সেহরী খাওয়ার হুকুম কি? সেহরী কতক্ষণ পর্যন্ত খাওয়া যাবে।

সেহরী খাওয়ার হুকুম কি? সেহরী কতক্ষণ পর্যন্ত খাওয়া যাবে।

 মোহাম্মদ ইমন উদ্দিন, টেক্সটাইল, বায়েজিদ, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: সেহরী খাওয়ার হুকুম কি? সেহরী কতক্ষণ পর্যন্ত খাওয়া যাবে। অনেকে আযান হওয়া পর্যন্ত আহার করে তখন রোযা হবে কি? শরীয়তের আলোকে জানালে চির কৃতজ্ঞ হবো।
উত্তর: পবিত্র কোরআন মজীদে মহান আল্লাহ্ এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেছেন-
وكلوا واشربوا حتى يتبين لكم الخيط الابيض
من الخيط الاسود من الفجر
অর্থাৎ- আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাতের কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়। [সূরা বাক্বারা: আয়াত ১৮৭]
আলোচ্য আয়াতে করীমায় পবিত্র রমযান মাসে রাতের বেলায় সেহেরী খাওয়ার সময় সীমার ব্যপারে বলা হয়েছে যে, পানাহার চলবে ঊষার নীলিমা প্রকাশ পাওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ সুবহে সাদিক প্রকাশ পাওয়ার আগ পর্যন্ত। সেহেরী খাওয়ার শেষ সময় সুবহে সাদিক হওয়ার আগ পর্যন্ত। সেহরী খাওয়া সম্পর্কে পরিস্কারভাবে হাদীস শরীফে বর্ণনা রয়েছে। যেমন-
عن انس بن مالك يقول قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تسحروا فان فى السحور بركة
হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- তোমরা সেহরী খাও, কেননা সেহেরীতে বরকত রয়েছে। [সহীহ বুখারী, মুসলিম ও ইবনে মাজাহ্ শরিফ )
অপর এক হাদিস শরীফে বর্ণনা রয়েছে। যেমন-
عن عمر بن العاص قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان افضل ما بين صيامنا وصيام اهل الكتاب اكل السحر
“হযরত আমর ইবনুল আস্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের রোযা এবং আহলে কিতাব (খ্রিস্টান-ইহুদী)-এর রোযার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহেরী খাওয়া।” [সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ১০৩৯]

উম্মতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সেহরী খেয়ে রোযা পালন করা আর আহলে কিতাব খ্রিস্টান এবং ইহুদীদের অনাহারে থাকা বা উপবাস করা এক নয়। তারা উপবাস করে বটে, কিন্তু সেহরী খায় না। ওদের সেহরীও নেই, ইফতারও নেই আর আমাদের সেহরীতে দু’ধরনের বরকত রয়েছে। ১. শরয়ী বরকত, ২. স্বাস্থ্যগত বরকত। শরয়ী বরকত হলো- এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সেহরী খাওয়া। একদিকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী-تسحروا فان فى السحور بركة অর্থাৎ- ‘তোমরা সেহরী খাও, কেননা। সেহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে। আদেশটি সুন্নাত হিসেবে পালিত হলো অপরদিকে ইহুদী-খ্রিস্টানদের বিরোধীতাও হলো। আর স্বাস্থ্যগত বরকত হলো- সেহরী খেয়ে দিনের বেলায় রোযা পালনে স্বাস্থ্যগত দুর্বলতা সৃষ্টি হয় না। ফলে দিবসের অন্যান্য দায়িত্ব গুলো পালন করতে খুব একটা ক্লান্তি আসে না। তা ছাড়া সেহরী খেলে রোযা রাখার শক্তি অর্জিত হয় এবং তাকওয়ার বিধানগুলো মানতে সুবিধা হয়। কোন কারণে ঘুম না ভাঙ্গলে এবং সেহরী খেতে না পারলে তাতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। সেহরী খাওয়া সুন্নাত ও বরকত। অতএব, কোন কারণে সুবহে সাদিকের পূর্বে শেষ রাত্রিতে সেহরী খেতে না পারলে না খেয়েই রোযা রাখবে। [হেদায়া ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১২৫]

ফজরের আযান চলাকালে সেহরী খাওয়া যাবে কিনা? সুবহে সাদিক তথা ফজরের ওয়াক্ত না আসলে ফজরের আযান দেয়া জায়েয নেই দিলে শুদ্ধ হবে না। কোন ব্যক্তি সুবহে সাদিক হওয়ার পর ফজরের আযান চলাকালীন ইচ্ছাকৃত সেহরী খেতে থাকলে তার এই রোযার কাযা এবং কাফ্ফারা উভয়টি দিতে হবে। কেননা সে রোযার ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর ইচ্ছাকৃত খানাপিনা করেছে। আর যদি কেউ মুয়াজ্জিনের আযান শোনা মাত্রই সেহরী খাওয়া বন্ধ করে। ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে মুয়াজ্জিন বিন্দুমাত্র দেরি করেনি আযান আরম্ভ করে দিয়েছে, তখন তার রোযা নষ্ট হবে না। তবে সতর্কতা স্বরূপ পরে তার কাযা করে দেয়া উত্তম।
[আলমগীরি: ১ম খন্ড, রোযা অধ্যায়]

Share:

Leave Your Comment