সেই দিন, সেই ক্ষণ! ভয় করো ওহে মন!

সেই দিন, সেই ক্ষণ! ভয় করো ওহে মন!

ফজল-উস- শিহাব >

কোনো না কোনো অপরাধ করে পরে শাস্তির ভয়ে পালিয়ে বাঁচা ব্যক্তিকে আমরা বলি ফেরারি আসামি। এমন অনেক অপরাধীর গল্প আমার আপনার হাতের কাছেই আছে, বহুদিন পালিয়ে থেকেও যারা পার পায়নি আইনের হাত থেকে।
আইন তাকে আওতায় আনে এবং অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি দেয়। আমি আপনি যখন মালিকের আদেশ নির্দেশকে ইচ্ছে করে অবজ্ঞা করি, ইগোর তাড়নায় কিংবা দুষ্ট সঙ্গীর প্ররোচনায় যখন লংঘন করি সীমা, যখন তুচ্ছ জিনিসের মোহে পড়ে ভুলে যাই নিজের আভিজাত্য, যখন আশরাফুল মাখলুকাতের তাজ মাথায় পরে করি ইতরামি- তখন আসামি হয়ে যাই। তখন আমার নামে জিডি দায়ের হয় ঐশী থানায়।

كِرَامًا كَاتِبِیْنَ(11( یَعْلَمُوْنَ مَا تَفْعَلُوْنَ(12(  √ ‘‘সম্মানিত লেখকদ্বয়, তারা জানেন তোমরা যা কর’’ [সূরা ইনফিতার, আয়াত-১১-১২]
اَلَمْ یَعْلَمْ بِاَنَّ اللّٰهَ یَرٰىﭤ(১৪) √ ‘‘তবে কি সে জানেনা নিশ্চয়ই আল্লাহ দেখেন।’’ [সূরা আ’লাক, আয়াত-১৪]
یَعْلَمُ خَآىٕنَةَ الْاَعْیُنِ وَ مَا تُخْفِی الصُّدُوْرُ(১৯) √ ‘‘চোখের খেয়ানত এবং অন্তরের গোপন খেয়ালও তার জ্ঞানে বতর্মান’’। [সূরা মুমিন, আয়াত-১৯]
مَا یَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ اِلَّا لَدَیْهِ رَقِیْبٌ عَتِیْدٌ(১৮) √ ‘‘মানুষ যে কোনো শব্দ উচ্চারণ করে, তার জন্য সতর্ক প্রহরী নিকটেই আছে’’। [সূরা ক্বাফ, আয়াত-১৮]
√ আমার কথা,
√ কাজ,
√ গোপন চাহনি,
√ গোপন চিন্তা – নথিবদ্ধ হচ্ছে!
এই নথিতে নেতিবাচক কথা বা কাজ যা কিছু রেকর্ড হচ্ছে তা মূলত এক একটি মামলা!
মায়ের পেট ছেড়ে দুনিয়ায় আসা যেমন সত্য ঘটনা, দুনিয়া ছেড়ে কবরে যাওয়া যেমন সত্য ঘটনা- তেমনই আরেক সত্য হলো কবর ছেৃেড় হাশরের মাঠে দাঁড়ানোর বিষয়টি! মহা আদালতে বিচারপতিদের বিচারপতি আহকামুল হাকিমিনের সামনে উপস্থাপন করা হবে পার্সোনাল ফাইল, যা নথিবদ্ধ করেছিলেন সম্মানিত দুই লেখক। যার ফাইল তাকে বলা হবে – اِقْرَاْ كِتٰبَكَؕ-كَفٰى بِنَفْسِكَ الْیَوْمَ عَلَیْكَ حَسِیْبًاﭤ(১৪) ‘‘ইকরা কিতাবাকা!… পাঠ কর তোমার পুস্তক, আজ তুমি নিজেই যথেষ্ট তোমার হিসাবের জন্য’’। [সূলা বনী ইসরাইল, আয়াত-১৪]
یَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَیْرٍ مُّحْضَرًا ﳝ ‘‘সেদিন প্রত্যেকে যা সে ভালো করেছে এবং যা সে মন্দ করেছে তা মজুদ পাবে…।’’ [সূরা আ’লে ইমরান, আয়াত-৩০]
عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّاۤ اَحْضَرَتْﭤ(১৪) ‘‘সেদিন প্রত্যেকে জানবে কি নিয়ে সে উপস্থিত হয়েছে’’। [সূরা তাকবীর, আয়াত-১৪]
এটা মানব জন্মের সার্থকতা বা ব্যর্থতা চাউর হওয়ার মাহেন্দ্র ক্ষণ। বিশ্বাস ও কর্মের ধরন অনুযায়ী তখন মানুষের প্রতিক্রিয়া ও প্রাপ্তি হবে ভিন্ন ভিন্ন। কেউ জীবনকে সার্থক করতে পারার আনন্দে আপ্লুত- وُجُوْهٌ یَّوْمَىٕذٍ نَّاعِمَةٌ(৮) لِّسَعْیِهَا رَاضِیَةٌ(৯) ‘অনেক মুখমণ্ডল সেদিন হবে আনন্দোজ্জ্বল, নিজেদের কর্ম সাফল্যে পরিতৃপ্ত’’ ।[সূরা গাশিয়া, আয়াত: ৮-৯]
وَّ یَنْقَلِبُ اِلٰۤى اَهْلِهٖ مَسْرُوْرًاﭤ(৯) তাঁরা – ‘‘স্বজনদের কাছে ফিরবে প্রফুল্ল চিত্তে’’ [সূরা ইনশিক্বাক, আয়াত-৯]।
তাঁদেরকে সাদরে গ্রহণ করা হবে চিরবসন্তের বাগানে – ‘‘সালামুন আলাইকুম!..
سَلٰمٌ عَلَیْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوْهَا خٰلِدِیْنَ(৭৩) ‘‘তোমাদের প্রতি সালাম! তোমরা সুখী হও এবং জান্নাতে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য।’’ [সূরা ঝুমার, আয়াত-৭৩]
সেদিন কারো চেহারা হবে জীবন বরবাদের বেদনায় নীল- وُجُوْهٌ یَّوْمَىٕذٍ خَاشِعَةٌ(২) عَامِلَةٌ نَّاصِبَةٌ(৩) ‘‘সেদিন অনেক মুখমণ্ডল হবে অবনত, ক্লিষ্ট, ক্লান্ত…’’ [সূরা গাশিয়া, আয়াত: ২-৩]
তাদের মুখে ধ্বনিত হবে এই আফসোস – وَ یَقُوْلُ الْكٰفِرُ یٰلَیْتَنِیْ كُنْتُ تُرٰبًا(৪০) ‘‘আহ্! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম’’! [সূরা নাবা, আয়াত-৪০]
তাদেরকে জানানো হবে দুঃসংবাদ- قِیْلَ ادْخُلُوْۤا اَبْوَابَ جَهَنَّمَ خٰلِدِیْنَ فِیْهَاۚ-فَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِیْنَ(৭২) ‘‘জাহান্নামের দ্বারগুলো দিয়ে প্রবেশ কর তাতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য, কত নিকৃষ্ট উদ্ধতদের আবাসস্থল!’’ [সূরা ঝুমার, আয়াত-৭২]

এখনো বেঁচে আছি দুনিয়ার আলো হাওয়ায়। তার মানে হলো- আদালত কায়েমের আগেই চুপি চুপি অপরাধগুলো মাফ করিয়ে নিয়ে মন্দকে ভালো দিয়ে প্রতিস্থাপনের সুযোগ হাতছাড়া হয়নি এখনো! রব চাচ্ছেন আমরা তাঁর কাছে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করি। বাকি দায়িত্ব তাঁর। সমন আসার আগেই আপোষ ও ক্ষমাপ্রাপ্তির সুযোগ দুর্ভাগাই শুধু হাতছাড়া করে। এমন দুর্ভাগ্য আমাদের না হোক! এখানে উদ্ধত হলে ওখানে অবনত হওয়ার বিকল্প নেই। নত হোক মস্তক মালিক সমীপে স্বেচ্ছায়, দুনিয়ার আলো হাওয়ায় বিচরণ সময়কালেই।

লেখক: প্রাবন্ধিক।

Share:

Leave Your Comment