আসরের নামাযের পর সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তেলাওয়াত করা যাবে কিনা?

আসরের নামাযের পর সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তেলাওয়াত করা যাবে কিনা?

 মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ্-
হাসনাবাদ, সীতাকু-, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: আসরের ফরজ নামায শেষে ইমাম সাহেব পিছনে ফিরে সূরা হাশরের শেষের আয়াতগুলো তেলাওয়াত করেন। এটার ফজিলত জানতে চাই। 
উত্তর: জামাআতের সাথে পঞ্জেগানা ফরজ নামাযের পর যেসব ফরয নামাযের পর সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আছে সেসব ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর পর ইমাম সাহেব ডান দিকে বা বাম দিকে ফিরে বা কিবলার দিকে পিঠ করে মুসল্লিগণের দিকে ফিরে বসা এবং হাদিস শরীফে বর্ণিত জিকির-আযকার ও দোয়া পাঠ করা সংক্ষিপ্তাকারে এবং যেসব ফরয নামাযের পর সুন্নাত ও নফল নামায ইত্যাদি নেই সেসব ফরয নামাযের জমাত আদায় করে ইমাম সাহেব মুসল্লিদের দিকে মুখ করে বেশীক্ষণ কুরআনের বিভিন্ন সূরা, আয়াত, দোয়া-দরূদ, ইস্তিগফার, হাদিস শরীফে বর্ণিত দোয়াসমূহ, জিকির-আযকার ইত্যাদি পাঠ করা সুন্নাত ও অত্যন্ত বরকতময় আমল। 
হাদীসে পাকে রয়েছে প্রত্যেক নামাযের পর এস্তেগফার, আয়াতুল কুরসি, কুল শরীফ ইত্যাদি পাঠ করা সুন্নাত। আর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত কুরআনে পাকেরই অংশ। তাই সেগুলো ফজর ও আসরের জমাতের পর তেলাওয়াত করতে কোন অসুবিধা নেই বরং উত্তম। তাছাড়া সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত সম্পর্কে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন। যেমন জামে তিরমিযি শরীফে উল্লেখ রয়েছে- عن معقل بن يسار عن النبى صلى الله عليه وسلم قال من قال حين يصبح ثلاث مرات اعوذ بالله السميع العليم من الشيطان الرجيم وقرء ثلاث ايات من سورة الحشر وكل الله به سبعين الف ملك يصلون عليه حتى يمسى وان مات فى ذلك اليوم مات شهيدا او من قالها حين يمسى كان بتلك المنزل ـ [رواه الترمذى] অর্থ: প্রিয়নবীর সাহাবী হযরত মা’কল ইবনে ইয়াসার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ভোর/প্রভাতে তিনবার ‘আউযুবিল্লাহিস সামীইল আলীমি মিনাশ শায়তানির রাজীম’ অতঃপর সূরা হাশরের শেষের তিন আয়াত শরীফ পাঠ করে, আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা নিয়োজিত করবেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। ঐ ব্যক্তি যদি সে দিন ইন্তেকাল করেন তাহলে শহীদ হিসেবে গণ্য হবেন। তদ্রুপ যে ব্যক্তি সন্ধ্যা বেলায় তা পাঠ করবে সেও একই ফজিলতের অধিকারী হবে।  [জামে তিরমিজি-২৯২ নং হাদিস] 
 
সুতরাং এ বিষয়ে বাজে মন্তব্য করা অজ্ঞতা ও মূর্খতার নামান্তর। উল্লেখ যে, পঞ্জেগানা নামাযের প্রত্যেক ফরয নামাযের জমাতের পর ইমাম সাহেব ডান/বাম দিকে অথবা মুসল্লিদের দিকে ফিরে বসা ও দোয়া-দরুদ পড়া সুন্নাত। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নূরানী আমল দ্বারা প্রমাণিত । এ বিষয়ে অনেক ইমাম সাহেব গাফেল ও বেখবর। কোন কোন ইমাম ফজর ও আসরের ইমামতের পর মুসল্লিদের দিকে ফিরে বসলেও যোহর, আসর, মাগরিব ও এশার জমাতের পর মুসল্লিদের দিকে বা ডান-বামে ফিরে বসে না অথচ প্রত্যেক ফরয নামাযের জমাতের পর ইমাম সাহেবের জন্য মুসল্লিদের দিকে অথবা ডানে-বামে ফিরে বসে দোয়া-মুনাজাত ও তাসবিহ পাঠ করা সুন্নাত। যা সহি বোখারীসহ অনেক হাদিসগ্রন্থের নামায অধ্যায়ে বর্ণিত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।  [বাহারে শরীয়ত, ৩য় খন্ড, নামায অধ্যায়, সুনানে তিরমিযী শরীফ ও যুগ জিজ্ঞাসা ইত্যাদি]

Share:

Leave Your Comment