![আতশবাজি ও নাচ-গান](https://www.anjumantrust.org/wp-content/uploads/2022/05/Tarviat_e_Nesab.jpg)
আতশবাজি ও নাচ-গান
আতশবাজি ও নাচ-গান
আমরা সবাই জানি, বিবাহ্-শাদী সুন্নাত। সুতরাং সুন্নাতসম্মত উপায়ে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করলে তা ইবাদতের সামিল। আরো মনে রাখতে হবে যে, বংশীয় ধারার পবিত্রতা, নেক্কার-পরহেযগার ও বাধ্য-অনুগত সুসন্তান লাভ করাও অনেকটা নির্ভর করে ইসলামসম্মত বিশুদ্ধ বিবাহ্-বন্ধন প্রতিষ্ঠার উপর। এ জন্য স্ত্রী সহবাসেরও সুন্নাতসম্মত নিয়ম রয়েছে ইসলামে। অন্যথায় বিশেষ মুহূর্তে শয়তান হস্তক্ষেপ করে সন্তানের চরিত্রকে প্রভাবিত করার আশংকা থাকে।
আল্লাহ্ পাকের অশেষ কুদরত ও বদান্যতায় এর ব্যতিক্রমও হয়ে থাকে। এটা অবশ্য স্বতন্ত্র ব্যাপার। আমাদেরকে স্বাভাবিক ও সাধারণ নিয়মে আল্লাহ্ ও তাঁর বিধানাবলী অনুসরণ করতে হবে।
এখন দেখা যাচ্ছে যে, বিধর্মীদের যৌতুক প্রথার মতো আমাদের মুসলিম সমাজে বিবাহ্ অনুষ্ঠানেও নানা অ-ইসলামী প্রথার অনুপ্রবেশ ঘটছে। সাদা-মাঠাভাবে আক্বদ অনুষ্ঠান কোন মসজিদ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সম্পন্ন হয়, আর বাকী সব ক’টি অনুষ্ঠান হয় সম্পূর্ণ অনৈসলামিক পন্থায়।
একেত পুরুষের জন্য মেহেদীর ব্যবহার বিতর্কিত বিষয়; তদুপরি, এ অনুষ্ঠানের নামে চলে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, নাচ-গান, আতশ-বাজি ও পটকা পোড়ানো ইত্যাদি। অবস্থাদৃষ্টে বুঝা যায় এ ধরনের বিয়ে অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কত অর্থের অপচয় হয়, কত প্রকারের গুনাহ্ সম্পন্ন হয়।
বিয়ের আগে যেখানে দাম্পত্য জীবনের ইসলামসম্মত অগণিত নিয়মাবলী শিক্ষা ও দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তির জন্য আল্লাহর দয়া কামনার জন্য সুন্নী ওলামা-মাশাইখের ওয়াজ ও দো‘আ মাহফিলের আয়োজন করা শ্রেয়, সেখানে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে মুসলিম পরিবারগুলো আয়োজন করছে- নাচ-গান, প্যাকেজ শো ও রঙ্গ-তামাশার অনুষ্ঠান। অথচ এ ধরনের অনুষ্ঠান করে থাকে অমুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা। তাদেরই অন্ধ অনুসরণে দেয়া হচ্ছে বিয়ে-শাদীর খুশী প্রকাশের ভুল ব্যাখ্যা।
বিশেষত লক্ষণীয় যে, মেহেদী অনুষ্ঠানের প্যাকেজ শোগুলো তৈরী এবং মোটা অঙ্কের বিনিময়ে সরবরাহ্ ও ব্যবস্থা করে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে কাফির-মুশরিকরা। যাদের নেই পরকালে বিশ্বাস। দুনিয়ার আরাম-আয়েশ, আনন্দ-আহলাদই যাদের তথাকথিত ধর্ম। কুফরী ও শিরকি বাক্যাবলী সম্বলিত গান, সঙ্গীত এবং অর্দ্ধ উলঙ্গ বা আটসাঁট পোশাক পরিহিত, গায়িকা ও নর্তকীদের সমন্বয়ে তৈরীকৃত প্যাকেজগুলো প্রকাশ্যে নিলর্জ্জভাবে পরিবেশিত হচ্ছে। সারারাত নারী-পুরুষের অবাধ উপভোগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এ সব অনুষ্ঠানে।
সঙ্গীত-যন্ত্রপাতির বিকট শব্দ, গায়ক-গায়িকা ও নর্তক-নর্তকীদের কুরুচিপূর্ণ ধ্বনি ও সুরে এলাকার পরিবেশ হয় দূষিত, শব্দ দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ছাত্র-ছাত্রী ও হৃদরোগসহ অনেক রোগী। বিয়ের পূর্বরাতে সন্তানের বিয়ের এমন প্যাকেজ অনুষ্ঠানের অসহনীয় অবস্থা সহ্য করতে না পেরে অনেক হৃদরোগী মাতা-পিতার মৃত্যুর খবরও শোনা গেছে। ফলে আনন্দঘন বিয়েবাড়িতে নেমে আসে শোক-মাতম।
বলাবাহুল্য, সাধারণ খ্রিস্টানদের সমাজে এহেন অনুষ্ঠানের প্রচলন হয়। অথচ তারা এসব অনুষ্ঠান করে কোন শব্দ নিয়ন্ত্রিত হলে। আর আমাদের মুসলমান নামধারী লোকেরা এসব অনুষ্ঠান করে বাড়ীর খোলা অঙ্গনে, দালানের ছাদে কিংবা বস্তির কোন খোলা জায়গায়।
সুতরাং এসব পাপ কাজের কুপ্রভাব নব-দম্পতির জীবনের উপর এবং আয়োজনকারীদের স্বাভাবিক জীবনের উপর যে অবশ্যই পড়বে- তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। সুতরাং সময় থাকতে মুসলিম সমাজকে সাবধান হতে হবে। নিজেদের ধর্মীয়, সামাজিক অনুষ্ঠানাদি, সামাজিক পরিবেশকে অনৈসলামিক ও ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে চাই সবার ব্যক্তিগত সচেতনতা ও সম্মিলিত উদ্যোগ।
বিবাহ্ শাদী উপলক্ষে ওয়াজ-মাহফিল বাদ্যযন্ত্রহীন গজল-মুশা‘আরাহ্ এবং না’তখানি ইত্যাদি ইসলামী অনুষ্ঠানাদি আয়োজন করা যেতে পারে। এতেই সকলের মঙ্গল। আল্লাহ্ পাক তাওফীক্ব দিন। আ-মী-ন।
[সূত্র. গাউসিয়া তারবিয়াতী নেসবা, পৃ. ৪২৩-৪২৫]
বিয়ে-শাদী, শবে-বরাত ও পবিত্র ঈদ প্রভৃতি উপলক্ষে অনেক জায়গায় এক শ্রেণীর অসাধু লোকেরা আত্শবাজি, ফটকাবাজি ইত্যাকার মাধ্যমে ধর্মীয় দিবসের পবিত্রতা ক্ষুণ্ন করার পাশাপশি আনন্দ উল্লাসের নামে বিপুল পরিমাণে অর্থ অপচয় করে। আ’লা হযরত এ সব অনর্থক ক্রিয়াকাণ্ড প্রতিরোধে এগিয়ে আসার জন্য মুসলিম জনসাধারণকে আহবান করেন। এ বিষয়ে তিনি পুস্তকও রচনা করে যান। যার শিরোনাম এ যে, ‘‘হাদীয়ূন্নাছ ফী রুছুমীল আরাছ’’।
বস্তুত আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা মুসলিম সমাজের প্রতিটি অঙ্গনে মুসলমানদেরকে অপব্যয় করা থেকে বাধা দিয়েছেন। যে অপব্যয়ের দরুন তাদের অর্থনৈতিক জীবন পর্যুদস্ত হতে বাধ্য। তিনি কুসংস্কারকে দ্বীন ও সমাজ জীবনে এক মহাব্যাধি বলে মনে করতেন। যে কারণে মানুষ সত্য ও ন্যায় গ্রহণ করার আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। তিনি এক স্থানে লিখেছেন যে, ‘‘আত্মা যতোক্ষণ পরিষ্কার থাকবে, সত্যের দিকে আহবান করবে, আর গুনাহ্ এবং বিশেষ করে সমাজ দেহে কুসংস্কারের আধিক্যের দরুন (আত্মাকে) অন্ধ করে দেয়া হয়। তখন তা দ্বারা হক বা ন্যায় দেখার, বুঝার বা এ নিয়ে চিন্তা করার যোগ্যতা থাকে না। তখন কিন্তু ন্যায়ের বাণী শ্রবণ করার যোগ্যতাটুকুই অবশিষ্ট থাকে।’’ [মুহাম্মদ মোস্তফা রেযাঃ ‘মালফুজাত-ই-আ’লা হযরত’ (৩য় খণ্ড) পৃষ্ঠা-৫৪]
মাওলানা আ’লা হযরত রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি প্রত্যেক কালেমাধারী ব্যক্তিকে মুসলমান বলে জানতেন। সে সাথে তার মাঝে ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিফলন হওয়াকে তিনি পছন্দ করতেন। যে পর্যন্ত তার কথা ও কর্ম শরীয়ত তথা ধর্মের বিরুদ্ধে না হতো, সে পর্যন্ত তিনি তাকে ছেড়ে দিতেন অর্থাৎ মুসলমান বলে জানতেন।
তিনি প্রত্যেক ঐ ব্যক্তিকে যে ধর্মে নতুন নতুন কথা (যা শরীয়ত বিরোধী) প্রবেশ করাতো ‘বিদ্আতী’ বলে সাব্যস্থ করতেন। আর ঐ ব্যক্তির কঠোর সমালোচনায় অবতীর্ণ হতেন যিনি সংস্কারের নামে ভ্রান্ত নতুন পথ ও মত ধর্মে আবিষ্কার করতেন। আ’লা হযরত রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি সামাজিক মূল্যবোধের বিপরীতে যাবতীয় রসম- রেওয়াজ (যা সমাজে প্রচলিত দেখা যায়) এর উপর বিরূপ সমালোচনা করতে কখনো কুণ্ঠিত হননি।
এভাবে আ‘লা হযরত রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হিকে আমরা ইলমে আক্বাইদ, ইলমে ফিক্বাহ্ ইলমে ইসলাহ্ প্রভৃতিতে একজন সফল মুজাদ্দিদের ভূমিকায় দেখতে পাই। ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর সংস্কার আমরা প্রত্যক্ষ করি। এভাবে তাঁর ব্যক্তিত্বের মধ্যে একাধারে বহুবিধ গুণের সমাবেশ ঘটেছে। আর প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতার উচ্চ শিখরে উপনীত হতে সক্ষম হন। আজ পর্যন্ত তাঁর কলমের উপর কেউ কলম ধরতে সাহস পায়নি। আসুন সব রকমের ভ্রান্তির জাল ছিন্ন করে উদার মনোভাব নিয়ে এ মহান মনীষীর জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করি এবং তাঁর শিক্ষা ও আদর্শকে শরীয়তের কষ্টি পাথরে পরীক্ষা করে তাঁর মতাদর্শের অনুসরণ ও অনুকরণ করি। আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দিন। আমীন।