রোযাবস্থায় ইনজেকশন, ইনহেলার, ইনস্যুলিন ও স্যালাইন ব্যবহারের বিধান

রোযাবস্থায় ইনজেকশন, ইনহেলার, ইনস্যুলিন ও স্যালাইন ব্যবহারের বিধান

রোযাবস্থায় ইনজেকশন, ইনহেলার, ইনস্যুলিন ও স্যালাইন ব্যবহারের বিধান 

এ কথা চির সত্য যে, মুখ, কান ও নাক দিয়ে তরল ঔষধ পেটে বা মস্তিস্কে প্রবেশ করালে অথবা পেট ও মাথার ক্ষতস্থানে তরল ঔষধ লাগানোর ফলে তা পেটে বা মস্তিস্কে পৌঁছলে রোযা নষ্ট হয়ে যায়, যা পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং যদি কোন খাদ্য জাতীয় তরল বস্তু বা তরল ঔষধ ইন্‌জেকশন ও স্যালাইনের মাধ্যমে পেটে ও মস্তিস্কে পৌঁছানো হয়, তবে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে, পরে তা ক্বাযা করতে হবে। কিন্তু যে সমস্ত ইন্‌জেকশন হাত-পায়ের রগ বা শরীরের মাংসে পুশ্‌ (ব্যবহার) করে রগে বা মাংসে ঔষধ ঢুকানো হয়, যা অধিকাংশ হাকিম ও পারদর্শী ডাক্তারের অভিমতানুযায়ী সরাসরি পেটে বা মস্তিস্কে পৌঁছে না; বরং তা শরীরের রক্তে মিশে যায়, এ ধরনের ইনজকেশন দ্বারা কোন কোন বিজ্ঞ গবেষক ওলামা-ই কেরামের মতে রোযা নষ্ট হবে না। যেহেতু তরল ঔষধ ব্যবহারে রোযা নষ্ট হবে তখনই, যখন উক্ত ঐষধ পেট বা মস্তিস্কে পৌঁছে যায়। নতুবা রোযা নষ্ট হবে না, যেমন শরীরের যে কোন ক্ষতস্থানে তরল ঔষধ লাগালে রোযা নষ্ট হবে না, যদি তা পেট বা মস্তিস্কে না পৌঁছে, এমনকি অধিকাংশ ওলামা-ই কেরাম বিশেষতঃ ইমাম-ই আ’যম আবূ হানীফা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও ইমাম মুহাম্মদ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র মতে পুরুষের প্রস্রাবের রাস্তায় তরল ওষধ, পানি বা তৈল প্রবেশ করালে রোযা নষ্ট হবে না; যেহেতু পুরুষের দষলৃৎবের রাস্তায় তৈল বা পানি বা তরল ঔষধ দিলে তা অভিজ্ঞ ডাক্তার ও হাকিমগণের মতে পেট বা মস্তিস্কে পৌঁছে না, তবে মহিলার লজ্জাস্থান বা প্রস্রাবের ছিদ্রে তৈল বা পানি বা তরল ঔষধ প্রবেশ করালে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ তখন তা পেটে পৌঁছে যায়।  [জরুরী মাসায়েল, কৃতঃ মুফতী জালাল উদ্দিন আহমদ আমজাদী]

এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য ও স্মর্তব্য যে, রোযা অবস্থায় ইনজেকশান ব্যবহার করলে রোযা নষ্ট হবে কিনা, তার জবাবে বর্তমান বিশ্বের মুফতীগণের ভিন্ন ভিন্ন মত দেখা যায়। মতান্তরে, রোযা অবস্থায় ইনজেকশান ব্যবহার না করাই নিরাপদ। এতে রোযা নষ্ট হবার আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকা যায়। তদুপরি, ইনজেকশান ইফতারের পর রাতের বেলায়ও প্রয়োজনে নেওয়া যায়।

অনুরূপ, যে সমস্ত রোগী ইনহেলার ব্যবহার ব্যতীত রোযা পালন করতে অক্ষম হয়, তারা রমযানের পর সুস্থ হলে ইনহেলার ব্যবহারকৃত দিনগুলোর রোযা ক্বাযা করে দেবেন। আর সুস্থ না হলে রমযানের ওই প্রতিটি রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে রোযার ফিদিয়া স্বরূপ দু’বেলা খাবার কিংবা এর মূল্য প্রদান করবে।

ইন্স্যুলিন সাধারণত: ডায়াবেটিসের রোগীরা আহারের কিছুক্ষণ পূর্বে ব্যবহার করে থাকেন, যা রোযা অবস্থায় ব্যবহার করলে রোযা নষ্ট হবার আশঙ্কাই বেশী থাকে। তাই ইনস্যুলিন ইফতারের ঠিক সময়ে গ্রহণ করে কিছুক্ষণ পর ইফতার সামগ্রী আহার করবে।

পায়খানার রাস্তায় ডোজ ব্যবহার, নাক, কান ও চোখের ড্রপ ব্যবহারে রোযা নষ্ট হবার আশঙ্কা বেশী। যেমন, সম্মানিত ফক্বীহগণ রোযারত অবস্থায় নশ্ টানতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং রোযারত অবস্থায় ডোজ ব্যবহার, নাক, কান ও চোখে ড্রপ ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই নিরাপদ। অতএব, এসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।