আনজুমান ট্রাস্ট’র ব্যবস্থাপনায় আওলাদে রসূল, কুতুবুল আউলিয়া সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রহ.)’র ৬৪ তম সালানা ওরস মোবারক সম্পন্ন

আনজুমান ট্রাস্ট’র ব্যবস্থাপনায় আওলাদে রসূল, কুতুবুল আউলিয়া সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রহ.)’র ৬৪ তম সালানা ওরস মোবারক সম্পন্ন

আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’র ব্যবস্থাপনায় দেশখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আধ্যাত্মিক সাধক, কুতুবুল আউলিয়া, আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির ৬৪ তম সালানা ওরস মোবারক ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে আনজুমান ট্রাস্ট’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মহসিন’র সভাপতিত্বে গত ১ জুন বৃহষ্পতিবার চট্টগ্রাম ষোলশহরস্থ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন-পিএইচপি ফ্যামেলীর চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে বলেন- আল্লাহ্ পাক মানব জাতিকে শ্রেষ্ঠত্ব ও পূর্ণতার স্তরে পৌঁছানোর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হুজুর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে দ্বীন ইসলাম দান করেছেন। এ দ্বীনের যাহেরী (বাহ্যিক) দিক ‘শরীয়ত’কে সুন্দর ও সাবলীলভাবে প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছেন নিষ্ঠাবান ওলামা-ই কেরাম আর বাত্বেনী দিক ‘ত্বরীক্বত’, ‘মা’রিফাত’ ও ‘হাক্বীক্বত -এর দীক্ষা দিচ্ছেন ও প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছেন হক্বক্বানী- রব্বানী পীর-মাশাইখ, আউলিয়া কেরাম। হযরত আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রহ.) তেমনি এক মহান ওলী। তিনি আরো বলেন, শরীয়ত মানুষের যাহেরী অবস্থাকে সংশোধন তথা সৌন্দর্যম-িত করে আর ত্বরীক্বত ওই সৌন্দর্যম-িত মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আর তাঁদেরই বিশেষ দীক্ষার ফলে সৌভাগ্যবান মানুষ ‘মা’রিফাত’ ও ‘হাক্বীক্বত’র বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত হন। ফলে একজন শরীয়তের অনুসারী ও তরীক্বত সাধনাকারী ব্যক্তি ‘কামেল’ মানুষে পরিণত হন। তাই, প্রতিটি মানুষের জন্য শরীয়তের শিক্ষা ও চর্চা যেমন জরুরী, তেমনি ত্বরীক্বত গ্রহণ ও অবলম্বন করে এগিয়ে যাওয়া অপরিহার্য।

সভাপতি বক্তব্যে বলেন-আউলিয়ায়ে কেরাম মানবজাতিকে সদা আল্লাহ-রাসূলের প্রদর্শিত পথে ও মতে চলার শিক্ষা দেন। পথভ্রষ্ট মানব জাতির মৃত আত্মাকে জীবিত করেন। হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রহ.) অগণিত পথহারা মুসলমানকে শরীয়ত-তরিকতে¦র অনুসরণে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। এশিয়াখ্যাত দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া পরিচালনাসহ বিশাল বিশাল ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির আয়োজন, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ পরিচালনা, মাসিক ‘তরজুমান-এ আহলে সুন্নাত’ নিয়মিতভাবে প্রকাশ করছে। ‘আনজুমান রিসার্চ সেন্টার’ নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ‘দাওয়াতে খায়ের’ পরিচালনার পাশাপাশি দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক মাদরাসা আর্থিক সাহায্য দিয়ে পরিচালনার মাধ্যমে তিনি এ উপমহাদেশে সহীহ্ আক্বীদা সমৃদ্ধ এবং শরীয়ত ও ত্বরীক্বতের অনন্য সমন্বিত ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠায় এক যুগান্তকারী অবদান রাখছে ।

স্বাগত বক্তব্যে আনজুমান ট্রাস্ট’র সেক্রেটারী জেনারেল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, উপমহাদেশের অন্যতম আধ্যাত্মিক সাধক কুতুবুল আউলিয়া, পেশোওয়ায়ে আহ্লে সুন্নাত আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রহ.) ধর্মীয় দ্বীনী শিক্ষার প্রচার-প্রসারের জন্য ১৯৫৪ সালে বর্তমান এশিয়া বিখ্যাত দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করায় আমরা সিরিকোটির (রহ.)’র প্রতি কৃতজ্ঞ। বর্তমানে হুজুুর ক্বিবলা আধ্যাত্মিক জগতের অন্যতম সম্রাট হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ (মা. জি. আ.) ও হযরতুল আল্লামা পীর সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মা. জি. আ.) নজরে করমে জামেয়ার সকল কার্যক্রম সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যাঁদের ত্যাগ ও খেদমতের দরুণ আনজুমান ও জামেয়া আজ বাংলাদেশসহ বিশ্বের সুন্নি মুসলমানের অন্তরের অন্তস্থলে স্থান লাভ করেছে তাঁদের প্রতি তিনি মুবারকবাদ জ্ঞাপন করেন। এতে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান আলহাজ্ব পেয়ার মোহাম্মদ (সাবেক কমিশনার)।

এতে উপস্থিত ছিলেন- আনজুমান ট্রাস্ট’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এ. কিউ. আই চৌধুরী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আমির হোসেন সোহেল, এডিশনাল জেনারেল সেক্রেটারী মুহাম্মদ সামশুদ্দিন, জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারী মুহাম্মদ সিরাজুল হক, এসিস্টেন্ট জেনারেল সেক্রেটারী এস.এম. গিয়াস উদ্দিন শাকের, ফাইন্যান্স সেক্রেটারী মুহাম্মদ এনামুল হক বাচ্চু, অর্গানাইজিং সেক্রেটারী মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’র কেন্দ্রীয় মহাসচিব মুহাম্মদ সাহাজাদ ইবনে দিদার, আনজুমান ট্রাস্ট’র সদস্য মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন চৌধুরী, লোকমান হাকিম মোহাম্মদ ইব্রাহীম, মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মুহাম্মদ আবদুল হামিদ, তছকীর আহমেদ, মুহাম্মদ কমরুদ্দীন সবুর, মুহাম্মদ আবদুল হাই মাসুম, মুহাম্মদ হাসানুর রশীদ রিপন, আশেক রসুল খাঁন বাবু, মোহাম্মদ হোসেন খোকন, নুর মুহাম্মদ কন্ট্রাক্টর, মুহাম্মদ মাহাবুব ছফাসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, কেন্দ্রীয় গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’র যুগ্ম মহাসচিব এড. মুহাম্মদ মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার, চট্টগ্রাম মহানগর গাউসিয়া কমিটির সহ-সভাপতি আর. ইউ. চৌধুরী শাহীন, সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, উত্তর জেলার সম্পাদক এড. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলার সম্পাদক মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ্ মাষ্টার, অন্যান্য কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ, দায়েম নাজির জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া জামে মসজিদের খতীবসহ দেশ বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম, শিক্ষানুরাগী, উচ্চ পদ¯হ সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা, সাংবাদিকবৃন্দ, পীভাই বোন ও শুভাকাঙ্খিবৃন্দ।

সালানা ওরস মোবারক মাহফিলে বক্তারা বলেন – মহান আধ্যাত্মিক সাধক সুন্নীয়তের প্রাণ প্রতিষ্ঠা পুরুষ কুতুবুল আউলিয়া হযরতুলহাজ আল্লামা হাফেজ সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রহ.) এ দেশে শুভাগমন না হলে কিংবা সুন্নিয়তের প্রাণ কেন্দ্র জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার মতো ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত না হলে এ দেশের মানুষ নবী-ওলী প্রেমিক না হয়ে গোমরাহীর বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে ঈমানহারা হতেন। সিলসিলাহ্-ই আলিয়া ক্বাদেরিয়া সিরিকোটিয়ার মহান শায়খ, মুর্শিদ-ই বরহক আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটী (রহ.) এমন এক মহান দ্বীনী পথ-প্রদর্শক, তাঁর প্রতিষ্ঠিত সিলসিলায় রয়েছে শরীয়ত ও ত্বরীক্বতের অপূর্ব সমন্বয়। তিনি একদিকে তরীক্বত চর্চা ও অনুশীলনের জন্য খানক্বাহ্ শরীফ প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন, অন্যদিকে দ্বীনের প্রকৃত খিদমত ও তরীক্বতের স্বচ্ছতা রক্ষার জন্য দ্বীনের দক্ষ ও সাচ্ছা আলেম তৈরীকে পূর্বশর্ত বলেও অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, কাজ করো, দ্বীনকে রক্ষা করো, ইসলাম বাঁচাও, সাচ্ছা আলেম তৈয়ার করো। তিনি আপন মাতৃভূমি ত্যাগ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামের খিদমতে নিজেকে উসর্গ করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া দ্বীনি সংস্থা’ গঠনকাল থেকে বড় বড় খিদমত আনজাম দিয়ে আসছে। এর কর্ম পরিধি চট্টগ্রামের গণ্ডি পেরিয়ে বর্তমানে আনজুমান দ্বীনি সংস্থা বিশাল মহীরূহে পরিণত হয়েছে। বক্তরা আরো বলেন- দ্বীন ইসলামের মূলধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের একনিষ্ঠ খাদেম হয়ে আওলাদে রসূলগণের পিছনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঈমান আক্বীদা রক্ষার্থে তাঁদেরই নির্দেশিত পথে আমরা যদি চলতে পারি, তাহলেই আমরা দ্বীন-দুনিয়া উভয় জাহানের কামিয়াবী হাসিল করতে সক্ষম হবো ইনশ্আল্লাহ।

এতে বক্তা ছিলেন-জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আল্লামা মুফতি কাজী মুহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ, অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আল্লামা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন আল-আযহারী, উপাধ্যক্ষ আল্লামা ড. আবু তৈয়ব মুহাম্মদ লিয়াকত আলী, জামেয়ার সাবেক মুহাদ্দিস্ আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ আশরাফুজ্জামান আলকাদেরী, সোবহানিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ হারুনুর রশীদ, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’র চেয়ারম্যান আল্লামা কাজী মুহাম্মদ মঈনুদ্দিন আশরাফী, মাদ্রাসা-এ-তৈয়্যবিয়া অদুদিয়া সুনিèয়া ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ আবু তৈয়ব চৌধুরী, মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ বদিউল আলম রেজভী, আল-আমিন বারিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা ড. মুহাম্মদ ইসমাইল নোমানীসহ আনজুমান ট্রাস্ট পরিচালনাধীন মাদ্রাসা সমূহের ওলামায়ে কেরাম।

সালানা ওরস মোবারক উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচীর মধ্যে ছিল- সকাল ৯টা হতে যোহর পর্যন্ত-আলমগীর খানকাহ্-এ-কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়ায় খত্মে কোরআন মাজীদ, খতমে বোখারী শরীফ, খতমে মজমু’য়ায়ে সালাওয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খতমে গাউসিয়া শরীফ, খতমে পবিত্র গেয়ারভী শরীফ। বেলা ৩-৩০ মিনিট হতে এশা পর্যন্ত – জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা ময়দানে তকরির, জীবনী আলোচনা, সালাত ও সালাম, আখেরী মোনাজাত এবং বা’দ এশা – তাবারুক বিতরণ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জামেয়ার আরবী প্রভাষক হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান। পরিশেষে, জামেয়ার সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ সোলাইমান আনসারী বাংলাদেশসহ সমগ্র মুসলিম জাহানের শান্তি কামনা করে দো’য়া ও আখিরী মুনাজাত পরিচালনা করেন।

Share:

Leave Your Comment