শায়খ মুহাম্মদ শিরধীনী রাহমাতুল্লাহি আলায়হির ঘটনা

শায়খ মুহাম্মদ শিরধীনী রাহমাতুল্লাহি আলায়হির ঘটনা

= শায়খ মুহাম্মদ শিরধীনী রাহমাতুল্লাহি আলায়হির ঘটনা =

তিনি আল্লাহ তা’আলার একজন প্রিয় বান্দা ছিলেন। তাঁর একমাত্র পুত্র-সন্তান কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মুমুর্ষু হয়ে পড়লেও ওই দিকে তাঁর কোন খেয়াল ছিলো না। তিনি আল্লাহ তা’আলার এবাদতে মগ্ন থাকতেন। এ সময় তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, ‘‘আপনি আল্লাহর প্রেমে এত বেশী বিভোর যে, আপনার এ সন্তান মারা গেলেও আপনার কোন পরোয়া নেই; কিন্তু আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো।’’

এমতাবস্থায় তাঁদের ঘরে মালাকুল মাওত এসে হাযির। ইমাম নাবহানী ইমাম শা’রানীর বরাতে বলেন-ওই সময় স্ত্রীর কান্না দেখে শায়খ মুহাম্মদ শিরধীনী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি হযরত আয্‌রাঈল আলায়হিস্‌ সালামকে সম্বোধন করে বললেন-اِرْجِعْ اِلى رَاجِعًا فَاِنَّ الْاَمْرَ نُسِخَ

অর্থাৎ আপনি আপন রবের দিকে ফিরে যান! কারণ, রূহ কব্জের নির্দেশ রহিত করা হয়েছে।                                                      [কামালুল আউলিয়া, পৃষ্ঠা-৩০২]

অতএব,মালাকুল মাওত চলে গেলেন এবং ওই ছেলে আরো ৩ বছর জীবিত ছিলো।

তিন. আল্লাহ্‌র উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করার বিবরণ  

ঈমানের তৃতীয় দাবী হলো আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করা।

এ প্রসঙ্গে ক্বোরআন মজিদে এরশাদ হয়েছে-

وَقَالَ مُوْسى يَاقَوْمِ اِنْ كُنْتُمْ امَنْتُمْ بِاللهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوْا اِنْ كُنْتُمْ مُسْلِمِيْنَ

তরজমাঃ এবং মূসা বললো, ‘হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহ্‌র উপর ঈমান এনে থাকো, তবে তাঁরই উপর নির্ভর করো, যদি তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে থাকো।

[সূরা ইউনুস, আয়াত-৮৪, তরজমা-কান্‌যুল ঈমান]

সাধারণত মনে করা হয় যে, কোন কাজে আসবাব বা উপকরণাদি ছেড়ে দিয়ে শুধু আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করাই তাওয়াক্কুল। অথচ আল্লাহ তা’আলার কাছে এমন তাওয়াক্কুল গ্রহণীয় নয়।

পরিপূর্ণভাবে আসবাব বা উপকরণাদি গ্রহণ করে সেটার উপর ভরসা না করে শুধু আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করাই হচ্ছে তাওয়াক্কুল ।

যেমন ক্বোরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে-

رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ لاَ اِلهَ اِلاَّ هُوَ فَاتَّخِذْهُ وَكِيْلاً

তরজমাঃ তিনি পূর্বের রব, পশ্চিমের রব। তিনি ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই। সুতরাং আপনি তাকেই কর্মবিধায়ক হিসেবে গ্রহণ করুন। [সূরা মুয্‌যাম্মিল, আয়াত-৯, তরজমা কান্‌যুল ঈমান]

মানুষকে আল্লাহ তা’আলা চেষ্টা করার জন্য এবং আসবাব তালাশ করার জন্য নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেছেন-

وَاَنْ لَيْسَ لِلْاِنْسَانِ اِلاَّ مَا سَعى

তরজমাঃ এবং এ যে, মানুষ পারে না কিন্তু আপন প্রচেষ্টায়। [সূরা আন্‌নাজ্‌ম, আয়াত-৩]

আল্লাহ তা’আলার নির্দ্ধারিত নিয়ম হল মানুষকে সেটাই দেয়া হবে, যা সে মনেপ্রাণে চায়। হাদীস শরীফে একটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। এক সাহাবী উটে চড়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে আসলেন। তিনি যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সালাম করতে আসলেন তখন হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, ‘‘তোমার উট কোথায়?’’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর উপর ভরসা করে উট ছেড়ে চলে এসেছি।’’ তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, وَاعْقِلْهَا وَتَوَكَّلْ অর্থাৎ সেটাকে (উট) প্রথমে বাঁধো এবং আল্লাহর উপর ভরসা করো।

[তিরমিযী শরীফ, মিনহাজুস্‌ সোয়ালিহীনঃ পৃ.২৪৬]

[গাউসিয়া তরবিয়াতী নেসাব, পৃ.১৩-১৫]