ঈদ-এ মিলাদুন্নবী ও জশনে জুলুস উদ্যাপন মুমিনের শ্রেষ্ঠ ঈদ

ঈদ-এ মিলাদুন্নবী ও জশনে জুলুস উদ্যাপন মুমিনের শ্রেষ্ঠ ঈদ

মুহাম্মদ বোরহান উদ্দীন>

সৃষ্টি কুলের সর্দার দু’জাহানের বাদশা নবী রাহমাতুল্লীল আলামীন ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত হিসেবে এ ধরা পৃষ্ঠে শুভাগমন করেছেন। এ কারণেই প্রিয় নবীর পবিত্র বেলাদত শরীফে আনন্দ ও খুশি উদ্যাপন করে থাকে সমগ্র সৃষ্টিকুল। বিশ্ব মুসলিম এ দিন জশনে জুলুশ উদযাপন করে, মিলাদুন্নবী সম্পর্কীয় আলোচনা সভা ও সেমিনারের আয়োজন করে, দান-সাদকাহ, খয়রাত করে এবং নানা জাক-জমকপূর্ণ আয়োজন করে দরূদ শরীফ পাঠ ও দোয়া মুনাজাত, হুযুর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর শুভাগমনের সময়কার অলৌকিক ঘটনাবলীর বিবরণ হয় আর প্রিয় নবীর আদর্শ জীবনী আলোচনা ইত্যাদির মাধ্যমে সাধারণত পবিত্র ঈদ-এ- মিলাদুন্নবী উদ্যাপন করে থাকেন। এ ধরণের আয়োজনের পক্ষে পবিত্র কুরআন, হাদিস শরীফ, সাহাবায়ে কেরাম, ইমামগণ এবং বিজ্ঞ আলিম সামজের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

পবিত্র কুরআনের আলোকে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উদ্যাপন
পবিত্র কুরআনুল হাকীমের বহু আয়াতে কারীমায় মহান আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ প্রদান করেছেন। যেমন ইরশাদ করেছেন-
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
অর্থাৎ হে নবী আপনি বলে দিন, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতের উপর খুশী পালন কর; যা তোমাদের সমস্ত ধন ধৌলত অপেক্ষা শ্রেয়। (সূরা- ইউনুস, আয়াত নং- ৫৮)
এই আয়াতে আল্লাহ পাক মুসলমানগণকে তার ফজল ও রহমত প্রাপ্তির উপর খুশী পালন করার হুকুম দিয়েছেন। অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন
وَلَوْلَا فَضْلُ اللهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا
অর্থাৎ: এবং যদি তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও দয়া না হত তাহলে তোমাদের মুষ্ঠিমেয় লোক ছাড়া অন্যরা সবাই শয়তানের অনুসরণ করতো।
[সূরা নিসা, আয়াত- ৮৩]
মুফাসসিরে কেরামগণ এ আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে যে, এখানে আল্লাহর রহমত এবং দয়া একসাথে উল্লেখ করেছেন। এখানেرحمته দ্বারা মূলত হুজুর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বুঝানো হয়েছে। মুসলমানদেরকে আল্লাহ পাক সম্বোধন করে এরশাদ করেছেন, ‘যদি প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আগমন না হতো, তাহলে তোমাদের অধিকাংশই গোমরাহ হয়ে যেতে। ফলে শয়তানের অনুগত হয়ে ধ্বংস হয়ে যেতে। কুরআনে পাকের ঘোষণা –
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
অর্থাৎ হে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমি আপনাকে সমগ্র জাহানের জন্য একমাত্র রহমত হিসাবে প্রেরণ করেছি। [সূরা- আম্বিয়া, আয়াত নং- ১০৭]
অর্থাৎ রসূলে করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জন্ম সমগ্র বিশ্বের মানব ও মুমিনের জন্য সবচাইতে বড় নেয়ামত ও দয়া। আর আল্লাহ পাক তাঁর দয়া প্রাপ্তিতে শুকরিয়া করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন এভাবে যে-
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ –
অর্থাৎ তোমরা আমাকে স্মরণ কর আমি তোমাদের স্মরণ করব আর আমার শুকরিয়া আদায় কর এবং আমার নেয়ামতকে অস্বীকার কর না।
[সূরা- বাকারা, আয়াত নং- ১৫২]
আর আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতের জন্য যারা আনন্দ প্রকাশ করে তবে আল্লাহ ঈমানদারদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না। তাছাড়া আল্লাহর নেয়ামত লাভ করা, যা ঈদ পালনের দৃষ্টান্ত আমরা কুরআনে পাকেও দেখতে পাই। যেমন- ইরশাদ হচ্ছে-
قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللّٰهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ ۖ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ (১১৪(
অর্থাৎ ‘ঈসা ইবনে মরিয়াম আলাইহিস সালাম বললেন, হে আল্লাহ, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের জন্য আকাশ থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্ছা নাযিল করুন, যা আমাদের পূর্ববর্তী ও আমাদের পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ তথা আনন্দ (উৎসবের কারণ) হবে। আর আপনার তরফ থেকে অন্যতম নিদর্শন এবং আপনিতো সর্বোত্তম জিবীকা দাতা। [সূরা- মায়েদা-১১৪]

এ আয়াতে পাক হতে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে খাঞ্ছা ভরা খাদ্য আসলে, তা যদি হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ভাষায় সৃষ্টির আদি হতে অন্ত পর্যন্ত সকলের জন্য ঈদ তথা আনন্দ উৎসবের উসিলা ও আল্লাহর নিদর্শন হয়, তাহলে আকা মাওলা বিশ্বনবী রাহমাতুল্লীল আলামীন (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মত মহান নেয়ামত এর শুভাগমনের দিন-মাস কতই মর্যাদাপূর্ণ, গুরুত্ববহ ও আনন্দ উৎসবের দিন যা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আল্লাহ পাক যে দিন হুজুর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে প্রেরণ করেছিলেন, সে দিন নবী পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে পেয়ে সৃষ্টি জগতের সকলেই খুশি হয়েছিল। হ্যাঁ তবে ইবলিসের দল ব্যতীত সকলেই খুশি উদ্যাপন করেছিল।

হুজুর করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর শুভাগমন উপলক্ষে শরীয়ত সম্মত উপায়ে আনন্দ ও খুশি উদ্যাপনের বৈধতার পক্ষে হাদীসে পাকেও প্রমাণ বিদ্যমান। যেমন- হাদীস শাস্ত্রের প্রখ্যাত ইমাম আবু ঈসা মুহাম্মদ তিরমিযী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর সংকলিত ‘সুনানে তিরমিযী শরীফ’ এ “মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শিরোনামে একটি অধ্যায় প্রণয়ন করেছেন এবং বর্ণনা করেছেন, তিনি (ক্বায়স ইবনে মাখ্রামা) বলেন “আমি এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘আমুল ফীল’ অর্থাৎ বাদশাহ্ আব্রাহার হস্তী বাহিনীর উপর গজব নাযিল হওয়ার বছর জন্ম গ্রহণ করেছি।” আর হযরত ওসমান ইবনে আফ্ফান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বনী ইয়া’মর ইবনে লাইস-এর ভাই কুবাস ইবনে আশ্ইয়ামকে বললেন, “আপনি বড়, না রসূলুল্লাহ তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম? তখন তিনি বললেন, “রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার চেয়ে অনেক বড়; (অর্থাৎ মর্যাদায়) আর আমি জন্ম সূত্রে হুযূরের আগে মাত্র। [তিরমিযী শরীফ: ২য় খন্ড, পৃষ্ট- ২২৪-২২৫]
উক্ত কিতাবে তিনি আরো উল্লেখ করেছেন।
قَالَ عُرْوَةُ: وثُوَيْبَةُ مَوْلَاةٌ لِأَبِي لَهَبٍ كَانَ أَبُو لَهَبٍ أَعْتَقَهَا فَأَرْضَعَتْ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا مَاتَ أَبُو لَهَبٍ أُرِيَهُ بَعْضُ أَهْلِهِ بِشَرِّ حِيبَةٍ قَالَ لَهُ مَاذَا لَقِيتَ قَالَ أَبُو لَهَبٍ لَمْ أَلْقَ بَعْدَكُمْ غَيْرَ أَنِّي سُقِيتُ فِي هَذِهِ بِعَتَاقَتِي ثُوَيْبَةَ
অর্থাৎ হযরত ওরওয়া ইবনে যোবায়র রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, সুয়াইবাহ্ আবূ লাহাবের দাসী ছিলেন। আবূ লাহাব হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বেলাদতের সুসংবাদ দেওয়ার কারণে (আনন্দিত হয়ে) – সুয়াইবাহকে আযাদ বা মুক্ত করে দিয়েছিল। অত:পর সুরাইবাহ্ হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দুধ পান করিয়েছিলেন। এরপর যখন আবু লাহাব মৃত্যুবরণ করলো, তখন (এর এক বছর পর) তার ঘনিষ্টদের কেউ (হযরত আব্বাস) তাকে স্বপ্নে শোচনীয় অবস্থায় দেখে তার উদ্দেশে বললেন, ‘তোমার অবস্থা কেমন?’ আবূ লাহাব তদুত্তরে বললো, “তোমাদের নিকট থেকে আসার পর থেকে আমি কোন প্রকার শান্তি পাই নি, কেবল আমি যে, (আল্লাহর হাবীবের জন্ম-সংবাদ বা মীলাদ শরীফের খুশীতে) সুয়াইবাহ কে (তর্জনী ও মধ্যমা দু’টি আঙ্গুলের ইশারায়) আযাদ করেছিলাম, ওই কারণে (প্রতি সোমবার আঙ্গুল দু’টির মধ্যে কিছু পানি জমে থাকে) যখন পিপাসার্ত হই তখন আমি ওই পানি চুষে থাকি ও প্রতি সোমবার আমার উপর আযাবকে হাল্কা বোধ করে থাকি। (বোখারী শরীফ: ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা-৭৬৪)
এই হাদীসের পাদটীকায় বর্ণিত আছে- সুয়াইবাহ্ আবু লাহাবকে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জন্মের সুসংবাদ দেওয়ার কারণে আবূ লাহাব তাকে আযাদ করে দিয়েছিল। অত:পর এ আযাদ করাটা (পরকালে) আবূ লাহাবের উপকারে এসেছে। এ কাজ তার উপকারে আসার অর্থ হলো – তার এ কর্ম অবশিষ্ট ছিলো, অন্যান্য কাজের ন্যায় বিনষ্ট হয়ে যায় নি। তাও হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরই বরকতে। [হাশিয়া:ই বোখারী শরীফ: ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা- ৭৬৪]
এখানে আবূ লাহাব কর্তৃক সুয়াইবাহ্ কে আযাদ করার উপকার তার জন্য পরকালেও আছে, বরং অন্যান্য কাজের মতো তা বিনষ্ট হয়ে যায় নি। তাও কিন্তু হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জন্মের খুশীতেই সুয়াইবাহকে আযাদ করেছিল বলে। তাহলে ঐ একত্বাবাদী মুমিন মুসলমানদের অবস্থা কি হবে? যে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খুশী উদ্যাপন করে থাকেন। বুখারী শরীফে উল্লেখ রয়েছে-
“عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ فَرَأَى الْيَهُودَ تَصُومُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ ، فَقَالَ : مَا هَذَا ؟ قَالُوا : هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ ، هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ ، فَصَامَهُ مُوسَى ، قَالَ : فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ ، فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ
অর্থাৎ- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযুর রসুল করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদীনা শরীফে তাশরীফ আনলেন। অত:পর ইহুদীগণকে আশুরার দিন রোযা রাখতে দেখলেন। তখন তিনি বললেন – এটা কি? অর্থাৎ এ রোযা কি কারণে? তখন তারা বললো, “এটা এমন একটি দিন, যেদিন আল্লাহর নবী ঈসা আলায়হিস্ সালামকে নাজাত দান করেছেন এবং এদিনে ফিরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে মেরেছেন। সুতরাং হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম শোকরিয়া স্বরূপ এদিন রোযা পালন করেছেন। তখন হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করলেন, “আমরা মূসা আলায়হিস্ সালাম-এর বিষয়ে তোমাদের তুলনায় বেশী হক্বদার। অত:পর নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওইদিন রোযা রাখলেন এবং ওইদিনের রোযা রাখার নির্দেশ দান করলেন। আলোচ্য হাদীসের পাদ/পার্শ্বটীকায় উল্লেখ রয়েছে যে, আলোচ্য হাদীস শরীফ দ্বারা নির্দিষ্ট দিনে, সুনির্দিষ্ট কারণে নির্দিষ্ট ইবাদত পালনের পক্ষের আলিমগণ দলীল পেশ করেছেন। যেমন ওফাত দিবসে মৃতদের জন্য সাদ্ক্বাহ খায়রাত করা। অন্য দিকে, হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আশুরার দিনকে রোযার জন্য নির্দিষ্ট করেছেন। আর সোমবারকেও একইভাবে। কারণ, ওই দিন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঠিক শুভাগমন করেছেন এবং ওই দিনে তাঁর প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়েছে। [সহি বুখারী শরীফ: ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা- ১৬৮]
এই ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেই এরশাদ করেছেন-
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الِاثْنَيْنِ فَقَالَ : فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ -(رواه مسلم و مشكوة : ص ـ۱٧٩ )
অর্থাৎ- হযরত আবূ ক্বাতাদাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন – রসূল করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মহান দরবারে সোমবার রোযা পালন সম্পর্কে আরজ করা হলো। হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে ইরশাদ ফরমালেন- ঐ দিন আমি জন্ম গ্রহন করেছি। এবং ঐ দিন আমার উপর পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছে। [মুসলিম ও মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা- ১৭৯]
আলোচ্য হাদীস দ্বারা সন্দেহীত ভাবে প্রমাণিত হয় যে হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পবিত্র মিলাদের দিবস, অর্থাৎ প্রতি সোমবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এতে আরো প্রমাণিত হয় যে, হুযূর করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বয়ং প্রতি সোমবার মীলাদে পাকের শোকরিয়া স্বরূপ পালন করতেন। মুমিন মুসলমানগণ তো বছরে একবার “ঈদে মিলাদুন্নবী” (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উদ্যাপন করছে, রবিউল আউয়াল মাসে। আর আলোচ্য হাদিস তো প্রতি সোমবার মীলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে রোযা পালন করা, দান- সদকাহ্ সুন্নাত প্রমাণ করছে।

প্রখ্যাত ইমাম ও ফকীহগণের মতে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উদ্যাপন
বিশ^বিখ্যাত ইমাম আল্লামা জালাল উদ্দিন সূয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, মীলাদে মুস্তাফা এর শরীয়তের বিধান কি? এই প্রশ্ন করা হলে, তিনি উত্তরে বলেন, আমার নিকট এর জবাব হচ্ছে: ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ভূ- পৃষ্ঠে শুভাগমনের প্রাথমিক অবস্থাদির বর্ণনা সম্বলিত হাদীস সমূহ ও হুযূরের পবিত্র বেলাদত শরীফের সময় যেসব অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিলো সেগুলো আলোচনা করা, তাদের মধ্যে লম্বা দস্তরখানা বিছিয়ে খাদ্য পরিবেশন করা এবং তাতে অপচয় পরিহার করা। এমনই ভালকাজের যে আয়োজন করে সে সাওয়াব পাবে, কারণ, তাতে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পবিত্র জন্মে খুশি প্রকাশ করা হয়।
(আল হাভী লিল- ফাতাওয়া: ১ম খন্ড, পৃষ্ঠ-২৫২) হুসনুল মকাসেদ কী আমলিল মওলূদি)
এ ব্যাপারে শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী বলেন-
قال الشاه ولى الله الدهلوى وكنت قبل ذلك بمكه فى مولد النبى صلى الله عليه وسلم فى يوم لادته و الناس يصلون على النبى صلى الله عليه وسلم ويذكرون ارها صاته التى ظهرت فى وقت و لادته و مشاهده قبل بعثته قرأيت انوار ا سطعت دفعة و ا حدة.
অর্থাৎ- শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী বলেন, আমি ইতিপূর্বে মক্কা শরীফের রাসূলে পাকের বেলাদতের তারিখে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মাহফিলে উপস্থিত ছিলাম, মক্কাবাসীগণ নবীজির উপর দরূদ শরীফ পাঠ, তার শুভাগমনের পবিত্র মুহুর্তে সংগঠিত আলৌকিক ঘটনাবলী বয়ান করতেন। ঐ মাহফিলে আমি নূরনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নূরকে দেখতে পেয়েছি।(দেখুন-ফযুযূল হারামাইন, পৃষ্ঠা- ৮০-৮১)
আসুন, শোনা কথা ও মিথ্যা ভ্রান্ত সমালোচনা বর্জন করে অন্যের পরোচনায় পরোচিত হয়ে বিরোধিতা না করে প্রত্যেকে প্রিয় নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর শুভাগমন উদ্যাপন করে তার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা প্রকাশে প্রয়াসী হই। কেননা তা সুন্দরতম আমল, অতীব বরকতময় সমৃদ্ধ এবং পূর্ণময় সাওয়াবের কাজ। এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করার কোন অবকাশ নেই। আল্লাহ পাক আমাদেরকে বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। (আমিন)

লেখক : মুদাররিস- জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মহিলা ফাযিল মাদরাসা, ষোলশহর, চট্টগ্রাম।
খতিব : মসজিদ-এ রহমানিয়া গাউসিয়া, শীতলঝর্ণা আ/এ, অক্সিজেন, বায়জিদ, চট্টগ্রাম।