ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতা অভিশপ্ত

ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতা অভিশপ্ত

হাদীস শরীফে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতাকে অভিশপ্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন- عَنْ عَبْدِ اللّٰہِ بْنِ عَمْرٍو رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ قَالَ لَعَنَ رَسُوْلُ اللّٰہِ صَلَّی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ الرَّاشِیَ وَالْمُرْتَشِیَ অর্থাৎ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়কেই অভিসম্পাত করেছেন।’’ [তিরমিযী]

ঘুষ চাওয়া, ঘুষ লওয়ার চেষ্টা করা এবং ঘুষ না দিলে বিপদ হবে বলে হুমকি বা ধমক দেয়াও ঘুষ গ্রহণের শামিল। এছাড়া যারা ঘুষ দেবে এবং যারা ঘুষের আদান প্রদানে কোনরূপ সাহায্য-সহযোগিতা করবে তারাও ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতার ন্যায় সমান অপরাধী বলে গণ্য হবে। কেননা হারাম কাজ করা যেমন অন্যায়, তদ্রুপ হারাম কাজে সাহায্য- সহযোগিতা করাও অন্যায়।

হযরত সাওবান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত-لَعَنَ رَسُوْلُ اللّٰہِ صَلّٰی اللّٰہُ عَلَیْہِ وَسَلَّمَ الرَّاشِیْ وَالْمُرْتَشِیْ والرَّاءِشَ অর্থাৎঃ রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা, ঘুষ গ্রহীতা এবং উভয়ের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারী সকলের উপর অভিসম্পাত করেছেন।’’ [মুসনাদে আহমদ ও মুস্‌তাদ্‌রাক লিল হাকিম]

অন্য হাদীসে বলা হয়েছে-اَلرَّاشِیْ وَالْمُرْتَشِیْ فِی النَّارِ অর্থাৎ ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতা অগ্নিবাসী [জাহান্নামী]

‘‘ঘুষ গ্রহণকারী নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা প্রদর্শন করে মানুষকে ঠকানোর ব্যবস্থা নিজ হাতে তুলে নেয়। এ জাতীয় প্রতারণা সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র ক্বোরআনে ইরশাদ করেছেন- اِنَّا اَنْزَلْنَآ اِلَیْکَ الْکِتٰبَ بِالْحَقِّ لِتَحْکُمَ بَیْنَ النَّاسِ بِمَآ اَرَاکَ اللّٰہُطوَلاَ تَکُنْ لِّلْخَآءِنِیْنَ خَصِیْمًاO لا وَّ اسْتَغْفِرِ اللّٰہَطاِنَّ اللّٰہَ کَانَ غَفُوْرًا رَّحِیْمًا Oج وَلاَ تُجَادِلْ عَنِ الَّذِیْنَ یَخْتَانُوْنَ اَنْفُسَہُمْط اِنَّ اللّٰہَ لاَ یُحِبُّ مَنْ کَانَ خَوَّانًا اَثِیْمًاج لاO یَّسْتَخْفُوْنَ مِنَ النَّاسِ وَلاَ یَسْتَخْفُوْنَ مِنَ اللّٰہِ  তরজমাঃ ‘‘(হে মাহবূব!) আমি তো আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি, আল্লাহ আপনাকে যা দেখিয়ে দিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার-মীমাংসা করেন এবং বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের সমর্থনে তর্ককারী হবেন না। আর আল্লাহর নিকট (উম্মতের জন্য) ক্ষমা প্রার্থনা করুন! নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যারা নিজেদেরকে প্রতারিত করে তাদের পক্ষে বাদানুবাদ করবেন না, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাস ভঙ্গকারী পাপীকে পছন্দ করেন না। তারা মানুষ হতে গোপন করতে চায় কিন্তু আল্লাহ হতে গোপন করতে পারে না। [সূরা নিসা, আয়াত- ১০৫- ১০৮]

অর্থাৎ বান্দা হারাম মাল উপার্জন করে যা দান করে তা ক্ববূল করা হবে না। তা থেকে সে যা ব্যয় করে তাতে বরকতও হবে না। আর যা পশ্চাতে রেখে যায়, তা তার জাহান্নামে যাবার পাথেয় হয় মাত্র।’’  [মুসনদে আহমদ]

মানুষের উপর আল্লাহ পাকের বড় নিঞ্চমাত হচ্ছে এ যে, তিনি যেমন মানুষের জন্য হালালকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তেমনি হারামকেও চিহ্নিত করে দিয়েছেন।

পবিত্র ক্বোরআনে ইরশাদ হয়েছে- وَقَدْ فَصَّلَ لَکُمْ مَّا حَرَّمَ عَلَیْکُمْ তরজমাঃ আল্লাহ তোমাদের জন্য যা হারাম করেছেন তা তিনি তোমাদের নিকট বিস্তারিতভাবে বিবৃত করে দিয়েছেন।’’  [সূরা আন’আমঃ আয়াত-১১৯]

আরো এরশাদ হয়েছে- قُلْ اِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّیَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَہَرَ مِنْہَا وَمَا بَطَنَ وَالْاِثْمَ وَالْبَغْیَ بِغَیْرِ الْحَقِّ وَاَنْ تُشْرِکُوْا بِاللّٰہِ مَالَمْ یُنَزِّلْ بِہٖ سُلْطٰنًا وَّاَنْ تَقُوْلُوا عَلٰی اللّٰہِ مَالاَ تَعْلَمُوْنَ O অর্থাৎ হে আমার প্রিয় রাসূল! আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আমার রব হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপনীয় অশ্লীলতা আর পাপ এবং অসঙ্গত বিরোধিতা আর কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে শরীক করা, যার সমর্থনে তিনি কোন সনদ প্রেরণ করেননি এবং আল্লাহ সম্পর্কে এমন কিছু বলা যা তোমরা জানো না।’’  [সূরা আ’রাফ, আয়াত-৩৩]

অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য  উৎকৃষ্ট বস্তু হালাল করেছেন। সেগুলোকে তোমরা হারাম করো না এবং সীমা লঙ্ঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীকে ভালবাসেন না। [সুরা মা-ইদাহ্‌, আয়াত-৮৭]

আরো এরশাদ হয়েছে- وَلاَ تَاْکُُلُوْٓا اَمْوَالَکُمْ بَیْنَکُمْ بِالْبَاطِلِ তরজমাঃ তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না।     [সূরা বাক্বারা, আয়াত- ১১৮]

রাহমাতুল্‌ লিল আলামিন হুযূরে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ওই ব্যক্তি (প্রকৃত) মুসলমান নয়, যার মুখ ও হাত হতে অপর মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে না।   [বোখারী শরীফ]