ইসলামের আদর্শ বিষয় ভিত্তিক বয়ান করতে হবে

ইসলামের আদর্শ বিষয় ভিত্তিক বয়ান করতে হবে

ইসলামে সুস্পষ্টভাবে নারীর অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু আমাদের দেশের সমাজ ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় বিভিন্নভাবে নারী সমাজ বৈষম্যের শিকার। ইসলামী শরীয়ত প্রদত্ত নারীর অধিকার যথাযথ বাস্তবায়ন ও প্রয়োগে সমাজ জীবনে নানা ছল চাতুরির আশ্রয় নিয়ে নারী সমাজকে বঞ্চিত করছে। বিশেষত পৈত্রিক সম্পদে নারীর যে প্রাপ্য তা থেকে বঞ্চিত করার জন্য নানা অজুহাতের আশ্রয় নিতে দেখা যায়। ইসলামের উত্তরাধিকার আইনে নারীর অধিকার যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা এককথায় অতুলনীয়, মাসিক তরজুমানের এ সংখ্যায় এ বিষয়ে বিশদ আলোকপাত করা হয়েছে, ইসলামী চিন্তাবিদ, আলিম, ওলামা সকলের উচিত নারীর সার্বিক অধিকার ও প্রাপ্যের বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর ফায়সালা সমাজের সর্বত্র বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখা।
বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় নানা অপরাধ, প্রতারণা, হিংসা-হানাহানি, খুন-ধর্ষণ রাহাজানী যেভাবে বেড়ে চলছে তাতে সভ্য সমাজ উদ্বীগ্ন। সামাজিক ন্যায় বিচার বিবেক, বিবেচনা দিন-দিন লোপ পাচ্ছে। বিশেষ করে কিশোর গ্যাং এর বেপরোয়া আচরণ দিন-দিন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনা যেন নিত্য ব্যাপারে পরিণত। এ অবস্থায় সমাজের শান্তি প্রিয় মানুষ দিশেহারা। ক্রমবর্ধমান এ অপরাধ দমনে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে প্রশাসনের সাথে মিলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষত সমাজের প্রতিটি মসজিদের সম্মানিত খতীবগণকে ঈমানী দায়িত্ব হিসেবে ইসলামের মর্মবাণী, হালাল-হারাম, যুলম অত্যাচারের কুফল ও পরিণাম আগত মুসল্লীদের মাঝে তুলে ধরতে হবে। যেহেতু প্রতি শুক্রবার জুমুআর দিনে এলাকায় ছোট-বড়, কিশোর-যুবক, বৃদ্ধ প্রত্যেকে সোৎসাহে মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য সমবেত হয়ে থাকেন এবং সম্মানিত খতীব সাহেবের বক্তব্য শ্রবণে মনোযোগী হয়ে থাকেন। অতএব ইসলামের সুন্দরতম আদর্শ কুরআন-সুন্নাহর মর্মবাণী তাদের মাঝে হৃদয়গ্রাহীভাবে বিষয় ভিত্তিক বয়ান করতে হবে। মাসিক তরজুমানের প্রতিটি সংখ্যায় বিষয় ভিত্তিক লেখনী প্রকাশ করে আসছে। অতএব সম্মানিত খতীব, ওয়াঈজ ওলামা মাশায়িখ সমাজিকগণকে অবক্ষয় রোধে দায়িত্ব পালনের সবিনয় আহ্বান জানাচ্ছি।
আগামী চান্দ্র মাস জিলহজ্বে বিশ্ব মুসলিম আদায় করবে পবিত্র হজ্ব। বৈশ্বিক নানা কারণে বর্তমান হজ্ব আদায়ের ব্যয় অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। তথাপিও সামর্থবান ও ভাগ্যবান আল্লাহর বান্দাগণ পবিত্র হজ্ব পালনের যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করেছেন। যারা হজ্বে যাবেন তাঁরা এখন থেকে শারীরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি হজ্বের যাবতীয় পালনীয় বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জনে মনোযোগী হতে হবে। হাজ্বী সাহেবানদের মনে রাখতে হবে সুনাম ও খ্যাতি অর্জনের জন্য নয় বরং এখলাস ও তাকওয়ার সঙ্গে হজ্ব আদায়ের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। এটাই হজ্ব কবুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আর মকবুল হজের একমাত্র প্রতিদান জান্নাত।
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সৌদি আরবের হজ্ব কর্তৃপক্ষ হাজী সাহেবানদের সেবায় আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন কিন্তু মাঝে মধ্যে বাংলাদেশের ধর্মমন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট এজেন্ট’র দায়িত্বপ্রাপ্তদের সমন্বয়হীনতার কারণে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ভোগের স্বীকার হয়ে থাকে। তাই আমরা বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমীপে আহ্বান জানাবো আল্লাহর ঘরের মেহমান হজ্ব পালনকারীগণ যাতে সুষ্ঠুভাবে হজ্ব আদায় করে দেশে ফিরতে পারেন সে ব্যাপারে সদা সচেষ্ট ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন এ কামনা করছি।
শরীয়ত-তরিক্বত, মা’রিফাত ও হাক্বিকতের সমন্বিত সিলসিলার মহান শায়খ কুতবুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল, আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়দ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি আলয়হির রাহমাহ্। সারা বিশ্বের সুন্নি মুসলমানদের অনন্য পেশওয়া হিসেবে তিনি সমাদৃত। তাঁর মূল্যবান জীবন, কর্মতৎপরতা সুন্নি মুসলিম উম্মাহর প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে। তিনি সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছিলেন। তাঁর জীবনের মহান ব্রত ছিল ইসলামের সঠিক মতাদর্শ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের প্রচার-প্রসারে এ মহৎ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন একটি আধাত্মিক দ্বীনি সংস্থা ‘আনজুমান-এ শুরায়ে রহমানিয়া’ যা পরবর্তীতে আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট হিসেবে রূপ লাভ করে। এ আধ্যাত্মিক দ্বীনি সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে তাঁর নূরানী হাতে প্রতিষ্ঠিত জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিচালিত হচ্ছে দুই শতাধিক দ্বীনি মাদরাসা। জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়াসহ এসব দ্বীনি প্রতিষ্ঠান হতে শিক্ষা লাভ করে বের হওয়া আলিম-ওলামাগণ দেশের গ-ি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামের প্রকৃত রূপরেখা আক্বাইদে আহলে সুন্নাতের প্রচার প্রসারে ব্যাপক অবদান রাখছে। যিলক্বদ মাসের ১১ তারিখ এ মহান সাধকের ওরস মোবারকে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং তাঁর রূহানী ফুয়ূযাত কামনা করছি।

Share:

Leave Your Comment