কুরবানীর মাংস বন্টনের সঠিক নিয়ম-পদ্ধতি কি?
হাফেজ মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন
চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: কুরবানীর মাংস বন্টনের সঠিক নিয়ম-পদ্ধতি জানালে উপকৃত হব।
উত্তর: কুরবানি একটি পূণ্যময় আমল ও অত্যন্ত সওয়াব এবং কল্যাণময় ইবাদত যা হানাফী মাহযাব অনুযায়ী সামর্থ্যবানের উপর ওয়াজিব। কুরবানির উদ্দেশ্য হলো শুধুমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। তাই তা রিয়া বা লোক দেখানো হতে পবিত্র ও মুক্ত হওয়া জরুরী। কুরবানি করার পর কুরবানির মাংস বন্টনের পদ্ধতি নির্ভরযোগ্য ফিক্বহ ফতোয়ার গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে। অধিকাংশ ফিক্হ ফতোয়ার গ্রন্থসমূহের বিবরণ অনুযায়ী কুরবানির পশুর গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ গরীব-মিসকিনের জন্য এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনের জন্য এবং অপর এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য বন্টন করা মুস্তাহাব। অবশ্য কুরবানির পশুর গোশত সবটাই আত্মীয়- স্বজনের মধ্যে অথবা সবটা গরীব-মিসকিনদের মাঝে বন্টন করে দেওয়াও জায়েয। আবার কেউ চাইলে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে কুরবানী করে কুরবানীর পশুর মাংস সবটা নিজের পরিবারের জন্যও রেখে দিতে পারবে। সর্বাবস্থায় কুরবানি আদায় হয়ে যাবে। তবে নিয়ত হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কুরবানি আদায় করা-গোশস্ত খাওয়া নয়। মাংস খাওয়ার নিয়তে কুরবানি করলে কুরবানি আদায় হবে না। শুধু মাংস খাওয়া হবে। মহান আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করেন- আল্লাহর নিকট পৌঁছে না এর গোশস্ত ও রক্ত, তাঁর নিকট পৌঁছে কেবল তোমাদের (কুরবানিদাতার) তাকওয়া। অর্থাৎ তাকওয়া ও বিশুদ্ধ নিয়তের দরুন কুরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। অন্যথায় কুরবানি কবুল হয় না। [সূরা হজ্ব, আয়াত-৩৭]
অপর আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করেন- انما يتقبل الله من المتقين অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ্ ‘তা’আলা (ইবাদত-বন্দেগী ও আমলসমূহ) কবুল করেন মুত্তাকী বান্দাগণ হতে। [সূরা মায়েদা, আয়াত-২]
অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা তাদের কুরবানি কবুল করেন যারা মুত্তাকী। সুতরাং গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানি করলে কুরবানী শুদ্ধ হবে না। উল্লেখ্য যে, অসিয়ত বা মান্নতের কুরবানি আদায় করা হলে তখন কুরবানির পশুর সমস্ত গোশত গরীব-মিসকিন ও অসহায়দের মাঝে সদকা করা ওয়াজিব। অসিয়ত ও মান্নতের কুরবানি হতে সামান্য অংশও নিজ পরিবারের কেউ খেতে পারবে না। আত্মীয় স্বজন যারা সামর্থবান তাদেরকেও দিতে পারবে না।
[হেদায়া-কুরবানির অধ্যায়, ফতহুল কাদির এবং ফতোয়ায়ে আলমগীরি ইত্যাদি]