মাহে রমজান আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য, সংযম ও ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত করে

মাহে রমজান আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য, সংযম ও ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত করে

রহমত, মাগফিরাত, নাজাতের বার্তা নিয়ে বিশ্ব মুসলিমের দুয়ারে হাজির মাহে রমজান। সু-স্বাগতম পবিত্র মাহে রমজান। ওহে তাক্ওয়া অর্জনের মাস স্বাগতম, ওহে গুনাহ মাফের মাস তোমায় সহস্র মোবারকবাদ, বিশ্ব মুসলিম সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন এ পুণ্যময় পুতপবিত্র মাসের। অসংখ্য ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ মাস এটি। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে- ‘রমজান মাস, যাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। মানব জাতির হেদায়তের জন্য এ গ্রন্থখানা সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী।’ পবিত্র কোরানে আরবি বারো মাসের মধ্যে একমাত্র রমজান মাসের নাম উল্লেখ আছে। সর্বশ্রেষ্ঠ মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও অন্যান্য আসমানী কিতাব অবতীর্ণের কারণেও এ মাস শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি, প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণ এবং ইবাদতের প্রতি অধিক মনোনিবেশ করার ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত হয় এ মাসে। নাফ্স ও রুহের সমন্বিতরূপই জীবন। নাফস্ খানাপিনার দ্বারা শক্তিশালি হয়, পক্ষান্তরে রোজার দ্বারা নাফস্ দুর্বল হয় ফলে আত্মা শক্তিশালী হয়ে ইবাদতের প্রতি উৎসাহী হয়। মুসলমানদের পাপমুক্ত করে সুন্দর, সুস্থ ও পবিত্র জীবন গঠনের সুযোগ দানের জন্যই মহান আল্লাহর পক্ষ হতে এক অনন্য নেয়ামত রমজানুল মোবারকের এ মাস। রোজা আদায়ের দ্বারা মু’মিন রোজাদারের সমস্ত পাপ ধুয়ে-মুছে পবিত্র হয়ে যায়, দেহ-মন পুতঃপবিত্র হয়। তইতো পবিত্র রমজান মাস আসলে মুসলিম সমাজে এক অপার্থিব আনন্দের সূচনা হয়। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আপন অনুগ্রহে মুসলমানদের জন্য যে সকল পালনীয় বিধান দিয়েছেন-এর সবগুলোতেই নিহিত রয়েছে মানবজাতীর ইহকালীন ও পরকালীন প্রভূত কল্যাণ। রোযাও ঠিক তেমনি এক অনুপম বিধান। এ বিধান পালনে রয়েছে আধ্যাত্মিক ও দৈহিক নানা উপকার ও কল্যাণ। রয়েছে শরীরিক এবং মানসিক প্রশান্তি।

মাহে রমজানুল মোবারক মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য, সংযম ও ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হওয়ার শিক্ষা নিয়ে হাজির হয়। তবে আমাদের দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করলে পরিলক্ষিত হবে, আমরা মাহে রমজানের শিক্ষার বিপরীতে চলছি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের এদেশে অন্তত রমজানুল মোবারকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ত্যাগের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল প্রকার নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রীর মূল্য জনসাধারণের আয়ত্তের মধ্যে রাখা উচিৎ। মুমিন বান্দার প্রতিটি ভালো কাজ ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। পুণ্য অর্জনের আশায় রমজান মাস আসলে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা সকল পণ্যে বিশেষ মূল্য ছাড় দিয়ে থাকে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, বাজারে যেন মূল্য ছাড়ের প্রতিযোগিতা বসেছে। উদ্দেশ্য থাকে রোজা এবং রোজাদারের প্রতি সম্মান ও জনগণের ক্রয় ক্ষমতা নাগালের মধ্যে রাখা। কিন্তু আমাদের দেশে প্রতিবছর দেখি উল্টো চিত্র। অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার ফলে রোজার নিত্য অনুষঙ্গ সেহরি-ইফতারের সাথে সম্পর্কিত খাদ্য-দ্রব্যের দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। এতে সাধারণ গরীব রোজাদারের নিদারুণ কষ্ট হয়। এভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো, ওজনে কারচুপি করা, ভেজাল দ্রব্য বিক্রি করার ব্যাপারে ইসলাম কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। মজুতদারীর ফলে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্ষুণœ হয়, এজন্য ইসলামী শরীয়তে একে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম মজুতদারকে পাপী ও অভিশপ্ত বলেছেন। ধর্মের উপরোক্ত মর্মবাণীগুলো ব্যবসায়ী সমাজ আমলে না নিয়ে প্রতিবছর রোজা আসলেই শুরু করে উল্টো দিকে যাত্রা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী কম দামে বিক্রয়ের জন্য সরকারিভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তৃণমূল পর্যায়ে এর খুব একটা প্রভাব পড়ে না। বাস্তবে দেখা গেছে ন্যায্য মূল্যের এসব সামগ্রী সংগ্রহে জনগণ নানা ভোগান্তির শিকার হয়। অথচ এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক মুসলমান এবং ব্যবসায়ী সমাজের বিরাট অংশও মুসলমান। তবুও এ ধরনের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, কৃত্রিম সংকট, ভেজাল পণ্য বিক্রির মতো জঘন্য কর্মকাণ্ড অত্যন্ত লজ্জাজনক বটে।

মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা বিশ্ব মুসলিমের সর্বপ্রকার আত্ম সংশোধনের সুযোগ এনে দেয়। মূলত: মাহে রমজান মুমিন মুসলমানদের জন্য যাবতীয় অন্যায়-অবিচার-পাপ কাজ হতে বিরত থাকার প্রশিক্ষণ লাভের মাস। মাসব্যাপী এ প্রশিক্ষণ নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করে বাকী ১১ মাস আল্লাহর নির্দেশিত পথে-মতে চলতে পারলেই মুমিন জীবন হবে স্বার্থক- আল্লাহ্ আমাদের সিয়াম সাধনার প্রকৃত শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার তাওফীক দান করুন- আমীন।

Share:

Leave Your Comment