সম্পাদকীয়: বিদায় হিজরী ১৪৪৪, স্বাগতম হিজরী ১৪৪৫।

সম্পাদকীয়: বিদায় হিজরী ১৪৪৪, স্বাগতম হিজরী ১৪৪৫।

কালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরো একটি বছর। বিদায় হিজরী ১৪৪৪, স্বাগতম হিজরী ১৪৪৫। আমাদের দেশে হিজরী সালের আগমন ও বিদায় সম্পর্কে অনেক লোকই অবগত নয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। হিজরী বর্ষের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর তাহজিব-তামাদ্দুন ও ইতিহাস ঐতিহ্যের ভিত্তি সম্পৃক্ত। রোযা, ঈদ, হজ্ব, শবেবরাত, শবে ক্বদর, শবে মি’রাজ সহ ইসলামের যাবতীয় পালনীয় বিধি-বিধান হিজরী সনের উপর নির্ভরশীল। তাই বিশ্ব মুসলিমের জন্য হিজরী সন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হিজরী নববর্ষে মুসলিম উম্মাহ্ ক্বোরআন-সুন্নাহ্’র যথাযথ অনুসরণ পূর্বক শান্তি সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ রচনায় আত্মনিয়োগ করুক এ কামনা করছি। সকলকে হিজরী নববর্ষের শুভেচ্ছা।
হিজরী বর্ষের সূচনা মাস মুহররমে সংঘটিত হয়েছে মানব জাতির ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ একাধিক ঘটনা। এ মাসের ১০ তারিখ আল্লাহ্র অসীম কুদরতে অনেক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এদিনেই সৃষ্টির প্রথম মানব হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের খলীফারূপে পৃথিবীতে আগমন করেন এবং এদিনেই তাঁর তাওবা কবুল হয়। হযরত নূহ আলায়হিস্ সালাম এদিনেই মহাপ্লাবন শেষে সকল আরোহী সহ নিরাপদে ভূপৃষ্ঠে অবতরণ করেন। আল্লাহ্র মনোনীত পয়গাম্বরগণ এদিনে বহু পরীক্ষার সম্মুখীন হন এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হন। ইয়াওমে আশুরা নামে খ্যাত এদিনটি অত্যন্ত ফজিলমতয় ও তাৎপর্যপূর্ণ দিবস হিসেবে মুসলিম উম্মাহর কাছে স্বীকৃত।
বিশেষত উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এদিন সবিশেষ স্মরণীয় এ কারণে যে, ৬১ হিজরির ১০ মুর্হারম সৈয়্যদুশ্ শোহাদা হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু তাঁর পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথীসহ এক অসম যুদ্ধে কুখ্যাত ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শাহাদাত বরণ করেন। হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র শাহাদাতের ঘটনাবলীর চেয়ে মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক কোন ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে সম্ভবত আর দ্বিতীয়টি নেই। এ ঘটনা মুসলিম সমাজে এত বেশি আলোচিত হয়ে আসছে যে, পূর্ববর্তী অনেক ঘটনা এমনটি হয়নি। আহলে বাইতে রাসূলের ত্যাগের স্মারক কারবালা শব্দটি আজ শুধু একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধক্ষেত্রের নাম নয়। সেটি আজ সত্য প্রতিষ্ঠার প্রতীকি শব্দে পরিণত হয়েছে। কারবালা মানে সত্যের উপর অটল-অবিচল থাকার নাম। কারবালা মানে দ্বীনের জন্য বুকের তাজা রক্ত ঝরানো- এ রক্ত ও অসীম ত্যাগের বিনিময়ে দ্বীনের উজ্জীবন সাধিত হয়েছে।
সুলতানে কারবালা ইমাম হোসাইনের এই নযির বিহীন আত্মত্যাগের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি অতি চমৎকার বলেছেন- ‘হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ছিলেন উম্মতে মুসলিমার যথার্থ ইমাম এবং পথিকৃত। তিনি ছিলেন দ্বীন অনুসরণের বাস্তব নমুনা। শির বিলিয়ে দিলেন কিন্তু অনাচারী ইয়াযীদের হাতে হাত দেননি। সত্য বলতে কি, ‘ইসলামের কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাহ’র মূল ভিত্তি হচ্ছেন ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু।’’
কারবালার ঘটনা মুসলমানদেরকে যুগে যুগে অসত্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সংগ্রামে প্রেরণা যোগাবে। এ বিশাল আত্ম-ত্যাগের মাধ্যমে তিনি এ শিক্ষা দিয়ে গেছেন একজন মুসলমান মাত্রই অন্যায় অবিচার, স্বেচ্ছাচার, জুলুম, অরাজকতা ও ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড সমর্থন করতে পারে না। তাই বিশ্বমুসলিম কারবালার শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে হোসাইনী প্রেরণায় উজ্জীবিত হোক। এটাই হবে ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর প্রতি প্রকৃত ভালবাসার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
গত ২৮জুন সুইডেনে পবিত্র কুরআন অবমাননার ঘটনা ঘটেছে। উগ্রখৃষ্টান ধর্মাবলম্বী কর্তৃক এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা নিঃসন্দেহে চরম ধৃষ্টতা; যা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানমূলক বিশ্ব গড়ার অন্তরায়। বাংলাদেশ সহ অপরাপর মুসলিম বিশ্ব এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘ ওআইসি কর্তৃক নিন্দাপ্রস্তাব গ্রহণের পাশাপাশি বহু মুসলিম দেশ সুইডেনের পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। আমরাও এ দুঃখজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ও তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের নেগাহে করমে মাসিক তরজুমান নিয়মিত প্রকাশনার ৪৫তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এ পত্রিকা ইসলামি মূল্যবোধ সৃষ্টি, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আদর্শালোকে ঈমান আক্বিদা দৃঢ় করণ, সিলসিলা-ই আলীয়া কাদেরিয়ার প্রচার-প্রসারে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। সর্বস্তরের সুন্নি মুসলমানদের নিকট জনপ্রিয় এ পত্রিকা শুধু বাংলাদেশ নয় বহির্বিশ্বেও সমাদৃত হচ্ছে। এ শুভ মুহূর্তে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি আওলাদে রাসূল রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরীক্বত মুর্শিদে বরহক আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হিকে, যাঁর সদয় নির্দেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে সুফিবাদী সত্যসন্ধানীদের আলোর দিশারি এ পত্রিকা। যাঁরা মূল্যবান লেখা দিয়ে মাসিক তরজুমানকে সমৃদ্ধ করেছেন, বিজ্ঞাপন দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, যারা বিপণনে, প্রচার-প্রসারে সহায়তা দিচ্ছেন তাদের জানাই আন্তরিক সালাম ও ধন্যবাদ। সম্মানিত লেখক, পাঠক, গ্রাহক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়িদের জানাই সালাম ও শুভেচ্ছা।