সম্পাদকীয় : আ’লা হযরত ভারত উপমহাদেশে ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানের অঙ্গনে এক নবজাগরণ সৃষ্টি করে

সম্পাদকীয় : আ’লা হযরত ভারত উপমহাদেশে ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানের অঙ্গনে এক নবজাগরণ সৃষ্টি করে

যুগে যুগে যেসব হক্কানী রব্বানী ওলামাগণ জ্ঞানের মশাল হাতে নিয়ে বিশ্বব্যাপী দ্বীনি জ্ঞানের আলো বিতরণ করে আসছেন, মহান সংস্কারক ইমাম আহমদ রেযা খান রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর ক্ষুরধার লিখনী জ্ঞানগর্ব চিন্তাধারা, সুচিন্তিত মতামত ভারত উপমহাদেশে ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানের অঙ্গনে এক নবজাগরণ সৃষ্টি করে। মুসলমানদের চরম দুঃসময়ে আক্বিদাগত সংকটকালীন তাঁর প্রদত্ত ফতোয়া, কুরআন-হাদীসের আলোকে রচিত প্রামাণ্য কিতাবাদি সর্বোপরি তাঁর ইজতিহাদী পথ নির্দেশনা সংকটমুক্তির পাথেয় হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। সুন্নী মুসলমানদের বৃহত্তর ঐক্য, ভ্রান্ত মতবাদের মূলোৎপাঠনে আলোকবর্তিকা হয়ে দিশেহারা মুসলিম জাতিকে জাগ্রত করেছেন কলম সম্রাট ইমাম আহমদ রেযা বেরেলভী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি।

তিনি তৎকালীন মুসলমানদের সংকট উত্তরণে ১০টি প্রস্তাবনা উস্থাপন করেনঃ ১. আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। ২. শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি ও ভাতার ব্যবস্থা করা, ৩. শিক্ষকদের কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতা অনুসারে উপযুক্ত সম্মানীর ব্যবস্থা করা, ৪. শিক্ষার্থীদের স্বভাব প্রকৃতি যাচাই করে তাদের মধ্য থেকে শিক্ষক, বক্তা, লেখক, তার্কিক সৃষ্টি করা, ৫. মাযহাব মিল্লাতের স্বার্থে দ্বীনি খিদমতের লক্ষ্যে যোগ্য শিক্ষার্থীদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ও বিদেশে প্রেরণের ব্যবস্থা করা, ৬. ইসলাম বিকৃতিকারীদের অপব্যাখ্যা রোধে সুন্নি আকিদাভিত্তিক গ্রন্থাবলী রচনার ব্যবস্থা করা। এ কাজে লেখকদের উপযুক্ত সম্মানী দেয়া, ৭. দেশের সর্বত্র পূর্বের লিখিত ও নতুন লিখিত গ্রন্থাবলী বিনামূল্যে বিতরণ ও সরবরাহের ব্যবস্থা করা, ৮. দেশের সর্বত্র সুন্নি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। বাতিলপন্থিদের অপতৎপরতা রোধে নিজস্ব কর্মীবাহিনী ও প্রকাশনা গড়ে তোলা, ৯. দ্বীনের স্বার্থে যে ব্যক্তি যে কাজে অভিজ্ঞ তাকে সে কাজে নিয়োগ দেয়া এবং ১০. ধর্মীয় পত্র-পত্রিকা-সাময়িকী ও জার্নাল প্রকাশ করা। প্রয়োজনে শুভেচ্ছা মূল্যে বা বিনামূল্যে সেগুলো পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। আ’লা হযরতের উল্লিখিত প্রস্তাবনা বর্তমান সময়ের জন্যও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আ’লা হযরতের যুগোপযোগী এসব প্রস্তাবনার সফল বাস্তবায়নে অনন্য এক পথিকৃতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সুন্নি মুসলমানদের চিরঋণী করেছেন পেশোয়ায়ে আহলে সুন্নাত, আলে রসূল, আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি।

তাঁর প্রতিষ্ঠিত আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়ার তত্ত্বাবধানে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসাকে মসলকে আ’লা হযরতের উপর ভিত্তি করেন। তা বর্তমানে শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিক পরিষরে খ্যাতি লাভ করেছে। এ মাদরাসা থেকে বের হয়ে যোগ্য আলেমরা দেশ-বিদেশে সুন্নিয়তের প্রচার-প্রসারে কাজ করছে। হযরত সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলায়হি’র সফল উত্তরসূরি আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলায়হি’র নির্দেশে প্রকাশিত হচ্ছে মাসিক তরজুমানে আহলে সুন্নাত। দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে ধারাবাহিক প্রকাশিত এ পত্রিকা ঈমান আক্বিদা রক্ষায় ও বাতিল ফিরক্বার মোকাবেলায় বলিষ্ট ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও আনজুমান ট্রাস্ট’র মাধ্যমে আ’লা হযরত রচিত কিতাবাদির অনুবাদ-প্রকাশের মাধ্যমে আ’লা হযরত নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে। ২৫ সফর এ মহান মনীষীর ওফাত বার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং তাঁর ফুয়ূযাত কামনা করছি।

১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় এ ধরার বুকে শুভাগমন করেন সারাবিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে আবির্ভূত নবীকুল শিরোমনী, সমগ্র সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি সকল নবীগণের নবী সর্বশেষ নবী দু’জাহানের মুক্তিদাতা প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। এ মহান নবীজির শুভাগমন দিবস অত্যন্ত সাড়ম্বরে উদযাপনের লক্ষ্যে প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়াল বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও ৯ রবিউল আউয়াল ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম, আমাদের মহান মুরশিদ আলে রসূল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলায়হির প্রবর্ত্তিত এ জুলুস বিশ্বের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় শোভাযাত্রা ও ঈদে মিলাদুন্নবী মাহফিল। আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’র উদ্যোগে আয়োজিত এ জুলুস মাহফিল সফল করার লক্ষ্যে আনজুমান ট্রাস্ট ও এর অঙ্গসংগঠন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’র প্রত্যন্ত অঞ্চলের শাখা সমূহে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে-বৃহত্তর মুসলিম ঐক্যের প্রতীক এ জশনে জুলুস সফলকল্পে সকল নবী প্রেমিক সুন্নি মুসলমান-উৎসাহ্ উদ্দীপনার সাথে অপেক্ষার প্রহর গুণছে। ইনশা-আল্লাহ, স্মরণকালের বৃহত্তর জমায়েতের মাধ্যমে এবারও জশনে জুলুস অনুষ্ঠিত হবে। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে পবিত্র জুলুসে অংশগ্রহণ ও কামিয়াবির তাওফিক দান করুন। আমিন।