ওলামা-এ আহলে সুন্নাতের খেদমতে আবেদন

ওলামা-এ আহলে সুন্নাতের খেদমতে আবেদন

কাযী মুহাম্মদ মুঈন উদ্দীন আশরাফী >

আস্সালামু আলাইকুম ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু…
আশা করি মহান আল্লাহর অপার মেহেরবাণী ও প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের নেক নযরে ভাল আছেন এবং আপন অবস্থান থেকে দ্বীন-মাযহাব ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা-আদর্শের পক্ষে খেদমতে রত আছেন। পরমকরুণমায় আল্লাহ্ তা‘আলা আপনাদের খেদমতগুলো কবুল করতঃ তার উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং আজীবন খেদমত আঞ্জাম দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন-
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ভবিষ্যৎবাণী অনুসারে ইসলামের স্বচ্চ ভূমিতে আগাছা স্বরূপ আর্বিভূত ভ্রান্ত দলসমূহের সফল মোকাবেলা করে ইসলামের মূলধারাকে রক্ষা করেছেন আমাদের আকাবির ওলামা-মাশায়েখ কেরাম। ফলে আমরা কোন সময়, কোনদেশে কি ধরনের গোমরাহী মাথাছাড়া দিয়েছিল এবং তার মূলোৎপাটন তৎকালীন ওলামা-মাশায়েখ কিভাবে করেছেন তার দীর্ঘ ইতিহাস অদ্যাবধি সংরক্ষিত। মহান আল্লাহ্ তাঁদের খেদমতসমূহ কবুল করতঃ তাঁদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমিন।
বর্তমান মুসলিম বিশ্বেও ইসলামের নামে নানা ভ্রান্ত ও কুফরী মতবাদ বেশ সক্রিয়। তাদের স্বরূপ উন্মোচনে বিশ্বের হক্কানী ওলামা-মাশায়েখ আপন আপন অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। ছোট্ট একটি জমাআত হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে কিয়ামত অবধি সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে বাতিলের মোকাবেলায় বিজয়ী থাকবেন মর্মে সহীহ্ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যার বাস্তবতা সচেতন মহল প্রত্যক্ষ করছেন। তারই ধারা বাহিকতায় মুসলিম বিশ্বের দেশসমূহের মত ভারত-উপমহাদেশের সুন্নী ওলামা-মাশায়েখ-এর খেদমত ও অবদান অসামান্য এবং প্রশংসনীয়। বহুমুখী উপায়ে তাঁদের খেদমতে ঐতিহাসিক ভাবে স্বীকৃত। নিকট অতীতের বিষয়গুলো আমার চেয়ে আপনারা অনেক বেশী অবহিত বলে আমার বিশ্বাস। তারপরও একটু স্মরণ করিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে আপনাদের খেদমতে দু’-চার কথা পেশ করে নিজেকে হালকা করার ইচ্ছা করেছি।
কারণ, বর্তমানে বাংলাদেশের আঙ্গিকে কিছু বিষয় বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাযী শেরে বাংলা সৈয়দ আযিযুল হক আলকাদেরী (রহ.)’র পরে অর্থাৎ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় থেকে আমাদের যেসব আকাবির ওলামা-মাশায়েখ সাম্ভাব্য উপায়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সুরক্ষায় খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন, তাঁরা সকলেই আজ আমাদের মাঝে নেই। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে তাঁরা সবায় আমাদের ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। মহান আল্লাহ্ তাঁদের খেদমতসমূহ কবুল করুন এবং তাঁদেরকে জান্নাতবাসি করুন। আমীন।
আপনারা যারা বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থান করে দ্বীনী খেদমতে রত আছেন। বিশেষতঃ সুন্নী আক্বীদা-আদর্শের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের খেদমতে আমি অধম অত্যন্ত বিনয়ের সাথে কিছু আবেদন নিবেদন পেশ করার দুঃসাহস করছি। যদি আপনাদের মনপূতঃ হয়, তাহলে আশা করব সুবিবেচনায় স্থান দেবেন। অন্যথায় আপনাদের ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি আমার একান্ত কাম্য।
এক. বর্তমান ওলামা-মাশায়েখ প্রত্যেকে যুগের চাহিদানুসারে সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করেন কিনা? প্রশ্ন আসতে পারে, দেশব্যাপী সুন্নী মতাদর্শ ভিত্তিক সংগঠন সক্রিয়। এমতাবস্থায় এ প্রশ্ন অবান্তর। তাহলে বলব স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাত্র দশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে সুন্নী মতাদর্শ ভিত্তিক সাংগঠনিক ধারার সূচনা হয়। তা আজকে কোন পর্যায়ে। বাংলাদেশে সুন্নী মুসলমানদের সার্বিক অবস্থানের তুলনায় সংগঠনের সার্বিক অবস্থান কি আশাব্যঞ্জক? যদি হয়- তাহলে আমার কিছু বলা অনর্থক হবে। আর যদি না হয় তাহলে কেন? তা নিয়ে, কি আদৌ বর্তমান ওলামা-মাশায়েখের কোন মাথা ব্যথা আছে। থাকলে তার কার্যতঃ প্রমাণ কি? এ ক্ষেত্রে আমার পর্যবেক্ষণ আপনাদের পর্যবেক্ষণের সাথে নাও মিলতে পারে। তজ্জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। একটু বলি- বাংলাদেশের ওহাবী সম্প্রদায় পাকিস্তান আমল থেকেই রাজনৈতিক-অরাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিল। তারা শুধুমাত্র একটি প্রকল্পের ভিত্তিতে আজকের অবস্থানে। আর তা হলো দেশব্যাপী তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তার মোকাবেলায় সুন্নীদের অবস্থান একবার বুকে হাত দিয়ে পুরো দেশের আঙ্গিকে বলতে হবে। তারা পারল, আমরা পারলাম না কেন? একবার কি তার যথার্থ কারণ অনুসন্ধান করেছি? এটা চিন্তা করা কাদের দায়িত্ব। সাধারণ সুন্নী জনতার? নাকি ওলামা মাশায়েখদের? উল্লেখ্য যে, অদ্যাবধি খারেজী মাদরাসাগুলো সরকারী অনুদানের অন্তর্ভুক্ত নয়। এটাই তাদের আক্বীদা-আদর্শের অবস্থান ঠিক রাখার পেছনে মূল বিষয়। আমাদের এও জেনে রাখা উচিৎ সরকারী অনুদানভুক্ত মানে সুন্নী মাদ্রাসা নয়। বরং ঐ জাতীয় মাদরাসার কিছু সংখ্যক মাদরাসা সুন্নী আকীদা আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত। অতএব সর্বসাকুল্যে তার সংখ্যা খুবই নগন্য। মসজিদের চিত্রও একই অবস্থানে। এ নিয়ে যদি ওলামা মাশায়েখের চিন্তা-ভাবনা থাকত। তা তো অবশ্যই দৃশ্যমান হতো।
অপরদিকে আমাদের অনুষ্ঠান-অর্থাৎ মাহফিল ওরস এগুলো বেশী আড়ম্বরপূর্ণ। যার প্রভাব ক্ষণস্থায়ী। তাই তো অনেকদিন থেকে বলে আসছি সুন্নীরা অনুষ্ঠান প্রিয়, প্রতিষ্ঠান প্রিয় নয়। আমরা এটি বুঝতে চাইনা যে, প্রতিষ্ঠান বাড়লে অনুষ্ঠান স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে যাবে। জানিনা এ সত্যটা সুন্নী মুসলমানদের হৃদয়-মনে কখন জেগে উঠবে। আমার জানামতে সুন্নী অঙ্গনে প্রতি বছর এমন অনুষ্ঠানও হয় যার বাজেট কোটির অধিক। এ পরিমাণ আগ্রহ-প্রতিষ্ঠানের পেছনে থাকলে বাংলাদেশের সুন্নীদের অবস্থান ভিন্ন হতো নিঃসন্দেহে।
ওহাবীদের মধ্যে নিরব বিভক্তি অনেক। তাদের রাজনৈতিক দলের সংখ্যাই তার প্রমাণ। এমনকি তাদের শিক্ষাবোর্ডও একাধিক। তারপরও বৃহত্তর স্বার্থে তারা এক জায়গায় হতে পারে বলে আজ রাষ্ট্রযন্ত্রের নিকট বেশ বিবেচ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভূত। আর রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে তাদের প্রাপ্তি বিশাল। অথচ তারা কখনো স্বাধীনতার স্বপক্ষের হিসেবে গন্য ছিলনা। এখনো তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে জাতীয় সংগীত পরিবেশন হয় না, জাতীয় দিবসগুলো পালিত হয় না। ২০১৩ সালে তারা নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে সক্ষম হয়েছিল বলে আজ তাদের এ অবস্থান। যা সুন্নী অংগনে অন্তত আমি অদূর ভবিষ্যৎ নয়, দূর ভবিষ্যতেও আশা করতে পারি না।
২০২৩ ইং সনের এ নয় মাসের মধ্যেই সুন্নী মুসলমানদের স্বার্থে দু’টি মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দু’টিতেই আমি উপস্থিত ছিলাম। যারা উপস্থিত হয়নি তারাও তার বাস্তবচিত্র যেকোনভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। ‘‘অন্তত একবার সবায় গিয়ে সুন্নীদের অবস্থানের জানান দেই।’’ এ প্রয়োজনটি আমরা কজনই বা অনুভব করেছি। অপরদিকে আমরা এটা বলতে মোটেই দেরী করি না, এত বছর সংগঠন করে সংগঠন কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি। একবার ভেবে দেখিনা আলোচিত পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য আমি একজন সুন্নী আলেম বা পীর কতটুকু অবদান রেখেছি। স্বশরীরে উপস্থিতি যে, একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেটা এখন হলেও গভীরভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন।
প্রশ্ন হতে পারে, সুন্নী ওলামা-মাশায়েকের কি কোন অবদান নেই? হাঁ, অবশ্যই আছে। না হয় যতসামান্য হচ্ছে তাও তো হত না। কিন্তু, প্রয়োজন মত হচ্ছে না। সময়ের চাহিদানুসারে যথেষ্ট হচ্ছে না। যৌক্তিকভাবে অনেকে সক্রিয়ভাবে নিজেকে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়াতে পছন্দ করেন না। আমি সেটার বিরোধী নই। কিন্তু, কৌশলগত অবস্থান থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা তো করা যায়।
দুই. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদা-আদর্শ ভিত্তিক সাংগঠনিক কর্ম-কা-ে প্রত্যক্ষ-প্ররোক্ষভাবে সবচেয়ে বেশী দায়িত্ব পালন করতে হবে ওলামা-মাশায়েখকে। তাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণ সকল সুন্নীজনতাকে সাংগঠনিকভাবে সচেতন করবে অনেক বেশী। এ ক্ষেত্রে এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে সক্রিয়দের আনুপাতিক সংখ্যা কত? তা ভেবে দেখার বিনীত আবেদন রইল।
তিন. সুন্নী মতাদর্শ এর প্রচার-প্রসারে ওয়ায-নসিহতের ভূমিকা সুন্নী অংগনে সর্বাধিক। অতএব, সুন্নী ওলামায়ে কেরামের মধ্যে বক্তা হিসেবে স্বীকৃতজনদের সাংগঠনিক কর্ম-কা-ে সম্পৃক্ততা কতটুকু। এ আহ্বানে এখনও এমন জনপ্রিয় বক্তা রয়েছেন, যাঁর বক্তব্য শুনে মনে হবে সুন্নী অংগনে চলমান সাংগঠনিক কর্মকা-ের বিরাট অংশ ওনিই সামাল দিচ্ছেন। অথচ বাস্তবতা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। তাঁদের মধ্যে আমার জানামতে এমন বক্তাও আছেন যাঁর সাথে চলমান সাংগঠনিক কর্ম-কা-ের সাথে কোন সম্পর্কই নেই। শুধু তাঁর বক্তব্যের কারণে উৎসুক সুন্নী জনতা বিশাল ত্যাগের অনেক কষ্টে তাঁকে দাওয়াত দিয়ে তাঁর সকল চাহিদা পূর্ণ করে আড়ম্বরপূর্ণ সম্মান দিয়ে মাহফিলে উপস্থিত করে চলেছে। এটির বিহীত করতে আমি বেশ কিছুদিন থেকে সুন্নী জনতার উদ্দেশ্যে বলে আসছি আপনাদের আমন্ত্রিত সম্মানিত ওয়ায়েয এর নিকট ‘মাহফিলের দাওয়াত নামায়’ তার নামের সাথে উল্লেখ করার লক্ষ্যে একটি বিষয় বিনয়ের সাথে জেনে নিন, হুজুর! আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সাংগঠনিক কর্ম-কা-ে আপনার পদবী কি বা সংশ্লিষ্টতা কোন ধরনের। পাশাপাশি তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক পরিচিতিটাও নিতে হবে যদি থাকে। এ বিষয়টির ক্ষেত্রে সংগঠন সংশ্লিষ্ট ওলামা কেরামকেই অগ্রণী ভূমিকা পালনের বিনীত আবেদন রইল।
চার. এ ক্ষেত্রে আরেকটি অংশ বেশ কৌশলের সাথে কাজ করছেন, ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’র মত। কথায় এবং সাংগঠনিক আনুষ্ঠানিকতায় একটু উপস্থিতি এবং বক্তব্য প্রদানের মধ্যে তাঁরা নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখে সাংগঠনিক কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যাচ্ছেন। এর বাইরে তাঁরা স্ব স্ব কর্মসূচি পালনে তৎপর। তাঁদের প্রতি আমরাও দুর্বল। ফলে অনেকে প্রশ্ন করেন তাঁরা যদি আপনাদের সাথে সাংগঠনিকভাবে সম্পৃক্ত থাকেন তাহলে তারা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তাঁদের পৃথক কর্মসূচি কেন? এটা তো সাংগঠনিক কর্মকা-ে তাঁদের আস্থাহীনতার স্পষ্ট প্রমাণ। হতে পারে তারা সাংগঠনিক দায়িত্বশীলদের উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছেন না অথবা এটা তাঁদের আত্ম-প্রচারের মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। আবার কেউ কেউ এটাকে ‘নিজস্ব বলয় সৃষ্টির’ অশনি সংকেত হিসেবেও মন্তব্য করে থাকে। আবার কেউ কেউ এভাবেও বলেন যে, তাঁদের গ্রহণযোগ্যতাটা সংগঠনের ব্যানারে কাজে লাগালে সংগঠনের গ্রহণযোগ্যতাও বৃদ্ধি পেত। আবার কেউ বলেন এ ধরনের কর্মকা-ের স্বচ্ছতা কতটুকু। জমা-খরচ সম্পর্কে তো তিনি ছাড়া কেউ কিছু জানেনা। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত বাংলাদেশ-এর লেনদেন তো ‘‘ব্যাংক একাউন্ট’’-এর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এতেও কি তাঁরা আস্থা রাখতে পারছেন না। এখানে এককভাবে কেউ নয়-ছয় করার কোন সুযোগ নেই। করতে হলে কমপক্ষে দু’জন মিলে করতে হবে। যা কোন না কোন সময় প্রকাশ না হয়ে থাকবে না। একক কর্ম-কা-ে তো আস্থার ন্যূনতম সুযোগও নেই।
তখন সন্তুষজনক উত্তর খুঁজে পেতে কষ্ট হয় আর এতটুকু না বলে উপায় থাকে না। দাতাগণ ব্যক্তি কেন্দ্রিক কর্ম-কা-ে সন্তুষ্ট থাকলে আমাদের তো করার কিছু নেই। এতে প্রশ্নকারীগণ সন্তুষ্ট হন বলে আমিও বিশ্বাস করতে পারি না। আবার কাউকে এ বলে নিবৃত্ত করতে সচেষ্ট হই যে, তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তাকে সাংগঠনিক ক্ষেত্রে ব্যবহারের চেষ্টা করছি।
এ ক্ষেত্রে আলোচিত আমাদের অত্যন্ত প্রিয়ভাজনদের নিকট আমার আন্তরিক আবেদন, আপনারা আপনাদের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতাকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এর কর্মকা-ে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আপনারাই তদারকি করুন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মসূচি সংগঠনের ব্যানারে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে পালন করুন। এতে আপনারা এবং সংগঠন উভয়েই অধিক উপকৃত হবে।
পাঁচ. বেশ কিছু দিন ধরে সুন্নী অংগনে যে বিষয়টি সবচেয়ে অধিক মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে সেটা হলো আমাদের কিছু সম্মানিত আলেমদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা-লেখী। আবার তাও অনেকটা নিজেদের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে বিহীত স্বরূপ আমি বলে আসছি। সুন্নী আক্বীদায় বিশ্বাসী হিসেবে পরিচিত কোন পক্ষের কোন বিষয় কারো দৃষ্টিতে কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কেয়াস ও সুন্নী আকাবির ওলামা মাশায়েখের বিপরীত বলে বিবেচিত হলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃকপক্ষের নিকট লিখিতভাবে পেশ করুন। উক্ত বিষয়ে তাঁদের নিকট গ্রহণযোগ্য জওয়াব তালাশ করুন। এতে একাধিকবার একান্তে তাগিদ দিয়ে কোন সাড়া না পেলে তাঁদেরকে জানিয়ে দিন আপনারা এভাবে নিরব থাকলে বিষয়টি আমি শীর্ষস্থানীয় সুন্নী আলেমদের নিকট পেশ করে সমাধানের পথে চলব। এতেও যদি কোন সুফল আপনি না পান, তাহলে আপনি ঐ বিষয়ে প্রকাশ্যে সংশোধনীর লক্ষ্যে অবশ্যই কোন পক্ষকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্যে নয়, বক্তব্য প্রকাশ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যে কোন পদক্ষেপের আগে আমাদেরকে অবশ্যই দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট আপত্তিকর বা প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়টি আক্বীদাগত নাকি আমলি। আক্বীদাগত বিষয় হলে অবশ্যই উপরোক্ত পন্থায় আপনি এগিয়ে যাবেন। এতে অন্তত আমি আপনার পাশে থাকব। আর যদি আমলি বিষয় হয় সেক্ষেত্রে বলার আগে তাঁদের নিকট কোন জবাবের সম্ভাব্যতা আছে কিনা ভেবে দেখে পদক্ষেপ নিতে হবে। তদুপরি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমাদের শীর্ষস্থানীয় আকাবিরদের অবস্থান কি ছিল সেটিও অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। আপনার নিকট গ্রহণযোগ্য কোন একজন পূর্বসূরীর দৃষ্টিভঙ্গিকে উপস্থাপন করতে গিয়ে অন্যান্য আকাবিরদের সাথে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরী হচ্ছে কিনা তা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। কারণ, অনেক আমলি বিষয়ে সুন্নী আকাবিরদের মধ্যেও দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা ছিল। কিন্তু, এ কারণে বড় ধরনের কোন স্থায়ী সমস্যা তৈরী হয়নি, যা আজকে হতে চলেছে।
যেমন সকলের জানা একটি বিষয় আমি দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করছি। ‘নফল নামায জামাআতে পড়া বৈধ কিনা?’ এ বিষয়ে আমাদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের দু’জন ইমামের মধ্যে মতবিরোধ লেখা লেখির পর্যায়ে পৌঁছেছিল। কেউ কারো অবস্থান পরিবর্তন করেননি শেষ পর্যন্ত। কিন্তু উভয়ের সুসম্পর্কে স্থায়ী কোন সমস্যা হয়নি। বরং দু’জনের প্রথম ইমাম দ্বিতীয় ব্যক্তিকে তাঁর পরবর্তী ‘ইমামে আহলে সুন্নাত’ হিসেবে মনোনীত করে গেছেন। আর দ্বিতীয়জনও আজীবন প্রথমজনের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধাশীল ছিলেন নিঃসন্দেহে। কারণ, বিষয়টি ছিল নিতান্তই আমলের। আক্বীদাগত নয়।
পরিশেষে একটি আবেদন জানিয়ে লেখা শেষ করব, সুন্নী ওলামা-মাশায়েখ অবশ্যই আপন আপন অবস্থান সুন্নী আক্বীদা-আদর্শের পক্ষে কম-বেশী খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছেন। কিন্তু এর চূড়ান্ত সুফল দৃশ্যমান হচ্ছে না অসংগঠিতভাবে হওয়ার কারণে। তাই আজকে দেশব্যাপী সুন্নী ওলামা-মাশায়েখের খেদমতে আমার আকুল আবেদন, অনুগ্রহ করে আপনারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করুন। আমলি মতপার্থক্যকে সহনীয় পর্যায়ে আনতে প্রত্যেকে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থাকুন। সুন্নী আক্বীদার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হোন। ‘একমাত্র সুন্নী আক্বীদা হতে হবে ঐক্যের মূলমন্ত্র’ মাযহাব ও তরীকা ঐক্যের মূলমন্ত্র হবার সুযোগ নেই। আমলি পার্থক্যের কারণেই তো মূল মাযহাব চারটিঃ ১. হানাফী, ২. মালেকী, ৩. শাফেয়ী ও ৪. হাম্বলী। অপরদিকে মূল চার তরীকাঃ ১. কাদেরীয়া, ২. চিশতীয়া, ৩. সোহরাওয়ার্দীয়া ও ৪. নকশবন্দীয়া।
সুন্নী অংগনে বিদ্যমান কোন বিচ্ছিন্নতাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় না করিয়ে মূলধারাকে সবাই উদারচিত্তে সহযোগিতা করলে ঐসব বিচ্ছিন্নতা এমনিতেই এক পর্যায়ে নিঃশেষিত হয়ে পড়বে। মনে রাখা প্রয়োজন কোন বিচ্ছিন্ন কর্মকা- বেশিদিন স্থায়ী হয় না বা নামমাত্র অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজই করে থাকে। এতে দ্বীন-মাযহাবের কোন লাভই হয় না বরং সুন্নীয়ত ভিত্তিক কর্মকা- ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিঃসন্দেহে।
অনেকে এভাবে বলতেও দেখা যায়, আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখগণ সুন্নী আক্বীদার উপর বহাল থেকে যা কার্যক্রম করছেন এগুলো তো সুন্নীয়ত ভিত্তিক কর্মকা-। অতএব, সংগঠনের প্রয়োজন কি। এটির জবাব তো বর্তমানে অধিকাংশ দরবারে বিদ্যমান। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দরবার ভিত্তিক কর্মকা- পরিচালিত হচ্ছে নিজ নিজ সাংগঠনিক কাঠামোতে। এমনকি এ ক্ষেত্রে ছাত্র ও যুবকদেরও পৃথক সংস্থা বিদ্যমান। একটি দরবারের কার্যক্রম যে অর্থবহ করে তুলতে যদি সাংগঠনিক কাঠামোই গ্রহণযোগ্য ও সফল উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়। সেক্ষেত্রে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সুন্নী জনতাকে সুন্নী আক্বীদা-আদর্শে সচেতন করে তোলা কোন শক্তিশালী সাংগঠনিক প্রক্রিয়া ছাড়া কখনোই সম্ভবপর নয়। এ বিষয়টি বুঝেন না এমন কোন সচেতন আলেম বা পীরসাহেব আছেন বলে বিশ্বাস হয় না। কিন্তু সে বিশ্বাসটির পক্ষে কার্যকর সহযোগিতা খুবই নগণ্য। আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দরবার ভিত্তিক কার্যক্রমে যতটুকু সক্রিয় দেশব্যাপী সুন্নীয়ত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমি একজন সুন্নী আক্বীদায় বিশ্বাসী হিসেবে কতটুকু সক্রিয় তা একবার বুকে হাত রেখে ভাবার আবেদন রইল।

লেখক : চেয়ারম্যান-আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বাংলাদেশ।