এ চাঁদ এ মাস: মাহে মুহররম

এ চাঁদ এ মাস: মাহে মুহররম

 
মাহে মুহররম সম্মানিত মাস, এ মাসে যুদ্ধ বিগ্রহ কলহ বিবাদ নিষিদ্ধ। বিশেষত: মাসের দশম তারিখটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এ দিনটিকে মুসলিম বিশ্বে আশুরা নামে অত্যন্ত মর্যাদার সাথে স্মরণ করা হয়ে থাকে। ইতিহাসে দেখা যায়, মানবজাতি সৃষ্টির প্রারম্ভ হতে বহু ঘটনা এ দিনে সংঘটিত হয়েছে। যেমন- হযরত আদম, হযরত হাওয়া, হযরত ইব্রাহীম ও হযরত ঈসা আলায়হিমুস্ সালাম’র জন্ম, হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম পৃথিবী পৃষ্ঠে এসে আল্লাহর কাছে নিবেদিত ফরিয়াদ কবূল, হযরত এয়াকূব আলায়হিস্ সালাম’র সাথে তাঁর প্রিয়তম পুত্র হযরত ইউসুফ আলায়হিস সালাম’র সাথে সাক্ষাত, ফেরআউন ও তার সৈন্যদের নীলনদে ধ্বংস করে হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম ও তাঁর অনুসারীদের পরিত্রাণ, হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম’র আল্লাহর সাথে কথোপকথনের সৌভাগ্য এবং তাওরাত কিতাব লাভ, হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম’র স্বীয় অনুগামীগণসহ মহাপ্লাবনের পর নৌকা হতে অবতরণ, হযরত ইদ্রিস আলায়হিস্ সালাম এবং হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম’র আসমানে আরোহন, হুযূর সাইয়্যিদুল কাউনাঈন সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সঙ্গে উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র শাদী মোবারক এবং হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সপরিবারে কারবালা প্রান্তরে এজিদ বাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে শাহাদাত বরণ ইত্যাদি সবই মুর্হরম মাসের দশ তারিখেই সংঘটিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর সৃষ্টি এবং  ধ্বংসও এ আশুরাতে।
 
পবিত্র আশুরা দিবসের আমল   
এ দিবসে এবাদতের নিয়তে গোসল করলে সারা জীবন কুষ্ঠ রোগ হতে মাহফুজ থাকবে। এ দিনে ভাল আহার্য তৈরী করে গরীব, এতীম ও ফক্বীর-মিসকীনদের খাওয়ানো অত্যন্ত সওয়াব জনক। এতীম, ফক্বীর-মিসকীনদের প্রতি এদিন যারা সদয় আচরণ করবে এবং সহানুভূতি প্রদর্শন করবে তাদের জন্য আল্লাহ তায়ালার অপরিসীম পুরস্কার দেয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এদিন সাত প্রকার দানাদার খাদ্যদ্রব্যের সংমিশ্রণে আহার্য তৈরী করে গরীব পাড়া-প্রতিবেশী ও পরিবার পরিজনসহ সকলকে খাওয়ানো অত্যন্ত বরকতময় কাজ। হযরত নূহ আলায়হিস্ সালাম যখন মহা প্লাবনের পর জমীনে অবতরণ করেন তখন তিনি এ ধরণের মিশ্রিত দ্রব্যের খাদ্য প্রস্তুত করেছিলেন এবং এরই স্মরণে এ আহার্য প্রস্তুত করা হয়। এ দিন হালিম বা খিচুরী জাতীয় খাদ্য রান্না করে শুহাদায়ে কারবালার উদ্দেশ্যে ফাতেহার ব্যবস্থা করাও বরকত লাভের কারণ হয়। আশুরা দিবসে চোখে সুরমা লাগালে সারা বৎসর চক্ষু পীড়া হতে ইন্শা আল্লাহ মাহফূজ থাকবে।  আশুরা উপলক্ষে ৯ম ও ১০ তারিখ রোযা রাখা অত্যন্ত সাওয়াব জনক। আশুরার রোযা অন্যান্য যে কোন নফল রোযার তুলনায় অধিকতর সওয়াবজনক। এ দিন তেলাওয়াতেরও অশেষ সওয়াব রয়েছে। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে- এ দিনে দশটি আয়াত তেলাওয়াতকারী সম্পূর্ণ ক্বোরআন শরীফ তেলাওয়াতের সওয়াব পাবে। এ পবিত্র দিনে যে ব্যক্তি ১০০ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবে আল্লাহ পাক তাঁর প্রতি বিশেষ রহমত নাযিল করবেন। 
বর্ণিত আছে যে, আশুরার দিন ৭০ বার ‘হাসবুনাল্লাহু  ওয়া নি’মাল ওয়াকিল নি’মাল মাওলা ওয়া নি’মান্নাছীর’ (অর্থ: আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, যিনি সর্বোত্তম ধর্ম ব্যবস্থাপক, সর্বশ্রেষ্ঠ মুনিব, সর্বোৎকৃষ্ট সাহায্যকারী।)  পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার সমুদয় গুনাহ মার্জনা করবেন এবং তার প্রতি বিশেষ প্রসন্ন হবেন। 
যে ব্যক্তি আশুরার দিন চার রাকাত নফল নামায পড়বে, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে ১৫ বার সূরা ইখলাস পড়বে এবং এ নামাযের সওয়াব হযরত হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা’র প্রতি সওয়াব পৌঁছাবে তার জন্য কেয়ামত দিবসে তাঁরা সুপারিশ করবেন। আশুরার দিন দুই রাকাত করে চার রাকাত নামায পড়বেন। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে একবার সূরা যিলযাল, একবার কাফিরূন ও একবার সূরা ইখলাস পাঠ করবেন। নামাযান্তে কমপক্ষে ১০০ বার দরূদ শরীফ পড়বেন। অন্য এক বর্ণনায় আরো চার রাকাত নামাযের নিয়ম পাওয়া যায়। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে পাঁচশত বার করে সূরা  ইখলাস পাঠ করবেন।
    
এ মাসের অন্যান্য আমল    
১  মুহররম দুই রাকাত নামায আদায় করা যায়। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর তিনবার করে সূরা ইখলাস পড়বেন। এরপর নিম্নের দো‘আটি পাঠ করলে সারা বৎসর শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা পাবে, এবাদতের একনিষ্ঠতা হাসিল হবে এবং সকল বিপদ থেকে রক্ষিত থাকবে ইন্শাআল্লাহ। 
দো’য়া: আল্লাহুম্মা আনতাল আর্বারুল ক্বদীম, ওয়া হাজিহী ছানাতুল জাদীদাহ ইন্নী আছআলুকা ফীহাল ইছমাতা মিনাশ্ শায়তানির রাজীম ওয়া আউলিয়াইশ্ শায়তান, ওয়ামিন র্শারিল বালায়া ওয়াল আ-ফাত, ওয়াল আউনা আলা হাজিহিন নাফছিল আখিরাতে বিচ্ছু-ই ওয়াল ইশ্তিগালা বিকা ইউর্কারিবুনী ইলাইকা, ইয়া জালজালালী ওয়াল ইকরাম। 
হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশ্তী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, মুহররমের ১ম তারিখে ছয় রাকাত নামায নিম্ন লিখিত নিয়মে আদায় করলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে বেহেশ্তে ইমারত দান করবেন এবং ছয় হাজার বালা মুসিবত দূর করে দিয়ে সমপরিমাণ নেক আমলের সওয়াব দান করবেন। উক্ত নামায  দুই রাকাত করে প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে ১০ বার সূরা ইখলাস দিয়ে আদায় করবেন। ইমামুত্ তরীক্বত হযরত বাহাউদ্দীন নক্শবন্দী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহার সাথে ১১ বার সূরা ইখলাস দিয়ে চার রাকাত নামায আদায় করে নিম্নের  দো’য়াটি একবার পাঠ করে তাকে বেশুমার সওয়াব প্রদান করা হবে। 
দোয়া: সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।
এ মাসের প্রথম দশ দিন রোযা রাখার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দিনের রোযা সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। মুহররম মাসের একটি রোযার জন্য অন্যান্য সময়ের ত্রিশটি রোযার সমপরিমাণ সওয়াব প্রদান করা হবে। এ মাসে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনগুলি অতিক্রান্ত করার জন্য আমাদেরকে সর্বতোভাবে অন্যায়, পাপকার্য, অশ্লীলতা, অপরের অনিষ্ঠ সাধন, হিংসা হানাহানি অপরের হক আত্মসাৎ ইত্যাদি পাপ কাজ বর্জন করতে হবে। অনুশীলন করতে হবে একজন সত্যিকার মুসলমানের জীবনাদর্শের।
 
এ মাসে শাহাদাত ও ওফাত প্রাপ্ত কয়েকজন বুজুর্গ  
০১ মুহররম : শেহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রাহ. ৬৩৪হি.
০২ মুহররম : হযরত শায়খ মারূফ করখী রাহ. ২০০হি.
০৪ মুহররম : হযরত হাসান বসরী রাদ্বি. ১১১হি.
০৫ মুহররম : খাজা ফরীদুদ্দীন গঞ্জেশকর রাহ. ৬৬৪হি.
০৭ মুহররম : হযরত খাজা ফুজাইল রাহ. ১৯৬হি.
১০ মুহররম : খাজা আবুল হাসান হারক্বানী রাহ. ৪৬৫হি.
১০ মুহররম : ইমাম হুসাইন রাদ্বি. ৬১হি.
১৮ মুহররম : ইমাম জয়নুল আবিদীন রাদ্বি. ৯৩হি.
১৯ মুহররম : হযরত বেলাল হাবসী রাদ্বি.
২৭মুহররম:শাহ্ আশরাফ জাহাঁগীর রাহ. ৮০৮হি.
২৯ মুহররম : শাহ ওয়ালি উল্লাহ দেহলভী রাহ. ১১৭হি.