শির্কের প্রকারভেদ
= শির্কের প্রকারভেদ : শিরক প্রথমতঃ দু’প্রকার =
১. শির্কে আকবর, ২. শির্কে আস্গর
‘শির্কে আকবর’ হলো কোন সৃষ্টিকে আল্লাহ তা‘আলার মত তাঁর যাত ও সিফাতে সমকক্ষ বা সমমর্যাদাসম্পন্ন মনে করা।
‘শির্কে আস্গর’ হলো ইবাদতের মধ্যে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির নিয়্যতের সাথে অন্য কোন উদ্দেশ্যও শামিল রাখা। যেমন লোক দেখানোর নিয়্যতে ইবাদত করা অথবা খ্যাতি বা সুনামের উদ্দেশ্যে দান- সদ্ক্বাহ করা ইত্যাদি। [ফাত্হুল মুল্হিম]
আবার কোন কোন আলিম এ দু’টি শির্ককে ‘শির্কে জলী’ ও ‘শির্কে খাফী’ যথাক্রমে ‘প্রকাশ্য শির্ক’ ও ‘অপ্রকাশ্য শির্ক’ নামে আখ্যায়িত করেছেন।
‘শির্কে খাফী’ অত্যন্ত সূক্ষ্ম বিষয়। তা থেকে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন। ‘শির্কে খাফী’ হল যেমন কোন বিষয়ে আল্লাহর ক্বুদরতের মধ্যে অন্য কিছুর প্রভাবেরও ধারণা করা।
‘শির্কে জলী’র আবার বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে-
১. الشرك فى الربوبية অর্থাৎ রাবূবিয়াতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করা। (অন্য কথায় আল্লাহর মতো অন্য কাউকেও রব বা প্রতিপালক বলে বিশ্বাস করা।)
২. الشرك فى الوهية অর্থাৎ ইলাহ হওয়ার মধ্যে অন্য কাউকে শরীক করা। (অন্য ভাষায় আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকেও ইলাহ বা উপাস্য বলে বিশ্বাস করা।)
৩. الشرك فى العادة অর্থাৎ ইবাদতে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করা।
৪. الشرك فى الصفاتঅর্থাৎ আল্লাহর কোন বিশেষ গুণকে বান্দার জন্য সাব্যস্ত করা।
শির্কের কুফল
শির্ক গুরুতর অপরাধ। তাওবা বা আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে ঈমান গ্রহণ করা ছাড়া এ গুনাহ মাফ হয় না। ক্বোরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে-
اِنَّ اللّٰہَ لاَیَغْفِرُ اَنْ یُشْرَکَ بِہٖ وَیَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِکَ لِمَنْ یَّشَآءُ
তরজমাঃ নিশ্চয় আল্লাহ এটা মাফ করেন না যে, তাঁর কোন শরীক দাঁড় করানো হবে এবং এর নিম্ন পর্যায়ের যা কিছু আছে তা যাকে চান ক্ষমা করে দেন।[সূরা নিসা, আয়াত-১১৬, তরজমা, কান্যুল ঈমান]
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন-
وَمَنْ یُّشْرِکْ بِاللّٰہِ فَکَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَآءِ فَتَخْطَفُہُ الطَّیْرُ اَوْ تَہْوِیْ بِہِ الرِّیْحُ فِیْ مَکَانٍ سَحِیْقٍ 161
অর্থাৎ- যে কেউ আল্লাহর শরীক করে সে যেনো পতিত হলো আসমান থেকে, অতঃপর পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যায়, অথবা বায়ু তাকে অন্যত্র নিক্ষেপ করে। [সূরা হজ্জ, আয়াত-৩১, তরজমা-কান্যুল ঈমান]
হাদীস শরীফেও শির্কের কুফল ও জঘন্য শাস্তি সম্পর্কে বহু বর্ণনা এসেছে।
‘শির্ক’ ও ‘কুফর’ সম্পর্কে আরো কিছু আলোচনা
‘শির্ক হচ্ছে ‘তাওহীদ’-এর বিপরীত আর ‘কুফর’ হচ্ছে ‘ঈমান’-এর বিপরীত। প্রত্যেক কিছুর সঠিক পরিচয় সেটার বিপরীত বস্তুটি দ্বারা সহজে পাওয়া যায়। আরবীতে একটি প্রসিদ্ধ প্রবাদ আছে-اَلْاَ شْیَآءُ تُعْرَفُ بِاَضْدَادِہَا
অর্থাৎ ‘জিনিষগুলো আপন আপন বিপরীত বস্তু দ্বারা চেনা যায়।’ যেমন- ‘মনের শান্তি’ ওই ব্যক্তিই অনুধাবন করতে পারে, যে কখনো মানসিক অশান্তি ভোগ করেছে। যে কখনো মানসিক অশান্তি ভোগ করে নি, সে মনের শান্তির তৃপ্তি বুঝতে পারবে না। দিনের আন্দাজ রাত ব্যতীত করা যায় না। অন্ধকার ব্যতীত আলোর আন্দাজ করা যায় না। অনুরূপ, মিথ্যা ও বাতিল সম্পর্কে যার ধারণা নেই সে কখনো ‘হক্ব’ বা সত্যের মাধুর্য ও মহিমা অনুধাবন করতে পারবে না।
সুতরাং যে ব্যক্তি ‘তাওহীদ’-এর সঠিক রূপরেখা সম্পর্কে সম্যক অবগত হবে, সে ‘শির্ক’ সম্পর্কেও সহজে জানতে পারবে। আর যে ‘ঈমান’ সম্পর্কে যথাযথভাবে জানতে পারবে সে কুফর সম্পর্কেও সহজে জানতে পারবে।
[‘মাক্বালা-ত-ই কাযেমী’: পৃঃ ৩হ ক্র ১৮, কৃত সাইয়্যেদ আহমদ সা’ঈদ কাযেমী, গায্যালী-ই যমান, আল্লামা, পাকিস্তান, মাক্তাবাহ্-ই যিয়া-ইয়্যাহ্ কর্তৃক ডিসেম্বর ২০০১ সালে রাওয়ালপিণ্ডিতে মুদ্রিত।]
সুতরাং এখন একই নিয়মে ‘শির্ক’ ও ‘কুফর’-এর সংজ্ঞা ও প্রাসাঙ্গিক আলোচনা করা যাক।
[গাউসিয়া তরবিয়াতী নেসাব, পৃ.১৮-২০]