রোযার মাকরূহসমূহ
রোযার মাকরূহসমূহ
১. গীবত, চুগলী, গালি-গালাজ, বেহুদা কথা-বার্তা বলা, কারো অন্তরে কষ্ট দেওয়া, আল্লাহর বান্দাগণের উপর যুল্ম করা, অশ্লীল কথাবার্তা, বেহায়াপনা ও ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বলা হারাম ও গুনাহ্। রোযা অবস্থায় এ সমস্ত নিষিদ্ধ কাজ করা আরো জঘন্য। সুতরাং এ সবের কারণে রোযা মাকরূহ হয়ে যায়। তবে ক্বাযা ও কাফ্ফারা ওয়াজিব হয় না, কিন্তু রোযাদার অবশ্যই গুনাহ্গার হবে এবং রোযার সাওয়াব অনেক কমে যাবে।[বাহারে শরীয়ত: ৫ম খণ্ড ইত্যাদি]
২. বিনা প্রয়োজনে রোযাদার কোন খাদ্য জাতীয় বস্তুর স্বাদ গ্রহণ করা বা কোন শক্ত খাদ্য দ্রব্য যেমন রুটি ইত্যাদি চিবানো মাকরূহ। অবশ্য স্বামী বা মুনিব যদি বদ মেজাজী হয় কিংবা শিশু যদি এত ছোট হয় যে, তাকে দেয়ার মত অন্য কোন গরম খাদ্য না থাকে, এমতাবস্থায় তাকে রুটি চিবিয়ে নরম করে দেওয়া মাকরূহ নয়। অবশ্য স্বাদ গ্রহণের সময় এবং চিবিয়ে নরম করার সময় সতর্ককতা অবলম্বন করতে হবে যেন ংথগ্ধছভ কণ্ঠনালীর ভিতরে কিছু প্রবেশ না করে, বরং সামান্য মুখে রেখে স্বাদ অনুভব করে বা রুটি চিবানোর সাথে সাথে থুথু ফেলে দেবে এবং চিবানো রুটি বের করে ফেলবে। অসতর্কাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা অত্যন্ত বেশী। [দুররে মোখতার ইত্যাদি]
৩. রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুমু দেওয়া, জড়িয়ে ধরা ও শরীর স্পর্শ করা মাকরূহ. যদি বীর্যপাত হওয়ার বা সহবাসে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা হয়, স্ত্রীর মুখ বা ঠোঁটে চুমু দেওয়া রোযাদারের জন্য যে কোন অবস্থায় মাকরূহ। [কানূনে শরীয়ত ইত্যাদি]
৪. অধিক রূপচর্চার জন্য সুরমার ব্যবহার এবং দাড়ি এক মুল্ডি পরিমাণ থাকা সত্ত্বেও আরো লম্বা করার জন্য দাঁড়িতে তৈল ব্যবহার ঔভৎ রোযাদারের জন্য মাকরূহ। [দুররুল মোখতার, ইত্যাদি]
৫. রোযাদারের জন্য গোসল ও ওযূতে কুল্লি করার সময় ও নাকে পানি দেওয়ার সময় অতিরিক্ত করা মাকরূহ। যেহেতু এমতাবস্থায় ভিতরে পানি প্রবেশের ভয় থাকে। [আলমগীরী ইত্যাদি]
৬. থুথু মুখে জমিয়ে গিলে ফেলা, রোযাদারের জন্য মাকরূহ।
৭. পায়খানা ও প্রস্রাবের পর ইস্তিন্জা বা পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করার সময় অতিরিক্ত করা রোযাদারের জন্য মাকরূহ। যেহেতু এমতাবস্থায় অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করলে সামনে-পেছনের রাস্তা দিয়ে ভিতরে পানি প্রবেশের আশঙ্কা থাকে। তবে রোযা ছাড়া অন্য অবস্থায় অপচয় না হলে মাকরূহ নয়।
৮. পুকুরে গোসল করার সময় পানির ভিতর বায়ু ছাড়া রোযাদারের জন্য মাকরূহ। যেহেতু এতেও পানি প্রবেশের অৎয্দৎ থাকে।
৯. সাহরীর জন্য দেরী করা রোযাদারের জন্য মুস্তাহাব, তবে তত বেশী দেরী করা মাকরূহ, যার কারণে সুবহে সাদেক্ব হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়।
উল্লেখিত ও বর্ণিত বিষয়সমূহ দ্বারা রোযা মাকরূহ হয়ে যায়। তবে ক্বাযা ও কাফ্ফারা ওয়াজিব হয় না, রোযার নেকী ও সাওয়াব কমে যাবে।
[ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, রদ্দুল মোহ্তার ও বাহারে শরীয়ত ইত্যাদি।]
রোযা অবস্থায় জায়েজ কাজগুলি
রোযা অবস্থায় মিস্ওয়াক করা, দাড়ি, গোঁফ ও চুলে তৈল দেওয়া, গোলাপ, মুশ্ক ও আতরের ঘ্রাণ লওয়া, আতর ও সুরমার ব্যবহার, ওযূ গোসলের সময় স্বাভাবিকভাবে কুল্লি করা ও নাকে পানি দেওয়া, ওযূ- গোসল ছাড়াও ঠাণ্ডার জন্য নাকে, মুখে ও শরীরে পানি ঢালা জায়েয; বরং মিস্ওয়াক করা, আতর ও সুরমার ব্যবহার যেভাবে রোযা ছাড়াও সুন্নাত, তদ্রূপ রোযা অবস্থায়ও সুন্নাত। ফরয গোসলে যেমনিভাবে কুল্লি করা ও নাকে পানি দেওয়া রোযা ছাড়া ফরয, তেমনিভাবে রোযা অবস্থায়ও ফরয, তবে রোযা অবস্থায় কুল্লি ও নাকে পানি দেওয়ার সময় অতিরিক্ত করবে না এবং রোযা অবস্থায় গরগরাও করবে না। যেহেতু এতে কণ্ঠনালীর ভেতরে পানি প্রবেশ করার আশঙ্কা থাকে। [বাহারে শরীয়ত ইত্যাদি]