![সম্পাদকীয়: মানুষের সেবার মাধ্যমে মি’রাজের শিক্ষা জীবনে প্রতিফলন](https://www.anjumantrust.org/wp-content/uploads/2023/01/07.-Rajab.jpg)
সম্পাদকীয়: মানুষের সেবার মাধ্যমে মি’রাজের শিক্ষা জীবনে প্রতিফলন
সম্মানিত মাস সমূহের মধ্যে অন্যতম মাহে রজব। মহিমান্বিত পবিত্র মাহে রমযানের প্রস্তুতি গ্রহণের মাস রজব। আল্লাহ্র প্রিয় হাবীবের পবিত্র মি’রাজ সংঘটিত হয় এ মাসে। মহান আল্লাহ্ পাক অসংখ্য মুজিযা দ্বারা ধন্য করেছিলেন তাঁর প্রিয় হাবীবকে। এর মধ্যে সবশ্রেষ্ঠ হলো পবিত্র মি’রাজ। এ মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে তিনি অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে জাগ্রত অবস্থায় মসজিদে হারাম হতে মসজিদে আক্বসা বায়তুল মুক্বাদ্দাস ও সপ্ত আসমান হয়ে সিদরাতুল মুনতাহা’র অপার মহিমা অবলোকন পূর্বক আরো উর্ধ্বে গমন করেন। আলম-ই লা-মকানে গিয়ে আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাত লাভ করেন হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম।
পবিত্র মি’রাজ রাতে রাব্বুল আলামীন তাঁর হাবীবকে আরশ-কুরসি, লওহ, কলম, বেহেশত-দোযখ সহ বহু কুদরতি নিদর্শন অবলোকন করান। ওই মুহূর্তেও প্রিয়নবী ভুলে যাননি আপন উম্মতের কথা। গুনাহগার উম্মতের জন্য ফরিয়াদ জানান আপন রবের দরবারে। এ মহিমান্বিত রজনীতে উম্মতের মুক্তির জন্য আল্লাহ্র পক্ষ হতে উপহার স্বরূপ নিয়ে আসেন পাঁচ ওয়াক্ত নামায- আর এ নামায মু’মিনদের জন্য মি’রাজ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে হাদীস শরীফে। অতএব পবিত্র মি’রাজের স্মৃতিবাহি মু’মিনের মি’রাজ সালাত নিবিষ্ট চিত্তে আদায় এবং খারাপ কাজ ত্যাগ করে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি হতে পরিত্রাণ ও নেক আমলের মাধ্যমে জান্নাত লাভে সচেষ্ট হতে হবে। মানুষের সেবা কল্যাণের মাধ্যমে মি’রাজের শিক্ষা জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে পারলে আমরা উভয় জগতে কামিয়াব হবো।
উপমহাদেশে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিতে যাঁর অবদান অগ্রগণ্য তিনি হলেন গরীব নওয়ায খাজা মঈনুদ্দীন চিশ্তী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। তিনি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে তৎকালীন ভারতবর্ষে পদার্পণ করেন। সে সময় ভারত ছিল পৌত্তলিক বিধর্মীদের প্রভাবান্বিত। এমনকি রাজ্য ক্ষমতাও। কাজেই এ মহান আধ্যাত্মিক সাধকের ইসলাম প্রচার তারা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। নানা প্রতিকূলতার দেয়াল ডিঙ্গিয়ে তিনি ইসলাম প্রচার করতে থাকেন। তাঁর হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য, মধুর আচরণ, উদারতা অগণিত কারামত ও অনুপম আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিধর্মীরা দলে দলে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে লাগল। এক সময় সেখানকার শাসক রাজা পৃথ্বীরাজ ইসলাম প্রচারে নিবেদিত এ কাফেলাকে উৎখাতের জন্য সব ধরনের কৌশল ও প্রচেষ্টা চালায়। হযরত খাজা গরীব-নওয়াযের মদদে সুলতান সাহাবুদ্দীন মাহমুদ ঘোরী এ রাজ্য জয় করতে সক্ষম হন। তাঁর দোআ ও রূহানিয়াতের প্রভাবে ভারত বর্ষের শাসনভার মুসলমানদের হাতে আসে। তৎপরবর্তীতে সেখানে শতাব্দির পর শতাব্দি ভারত শাসন করেছেন মুসলিম শাসকরা। ৬ রজব এ মহান ওলীর ওরস উপলক্ষে কামনা করি তাঁর ফয়ূজাত।
এ দেশে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠায় যাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য তিনি হযরতুল আল্লামা গাযী আযিযুল হক শেরে বাংলা রহমাতুল্লাহি আলায়হি। তিনি ইসলামের নামে ভ্রান্ত আকিদা পোষণকারীদের মুখোশ উন্মোচন করেন। হক ও বাতিল পার্থক্য নির্ণয়ের মানদণ্ড তিনি সাধারণ মুসলমানদের মাঝে উপস্থাপন করেন। তিনি বিশেষ করে মহানবী (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ও আল্লাহ্র ওলীগণের শানে কটূক্তিকারীদের বিপক্ষে ছিলেন সোচ্চার ও আপোষহীন। তিনি ছিলেন বিজ্ঞ আলেম, অনলবর্ষী বক্তা, যোগ্য সংগঠক, দক্ষ মুনাযির, নিঃস্বার্থ সমাজ সেবক। তাঁর লিখিত ‘দিওয়ানে আযীয’ বাক্যগ্রন্থে তিনি এদেশের হক্কানী আউলিয়া কেরামের শান-মান ফার্সী ভাষার কবিতায় তুলে ধরেছেন। পরিবর্তীতে সেটার অনূদিত হলে সাধারণ মানুষ ও পরবর্তী প্রজন্ম তাদের সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছেন।
বর্তমানে অবশ্য আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীদের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। সাংগঠনিক সহ নানাভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে বর্তমানে শুধু দেশে নয় বিশ্বব্যাপী বাতিলদের ঘৃণ্য তৎপরতা শুরু রয়েছে। এসবের স্বার্থক মোকাবেলায় সত্য সন্ধানীদের জন্য শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র ত্যাগ, আপোষহীনতা, ইশকে রাসুল, সঠিক আক্বিদায় দৃঢ় থাকার শিক্ষা রয়েছে। বক্তব্য ও লেখনীতে বাতিলের মুখোশ উম্মোচন করা বর্তমানে সময়ের দাবি। এ ব্যাপারে যদি আমরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারি সেটাই হবে আসন্ন ওরস মোবারক উপলক্ষে তাঁর প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন।
সব ভাষারই স্রষ্টা মহান আল্লাহ্। এ পৃথিবীতে সব জাতির নিজস্ব ভাষা রয়েছে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা, এ ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ১৯৫২ সালে এ দেশের অনেকে তাজা প্রাণ বিসর্জন দিয়ে অনন্য দৃষ্টিান্ত স্থাপন করেছেন। যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের মাতৃভাষা রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। এ ভাষার সঠিক চর্চা ও সর্বত্র ব্যবহার ভাষাকে আরো সমৃদ্ধ করবে এবং জাতিকে সম্মানিত করবে।