় দক্ষিণ হস্ত ভক্তের দিকে প্রসারিত করে দিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে তাঁর (ভক্তটির) নিদ্রা ভেঙ্গে গেল। তিনি এখন স্বপ্নে নয়, বরং স্বচক্ষে হুযূর গাউসে পাককে স্বশরীরে নিজের সামনে দেখতে পেয়ে একেবারে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন। তখন গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আপন হাত মুবারক তার হাতে রেখে, বায়আত করান এবং মা’রিফাতের দীক্ষা দিয়ে বলেন, ‘‘হে আমার রূহানী সন্তান! এবার তোমার মনের আশা পূর্ণ হলো তো?’’ লোকটি যার পর নাই আনন্দিত হলেন আর সবিনয় আরয করলেন, হাঁ। হযরত, আমার বাগদাদ আসা পূর্ণাঙ্গভাবে সার্থক হয়েছে।’’ এও বর্ণিত আছে যে, হুযূর গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ওই ব্যক্তির সকল সফর সঙ্গীকেও বায়’আত করিয়ে মা’রেফাতের দীক্ষা প্রদান করে দিলেন এবং পূনরায় মাযার শরীফের উদ্দেশে অদৃশ্য হলে গেলেন। সুবহানাল্লাহ্! [মু’জিযাতে আম্বিয়া ও কারামাতে আউলিয়া] গাউসে পাকের মজলিশে নবীগণের শুভাগমন
হযরত শায়খ আবু সাঈদ ক্বায়লুভী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও অন্যান্য কয়েকজন নবীকে গাউসে পাকের মজলিশে কয়েকবার দেখেছি। যেভাবে মুনিব তার গোলামকে ধন্য করে, সেভাবে নবীগণও গাউসে কপাকের মজলিশে এসে তাঁকে অনুপ্রাণিত করতেন। আমি এও দেখেছি যে, ফিরিশতাগণ দলে দলে উপস্থিত হতেন; এমনকি জ্বিন ও রেজালুল গায়ব (অদৃশ্য জনে) ও তাঁর মজলিশে আগমন করতেন। আমি হযরত খাদ্বির আলায়হিস্ সালামকেও তাঁর মজলিশে দেখেছি। তিনি আমাকে বলেছেন যে, সফলতা ও কামিয়াবীর জন্য মজলিশে আসা বড় প্রয়োজন।
শায়খ শরীফ আবদুল আব্বাস আহমদ বিন শায়খ আবদুল্লাহ্ হোসাইনী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেন, একদা আমি গাউসে পাকের মজলিশে উপস্থিত হয়ে দেখলাম, সেখানে প্রায় দশ হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন। শায়খ আলী ইবনে হায়তী গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মিম্বরের কাছাকাছি বসে ছিলেন, এমতাবস্থায় তাঁর চোখে সামান্য তন্দ্রাভাব এসেছিল। গাউসে পাক লোকদেরকে বললেন, ‘‘তোমরা সবাই চুপ হয়ে যাও।’’ এটা শুনার পর সবাই এমনভাবে চুপ হয়ে গেল যে, তখন মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছিল না। অতঃপর তিনি মিম্বর থেকে নেমে আসলে এবং শায়খ আলী হায়তীর সামনে অতি আদব সহকারে দাঁড়িয়ে তাঁর চোখ খুললে তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘তুমি কি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখেছ?’’ জবাবে তিনি বললেন, ‘হাঁ! হুযূর, আমি এক্ষুণি হুযূর-ই আকরামের সাক্ষাৎ দ্বারা ধন্য হয়েছি। গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বললেন, হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নূরানী আগমনের কারণেই আমি তোমার সামনে আদব সহকারে দাঁড়িয়ে রয়েছি।’’ শায়খ আলী হায়তী বলেন, ‘‘রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমাকে নসীহত করেছেন, আমি যেন আপনার মজলিশে হাযির থাকি।’’ এটা শুনে হুযূর গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বললেন, ‘‘যা তুমি স্বপ্নে দেখেছ, তা আমি জাগ্রত অবস্থায় দেখেছি।’’ বর্ণনাকারী বলেন, ওই দিন মজলিশে সাত ব্যক্তি মারা গিয়েছিল। [গাউসুল ওয়ারা] সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী! দেখুন, এই হচ্ছে আমাদের গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর আধ্যাত্মিক ক্ষমতা! এভাবে অজ¯্র প্রমাণ রয়েছে হুযূর গাউসে পাকের রূহানী ক্ষমতার পক্ষে। এ নিবন্ধে কয়েকটা মাত্র পেশ কলাম।
মোটকথা, আখেরী নবী রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পরে নবী করীমের দ্বীনকে পুনর্জীবিত করার জন্য যা কিছু দরকার, তাঁর সব কিছু আল্লাহ্ তা’আলা বেলায়তী রূপ দিয়ে, অসাধারণ ক্ষমতার ধারক বানিয়ে গাউসুল আ’যম শায়খ আবদুল ক্বাদের জীলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে এ পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন। পরিশেষে, মহান রবের দরবারে ফরিয়াদ জানাই- গাউসে পাকের গাউসিয়াতের ছায়া বা কৃপাদৃষ্টি দ্বারা আমাদেরকেও ধন্য করুন। আর আখেরী জমানার ফিৎনা-ফ্যাসাদ থেকে রক্ষা করুন! আ-মী-ন।