Anjuman-E Rahmania Ahmadia Sunnia Trust

ইলাহিয়্যাতের বিবরণ

ইলাহিয়্যাতের বিবরণ

== ইলাহিয়্যাতের বিবরণ ==

নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ ‘ইলাহিয়্যাত’ (আল্লাহ সম্পর্কিত বিষয়াদি)’র অন্তর্ভুক্তঃ

আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্বে বিশ্বাস করা الایمان بوجود اللّٰہ تعالی

প্রত্যেক আক্বেল বালেগ নারী-পুরুষের উপর সর্বপ্রথম ‘ফরযে আইন’ হল আল্লাহর অস্তিত্বে অন্তরে বিশ্বাস করা। আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব ‘আযলী’ (আনাদি) ও ‘আবাদী’ (অনন্ত)। তাঁর অস্তিত্ব মাখলূক্বের ন্যায় কাল, স্থান ও আকৃতি-প্রকৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; আল্লাহ তা’আলা স্থান-কাল-পাত্র হতে পবিত্র। তিনি এসবের বহু ঊর্ধ্বে।

আল্লাহ্‌র অস্তিত্বকে মুখে ‘স্বীকার করা’ও ঈমানের পূবশর্ত। ঈমানের বিধান কার্যকর করার জন্য এটা জরুরী। আহলে সুন্নাতের দু’ ইমাম মাতুরীদী ও ইমাম আশ’আরী এ অভিমতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁদের দলীল হল আল্লাহ তা’আলার বাণী-

لاَ تَجِدُ قَوْمًا یُّؤْمِنُوْنَ بِاللّٰہِ وَالْیَوْمِ الْاٰخِرِ یُوَآدُّوْنَ مَنْ حَآدَّ اللّٰہَ وَرَسُوْلَہٗ وَلَوْکَانُوْآ اٰبَآءَ ہُمْ اَوْ أَبْنَآءَ ہُمْ اَوْ اِخْوَانَہُمْ اَوْ عَشِیْرَتَہُمْط اُولٰٓءِکَ کَتَبَ فِیْ قُلُوْبِہِمْ الْاِیْمَانَ وَأَیَّدَہُمْ بِرُوْحٍ مِّنْہُ ط وَیُدْخِلُہُمْ جَنَّتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِہَا الْاَنْہَارُ خَالِدِیْنَ فِیْہَاطرَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُمْ وَ رَضُوْا عَنْہُ ط اُؤْلٰٓءِکَ حِزْبُ اللّٰہِ اَلآ اِنَّ حِزْبَ اللّٰہِ ہُمُ المُفْلِحُوْنَ

তরজমাঃ আপনি পাবেন না ওই সব লোককে, যারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর এমনি যে, তারা বন্ধুত্ব রাখে ওই সব লোকের সাথে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছে, যদিও তারা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা ভাই কিংবা নিজ জাতি-গোত্রের লোক হয়। এরা হচ্ছে ওই সব লোক, যাদের অন্তরগুলোতে আল্লাহ ঈমান অঙ্কিত করে দিয়েছেন এবং তাঁর নিকট থেকে রূহ দ্বারা তাদের সাহায্য করেছেন আর তাদেরকে জান্নাত বা বাগানসমূহে নিয়ে যাবেন, সে গুলোর পাদদেশে নহরসমূহ প্রবহমান। সেগুলোর মধ্যে তারা স্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা আল্লাহর দল। শুনছো! আল্লাহরই দল।  [সূরা মোজাদালাহ্‌; আয়াত-২২, তরজমা কানযুল ঈমান]

নিয়ন্ত্রিত চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, আকাশ, পর্বত, সমুদ্র-সব কিছুই মহান আল্লাহর অস্তিত্বের পক্ষে বড় দলীল। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন-

وَہُوَ الْقَاہِرُ فَوْقَ عِبَادِہٖطوَہُوَ الْحَکِیْمُ الْخَبِیْرُ

তরজমাঃ এবং তিনিই পরাক্রমশালী আপন বান্দাদের উপর এবং তিনিই প্রঞ্চাময়, অবহিত। [সূরা আন’আম, আয়াত-১৮, তরজমা-কান্‌যুল ঈমান]

ক্বোরআন মজীদের অন্য আয়াতে এ প্রসঙ্গে এরশাদ হয়েছে-

فَاَقِمْ وَجْہَکَ لِلدِّیْنِ حَنِیْفًاط فِطْرَتَ اللّٰہِ الَّتِیْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَیْہَاطلاَ تَبْدِیْلَ لِخَلْقِ اللّٰہِ ط ذٰلِکَ الدِّیْنُ الْقَیِّمُ وَلٰکِنَّ اَکْثَرَ النَّاسِ لاَ یَعْلَمُوْنَ

তরজমাঃ সুতরাং আপনি মুখমণ্ডল সোজা করুন-আল্লাহর ইবাদতের জন্য, একমাত্র তাঁরই হয়ে। আল্লাহর স্থাপিত বুনিয়াদ, যার উপর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর বানানো বস্তুকে বিকৃত করো না। এটাই সরল দ্বীন; কিন্তু বহু লোক জানে না। [সূরা রোম, আয়াত-৩০ ঃ তরজমা- কান্‌যুল ঈমান]

‘আল্লাহ’র এ পূত-পবিত্র নামটি তাঁর ওই মহান সত্তার পরিচয় বহন করে, যার উপর ঈমান আনা অপরিহার্য। এ ঈমান আনার অর্থ শুধু আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্ব স্বীকার করা নয়, বরং অস্তিত্বের সঙ্গে সঙ্গে তিনি অনাদি, অনন্ত, চিরঞ্জীব, নিরাকার বলেও স্বীকার করা চাই।                   [শরহে আক্বাইদে নাসাফী]

আল্লাহর সিফাত ও গুণাবলী স্বীকার করাও ঈমানের অঙ্গ। [শরহে আক্বা-ইদে নাসাফী] ‘আল্লাহ’ শব্দের স্ত্রী-লিঙ্গ, দ্বিবচন ও বহুবচন নেই।

আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়

সমস্ত সৃষ্টি-জগতের ‘ইলাহ’ (উপাস্য) একমাত্র আল্লাহ। সত্তার দিক থেকেও তিনি এক। অনুরূপ গুণাবলীর দিক থেকেও একক, অনন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। ইরশাদ হয়েছে-

وَاِلٰہُکُمْ اِلٰہٌ وَّاحِدٌ لاّاِلٰہَ اِلاَّ ہُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِیْمُ

তরজমাঃ  এবং তোমাদের মা’বূদ হলেন একমাত্র মা’বূদ। কোন মা’বূদ নেই কিন্তু তিনিই; মহান দয়ালু, করুণাময়] [সূরা বাক্বারা, আয়াত-১৬৩, কান্‌যুল ঈমান।]

সূরা ইখলাসে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন-

  قُلْ ہُوَ اللّٰہُ اَحَدٌ لا اَللّٰہُ الصَّمَدُ – لَمْ یَلِدْ

وَلَمْ یُوْلَدْ-  وَلَمْ یَکُنْ لَّہٗ کُفُوًا اَحَدٌ

তরজমাঃ আপনি বলুন, তিনি আল্লাহ, (তিনি) এক, আল্লাহ পরমুখাপেক্ষী নন; না তাঁর কোন সন্তান আছে এবং না তিনি কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং না আছে কেউ তাঁর সমকক্ষ হবার।[সূরা ইখলাস, আয়াত ১- ৪]

একাধিক ইলাহ বা প্রভু নাকচ করে পবিত্র ক্বোরআনে স্পষ্টভাবে এরশাদ হয়েছে-

لَوْکَانَ فِیْہِمَا اٰلِہَۃٌ اِلاَّ اَللّٰہُ لَفَسَدَتَا فَسُبْحَانَ اللّٰہِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا یَصِفُوْنَ

তরজমাঃ যদি আসমান ও যমীনের মধ্যে আল্লাহ ব্যতীত আরো খোদা থাকতো, তবে অবশ্যই উভয়টি ধ্বংস হয়ে যেতো। সূতরাং পবিত্রতা আল্লাহ আরশাধিপতির-ওই সব উক্তি থেকে, যেগুলো এরা রচনা করেছে।  [সূরা আম্বিয়া, আয়াত:২২, তরজমাঃ কান্‌যুল ঈমান]

একাধিক ইলাহ্‌র মতবাদ নিতান্তই ভ্রান্ত। অনুরূপ, ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদের যথাক্রমে দ্বিত্ববাদ ঋনড় ত্রিত্ববাদঐ সম্পূর্ণ ভ্রান্ত, অলীক ও কল্পনাপ্রসূত। তারা আল্লাহর নবী ও রাসূলগণের মর্যাদা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের এ ভ্রান্ত ধারণা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাজ্ঞআলা এরশাদ করেন-

مَا الْمَسِیْحُ بْنُ مَرْیَمَ اِلاَّ رَسُوْلٌج قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِہِ الرُّسُلُ وَاُمُّہٗ صِدِّیْقَۃٌ ط کَانَا یَأْ کُلاَنِ الطَّعَامَ ط اُنْظُرْ کَیْفَ نُبَیِّنُ لَہُمُ الْاٰ یٰتِ اُنْظُرْ اَنّٰی یُؤْفَکُوْنَ

তরজমা: মরিয়ম-তনয় মসীহ নয়, কিন্তু একজন রসূল। তাঁর পূর্বে বহু রসূল গত হয়েছে এবং তাঁর মাতা সিদ্দীক্বাহ্‌ (সত্যনিষ্ঠ)। তারা উভয়ে খাদ্যাহার করতো। দেখো তো! আমি কেমন সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ তাদের জন্য বর্ণনা করছি! অতঃপর দেখো তারা কিভাবে কুঁজো হয়ে চলে যাচ্ছে! [সূরা মা-ইদাহ্‌, আয়াতঃ ৭৫,তরজমা-কান্‌যুল ঈমান]

উপরের বর্ণনা হতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্‌ নেই। তিনি অদ্বিতীয় লা-শরীক, তাঁর কোন শরীক নেই। নেই কোন সহকারী ও সহযোগী। যাত ও সিফাত উভয় দিক থেকে তিনি অনন্য অদ্বিতীয়। তাঁর কোন অংশীদার নেই।

[গাউসিয়া তরবিয়াতী নেসাব, পৃ. ৪-৬]