পবিত্র মদীনার কিছু বরকতময় স্থান

পবিত্র মদীনার কিছু বরকতময় স্থান

ইমরান হুসাইন তুষার>

সারওয়ারে কায়নাত হুযুর-ই আকরাম রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার এর স্মৃতি বিজড়িত পুণ্য ভুমি মদিনাতুল মুনাওয়ারা। আর এই মদিনাতুল মুনাওয়ারার প্রতি ভালোবাসা মুমিনের নিদর্শন। পবিত্র কুরআনুল করিমে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সুরা হজ্জের ৩২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন, “যে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের নিদর্শন সমূহে সম্মান করবে এবং ভালোবাসবে, তারাই প্রকৃত মুমিন’’। সে কারণেও মদিনা মনোয়ারা সারওয়ারে কায়ানাতের সম্মানে সম্মানিত ও সর্বাধিক ফজিলতময় স্থান।
হুযুর রাহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার কাছে মদিনা শরীফ ছিল সর্বাধিক প্রিয়। আর এজন্যই তিনি সব সময়ই আল্লাহু রাব্বুল ইজ্জতের দরবারে মদিনার শরীফ যাতে উম্মাতের নিকট সর্বাধিক প্রিয় হয় সেই দোয়াই করতেন। এ বিষয় একটি হাদিস যা বোখারী শরীফে উল্লেখিত এবং উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা হতে বর্ণিত হয়। হুযুর রাহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার মদিনা শরীফে আগমনের পর আমীরুল মুমিনীন আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ও হযরত বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু জ্বরাক্রান্ত হলে হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে জানান। তখন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানান “ইয়া রাব্বাল আলামিন’ আপনি মদিনা শরীফকে আমাদের কাছে মক্কা শরীফ বা তার চেয়ে অধিকতর প্রিয় করে দিন, মদিনার পরিবেশকে আমাদের জন্য অনূকুল করে দিন। মদিনার পরিমাপে বরকত দিন এবং এখানকার জ¦রকে জুহফাহ্ নামক স্থানে পাঠিয়ে দিন। এ জন্যই মদিনার শরীফের পরিবেশ অত্যন্ত আরামদায়ক। মুসলিম শরীফে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রয়েছে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের দরবারে মদিনা শরীফকে মক্কা শরীফের দ্বীগুণ বরকত দান করার জন্য ফরিয়াদ জানান। হুযুর রহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার নিকট মদিনা শরীফ ও তার অধিবাসীগণ অত্যধিক প্রিয় ছিল আর তাই, তিনি ইরশাদ করেন- মদিনা আমার হিজরতের স্থান, আমি পর্দা করার পর এখানে আরাম করবো, পুনরুত্থানের দ্বীনে আমি এখান থেকেই উঠবো। আর তাই মদিনাবাসীর হিফাজত করা আমার উম্মতগণের উচিত যতক্ষণ তারা কবিরা গুনাহয় লিপ্ত না হয়। মদিনা শরীফের মাটি, পানি, বাতাসসহ সব কিছু শেফা স্বরূপ, বিশেষ ভাবে বোখারী ও মুসলিম শরীফে উল্লেখ রয়েছে আজওয়া নামক খেজুরের কথা। স্বয়ং হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আজওয়া খেজুরের ফজিলত সম্পর্কে বলেছেন। এতে রয়েছে অসংখ্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং যে প্রতিদিন ৭টি করে খেজুর খাবে কোন বিষ ও যাদু তার ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। সরওয়ারে কায়িনাত হুযুর রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার এর স্মৃতি বিজড়িত স্থান ও চিহ্ন বুকে ধারণ করে আছে পবিত্র নগরী মদিনা। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর নামাজের স্থান আহলে বাইয়েত আলাইহিমুস সালাম ও সাহাবাগণের রওজা, স্বয়ং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামার ও সাহাবায়ে কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু গণের হাতে তৈরী নানা স্থাপনা। যার অনেক কিছুই ইহুদি ও বৃটিশ সরকারের পৃষ্ঠপোশকতায় প্রতিষ্ঠিত বর্তমান ওহাবী রাজপরিবার কর্তৃক ধ্বংস করা হয়েছে। তবে এর কিছু এখনো অক্ষত রয়েছে। তার মধ্যে কিছু বরকতময় স্থানের পরিচিতি পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। যাতে পাঠকগণ উক্ত স্থানের যিয়ারতে ধন্য হন।

হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা মোবারক
বাবুস সালাম বা ১নং গেইট দিয়ে প্রবেশ করলে সর্ব প্রথম আপনার সামনে দৃশ্যমান রিয়াজুল জান্নাহ বা জান্নাতের বাগান সাদা কার্পেট বিশিষ্ট স্থানে দুই রাকাত নফল নামায আদায় করা উত্তম। আর এর পাশেই সোনালী জালি আবৃত অংশেই রয়েছে দোজাহানের বাদশাহ আক্বায়ে নাম দার, তাজেদারে মদিনা হুযুর রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও আমীরুল মুমিনীন হযরত আবু বকর সিদ্দিক এবং ফারুকে আযম হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এর পবিত্র রওজা মোবারক। যা গোলাকৃতির ছিদ্র দ্বারা দেখতে পাবেন। মূলত এটা ছিল উম্মুল মুমিনীন মা আয়শা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার হুজরা শরীফ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে নামজ, কুরআন তেলাওয়াত, যিকির-আজকার তথা ইবাদত করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং এই স্থানের ফজিলত বর্ণনা করে বলেন- আমার গৃহ ও আমার মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাত। আর তাই হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সামনে রেখে তার উসিলায় আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানানো বা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট থেকে কিছু চেয়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য ব্যস্ত থাকাটাই উত্তম ও নিঃসন্দেহে এটা হাজী সাহেবদের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষণ।

মসজিদে কুবা
মক্কা শরিফ থেকে ৩২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত এই মসজিদ কুবা গ্রামে অবস্থিত। মসজিদে নববি থেকে এর দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। এই মসজিদে কুবা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদিনায় আগমনের পর সর্ব প্রথম আগমন করেন। পবিত্র কুরআনে পাকে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বলেন, এই মসজিদে কুবা তাকওয়ার ভিত্তিতে নির্মিত। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হায়াতে জিন্দেগীতে প্রতি শনিবার পায়ে হেঁটে কিংবা বাহনে করে এই মসজিদে আসতেন এবং দুই রাকাআত নামায় আদায় করতেন। এখানে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করলে একটি উমরাহ করার সওয়ার লাভ করা য়ায়। এ সম্পর্কে বোখারী, মুসলিম ও ইবনে মাজাহ শরীফের একাধিক স্থানে হাদিস শরীফগুলোর বর্ণনা মতে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ৬৪টি স্থানে নামাজ আদায় করেছেন। তার মধ্যে ১৮টি স্থান চিহিৃত। মসজিদে কুবা তারই মধ্যে অন্যতম।

মসজিদে নববী
মসজিদে নববী হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র হাতে ২য় মসজিদ এটি। পবিত্র মসজিদে হারাম শরীফের পর সবচেয়ে মর্যাদা ও বরকতময় মসজিদ। ‘যে ৩ মসজিদের উদ্দেশ্যে কেবল সফর করা যায় তার মধ্যে অন্যতম। এখানে নামাজ আদায় করলে ১ রাকাআতে ৫০ হাজার রাকাআতের সওয়ার লাভ করা যায়। এখানে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম নামাজ আদায় করতেন। এবং এখান থেকেই রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। আর এটাই হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা কেন্দ্রীক সু-বিশাল মসজিদ। এই মসজিদে অসংখ্য স্থান আছে যে সকল জায়গায় দোয়া কবুল হয় বলে স্বয়ং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য পিলার ও মেহরাবের কথা উল্লেখ করা হলো:
উসতুনে হান্নানা: হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুর গাছের এই স্তম্ভটির উপর বসে খোতবা পাঠ করতেন। যখন স্তম্ভটি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তখন এই স্তম্ভটি উচ্চ স্বরে কেঁদেছিলেন। মিনার শরীফের ডানে উস্তুনে হান্নানার অবস্থান।
উফুদ পিলার: বিভিন্ন দেশ ও বাহির থেকে লোক জন যারা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট ইসলাম গ্রহণ বা সাক্ষাতের জন্য আসতেন তারা এখানে বসতেন। এবং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সাথে এখানেই বসে কথা বলতেন। এই স্তম্ভটি বর্তমানে জালি মুবারকের সঙ্গে রয়েছে।
সারীর পিলার: এখানে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ই’তিকাফ করতেন এবং আরাম করার জন্য বিছানা করতেন। এ স্তম্ভটি হুজরা শরীফের পশ্চিম পাশে রয়েছে। আবু লুবাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু একটি ভুল করার কারণে নিজেকে এই পিলারের সাথে নিজেকে বেঁধে রেখে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আরজ করেছিলেন, আপনি আমাকে না খুলে দিলে আমি পিলারে বাধা থাকবো। আর তখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যতক্ষন পর্যন্ত আল্লাহ তোমার তওবা কবুল না করবে আমি এই বাধন খুলবো না। এভাবে ৫০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই হযরত আবু লুবাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বাধন খুলে দিলেন। তাই-এ পিলারের আরেক নাম তাওবাহ পিলার। এই স্তম্ভটি বর্তমানে রওজা মোবারকের মধ্যেই রয়েছে।
মেহেরাবে নববী: হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই মেহেরাবের ডানে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতেন। তাই অত্যন্ত বরকতময় এই স্থানটির যিয়ারত করা ও এই স্থানে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের নিকট শুকরিয়াতান এবং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার মুহাব্বতে দুই রাকাআত নফল নামাজ পড়তে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে এতে করে যেন অন্য হাজী সাহেবদের অসুবিধা না হয়।
বাবে জিবরাঈল : এখানে হযরত জিবরাঈল আলায়হিস্ সালাম বিখ্যাত সাহাবী হযরত দাহইয়াতুল কালবী রাদ্বিআল্লাহু আনহুর সুরতে ওহী নিয়ে এসে বসতেন। হযরত জিবরাঈল আমীনকে প্রায়ই এখানে দেখা যেত।
তাহাজ্জুদ চত্তর : এখানে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন।
উসতুনে আয়শা : হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন মসজিদে নববী শরীফে এমন একটি জায়গা আছে যার ফজিলত সম্পর্কে যদি কেউ জানতো,তবে সেখানে নামাজ আদায় করার জন্য সবাই প্রতিযোগীতা করতো। আর তাই সাহাবায়ে কিরামগণ স্থানটি চিহ্নিত করার জন্য চেষ্টা করতেন। হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্দা করার পর মা আয়শা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার মসজিদে আবি বকরটি মসজিদে গামামার উত্তরে অবস্থিত। এছাড়াও অন্যান্য মসজিদ সমূহের মধ্যে রয়েছে বর্তমান আনসার হাসপাতালের নিকটে অবস্থিত মসজিদে ইজাবাহ তারপরে মসজিদে নববী শরীফের উত্তরে মসজিদে আবী যর, হযরত ওসমান বিন আফফান রাদ্বি আ্হু আনহু রোডে অবস্থিত। মসজিদে রায়া, সাইয়িদুশ শুহাদা রোডে অবস্থিত। মসজিদে মসতারাহ ও শায়খাঈন, খন্দক ময়দানে মসজিদে সাবআ রোডে অবস্থিত। বনি হারাম এবং মসজিদে নববীর উত্তরে পাশের্^ মসজিদে ইমাম বোখারী। এই মসজিদ আপনার পূন্যময় সফর তালিকায় রাখতে পারেন।

জান্নাতুল বাক্বী
সারওয়ায়ে কায়েনাত রাহমাতুল্লিল আলামীন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পৃথিবীর বুকে তিনটি জান্নাত রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম জান্নাতুলবাকী বা বাকী কবরস্থান। এখানে উম্মাহাতুল মুমিনীন তথা হুযুর রাহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রীগণ, হুযুরের দুধমাতা বিবি হালিমা রাদ্বিআল্লাহু আনহা, বিশেষভাবে খাতুনে জান্নাত আম্মা ফাতিমা রাদ্বি আল্লাহু আনহা, খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত উসমান গনী যিন জিননূরাঈন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সহ প্রায় ৭ থেকে ১০ হাজার সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু গণের পবিত্র মাজার শরীফ রয়েছে। যার অনেকাংশ মাজার শরীফের গম্বুজ ও স্তম্ভ সমূহ জাজিরাতুল আরবের বর্তমান ওহাবী রাজ পরিবার কর্তৃক ধ্বংস করা হয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজন কর্তৃক রওজা শরীফ সমূহ সনাক্ত করা যায়। হুযুর রাহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সময় পেলেই এখানে দোয়া করার জন্য ছুটে আসতেন। তাই পাক হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর আহলে বাইয়ত আলাইহিমুস সালাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু গণের রূহানী ফয়েজ লাভে ধন্য হওয়ার আশায় প্রত্যেক হাজী সাহেবদের উচিত জান্নাতুল বাকীতে গমন করা।

ছানিয়াতুল বিদা
সারওয়ারে কায়েনাত হুযুর রাহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনাতুল মুনাওয়ারায় প্রবেশ কালে দুইটি সানিয়াতুল বিদাহ তথা মক্কা থেকে অপরটি সিরিয়া থেকে বিদায়। মদিনাতুল মুনাওয়ারায় প্রবেশের দুইটি যেকোন একটি দিয়ে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনা শহরে প্রবেশ করেন। আর মদিনাবাসী হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই ছানিয়াতুল বিদাহ থেকেই অভ্যর্থনা জানান। এই জন্য মদিনাবাসী হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বলতেন সানিয়াতুল বিদাহ থেকে মদিনার আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উদিত হয়েছে।

হযরত আইয়ূব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ঘর
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনা শরীফে আগমনের পর সর্বপ্রথম হযরত আবু আইয়ূব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র ঘরেই অবস্থান করেন। হযরত আউয়ূব আনসারীর ঘরটি ছিল মসজিদে নববী শরীফের দক্ষিণ-পূর্বে তথা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুজরা শরীফ গুলোর ঠিক বিপরীত পাশেই।

ঐতিহাসিক কিছু পাহাড়
মদিনাতুল মুনাওয়ারায় অবস্থিত হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার স্মৃতি বিজড়িত কিছু পূণ্যময় পাহাড় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ক. মদিনা শরীফের ৫ কিঃমিঃ দূরে উত্তর দিকে অবস্থিত উহুদ পাহাড়। এখানে হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা যুদ্ধ শেষে যোহর ও আসরের নামাজ আদায় করতেন। আর এখানেই হযরত হামজা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সহ ওহুদের শহীদ সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু গণের রওজা রয়েছে। খ. খন্দকের যুদ্ধের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালা পাহাড় পাদদেশে সেনাছাউনি স্থাপন এবং রাত্রী যাপন করেছেন। একইভাবে জোবাব, ওহুদের উত্তরের ছাত্তর, মসজিদেও নববী থেকে ৮কি.মি. দূরের আইর পাহাড়ে অবস্থান করেছেন। বিশেষভাবে আকিক উপত্যকায় রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক বার গিয়েছেন। এখানকার পানি ও পরিবেশ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বেশি আকর্ষণ করতেন।

হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্মৃতি বিজড়িত কিছু কূপ
মদিনাতুল মুনাওয়ারায় অবস্থিত হুযুর রাহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্মৃতি বিজড়িত পূন্যময় কয়েকটি কূপ রয়েছে। তিনি এই সকল কূপের পানি পান ও ব্যবহার করতেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলোঃ বোদায়া কূপ, বোসসা বাগানের কূপ, আরিস কূপ, গারস কূপ (হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার ওসিয়ত অনুযায়ী এই কূপের পানি দিয়েই হুযুরকে পর্দা করার পর গোসল দেওয়া হয়েছে), উসমান কূপ, জারওয়ান কূপ ইত্যাদি। এমনি শত শত নিদর্শন ও অফুরন্ত নিয়ামত বুকে ধারণ করে আছেন হুযুর রাহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার শহর আশেকের প্রাণের ঠিকানা মদিনাতুল মুনাওয়ারা। তাই মদিনা শরীফের জিয়ারত প্রত্যেক হাজীর জন্য ফজিলতময় একটি কাজ। যারা হুযুর রাহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার য়িারত ও এই সকল অফুরন্ত নিয়ামত থেকে মানুষের বঞ্চিত করতে চায় এবং তাদের কু-মন্ত্রনায় মদিনা বিমুখদের বড়ই বদ নসিব। আল্লাহ রাব্বুুুুুুুুুুুুুুুুুুল ইজ্জত এদের হাত থেকে আমাদের হেফাজত করুন এবং দোজাহানের বাদশাহ হুযুর রাহমাতুল্লিল আলামিনের যিয়ারতে ধন্য করুন। আমীন। বিহুরমাতি সাইয়্যিদুল মুরসালিন।

প্রতিষ্ঠাতা প্রধান, বইসই, ঢাকা।

Share:

Leave Your Comment