যে সব কারণে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং ক্বাযা ও কাফ্‌ফারা উভয়টা ওয়াজিব হয়

যে সব কারণে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং ক্বাযা ও কাফ্‌ফারা উভয়টা ওয়াজিব হয়

যে সব কারণে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং ক্বাযা ও কাফ্‌ফারা উভয়টা ওয়াজিব হয় 

১. রমযান মাসের ফরয রোযা নিয়্যত করে রাখার পর বিনা প্রয়োজনে ইচ্ছা করে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস করলে।

 [তবে রমযান ব্যতীত অন্য মাসে মান্নতের রোযা বা নফল রোযা অথবা রমযানের ক্বাযা রোযা রাখা আরম্ভ করার পর ইচ্ছা করে ভঙ্গ করলে একটার পরিবর্তে শুধু একটা পরে ক্বাযা করবে, কাফ্‌ফারা ওয়াজিব হবে না। তদ্রূপ কোন মুসাফির বা রোগী অথবা নাবালেগ কিংবা মজনূন (পাগল) রমযানের রোযা আরম্ভ করার পর এবং রোগী সুস্থ হওয়ার পর রমযানের একটি রোযার পরিবর্তে শুধু একটি রোযা ক্বাযা করবে, আর নাবালেগ রমযানের রোযা ভঙ্গ করলে ক্বাযাও ওয়াজিব হবে না। যেহেতু সে শরীয়তের হুকুম-আহকামের আওতার বাইরে।]

২. রমযানের রোযা নিয়্যত করে রাখার পর রোযা অবস্থায় ইচ্ছা করে সামনে বা পিছনের রাস্তায় সঙ্গম করলে বা করালে।

৩. সিংঙ্গা দেওয়ার দরুণ কিংবা সুরমা দেওয়ার দরূঢ অথবা চতুস্পদ জন্তুর সাথে যৌন সঙ্গম করার দরূণ বা স্ত্রী কিংবা অন্য রমনীকে স্পর্শ অথবা চুমু দেওয়ার দরূণ রোযা ভঙ্গ হয়েছে ধারণা করে ইচ্ছাকৃত রোযা অবস্থায় পানাহার করলে।

উপরোক্ত কারণে রমযানের একটি রোযার বদলে অন্য সময়ে একটি ক্বাযা রোযা ও কাফ্‌ফারা ওয়াজিব হবে।  [জওহারাহ্‌ ও বাহারে শরীয়ত ৫ম খন্ড]

কাফ্‌ফারার বিবরণ

ক. একজন গোলাম বা বাঁদী আযাদ করা।

খ. ণৎ সম্ভবপর না হলে লাগাতার (মাঝখানে ভঙ্গ করা ছাড়া) রমযানের একটি রোযার বদলে অন্য সময়ে ষাটটি (৬০) রোযা রাখা।

গ. তাও সম্ভবপর না হলে ৬০ (ষাট) জন মিসকীন ও অভাবীকে পেট ভরে খানা দেওয়া বা সমপরিমাণ খানার মূল্য পরিশোধ করা।

কাফ্‌ফারার ষাট রোযা যেন একাধারে হয়, কোন কারণে মাঝখানে বাদ দিলে পুণরায় ষাট রোযা নূতন করে একাধারে আদায় করতে হবে। অবশ্য কোন মহিলার কাফ্‌ফারার একাধারে ষাট রোযা আদায় করাবস্থায় যদি মাসিক হায়েয্‌ বা ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যায়, তবে হায়য থেকে পবিত্র হওয়ার পর কাফ্‌ফারার বাকী রোযা আদায় করবে।                     [রদ্দুল মুহতার, বাহারে শরীয়ত ইত্যাদি]

যে সব কারণে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং শুধু ক্বাযা ওয়াজিব হয়

নিম্নলিখিত কারণসমূহে যদি কোন রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়, তবে শুধু ক্বাযা অর্থাৎ (একটি রোযার পরিবর্তে একটি রোযা আদায় করা) ওয়াজিব হয়ঃ

১. কোন রোযাদার রোযা অবস্থায় ইচ্ছা করে কোন অখাদ্য বস্তু যেমন মাটি, ঘাস, তুলা, কাগজ, কাঠ ও পাথর ইত্যাদি ভক্ষণ করলে।

২. কুল্লি করার সময় হঠাৎ পানি পেটের ভিতরে প্রবেশ করলে।

৩. জবরদস্তি বা জানের ভয়ে অথবা অঙ্গহানির হুকমি দেওয়ায় বাধ্য হয়ে পানাহার করলে।

৪. বাধ্য হয়ে স্ত্রী সহবাস বা যৌন সঙ্গম করলে।

৫. নিদ্রাবস্থায় রোযাদারকে কেউ কোন খাদ্যবস্তু আহার করালে। (তবে শর্ত হল যে জাগ্রত হওয়ার পর রোযাদার এ ব্যাপারে ওয়াকিফহাল বা অবহিত হতে হবে।)

৬. বৃষ্টির পানি অথবা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঘাম বা অশ্রু মুখে পড়ার পর তা গিলে ফেললে।

৭. কানে তরল পদার্থ অথবা তৈল প্রবেশ করালে।

৮.পেট ও মাথার ক্ষতস্থানে তরল ঔষধ লাগানোর ফলে তা পেটে বা মস্তিস্কে পৌঁছলে।

৯.অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি আসলে অথবা তা পুনভৎহ গিলে ফেললে।

১০. রাত মনে করে ভোরে অথবা সুবহে সাদেঔোর সময় সাহরী (পানাহার) অথবা স্ত্রী সহবাস করলে, পরে জানতে পারল যে সাহরী কিংবা স্ত্রী সহবাসের সময় সুবহে সাদিক্ব ছিলো।

১১.সন্ধ্যা মনে করে সূর্য অস্তমিত না শতেই ইফতার করলে।

১২.ভুলক্রমে আহার করায় রোযা নষ্ট হয়েছে মনে করে পুনরায় আহার করলে।

১৩. নিদ্রাবস্থায় সঙ্গম করলে।

১৪.   বেহুশ অবস্থায় কেহ রোযাদারের সাথে সঙ্গম করলে।

১৫. নিয়্যত ও সাহরী ছাড়া রমযান মাসে দিনের বেলায় সুবহে সাদিক্ব হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস না করলেও পরবর্তীতে এক দিনের একটি রোযা ক্বাযা করতে হবে।

১৬. রোযাদার দাঁত হতে জিহ্বা বা হাত দ্বারা চনা পরিমাণ কোন বস্তু বের করে খেয়ে ফেললে, অনুরূপ দাঁত হতে রক্ত বাহির হয়ে যদি গলার ভিতরে চলে যায় এবং রক্তের স্বাদ ভিতরে অনুভূত হয়। অনুভূত না হলে ক্বাযা ওয়াজিব হবে না।

১৭.   অল্প বমি মুখে আসার পর তা ইচ্ছা করে গিলে ফেললে।

১৮. যৌন উত্তেজনার সাথে স্ত্রী বা কোন রমনীকে চুমা দেওয়ার পর অথবা শরীর স্পর্শ করার পর বীর্যপাত হলে।

১৯. নাকে তরল ঔষধ প্রবেশ করালে ও ইচ্ছা করে নশ টানলে।

২০. রমযান মাসে সকালে রোযার নিয়্যত না করে দ্বি-প্রহরের পর রোযার নিয়্যত করে পানাহার করলে।

২১.   ছোট নাবালেগা মেয়ের সাথে (যে সঙ্গমের উপযোগী নয়) বা মৃত লাশ ও পশুর সাথে সঙ্গম করলে, যদি বীর্যপাত হয়।

২২. হস্ত মৈথুন করে অথবা স্ত্রীর রান বা পেটে হাত দিয়ে স্বেচ্ছায় বীর্য বের করলে  অবশ্য হস্ত মৈথুনের ফলে বীর্য বের না হলে ক্বাযা ওয়াজিব হবে না।[দুর্‌রুল মুখতার ইত্যাদি]

২৩.  সুস্থাবস্থায় নিয়্যত সহকারে রোযা শুরু করার পর পাগল হয়ে গেলে, পরবর্তীতে  জ্ঞান ফিরে আসলে উক্ত দিনের রোযার ক্বাযা করবে।

২৪. নিয়্যত সহকারে রোযা শুরু করার পর রোযাবস্থায় মহিলাদের মাসিক ঋতু (হায়েয) ও প্রসবকালীন রক্ত (নিফাস্‌) জারী হলে।

২৫. রমযান মাসে সুবহে সাদিক্বের পূর্বে স্ত্রী সহবাসে নিয়োজিত হলো, সুবহে সাদিক্ব হওয়ার সাথে সাথে পৃথক হয়ে রমযানের রোযা শুরু করে দিলে, উক্ত দিনের রোযার ক্বাযা করা ভাল। কাফ্‌ফারা নয়।

২৬. রোযাবস্থায় ভুলবশতঃ স্ত্রী সঙ্গমে নিয়োজিত হলে, স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে পৃথক হয়ে গেল, তাহলে ক্ষতি নেই, কিন্তু স্মরণ হওয়ার পরও যদি সহবাস অবস্থায় থেকে যায়, তাহলে উক্ত দিনের ক্বাযা ওয়াজিব শগ্ধন; কাফ্‌ফারা নয়।

২৭. হুক্কা, তামাক, সিগারেট পান করার দভঞ্ছণ রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং ক্বাযা অপরিহার্য হয়।                  [আলমগীরী, রদ্দুল মুহতার ও বাহরে শরীয়ত ইত্যাদি]

মাসআলাঃ মুসাফির সফর থেকে রমযান মাসের দিনের বেলায় স্বদেশে ফিরে আসলে, মহিলারা হায়য-নেফাস থেকে রমযানের দিনের বেলায় পবিত্র হলে, মজনূনের (পাগল) জ্ঞান ফিরে আসলে, রোগী রমযানের দিনের বেলায় রোগ হতে মুক্ত হলে, কেউ বাধ্য করে রোযা ভাঙ্গালে, পানি হঠাৎ করে গলার ভিতরে চলে গেলে ভোর (সুবহে সাদেক্ব) হওয়ার পর রাত আছে মনে করে সাহরী গ্রহণ করলে, ইফতারের সময় না হওয়া সত্ত্বেও সূর্য অস্ত গিয়েছে মনে করে ইফতার করলে, এমতাবস্থায় দিনের বাকী অংশ রোযার মত অতিবাহিত করা ওয়াজিব, পরে ক্বাযাও ওয়াজিব। অবশ্য নাবালেগ অথবা কাফির যদি রমযানের যে কোন দিনে বালেগ অথবা মুসলমান হয় তবে পরবর্তীতে উক্ত দিনের ক্বাযা রোযা তাদের উপর ওয়াজিব নয়। কিন্তু উক্ত দিনের বাকি সময়টুকু রোযাদারের মত অতিবাহিত করা অপরিহার্য।              [দুররুল মোখতার ও কানূনে শরীয়ত]

মাস্‌আলাঃ মৃত ব্যক্তির যিম্মায় যদি রোযার ক্বাযা থাকে এবং তিনি সম্পদও রেখে যান আর রোযার ফিদিয়া আদায় করার জন্য ওলি-ওয়াংরলানকে ওসীয়ত করে যান তবে অবশ্যই যেন তার পক্ষ হতে প্রতি রোযার বিনিময়ে গরীব-মিসকীনকে ফিদিয়া আদায় করা হয়. রোযার ফিদিয়া হল অর্ধ সা বা দুই সের তিন ছটাক আধা তোলা= ২ কেজি ৫০ গ্রাম গম বা আটা অথবা সমপরিমাণ মূল্য প্রতিটি রোযার বিনিময়ে প্রদান করবে। হ্যাঁ, যদি তিনি ওসীয়ৎ নাও করে যান, কিন্তু সম্পদ রেখে যান্‌ তবে ওলী-ওয়ারীশান মৃত ব্যক্তির ক্বাযা নামায ও ক্বাযা রোযার ফিদিয়া আদায় করা খুবই উপকারী ও উত্তম।                                    [বাহারে শরীয়ত: ৫ম খন্ড]

মাস্‌আলাঃ শিশুর বয়স দশ বছর হওয়ার পর যদি রমযান শরীফের রোযা রাখার শক্তিমান হয়, তবে যেন তাকে রোযা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়, না রাখলে যেন বাধ্য করা হয়। অবশ্য দশ/এগার বৎসরের অপ্রাপ্ত বয়সের শিশু রমযান শরীফের রোযা রাখার পর ভঙ্গ করলে ক্বাযা আদায়ের নির্দেশ দেওয়া যাবে না। কিন্তু নামাযের বেলায় পুনরায় পড়ার নির্দেশ প্রদান করবে।            [রদ্দুল মুহ্‌তার ইত্যাদি]