আইনের ভাষায় ঘুষের সংজ্ঞা

আইনের ভাষায় ঘুষের সংজ্ঞা

= আইনের ভাষায় ঘুষের সংজ্ঞা =

প্রচলিত আইনে ঘুষকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আইনের প্রখ্যাত ভাষ্যকার, আইনশাস্ত্রের বহুগ্রন্থ প্রণেতা গাজী শামসুর রহমান তার প্রণীত ‘দণ্ডবিধির ভাষ্য’ গ্রন্থে লিখেছেন-

১. সরকারী কর্মচারী হয়ে বা হবার প্রত্যাশায় কোন সরকারী কার্য সম্পাদন করার জন্য যা লওয়া হয় তাই বা তাকে অনুগ্রহ বা সন্তোষ প্রদর্শন করার জন্য যা লওয়া হয় তাই ঘুষ।

২. সরকারী কর্মচারী যে কাজ করার জন্য বখশিশ গ্রহণ করছে, সেই কাজ করা তার ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত থাকলে ওটা নিশ্চয়ই ঘুষ। নিজে না করে অন্যকে দিয়ে করিয়ে দেয়ার জন্য অর্থ গ্রহণ করাও ঘুষের মধ্যে পড়ে।

৩. ঘুষ যে ভ্রতঁ টাকা হবে এমন নয়; অন্য কোন বস্তুও হতে পারে। কোন দান প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্রহণ করাও ঘুষ হতে পারে।

ঘুষের কুফলসমূহ

ঘুষের মধ্যে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য কুফল। তবে এর মধ্যে যে কোন সুফল বা মৎপ নেই, তাও নয়। পৃথিবীতে এমন কোন জিনিষ বা কাজ নেই যার মধ্যে কোন উপকারিতা নেই। সুদ, মদ, জূয়া, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, নারী ধর্ষণ, ওজনে কম দেয়া, মজুদদারী ইত্যাদি সকল অপকর্ম ও কুকর্মের মধ্যে কম হলেও মৎপ রয়েছে। এ সকল অপকর্মের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি লাভবান হয়ে থাকে; তবে জ্ঞানী ব্যক্তিগণ যেসব জিনিসে অপকারিতার চেয়ে উপকারিতা বেশী সেটিকে উপকারী জিনিষ বলে গণ্য করে গ্রহণ করে থাকেন, আর যে জিনিসে উপকারিতার চেয়ে অপকারিতা বেশী সেটাকে অপকারী জিনিষ হিসেবে গণ্য করে তা পরিহার করে চলেন। ঘুষের ব্যাপারটিও অনুরূপ। ঘুষের মধ্যে রয়েছে কিছু ব্যক্তি কেন্দ্রিক সুফল। যেমন- বর্তমানে ঘুষ দিয়ে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। কথায় বলে, টাকা হলে বাঘের চোখও মিলে। ঘুষ দিয়ে বর্তমানে সাময়িকভাবে হলেও সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যাকে সত্যরূপে চালিয়ে দেয়া যায়, ঘুষে দ্রুত কাজ সম্পাদিত হয়, রাতারাতি বড় লোক হওয়া যায়, বিচারের রায় স্বপক্ষে আনা যায়, চাকুরীর ক্ষেত্রে নিয়োগ, বদলী, পদোন্নতি ইত্যাদি সহজ করা যায়, গাড়ি বাড়ি কিনে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটানো যায়, টেন্ডার ও বিল পেতে কোন ঘুরাঘুরি করতে হয় না, অফিসের সব কিছু বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয় ঘুষ। এ হলো ঘুষের ইতিবাচক দিক।

ঘুষের এ সকল সুফলের তুলনায় এর মধ্যে অপকারিতা বা কুফলই বেশি। নিম্নে ঘুষের কুফলসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ

১. ঘুষ মানুষের মধ্যে উদারতা, সহনশীলতা, দানশীলতা, সহযোগিতা ও উপকারিতার মনোভাবের পরিবর্তে স্বার্থপরতা, সংকীর্ণতা, কৃপণতা, নির্মমতা ও  প্রতিশোধমূলক মনোভাবের জন্ম দেয়।

২. ঘুষ মানুষের মধ্যে সীমাহীনভাবে লোভ সৃষ্টি করে এবং দানশীলতা হ্রাস পায়।

৩. ঘুষ হচ্ছে মানুষের উন্নত ও আদর্শ চরিত্র গঠনের প্রতিবন্ধক।

৪. ঘুষখোররা কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির প্রতি দয়ার্দ্র হবার পরিবর্তে তার বিপদ ও জরুরী প্রয়োজনের সুযোগে তার নিকট হতে মোটা অংকের ঘুষ আদায় করার চেষ্টায় মত্ত থাকে।

৫. গুষ সমাজ ও রাষ্ট্রে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধক। ফলে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যা, গুম করা, রাহাজানি ইত্যাদি বেড়ে যায় এবং আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।

৬. ঘুষ সমাজে ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে।

৭. ঘুষ উৎপাদন ও সঠিক খাতে বিনিয়োগকে বিনষ্ট করে।

৮. ঘুষ দ্রব্য-সামগ্রীর মূল্য বাড়িয়ে দেয়। কারণ দ্রুত কাজ সম্পাদনের জন্য যত টাকা ঘুষ দেয়ৎ হয় তা স্বাভাবিকভাবেই পণ্যের মূল্যের সাথে যোগ করে সে হারে তার বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

৯. ঘুষ জাতীয় উন্নয়নকে বিনষ্ট করে। কারণ কোন উন্নয়নমূলক কাজের টেন্ডার পাবার জন্য যতটাকা ঘুষ দেয়া হয় তত টাকা বা এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশী নিজ পকেটে রাখার উদ্দেশ্যে নিম্নমানের মাল দিয়ে কাজ সম্পাদন করা হয়।

১০. ঘুষ দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতাকে অসৎ লোকদের হাতে তুলে দেয় এবং ক্ষমতার এক কেন্দ্রিকতা সৃষ্টি করে।

১১. ঘুষের মাধ্যমে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী লোক অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ব্যক্তিগত সুবিধা লাভের অধিক সুযোগ পায়।

এসবই মানুষের জন্য ধ্বংসাত্মক ও ইসলামী আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ইসলাম এসব কারণে ঘুষকে কঠোরভাবে হারাম করেছে।