হিজরী চতুর্দশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরলভী- মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান >

হিজরী চতুর্দশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরলভী- মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান >

হিজরী চতুর্দশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ
আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরলভী –
মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান >

ফখরে কাইনাত রিসালত মাআব হুযূর সাইয়্যেদে আলম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
اِنَّ اللهَ يَبْعَثُ لِهٰذِهِ الْاُمَّةِ عَلى رَاسِ كُلِّ مِائَةِ سَنَةٍ مَنْ يُجَدِّدَ لَها دِيْنَهَا- (اَبُوْ داؤد)
অর্থ: প্রত্যেক শতাব্দির শেষ প্রান্তে এ উম্মতের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা একজন মুজাদ্দিদ অবশ্যই প্রেরণ করবেন, যে উম্মতের জন্য তার দ্বীনকে সজীব করে দেবে। [আবূ দাঊদ শরীফ] যিনি মুসলিম উম্মাহ্কে শরীয়তের বিস্মৃত বিধানাবলী স্মরণ করিয়ে দেন, আক্বা ও মাওলা সরকারে দু’আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর লুপ্ত সুন্নাতকে পুনর্জীবিত করেন, নিজের আলিম সুলভ দাপটের মাধ্যমে সত্যের বাণী ঘোষণা করে বাতিল তথা মিথ্যা ও মিথ্যার অনুসারীদের শিরকে পদ দলিত করেন এবং সত্যের পতাকাকে উড্ডীন করেন তাঁকেই মুজাদ্দিদ বলা হয়।

বলা বাহুল্য, বিশেষত পাক-বাংলা-ভারত উপমহাদেশে যখন আমাদের পূতঃপবিত্র দ্বীন-মাযহাব ও আক্বাঈদের উপর অনেক ধরনের বাতিলের চতুর্মুখী হামলা হতে লাগলো, তখন আল্লাহ্-রাসূলের অকৃত্রিম প্রেমিক, দ্বীন ও মাযহাবের একান্ত নিষ্ঠাপূর্ণ দরদী সত্যিকার অর্থে একজন ‘মুজাদ্দিদ’ হিসেবে যিনি নির্ভয়ে এগিয়ে এসেছিলেন এবং সব ধরনের বাতিলের সাথে সফল মোকাবেলা করেছিলেন, তিনি হলেন আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান ফাযেলে বেরলভী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে বংশীয় মর্যাদা, অনন্য মেধা, অগণিত বিষয়ে জ্ঞানগত যোগ্যতা, আল্লাহ্-রসূলের প্রতি অকৃত্রিম ইশ্ক্ব, আল্লাহ্র প্রিয় বান্দাদের প্রতি অগাধ ভক্তি ও ভালবাসা, সব ধরনের বাতিলের প্রতি পূর্ণাঙ্গ ঘৃণা, যে কোন ধরনের সমালোচনা ও আঘাতকে উদপেক্ষা করে সত্য প্রতিষ্ঠার প্রতি একান্ত ইচ্ছা ইত্যাদি পরিপূর্ণভাবে দান করেছিলেন। সুতরাং তিনি আল্লাহ্র এসব নি’মাতের প্রতি পূর্ণ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আজীবন নিরলসভাবে দ্বীন ও মাযহাবের সুদূর প্রসারী ও অনুকরণীয় খিদমতে আত্ম-নিয়োগ করেন। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে সর্বত্র বিজয় দান করেছেন। তিনি আজ বিশ্বের একজন সফল মুজাদ্দিদ এবং সবার নিকট আ’লা হযরত (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু)।

উপরিউক্ত সহীহ হাদীস শরীফ থেকে জানা গেলো যে, আল্লাহ্ তা‘আলার মহান দয়া যে, তিনি প্রতিটি শতাব্দির মাথায় এমনি যোগ্যতম ব্যক্তিকে পাঠান, যিনি দ্বীনের ক্ষেত্র বা পরিবেশ পুনরায় সজীব করে তোলেন, সুতরাং এমনি মহান কাজের জন্য তিনি যাঁকে চয়ন করে নেন, তিনি তো যুগের আবর্তে যে সব অশোভন অবস্থা ও সমাজে যেসব অশালীন ধর্ম-বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ড বিরাজ করে ওই সবক’টিকে চিহ্নিত করে, নিরবতা পালন ও সুবিধাজনক অবস্থান গ্রহণ না করে, সেগুলোর সংস্কারে নেমে পড়েন। এমনি অবস্থায় একদিকে একশ্রেণির মানুষ গোমরাহী বা পথভ্রষ্টতা ছড়ানোর সাথে জড়িয়ে পড়ে, অন্যদিকে একশ্রেণির লোক এ প্রথমোক্ত লোকদের মোকাবেলায় দাঁড়ানোর ঝুঁকিটুকু না নিয়ে নিজের জন্য সুবিধাজনক অবস্থান গ্রহণ করে বসে। কিন্তু যাঁকে আল্লাহ্ তা‘আলা ‘তাজদীদ’ বা সংস্কারের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তিনি তো নির্বিকার, উদাসীন, স্বার্থপর, অহমিকা শূন্য ও ব্যক্তিগত সুবিধাভোগী ও ঝুঁকি বিহীন হয়ে বসে থাকতে পারেন না। তিনি যখন, আল্লাহ্ তা‘আলার সাহায্য ক্রমে, একদিকে ব্যক্তিগতভাবে দ্বীন ও শরীয়তের বিধি-বিধানের অনুশীলন করতে থাকেন, অন্যদিকে চলমান যাবতীয় গোমরাহীর বিরুদ্ধে দৈহিকভাবে, মৌখিকভাবে ও ক্ষুরধার লেখনী এবং তর্ক-মুনাযারার মাধ্যমে তুমুল আক্রমণ আরম্ভ করে দেন। ফলশ্রুতিতে একদিকে সত্য প্রেমী ও সত্য-সন্ধানী মানুষেরা খুশী ও গর্বিত হয়ে তাঁকে অনুসরণ ও অনুকরণ করে বে-দ্বীনী ও পথভ্রষ্টতা থেকে বেঁচে যান এবং উভয় জাহানের সাফল্য লাভ করে ধন্য হয়ে যান, আর অন্যদিকে ভ্রান্তমতবাদী ও অপকর্মে লিপ্ত লোকেরা তাঁর বিরুদ্ধে নানা ধরনের চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে যায়। তাঁর বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা অপবাদ রচনা, তাঁর কথার ভুল ব্যাখ্যা প্রদান এবং তাঁর নিষ্ঠাগুলোকে তাঁর তথাকথিত স্বার্থপরতা হিসেবে চালিয়ে দিয়ে তাঁকে হেয়প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলার শোকর যে, সব সময় জয় সত্যেরই হয়।

উদাহরণ স্বরূপ, এ উপমহাদেশে এ সব পরিস্থিতির একেক পর্যায়ে হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী শায়খ আহমদ সেরহিন্দী, হযরত আবদুল আযীয মুহাদ্দিস-ই দেহলভী এবং বাদশাহ্ আওরঙ্গযেব আলমগীর রাহমাতুল্লাহি আলায়হিমকে বড় বড় প্রতিপক্ষ পথভ্রষ্টদের বিরুদ্ধে বীরদর্পে দাঁড়াতে হয়েছিলো। বলাবাহুল্য, এজন্য তাঁদেরকে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো বটে, কিন্তু ঐতিহাসিক জয় ও সাফল্য তাঁদের পদযুগল চুম্বন করেছিল। আর প্রতিপক্ষগুলো দলিত, অপমানিত-লাঞ্ছিত এবং শেষ পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন কিংবা প্রত্যাখ্যাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলো।

হিজরী ত্রয়োদশ শতাব্দির শেষভাগে আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু উপমহাদেশের বেরিলীতে (১২৭২ হিজরীতে) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তাঁর প্রশংসণীয় শৈশব ও কৈশোর অতিবাহিত হতেই পুরোদমে নেমে যান দ্বীন ও মাযহাবের সংস্কার কর্মে। তিনি তাঁর আদর্শ জীবনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত (১৩৪০ হিজরী) তাঁর সফল সংস্কার কর্ম চালিয়ে যান। ফলশ্রুতিতে একদিকে তাঁর অনুসরণীয় আদর্শ এবং সহ¯্রাধিক অকাট্য প্রামাণ্য গ্রন্থ-পুস্তক সত্যপন্থী মুসলমানদের (সুন্নী মুসলমানদের) ধনভান্ডারে পুঞ্জিভূত হয়ে যায়, যা আজ পর্যন্ত, বরং চিরদিন সুন্নী মুসলমানদের অব্যর্থ সম্পদ ও দিক-নির্দেশনা হিসেবে অবদান রেখে যাচ্ছে ও যাবে।

অন্যদিকে তিনি যেসব বাতিলদের মুখোশ উন্মোচন করে এসেছেন, তাদের অস্থিরতার সীমা থাকেনি। এ’তে তাদের উচিৎ ছিলো নিজেদের দোষ-ত্রুটিগুলো শুধরিয়ে নিয়ে ঈমান ও সত্যের গণ্ডিভুক্ত হয়ে যাওয়া। কিন্তু তাদের বেশীরভাগ লোক তা না করে তাদের দোষগুলো ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নতুন নতুন ফঁন্দি আটতে থাকে। অনেকে নিজেদের বক্তব্য ও লেখনীগুলোকে নির্বিচারে অস্বীকার করে ফেলেছে, পরবর্তীতে মিথ্যাগুলো প্রমাণিত হয়ে গেলে তারা হয়তো সেগুলোর ব্যাখ্যা দিয়ে বাঁচতে চেয়েছে, অথবা কিছু দিন নিরব রয়ে, পরবর্তীতে তাদের অন্ধ অনুসারীদেরকে সেগুলো গল:ধকরণের চেষ্টা করেছে। অথবা ওইগুলোর উন্মোচনকারী আ’লা হযরতের নামে নানা মিথ্যা অপবাদ রটনা করে এসেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, তাদের ওইসব অপবাদ রটনার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে আ’লা হযরতের সত্যতা প্রমাণিত হলে একথা ভাবতেও আশ্চর্য বোধ হয় যে, ওহাবী-দেওবন্দী তথা বাতিলপন্থীরা নিজেদের স্বার্থে কেমন জঘন্য মিথ্যা রচনা ও রটনা করতে পারে? আর একথাও বিশ্বাস করতে সরল প্রাণ মুসলমানদের কষ্ট হয় যে, এত বড় বড় মাদ্রাসা গড়া এবং দীর্ঘ ও গোটা শরীর ঢাকা ইসলামী আল-খেল্লা পরার আড়ালে এমন জঘন্য কুফরী আক্বীদা কীভাবে পোষণ ও প্রচার করতে পারে!

আ’লা হযরত ও অন্যান্য সুন্নী ওলামা কেরাম তাদের যেসব মুখোশ উন্মোচন করেছেন, সেগুলোর মধ্যে সবকটির বিস্তারিত বিবরণ আমাদের সুন্নী লেখক ও বক্তাগণ এ পর্যন্ত দিয়ে এসেছেন ও দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এ নিবন্ধে সেগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা করতে গেলে কলেবর অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাবে।
তাই, কয়েকটা মাত্র উল্লেখ করার প্রায়স পাচ্ছি- উদাহরণ স্বরূপ বিশেষত: অতি সম্প্রতি ওহাবী-দেওবন্দীপন্থীরা বাংলা ভাষায় দু’টি পুস্তিকা প্রকাশ করেছে। ওই দুটি পুস্তিকায় আ’লা হযরতের নামে অতি বিশ্রিভাবে বিষোদ্চার করা হয়েছে। তাছাড়া, তারা পুস্তিকা দু’টিতে নিজেদের দোষ গোপন করার জন্য শুধু মিথ্যা ও অপবাদেরই আশ্রয় নিয়েছে। কারণ চোর হাতে নাতে ধরা পড়লে ‘সে চুরি করেনি’ না বলে বাঁচার বিকল্প কোন পথ তার জন্য খোলা থাকে না। ওই দু’টি পুস্তিকা হলো: ১. বর্ণচোরা কারা? এবং ২. শরীয়তের দৃষ্টিতে পীর-মুরিদ ও ভণ্ডপীরের দাঁতভাঙ্গা জবাব। বলা বাহুল্য, এ বই দু’টিতে বিভিন্নভাবে একাধিক বিষয়ে লেখা হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে বেশীর ভাগ লেখা একেবারে খণ্ডণীয়; বিশেষত আ’লা হযরতের প্রসঙ্গটি অতি জঘন্য বিষয়। এ নিবন্ধে এ প্রসঙ্গে প্রথমে আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি।

প্রথমত: ‘হুসামুল হেরমাঈন’ প্রসঙ্গ
শতাব্দির মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত দেখলেন ভারতবর্ষে মুসলিম মিল্লাতের ধর্মীয় গুরুঠাকুর সেজে কতিপয় লোক তাদের মৌখিক দাবী ও লিখিত বই-বুস্তকে জঘন্য কুফরী করে বসে আছে। যেমন- ১. মীর্যা গোলাম আহমদ ক্বাদিয়ানী নিজেকে প্রকাশ্যে ‘নবী’ বলে দাবী করে বসেছে, ২. মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী তাঁর কিতাব ‘ফাতওয়া-ই রশীদিয়া’য় লিখেছে- ‘‘আল্লাহ্ মিথ্যা বলতে পারেন’’, ৩. মৌং কাসেম নানূতবী তার ‘তাহযীরুন্নাস’-এ লিখেছে- ‘‘হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী নন।’’ ৪. মৌং খলীল আহমদ অম্বেঠভী তার ‘বারাহীন-ই ক্বাতে‘আহ্’য় লিখেছে- ‘‘হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’’-এর চেয়ে শয়তানের ইল্ম (জ্ঞান) বেশী।’’ ৫. মৌং আশরাফ আলী থানভী তাঁর ‘হিফযুল ঈমান’-এ লিখেছে- ‘‘হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ন্যায় গায়বী ইল্ম শিশু, পাগল ও জীবজন্তুর নিকটও রয়েছে।’’ [নাঊযু বিল্লাহ্, সুম্মা নাঊযু বিল্লাহ্]

উল্লেখ্য, উক্ত পাঁচজনের কুফরী আক্বীদা, দাবী ও কথাগুলো তাদের লিখিত বই-পুস্তকে এখনো মওজূদ রয়েছে। কিন্তু ওহাবী-দেওবন্দীরা এ প্রসঙ্গে হয়তো নিরব থাকে, নতুবা বলে ও নির্লজ্জভাবে বই পুস্তকে লিখে দেয়- ‘উক্ত কথাগুলো তাদের মুরব্বীদের বই পুস্তকে নেই। আ’লা হযরত তাদের নামে অপবাদ রচনা করে তাদেরকে হেয়-প্রতিপন্ন এমনকি কাফির-মুরতাদ বানাতে চেয়েছেন।’
অথচ এমনটি হওয়া সম্ভবই নয়। কারণ, ইমাম আহমদ রেযার সততা, সত্যবাদিতা, খোদাভীরুতা ও সত্য বলা ও লিখার ব্যাপারে নির্ভিকতা জগৎব্যাপী খ্যাত। কিন্তু মিথ্যা বলা, সত্য গোপন করা, নিজেদের দোষকে ধামা-চাপা দেয়ার জন্য জঘন্য অপবাদ রচনা ও রটনা করা বিশেষত ওহাবী-দেওবন্দীদের-ই সহজাত চরিত্র বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

এসব জঘন্য ও বেয়াদবীপূর্ণ ইবারতগুলো দেখে ওলামা-ই আহলে সুন্নাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিকট চিঠির পর চিঠি লিখে এগুলোর জবাব চেয়েছেন। কিন্তু আফসোস! ওইসব দেওবন্দী আলেম (!) কোন জবাব দিলো না। শেষ পর্যন্ত ‘বারাহীনে ক্বাতি‘আহ্’ প্রকাশের প্রায় ষোল বছর পর, ‘তাহযীরুন্নাস’ লেখার ত্রিশ বছর পর, ‘হিফযুল ঈমান’ প্রকাশের প্রায় এক বছর পর – ১৩২০ হিজরীতে ‘আল-মু’তাক্বাদ আন্মুন্তাক্বাদ’-এর পার্শ্ব ও পাদটীকা ‘আল মু’তামাদ আল-মুস্তানাদ’-এ মীর্যা ক্বাদিয়ানী এবং উপরোক্ত জঘন্য উক্তিকারীগণ মৌং কাসেম নানূতভী, মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী, মৌলভী খলীল আহমদ অম্বেঠভী ও মৌং আশরাফ আলী থানভীর উপর, তাদের উক্তসব ইবারতের ভিত্তিতে ‘কুফ্র’ (কাফির)-এর ফাতওয়া প্রণয়ন ও প্রকাশ করা হয়।

বস্তুত: এ ফতাওয়া আরোপ দেওবন্দী আলিমদের বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তিগত কারণে বা ঝগড়ার ভিত্তিতে ছিলো না, বরং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের মান-মর্যাদা রক্ষার নিমিত্তে একটা ফরযই আদায় করেছিলেন আ’লা হযরত বেরলভী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু।
আ’লা হযরতের এ সময়োচিত ও ধর্মীয় গুরুদায়িত্ব পালনের প্রশংসা শুধুই সুন্নী-মুসলিম দুনিয়া করেনি, বরং কোন কোন দায়িত্বশীল দেওবন্দী আলিমও তাঁর প্রশংসা করেছেন। যেমন: মুরতাদ্বা হাসান দরভঙ্গী, নাযিম, (ব্যবস্থাপক), তা’লীমাত-ই শো’বা-ই তাবলীগ, দারুল উলূম দেওবন্দ এ ফাত্ওয়া সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন-
‘‘যদি (মাওলানা আহমদ রেযা) খান সাহেবের মতে, দেওবন্দের কিছু সংখ্যক আলিম বাস্তবিক পক্ষে তেমনি ছিলেন, যেমনটি তিনি মনে করেছেন, তাহলে খান সাহেবের উপর এ দেওবন্দী আলিমদের বিরুদ্ধে কুফরের ফাত্ওয়া আরোপ করা (কাফির বলা) ফরযই ছিলো, যদি তিনি কাফির না বলতেন, তাহলে তিনি নিজেই কাফির হয়ে যেতেন।’’
সুতরাং বুঝা গেলো যে, দেওবন্দী-ওহাবীদের সাথে বেরলভী তথা সুন্নী মুসলমানদের বিরোধ কোন ‘অনুমিত শাখা- মাসাইল’-এর ভিত্তিতে নয়, বরং মৌলিক ঈমানের প্রশ্নেই ছিলো। একথা মি. মুওদূদীও স্বীকার করেছেন। [সূত্র: মাক্বালালাত-ই ইয়াউমে রেযা, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬০]

১৩২৪ হিজরীতে ইমাম আহমদ রেযা বেরলভী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ‘আ’লমু‘তামাদ আল-মুস্তানাদ’-এর ওই অংশ, যাতে উক্ত ফাত্ওয়া রয়েছে, হেরমাঈন-ই তাইয়্যেবাঈনের আলিমদের সামনে পেশ করলেন, যার উপর সেখানকার ৩৫ জন শীর্ষস্থানীয় আলিম সুস্পষ্ট ও অকাট্য অভিমত লিখে দিয়েছেন। তাঁরা মীর্যা ক্বাদ্বিয়ানীর সাথে সাথে অন্য চারজন সম্পর্কেও বলেছেন- ‘‘তারা নিঃসন্দেহে ইসলামের গণ্ডি থেকে খারিজ।’’ আর দ্বীন-ইসলামের হিফাযতের পরম্পরায় আ’লা হযরত যে-ই খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। হেরমাঈন শরীফাইনের প্রখ্যাত আলিমদের এ ফাতওয়া ‘হুসামুল হেরমাঈন ‘আলা মান্হারিল কুফরি ওয়াল মায়ন’(১৩২৪) নামে প্রকাশ করা হয়েছে। এ’তে দেওবন্দী ওহাবীদের মুখোশ আরো দৃঢ়ভাবে উন্মেচিত হয়ে যায়। এ’তে সংশ্লিষ্ট লোকদের এবং দেওবন্দী ওহাবীদের ভুল শুধরিয়ে নিয়ে, উক্ত মৌলভীদের, তাদের উক্তিগুলোকে প্রত্যাহার ও তাওবা করে নতুন করে ঈমান আনার সুযোগ হয়েছিলো। কিন্তু তারা তা না করে বিশেষত: দেওবন্দী আলিমদের একটি দল মিলিত হয়ে একটি পুস্তিকা ‘আল-মুহান্নাদ আল-মুফান্নাদ’ নামে লিখে দিলো। তাতে তারা অতি চালাকীর সাথে একথা বলতে চেয়েছে যে, তাদের আক্বাইদ তা-ই, যা আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা‘আতেরই, অথচ আপত্তিকর ইবারতগুলো তাদের কিতাবগুলোতে তখনো মওজুদই ছিলো এবং এখনো রয়েছে।

সদরুল আফাযিল সাইয়্যেদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী আলায়হির রাহমাহ্ ‘আত্ তাহক্বীক্বাত লি দাফ‘ইত্ তালবীসাত’ লিখে উক্ত সব ইবারত উল্লেখ করে জনসমক্ষে একেবারে স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
‘হুসামুল হেরমাঈন’-এর প্রভাব দূরীভূত করার জন্য দেওবন্দী আলিমগণ এ বলে গুজব রটিয়ে দিলো যে, ‘‘ফাতাওয়া-ই ওলামা-ই হেরমাঈন’’ মিথ্যা ও বানোয়াট কথা বলে হাসিল করা হয়েছে। কেননা, ফাতওয়ার মূল ইবারতগুলো উর্দু ভাষায় লিখিত ছিলো, আরবের আলিমগণ উর্দু পড়তে পারেন না। তাছাড়া, হিন্দুস্থানের কেউ ‘হুসামুল হেরমাঈন’ নামক ফাত্ওয়াটার প্রতি সমর্থন দেননি। এ গুজব ও মিথ্যা প্রপাগাণ্ডার খণ্ডনে শেরে বীশাহ্-ই আহলে সুন্নাত মাওলানা হাশমত আলী খান রেযভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি এ উপমহাদেশের আড়াইশ’র অধিক নামকরা আলিমের ‘হুসামুল হেরমাঈন’-এর পক্ষে সমর্থন মূলক অভিমত নিয়ে সেগুলোকে ‘আস্ সাওয়া-রিমুল হিন্দিয়া’ নামে প্রকাশ করেছেন।

এ পর্যন্ত, দেওবন্দী-ওহাবী, কওমী, হেফাজীতরা বিভিন্নভাবে মুসলিম সাধারণকে ব্যাপকভাবে একথা বুঝাতে অপচেষ্টা চালিয়ে এসেছে যে, আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি বিনা কারণে দেওবন্দীদের বিরুদ্ধে কুফরের (কাফির বলে) ফাতওয়া আরোপ করেছেন, অথচ তারা (দেওবন্দী-ওহাবী)রা নাকি ইসলাম ও মুসলমানদের খাদিম ছিলো। আর ‘আল-মুহান্নাদ’ নামক পুস্তিকায় জোরে শোরে প্রচার করতে থাকে। এমতাবস্থায় ‘হুসামুল হেরমাঈন’-এর প্রকাশনা ও প্রচারণা অতি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিলো, যাতে বিরোধের বিশুদ্ধ প্রেক্ষাপট জন সমক্ষে এসে যায় এবং কেউ যেন এ ব্যাপারে ধোঁকা ও মিথ্যার আশ্রয় নিতে না পারে। আর এ পর্যন্ত দেওবন্দী-ওহাবী, হেফাযতী-কওমীরা এ প্রসঙ্গে যেসব মিথ্যাচার করেছে, সবকটির জবাবও হয়ে যায়।

সমাজে যখন কোন অ-ইসলামী কার্য দেখা দেয়, তখন অন্য কেউ নিরব থাকতে পারলেও একজন সত্যিকার অর্থের মুজাদ্দিদ নিশ্চুপ থাকতে পারেন না। এমতাবস্থায়, যখন পাক-বাংলা -ভারত উপমহাদেশে পঞ্চাশোর্ধ ফিৎনা ও বে-দ্বীনী দেখা দিয়েছিলো, তখন শতাব্দির মুজাদ্দিদ ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী মোটেই নিরব থাকতে পারেননি। যখন ১. দেওবন্দীদের উপরোক্ত জঘন্য ফিৎনাগুলোসহ আরো বহু ধরনের ফিৎনার সূচনা হয়েছিলো, ২. যখন মৌং ইসমাঈল দেহলভীর ‘তাক্বভিয়াতুল ঈমান’-এর ফিৎনা শুরু হয়েছিলো, ৩. রসূল-ই করীমের ইলমে গায়বকে অস্বীকার করার ফিৎনা দেখা দিয়েছিলো, ৪. খতমে নবূয়তকে অস্বীকার করার মতো দুঃসাহস দেখা দিলো, ৫. আল্লাহ্ তা‘আলাকে মিথ্যাবাদী (ইমক্বানে কিয্ব) বলতে আরম্ভ করা হলো, ৬. গোলাম আহমদ ক্বাদিয়ানী নিজেকে নবী বলে দাবী করতে আরম্ভ করলো, ৭. এক শ্রেণীর মৌলভী নিজেদেরকে নবীর সমান বলে দাবী করছিলো, ৮. যখন একশ্রেণীর মৌলভী-মোল্লা নবী ও ওলীগণের ইখ্তিয়ার বা ক্ষমতাকে অস্বীকার করতে লাগলো, ৯. যখন মাযহাব না মানার ফিৎনা আরম্ভ হলো, ১০. নবী করীমের মাতা-পিতার ঈমানকে অস্বীকারের মতো দুঃসাহস দেখানো হচ্ছিলো, ১১. আর্যরা যখন তথাকথিত শুদ্ধিকরণ আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা বিনষ্ট করে যাচ্ছিলো, ১২. শিয়া ও শিয়াদের দ্বারা প্রভাবিতরা যখন যহরত আমীর মু‘আভিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করতে লাগলো, ১৩. যখন আযান-ইক্বামতে হুযূর-ই আকরামের নাম শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করে চক্ষুদ্বয়ে মসেহ করার বিরুদ্ধে ফাতওয়াবাজি শুরু হলো, ১৪. যখন চাঁদ দেখা নিয়ে ফিৎনা আরম্ভ হলো, ১৫. একদিকে শাফা‘আতকে অস্বীকার করা হচ্ছিলো, অন্যদিকে ১৬. কাকের গোশ্ত খাওয়াকে জায়েয বলা হচ্ছিলো, ১৭. যখন একশ্রেণীর লোক তা‘যীমী সাজদার মতো হারাম কাজকে জায়েয মনে করে ছিলো, ১৮. যখন ভারতকে ‘দারুল হারব’ ফাতওয়া দিয়ে, কৌশলে মুসলমানদেরকে বিপদে ফেলার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছিলো, ১৯. যখন রাফেযী-শিয়ারা মাথাচাড়া দিয়েছিলো, ২০. যখন দু’ঈদে করমর্দন, আলিঙ্গন, মীলাদ-মাহফিল ও তাতে ক্বিয়াম-মীলাদ ও ঈসালে সাওয়াবকে অবৈধ বলে ফাতওয়াবাজি করা হচ্ছিলো, ২১. যখন মাযার-শরীফগুলোতে বাতি জ্বালানোকে না-জায়েয বলা হচ্ছিলো, ২২. নবী করীমের সশরীরে মি’রাজকে অস্বীকার করা হচ্ছিলো, ২৩. যখন নাদ্ওয়াতুল ওলামার সৃষ্ট ফিৎনা পুরাদমে চলছিলো, ২৪. যখন খিলাফত কমিটির ফিৎনা দেখা দিয়েছিলো, ২৫.যখন ওহাবীরা হিন্দুদের খুশী করার জন্য গাভী ক্বোরবানী থেকে বিরত রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছিলো, ২৬. যখন আধুনিক দর্শনের ফিৎনা শুরু হলো, ২৭. যখন শিয়াদের তাযিয়াদারীর ফিৎনা শুরু হলো, ২৮. মাযারগুলোতে নারীদের অবাধে যাতায়তের ফিৎনা দেখা দিলো, ২৯. যখন শরীয়তকে তরীক্বত থেকে পৃথক করে দেখানোর মতো ফিৎনা দেখা দিলো, ৩০. যখন গায়েবী জানাযা পড়াকে কেন্দ্র করে ফিৎনা দেখা দিলো, ৩১. যখন শিয়াদের নেকাহে মাত্‘আহ্র ফিৎনা আরম্ভ হয়েছিলো, ৩২. যখন ইংরেজদের বহুবিধ ষড়যন্ত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে তুঙ্গে, তখন ইমাম আহমদ রেযা শতাব্দির মুজাদ্দিদ হিসেবে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পালন করেছেন। এতে সংশ্লিষ্ট বাতিলপন্থীরা নাখোশ হলেও তাঁর প্রতি আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল সন্তুষ্ট হন। আল্লাহ্ ও রসূল তাঁকে প্রতিটি পদক্ষেপে সাহায্য করেছেন। ফলশ্রুতিতে এ পর্যন্ত বাতিলপন্থীদের এত বিরোধিতার পরও আ’লা হযরত আ’লা হযরতই আছেন। তিনি, সহ¯্রাধিক অকাট্য গ্রন্থ-পুস্তক লিখে দিয়েছেন, ওইগুলো ইনশাআল্লাহ্ চিরদিনই অকাট্য ও প্রামাণ্য হিসেবে গৃহীত-সমাদৃত হয়েই থাকবে।

আ’লা হযরত ১০ শাওয়াল-ই মুর্কারম ১২৭২ হিজরী/১৪জুন, ১৮৫৬ ইংরেজী সালে শনিবার যোহরের সময়, ভারতের বেরিলী নগরী (ইউ.পি)-তে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বংশীয়ভাবে ‘পাঠান’, মাযাহাবের দিক দিয়ে ‘হানাফী’, তরীক্বতের দিক দিয়ে ‘ক্বাদেরী’। তাঁর সম্মানিত পিতা মাওলানা নক্বী আলী খান। তাঁর সম্মানিত পিতামহ মাওলানা রেযা আলী খান অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের আলিম ও বেলায়তের ঊর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ হযরত সাঈদ উল্লাহ্ খান রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি আফগাস্তিানের কান্দাহারের ঐতিহ্যবাহী ‘বড়হীস’ গোত্রীয় পাঠানি ছিলেন। লাহোরের শীষমহল তাঁর জায়গীর ছিলো। অতঃপর তিনি সেখান থেকে দিল্লী তাশরীফ আনেন। তখন তিনি ঐতিহাসিক ‘শশহাযারী’ পদে উন্নীত হন। শাহী দরবার থেকে তিনি ‘শজা‘আত জঙ্গ’ (রণ বীরত্ব) খেতাবে ভূষিত হন।

ইসলামী রীতি অনুসারে চার বছর বয়স থেকে আ’লা হযরত লেখাপড়া শুরু করেন। অসাধারণ মেধাবী আ’লা হযরত অতি কৃতিত্বের সাথে মাত্র তের বছর দশ মাস বয়সে সমস্ত অধ্যয়ন, গবেষণা ও চিন্তাগত পাঠের জ্ঞানার্জন সমাপ্ত করেন এবং ‘দস্তারে ফযীলত’ (শেষবর্ষ সনদ ও সম্মানসূচক পাগড়ি প্রতীক) দ্বারা ভূষিত হন। এর পরবর্তী বছর (১৪ শা’বান ১২৮৬ হিজরী। ১৯ নভেম্বর, ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ) রাদ্বা‘আত সম্পর্কিত ফাতওয়া প্রণয়ন করে তিনি সমসায়িক বিজ্ঞ মুফতী সমাজকে হতবাক করে দেন। এ বছরই তাঁর সম্মানিত পিতা মাওলানা নক্বী আলী খান ‘ফাতওয়া প্রদান’-এর দায়িত্বভার আ’লা হযরতকেই অর্পণ করেন।
এভাবে তিনি সত্তরাধিক বিষয়ে বুৎপত্তির অধিকারী ছিলেন এবং পঞ্চাশোর্ধ বিষয়ে কিতাব রচনা ও প্রণয়ন করেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে সহস্রাধিক গ্রন্থ-পুস্তক রচনা ও প্রণয়ন করেন। ওইগুলোর মধ্যে বিশুদ্ধ ‘কান্যুল ঈমান ফী তরজমাতিল ক্বোরআন’ এবং ১২ খণ্ড বিশিষ্ট ‘ফাতাওয়া-ই রযভিয়া’ সববিশেষ প্রসিদ্ধ।
কারামত
আ’লা হযরত তরীক্বতের ক্ষেত্রে অতি উচ্চ পর্যায়ের ওলী-ই কামিল ছিলেন। তাঁর অসংখ্য কারামতও প্রসিদ্ধ। তন্মধ্যে একটি কারামত নিম্নে উল্লেখ করলাম-
আ’লা হযরত ট্রেনযোগে পিলীভেত থেকে বেরিলী শরীফ যাচ্ছিলেন। নবাবগঞ্জ ষ্টেশনে দু/এক মিনিটের জন্য ট্রেন থেমেছিলো। তখন মাগরিবের নামাযের সময় হয়েছিলো। তিনি সফরসঙ্গীদের নিয়ে নামায আদায়ের জন্য নেমে পড়লেন। সফরসঙ্গীরা এভেবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন যে, হয়ত ট্রেন চলে যাবে। আ’লা হযরত আলায়হির রাহমাহ্ বললেন, ‘‘চিন্তা করোনা, গাড়ী আমাদেরকে নিয়েই যাবে।’’

সুতরাং আযান দেওয়ানো হলো এবং অতি একাগ্রতার সাথে তিনি নামায পড়িয়ে দিলেন। এদিকে ড্রাইভার যথা সময়ে ইঞ্জিন চালু করতে চাইলো। কিন্তু ইঞ্জিন এক ইঞ্চি পরিমাণও আগে বাড়লো না। ড্রাইভার ইঞ্জিনকে পেছনের দিকে চালালো। তখন তা চলতে লাগলো। অতঃপর সে পুনরায় সামনের দিকে চালাতে চাইলো। কিন্তু ইঞ্জিন প্রথম স্থানে এসে বন্ধ হয়ে গেলো। তখন এক উচ্চরব শোনা গেলো- ‘‘দেখো, ওই দরবেশ নামায আদায় করছেন। এ কারণেই গাড়ীটি চলছে না।’’ দারুণ কৌতুহলী হয়ে লোকেরা তাঁর চতুপার্শ্বে জড়ো হয়ে গেলো। ইংরেজ গার্ড, যে এতক্ষণ যাবৎ হতবাক হয়ে দাঁড়ানো ছিলো, অতি আদব সহকারে তাঁর নিকট বসে পড়লো। যখনই আ’লা হযরত নামায শেষ করলেন এবং ট্রেনে উঠে বসলেন, তখন রেল গাড়ী চলতে লাগলো। এ অলৌকিক ঘটনা দেখে গার্ড আ’লা হযরতের পরিচয় নিলো এবং নিজের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের সঙ্গে করে বেরিলী শরীফ হাযির হয়ে ইসলাম গ্রহণ করলো। আলহামদু লিল্লাহ্!
মোটকথা, আ’লা হযরত ছিলেন এ উম্মতের জন্য শতাব্দির মুজাদ্দিদ এবং আল্লাহর এক অনন্য নি’মাত।