শির্‌ক ও কুফর

শির্‌ক ও কুফর

= শির্‌ক ও পৌত্তলিকতা =

‘শির্‌ক’-এর আভিধানিক অর্থ অংশীদার বানানো। ইসলামের পরিভাষায়-اَلشِّرْکُ اَنْ یُّثْبِتَ لِغَیْرِ اللّٰہِ سُبْحَانَہٗ وَتَعَالٰی شَیْءًا مِّنْ صِفَاتِہِ الْمُخْتَصَّۃِ بِہٖ

অর্থাৎ-আল্লাহ্‌র বিশেষ গুণাবলী হতে কোন একটিকে ‘গায়রুল্লাহ’র (আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো) জন্য সাব্যস্ত করাকে শির্‌ক বলা হয়।

অন্যভাষায়, শিরক হল- আল্লাহ্‌র সত্তা, গুণাবলী এবং ইবাদতে কাউকে শরীক করা। তাওহীদ ও শির্ক-একটি অপরটির সম্পূর্ণ বিপরীত। তাওহীদ ও শির্‌কের লড়াই বহু প্রাচীনকাল হতে চলে আসছে। হযরত নূহ আলায়হিস্‌ সালাম-এর যামানায় বোত-প্রতিমার পূজা চলতো.

এ সম্পর্কে ক্বোরআন মজীদে বর্ণনা এসেছে-وَقَالُوْا لاَ تَذَرُنَّ اٰلِہَتَکُمْ وَ لاَ تَذَرُنَّ وَدًّا وَّ لاَ سُوَاعًا ۵لا وَّلاَ یَغُوْثَ وَیَعُوْقَ وَنَسْرًا161

তরজমাঃ এবং তারা বলেছে, ‘তোমরা কখনো বর্জন করো না তোমাদের উপাস্যগুলোকে এবং কখনো বর্জন করো না ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূস, ইয়া’ঊক্ব ও নাস্‌রকে।’    [সূরা নূহ, আয়াত-২৩, তরজমা- কান্‌যুল ঈমান]

প্রত্যেক নবী-রাসূল নিজ নিজ যামানায় তাঁদের উম্মতদের শির্‌ক হতে বিরত রাখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। তাওহীদের দাওয়াত এবং শিরকের বিরুদ্ধে দ্ব্যর্থহীন ঘোষণায় হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম-এর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

এ প্রসঙ্গে ক্বোরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে-

قَالَ اَفَتَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰہِ مَا لاَ یَنْفَعُکُمْ شَیْءًَا وَّ لاَ یَضُرُّکُمْ 161 اُفٍّ لَّکُمْ وَلِمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰہِ ط اَفَلاَ تَعْقِلُوْنَ 161

তরজমাঃ বললো, ‘তবে কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত এমন সবের পূজা করছো, যেগুলো না তোমাদের উপকার করতে পারে এবং  না ক্ষতি করতে পারে? ধিক্কার তোমাদের প্রতি এবং ওই মূর্তিগুলোর প্রতি, যেগুলোকে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত পূজা করছো! তবে কি তোমাদের বিবেক নেই?  [সূরা আম্বিয়া, আয়াত-৬৬, তরজমা- কান্‌যুল ঈমান]

ঐতিহাসিকদের মতে, মক্কায় মূর্তিপূজার প্রবর্তন ও প্রচলন করেছিলো আমর ইবনে মঁহাই নামক এক ব্যক্তি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র যামানার প্রথম দিকে যে সব শির্‌ক প্রচলিত ছিলো, সেগুলোর মূলোৎপাটনের জন্য তিনি সর্বদা তৎপর ছিলেন।

ক্বোরআন মজীদে লাত, মানাত, ওয্‌যা ইত্যাদি বোত-প্রতিমার নিন্দা করা হয়েছে এবং যারা এ সবের পূজায় লিপ্ত ছিলো, তাদেরকে অজ্ঞ, মূর্খ, অর্বাচীন এবং প্রবৃত্তি-পূজারী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। লাত, মানাত, ওয্‌যার আলোচনার পর এ আয়াতে এরশাদ হয়েছে-

اِنْ ہِیَ اِلاّآ اَسْمَاءٌ سَمَّیْتُمُوْہَآ اَنْتُمْ وَاٰبَآءُکُمْ مَآ اَنْزَلَ اللّٰہُ بِہَا مِنْ سُلْطَانٍط اِنْ یَّتَّبِعُوْنَ اِلاَّ الظَّنَّ وَمَاتَہْوَی الْاَنَفُسُج وَ لَقَدْ جَآءَہُمْ مِنْ رَّبِّہِمُ الْہُدٰی 161ط

তরজমাঃ সেগুলোতো নয়, কিন্তু কিছু নাম, যেগুলো তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষগণ রেখে ফেলেছো। আল্লাহ সেগুলোর পক্ষে কোন সনদ অবতীর্ণ করেন নি। তারাতো নিছক কল্পনা ও প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করছে। অথচ নিশ্চয় তাদের নিকট, তাদের রবের নিকট থেকে হিদায়ত এসেছে। [সূরা নাজ্‌ম, আয়াত-২৩, তরজমা-কান্‌যুল ঈমান]

অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে-

سَیَقُوْلُ الَّذِیْنَ اَشْرَکُوْا لَوْ شَاآءَ اللّٰہُ مَآ اَشْرَکْنَا وَلاآ اٰبَاءُنَا وَلاَ حَرَّمْنَا مِنْ شَیْءٍ ط کَذٰلِکَ کَذَّبَ الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِہِمْ حَتّٰی ذَاقُوْا بَأْسَنَاطقُلْ ہَلْ عِنْدَکُمْ مِّنْ عِلْمٍ فَتُخْرِجُوْہُ لَنَا اِنْ تَتَّبِعُوْنَ اِلاَّ الظَّنَّ وَ اِنْ اَنْتُمْ اِلاَّ تَخْرُصُوْنَ 161

তরজমাঃ এখন মুশরিকগণ বলবে, ‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে না আমরা শির্ক করতাম, না আমাদের পিতৃপুরুষগণ, না আমরা কোন কিছু হারাম সাব্যস্ত করতাম। এরূপেই তাদের পূর্ববর্তীগণ মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলো। শেষ পর্যন্ত আমার শাস্তি ভোগ করেছে। আপনি বলুন, তোমাদের নিকট কি কোন জ্ঞান আছে যে, তা আমার নিকট পেশ করতে পারো? তোমরাতো নিছক কল্পনারই অনুসরণ করছো এবং তোমরা এভাবেই অনুমান করছো।[সূরা আন’আম, আয়াত-১৪৮, তরজমা- কান্‌যুল ঈমান]

অগ্নিপূজক সম্প্রদায় দু’ মা’বূদে বিশ্বাসী। তারা কল্যাণের মা’বূদ হিসেবে ‘ইয়াযদান’ ও অকল্যাণের মা’বূদ হিসেবে ‘আহ্‌রামান’-এ দু’ দেবতায় বিশ্বাসী। (না‘ঊযুবিল্লাহ্‌)

অনুরূপ, হিন্দু সম্প্রদায় প্রধানতঃ তিন দেবতায় বিশ্বাসী ১. ব্রাহ্ম (সৃষ্টিকর্তা) ২.বিষ্ণু (রক্ষাকর্তা) এবং ৩. শিব (ধ্বংসকারী)।

উপরোক্ত আক্বীদা ও ধর্মবিশ্বাস- সবই জঘন্য শিরকের অন্তর্ভুক্ত। এর পরিণাম চিরস্থায়ী জাহান্নাম।

[গাউসিয়া তরবিয়াতী নেসাব, পৃ.১৬-১৮]