ঈমান ও আক্বাইদ
= ঈমান ও আক্বাইদ =
কলেমা-ই তাওহীদ
যে আক্বীদায় বিশ্বাস করলে ক্বিয়ামত-দিবসে নাজাত পাওয়া যাবে এবং অনন্তকাল জাহান্নামের আযাব হতে মুক্তি পাবে তা হচ্ছে কলেমা-ই তাওহীদ-এ বর্ণিত আক্বীদা।
কলেমা
لٓا اِلٰہَ اِلاَّ اللّٰہُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰہِ
(লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুহাম্মদুর রসূ-লুল্লা-হ্)।
অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই, হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল। [আল-ফিক্বহুল হানাফী আলা সাউবিহীল জাদীদ, পৃষ্ঠাঃ ৫২২।]
আল্লাহ তা’আলা তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ দাওয়াত প্রচার করার জন্য প্রেরণ করেছেন। ক্বোরআন মজিদে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন-
قُلْ اِنَّمَا یُوْحٰی اِلَیَّ اَنَّمَآ اِلٰہُکُمْ اِلٰہٌ وَّاحِدٌ ج فَہَلْ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
তরজমাঃ আপনি বলুন, আমার প্রতিতো এ মর্মে ওহী হয় যে, নিশ্চয় তোমাদের ইলাহ এক আল্লাহ। তবে কি তোমরা মুসলমান? [সূরা আম্বিয়া, আয়াত- ১০৮]
এ কলেমা-ই তাওহীদ প্রচার করার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা যুগে যুগে অন্যান্য নবী-রসূলও প্রেরণ করেছেন। অতএব, একমাত্র আল্লাহ তা’আলাকে ইবাদতের উপযোগী বিশ্বাস করা, আল্লাহ তা’আলা যা কিছু হুকুম করেছেন এবং বিধি-বিধান দিয়েছেন তা কায়মনোবাক্যে মেনে নেয়া, স্বীকার ও পালন করার সাথে সাথে যা কিছু নিষেধ করেছেন তা থেকেও বিরত থাকাই হল প্রকৃত ইসলাম।
সুতরাং ইসলাম হল اِلٰہَ اِلاَّ اللّٰہُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰہِ لا -কে মনে প্রাণে বিশ্বাস করা এবং তা কথায় ও কাজে প্রমাণ করার নাম। আর اِلٰہَ اِلاَّ اللّٰہ لا -এর সাথে مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰہ ইসলাম এবং ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলো। ঈমানের এ দু’বিষয় একটি অপরটি হতে পৃথক নয়। দু’টিই একসাথে ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। উভয়ের উপর ঈমান আনা, মুখে স্বীকার করা ও কাজে তার প্রমাণ দেওয়াই হল প্রকৃত ঈমান।
[যারা ‘মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ্’কে কলেমা-ই তাওহীদের অংশ নয় বলে তারা মু’মিন নয়।]
এ কারণে আল্লাহ তা’আলা তাঁর ও তাঁর রসূল-উভয়ের আনুগত্যের কথা একসাথে বর্ণনা করেছেন-
قُلْ اَطِیْعُوْا اللّٰہَ وَالرَّسُوْ لَ ج فَاِ نْ تَوَلَّوْا فَاِنَّ اللّٰہَ لاَیُحِبُّ الکَافِرِیْنَ
তরজমাঃ আপনি বলে দিন, হুকুম মান্য করো আল্লাহ ও রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা
আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র; অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আল্লাহর পছন্দ হয় না কাফির। [সূরা আল-ই ইমরান; আয়াত- ৩২, তরজমা- কান্যুল ঈমান।]
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন-
مَنْ یُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ اَطَاعَ اللّٰہَ وَمَنْ تَوَلّٰی فَمَآ اَرْسَلْنٰکَ عَلَیْہِمْ حَفِیْظًا
তরজমাঃ যে ব্যক্তি রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র নির্দেশ মান্য করেছে, নিঃসন্দেহে সে আল্লাহর নির্দেশ মান্য করেছে। আর যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তবে আমি আপনাকে তাদের রক্ষার জন্য প্রেরণ করি নি। [ সূরা নিসা, আয়াত-৮০, তরজমা- কান্যুল ঈমান]
রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর বিশ্বাস, তাঁর আনুগত্য ছাড়া তাঁর দেওয়া বিধি-বিধান অনুসরণ ছাড়া ঈমানদার হওয়া যাবে না। তাই, ফিক্বহ শাস্ত্রে বলা হয়েছে- কেউ যদি لٓا اِلٰہَ اِلاَّ اللّٰہُ -এর উপর ঈমান আনে এবং مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰہِ উপর ঈমান আনে না, তবে সে কাফির, শরীয়ত মতে সে ঈমানদার নয়।
অন্য আয়াতে ক্বোরআন মজিদে এরশাদ হয়েছে-
یُثَبِّتُ اللّٰہُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِیْ الْحَیٰوۃِ الدُّنْیَا وَفِیْ الْاٰخِرۃِ ج
তরজমাঃ আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত রাখেন ঈমানদারদেরকে, শাশ্বত বাণীতে, পার্থিব জীবনে এবং পরকালে। [সূরা ইব্রাহীম, আয়াত-২৭, তরজমা- কান্যুল ঈমান]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত বারা ইবনে ’আযিব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, এখানে ‘শাশ্বত বাণী’ দ্বারা কলেমা-ই তাওহীদ لٓا اِلٰہَ اِلاَّ اللّٰہُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰہِ
[মিশকাত শরীফ]
অধিকন্তু এ কলেমাخير متواتر দ্বারা প্রমাণিত।৪
[বর-ই মুতাওয়াতির বলে ওই হাদীসকে, যার বর্ণনাকারী প্রতিটি যুগে এতো বেশী যে, তাঁদের মিথ্যার উপর একমত হওয়া সম্ভবই নয়। [মুক্বাদ্দামা-ই শায়খুদ্ দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ইত্যাদি]}
কেননা, পূর্ববর্তী মুসলমানদের থেকে আরম্ভ করে পরবর্তী মুসলমানগণ সকলেই এ কলেমা পড়েছেন, লিখেছেন এবং শিখেছেন। আর এ ধারা সর্বযুগেই অব্যাহত আছে এবং থাকবে। ক্বোরআন মজীদে আল্লাহ তা’আলা কলেমা-ই তাইয়্যেবার উপমা এভাবে এরশাদ করেছেন-
اَلَمْ تَرَ کَیْفَ ضَرَبَ اللّٰہُ مَثَلاً کَلِمَۃً طَیِّبَۃً کَشَجَرَۃٍ طَیِّبَۃٍ
اَصْلُہَا ثَابِتٌ وَفَرْعُہَا فِی السَّمَآءِ
তরজমাঃ আপনি কি লক্ষ্য করেন নি, আল্লাহ কিভাবে উপমা দিলেন পবিত্র ‘কলেমা’ বা বাক্যের? যেমন পবিত্র বৃক্ষ, যার মূল সুদৃঢ় এবং সেটার শাখা-প্রশাখা আসমানে।
[সূরা ইব্রাহীম, আয়াত-২৪, তরজমা কানযুল ঈমান]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা হতে বর্ণিত, এখানে ‘কলেমা-ই তাইয়্যেবা’ দ্বারা ‘কলেমা-ই শাহাদত’ বুঝানো হয়েছে, যাতে তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ব ও তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালত ও আল্লাহর প্রিয়তম বন্ধু হবার সাক্ষ্য রয়েছে।
[তাফসীর -ই নূরুল ইরফান]
কলেমা-ই শাহাদত নিন্মরূপ-
اَشْہَدُ اَنْ لآَّ اِلٰہَ اِلاَّ اللّٰہُ وَحْدَہٗ لاَ شَرِیْکَ لَہٗ وَاَشْہَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُہٗ وَرَسُوْلُہٗ
অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি এ মর্মে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় বান্দা ও তাঁর রসূল।
বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম ইসলামী আক্বীদাকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন-
১. ইলাহিয়্যাত (الالهيات) ২. নুবূয়ত (اَلنَّبُوَّةَ ) । [গাউসিয়া তরবিয়াতী নেসাব, পৃ. ১-৩]