ইসলামের দৃষ্টিতে বন্ধু গ্রহণের নীতিমালা

ইসলামের দৃষ্টিতে বন্ধু গ্রহণের নীতিমালা

মাওলানা মুহাম্মদ মুনিরুল হাছান

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করা মানবজীবনের সহজাত প্রবৃত্তি ও চিরাচরিত নিয়ম। জীবনের গতিময়তায় মানুষ বেছে নেয় বন্ধু। বন্ধু মানে যার কাছে মন খুলে সব কথা বলা যায়,বিপদে আপদে তার থেকে সাহায্য আশা করা যায় এবং তার সাথে সাক্ষাৎ করতে দেরী হলে অন্তরে ব্যাথা অনুভব হয়। বন্ধুত্বের কল্যাণে মানুষের কর্ম, চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়। ঙীভড়ৎফ ফরপঃরড়হধৎু-এর বর্ণনা মতে বন্ধুত্ব হল মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক। দেহের জন্য যেমন খাদ্য প্রয়োজন তেমনি মনের প্রশান্তির জন্য মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ ও সম্প্রীতির ভাব বজায় রেখে চলাও গুরুত্বপূর্ণ। বন্ধুর কাছেই মনের সকল কথা খুলে বলা যায়। পার্থিব জীবনে মূলত সে-ই বেশি সুখী, যার ভালো বন্ধু আছে । তাই আমাদের জীবনে যেমন চরিত্রবান বন্ধু প্রয়োজন, ঠিক তেমনি আমাদের ছেলে-মেয়েদের মেধা ও মননের বিকাশের জন্যও প্রয়োজন সৎ ও চরিত্রবান বন্ধু নির্বাচন। বন্ধুত্বের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন – স্নেহ, মায়ামমতা, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, আস্থা, সততা, পারস্পরিক বোঝাপড়া, সমবেদনা, একে অপরের সঙ্গ, অনুভূতি প্রকাশ ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র ইসলামেও বন্ধুত্বের বিষয়ে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা।

মুমিনের বন্ধুত্ব একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য
বিভিন্ন কারণে আমাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কিন্তু আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও ভালোবাসার ভিত্তিতে যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে সে বন্ধুত্ব সবচেয়ে মজবুত হয়। অপরদিকে নিজের স্বার্থের জন্য, উপকার লাভের আশায়, ক্লাবের সদস্য হবার ভিত্তিতে, সামাজিক শ্রেণি ও জাতিগত পরিচিতির ভিত্তিতে যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তা বেশিদিন টিকে না।
প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, أَفْضَلُ الْأَعْمَالِ الْحُبُّ فِي اللَّهِ، وَالْبُغْضُ فِي اللَّهِ
আল্লাহর নিকট উত্তম আমল হলো, আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য অন্যের সঙ্গে দুশমনি করা।
(আবু দাউদ -৪৫৯৯)

মুমিনের সাথে বন্ধুত্ব পরকালে মুক্তির কারণ
বন্ধুত্ব হচ্ছে দুই বা ততোধিক মানুষের মধ্যে একটি বিশেষ সম্পর্ক যাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি পারস্পরিক স্নেহ রয়েছে। দুনিয়াতে যে সকল মুমিন আল্লাহর প্রিয় বন্ধু আওলিয়ায়ে কেরাম ও পূণ্যবান ঈমানদারদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে এই বন্ধুত্বের বন্ধন পরকালীন জগতেও কাজে লাগবে। কেননা ঈমানদার ও আল্লাহভীরু লোকদের পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও ভালবাসা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। তাঁদের এই বন্ধুত্বে কোন বিচ্ছেদ ঘটবে না। আখিরাতেও তাঁদের এই বন্ধুত্ব অটুট থাকবে, যেমনটা দুনিয়াতে ছিল।
আল্লাহ তাআলা কুরআন করীমে বলেছেন, اَلۡاَخِلَّآءُ یَوۡمَئِذٍۭ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ اِلَّا الۡمُتَّقِیۡنَ সেদিন বন্ধুরা একে অন্যের শত্রু হবে, মুত্তাকীরা ছাড়া।
(সূরা যুখরূফ-৬৭)
প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ أَعْطَى لِلّهِ، وَمَنَعَ لِلّهِ، وَأَحَبَّ لِلّهِ، وَأَبْغَضَ لِلّهِ، وَأَنْكَحَ لِلّهِ، فَقَدْ اسْتَكْمَلَ إِيمَانَهُ
যে আল্লাহর জন্য দান করে, আল্লাহর জন্য বারণ করে, আল্লাহর জন্য মহব্বত করে, আল্লাহর জন্য দুশমনি করে, আল্লাহর জন্য বিবাহ-শাদী দেয়, তার ঈমান পরিপূর্ণ হয়ে যায়। (তিরমিযি -২৫২১)
ঈমান ও আনুগত্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব সর্বোত্তম। হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘‘যারা আমার প্রেমে পরস্পরকে ভালোবাসে, আমার খাতিরে সমবেত হয়, আমার ভালোবাসা অর্জনের জন্য নিজেদের সম্পদ পরস্পরের মধ্যে ব্যয় করে তাদেরকে ভালোবাসা আমার জন্য ওয়াজিব।’’

আল্লাহ তা‘আলাই মুমিনের প্রকৃত বন্ধু ও অভিভাবক
মুমিনের প্রকৃত বন্ধু আল্লাহ তাআলাই। এরপর হলেন প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এবং এর পরেই হলো ঈমানদারগণের স্থান।(যাঁরা গাউস, কুতুব, আবদাল ও ওলি-আউলিয়া, আলেম-হাফেজ ও সৎকর্মশীল বান্দা)। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّمَا وَلِیُّکُمُ اللّٰهُ وَ رَسُوۡلُهٗ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا الَّذِیۡنَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ هُمۡ رٰکِعُوۡنَ.
তোমাদের বন্ধু নয়, কিন্তু আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ও ঈমানদারগণ, যারা নামাজ কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহর সামনে বিনত হয়। (সূরা মায়েদা- ৫৫)
ঈমানদারদের প্রকৃত বন্ধু ও অভিভাবক সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
اَللّٰهُ وَلِیُّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ۙ یُخۡرِجُهُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ۬ؕ وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَوۡلِیٰٓـُٔهُمُ الطَّاغُوۡتُ ۙ یُخۡرِجُوۡنَهُمۡ مِّنَ النُّوۡرِ اِلَی الظُّلُمٰتِ ؕ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ
আল্লাহ অভিভাবক মুসলমানদের, তাদেরকে অন্ধকার রাশি থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন এবং কাফিরদের সাহায্যকারী হচ্ছে শয়তান। তারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকাররাশির দিকে বের করে নিয়ে যায়। এরাই দোযখবাসী। এদেরকে সেখানে স্থায়ীভাবে থাকতে হবে। (সূরা বাকারা-২৫৭)
প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
أَلاَ إِنَّ آلَ أَبِي – يَعْنِي فُلاَنًا – لَيْسُوا لِي بِأَوْلِيَاءَ إِنَّمَا وَلِيِّيَ اللَّهُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ ‏”‏ ‏.‏
সাবধান! অমুক বংশ (আত্মীয়তার কারণে) আমার বন্ধু নয়, বরং আল্লাহর এবং নেককার মুমিনগণই হলেন আমার বন্ধু। (সহীহ মুসলিম -৪০৭)

প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিনের অত্যন্ত আপন
প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মুমিনের অত্যন্ত আপন, সর্বাধিক হিতাকাক্সক্ষী এবং নিজের আত্মার চাইতেও কাছে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের জন্য তাদের মা-বাবা ও পরিবার- পরিজনের চাইতেও বেশী স্নেহশীল, দয়ার্দ্র হৃদয় এবং তাদের নিজেদের চাইতেও অধিক কল্যাণকামী। যিনি শুধু উম্মতের জন্য চিন্তিত থাকেন। আল্লাহ তাআলা যাঁকে ‘‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’’ হিসেবে পাঠিয়েছেন। মুমিনের উপর করণীয় হলো নিজের ছেলে মেয়ে, পরিবার পরিজন, মা বাবা, ধন সম্পদ এবং নিজের জানের চাইতেও নবীকে বেশি ভালোবাসা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও ঘনিষ্টতর এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মা। (সূরা আহযাব-৬)
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এমন কোন মুমিনই নেই যার পক্ষে আমি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত মানবকুলের চাইতে অধিক হিতাকাক্সক্ষী ও আপনজন নই। যদি তোমাদের মন চায়, তবে এর সমর্থন ও সত্যতা প্রমাণের জন্য কুরআনের আয়াত (সূরা আহযাব-৬) পাঠ করতে পার। (বুখারী- ২৩৯৯)
হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যখন কোন ঋণী ব্যক্তির জানাযা উপস্থিত করা হত তখন তিনি জিজ্ঞেস করতেন, সে তার ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত মাল রেখে গেছে কি? যদি তাঁকে বলা হত যে, সে তার ঋণ পরিশোধের মতো মাল রেখে গেছে তখন তার জানাযার সালাত আদায় করতেন। নতুবা বলতেন, তোমাদের সাথীর জানাযা আদায় করে নাও। পরবর্তীতে যখন আল্লাহ তাঁর বিজয়ের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন, তখন তিনি বললেন, আমি মু’মিনদের জন্য তাদের নিজের চেয়েও অধিক নিকটবর্তী। তাই কোন মু’মিন ঋণ রেখে মারা গেলে সে ঋণ পরিশোধ করার দায়িত্ব আমার। আর যে ব্যক্তি সম্পদ রেখে যায়, সে সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের জন্য। (সহীহ বুখারী- ২২৯৮)

ইসলামে বন্ধু ও তার বৈশিষ্ট্য
ইসলামে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ کُوۡنُوۡا مَعَ الصّٰدِقِیۡنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা তাওবা-১১৯)
আল্লাহ তাআলা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَتَّخِذُواْ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاء بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللّهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
“হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ যালিমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” (সূরা আল-মায়েদা- ৫১)
আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন ইসলামের শত্রু ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সাথে বন্ধুত্ব না করে। কেননা তারা নিজেরা একে অপরের বন্ধু। ইসলাম ধর্মের প্রতি তাদের হিংসা ও বিদ্বেষ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা এটাও বলেছেন যে, ইহুদি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্বের এই নিষেধাজ্ঞা কেউ অমান্য করলে সে ইসলামের দৃষ্টিতে ঐ সম্প্রদায়ের লোক বলেই গণ্য হবে। হাদীস শরীফে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ
হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষ তার বন্ধুর রীতি নীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।
(আবু দাউদ-৪৯৩৩, তিরমিযী-২৩৭৮)
হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহ রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেছেন, তোমরা আমার পক্ষ থেকে তিনটি বিষয়ের উপর আমলের জন্য চেষ্টা করোঃ ১. প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বেঁচে থাক, ২. অসৎ সঙ্গ ত্যাগ কর এবং ৩. আত্মমুগ্ধ হওয়া থেকে বিরত থাক।

সৎবন্ধুর গুণাবলী
জীবন চলতে চলতে অনেক সময় মানুষের কাছে কঠিন সময় উপস্থিত হয়। ওই সময়ে বন্ধুরা পাশে থাকে এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। প্রকৃত বন্ধুকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয় এবং কোন ভুল করলে ঐ বন্ধু তা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই ইসলামের আলোকে বন্ধু গ্রহণের কিছু নীতিমালা রয়েছে। যেমন-

১. ঈমানদার হওয়া
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন,
لَا یَتَّخِذِ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الۡکٰفِرِیۡنَ اَوۡلِیَآءَ مِنۡ دُوۡنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَلَیۡسَ مِنَ اللّٰهِ فِیۡ شَیۡءٍ اِلَّاۤ اَنۡ تَتَّقُوۡا مِنۡهُمۡ تُقٰىۃً ؕ وَ یُحَذِّرُکُمُ اللّٰهُ نَفۡسَهٗ ؕ وَ اِلَی اللّٰهِ الۡمَصِیۡرُ
‘মুমিনরা যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করে। যারা এমনটি করবে, আল্লাহ তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখবেন না।’
(সূরা আলে ইমরান-২৮)
আলোচ্য আয়াতটির মধ্যে যেমন বন্ধু নির্বাচনের নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে, তেমনি ফুটে উঠেছে কাফেরকে বন্ধু হিসেবে নির্বাচন করার ভয়াবহ পরিণামের চিত্র। ভালো কিংবা মন্দ বন্ধু গ্রহণ করার পরিণাম বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পৃথিবীতে যার সঙ্গে যার বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রয়েছে, পরকালে তাদের সঙ্গেই তার হাশর-বিচার হবে।’
একজন মানুষের জীবনে বন্ধু কেন প্রয়োজন সেই সম্পর্কে কুরআন মাজিদে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, ‘আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের বন্ধু; সৎ কর্মের নির্দেশ দেয় এবং অসৎ কর্মে নিষেধ করে; নামাজ কায়েম রাখে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও (তাঁর) রাসূলের নির্দেশ মান্য করে। তারা হচ্ছে ঐসব লোক যাদের উপর আল্লাহ সহসা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা-৭১)
প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তুমি মু’মিন ব্যতীত আর কারো সাহচর্য গ্রহণ করো না এবং পরহেযগার মানুষ ছাড়া তোমার খাবার যেন অন্য কেউ না খায়।” (আবু দাউদ, তিরমিযী)

২. জ্ঞান বুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া
বন্ধু মনোনয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বন্ধু মনোনয়নে কেউ ভুল করলে তাকে সারাজীবন পরিণতি ভোগ করতে হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে ভালো বন্ধুর অন্যতম একটা বৈশিষ্ট্য হলো বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া। এই বিবেকবান বন্ধু সদুপদেষ্টা হয় এবং তার ওপর সবসময় আস্থা রাখা যায়। কেননা এ ধরনের বন্ধু ভুল ত্রুটি থেকে ফিরিয়ে রাখে। বিবেক-বুদ্ধিমান বন্ধুদের সাথে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বহু বর্ণনা রয়েছে।
বন্ধু মনোনয়নে হজরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘নির্বোধের বন্ধুত্ব থেকে দূরে থাকো। কারণ সে উপকার করতে চাইলেও তার দ্বারা তোমার ক্ষতি হয়ে যাবে। (দিওয়ানে আলী)
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযালী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেছেন, ‘যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে তার মধ্যে পাঁচটি গুণ থাকা চাই। সেগুলো হলো-‘বুদ্ধিমত্তা ও সৎ স্বভাবের অধিকারী হওয়া এবং পাপাচারী ও দুনিয়াসক্ত না হওয়া। ‘হজরত ইমাম জা’ফর আস-সাদিক্ব রহমাতুল্লাহি আলায়হি মুসলিম মিল্লাতকে বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক করে বলেছেন, ‘পাঁচ ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করা সমীচীন নয়। তা হলো- মিথ্যাবাদী, নির্বোধ, ভীরু, পাপাচারী ও কৃপণ ব্যক্তি।

৩. নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হওয়া
নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হওয়া ভালো বন্ধুর আরেক বিশেষ গুণ। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ভালো বন্ধু সেই হতে পারে যে উত্তম চরিত্রবান এবং নৈতিক স্খলন থেকে দূরে থাকে। প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ তারা, যারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী। (জামেউস সগির-২১৮)
অপর হাদীস শরীফে রয়েছে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন মুমিনের দাড়িপাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে ভারী আর কিছু হবে না। কেননা আল্লাহ তাআলা অশ্লীল কটুভাষীকেকে ঘৃণা করেন। (তিরমিজি-২০০২)
কেননা দুশ্চরিত্রবান আর মন্দ কাজে অভ্যস্ত বন্ধু শেষ পর্যন্ত মানুষকে অবৈধ, অশোভন আর অনৈতিক কাজের দিকে নিয়ে যায়। এ ধরনের মানুষের সংশ্রব অবশ্যই পরিত্যাজ্য। আমাদের এমন ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে হবে, যারা সত্যবাদী, সদাচারী, সৎকাজে অভ্যস্ত, পরোপকারী, দায়িত্বশীল এবং নীতিবান।

অসৎ বন্ধু ক্বিয়ামতের দিন দুঃখের কারণ হবে
বন্ধু নির্বাচন করতে হবে এমনভাবে যাতে সে দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় স্থানে আমাদের সাহায্যকারী হতে পারে। ক্বিয়ামতের দিনেও মানুষের উত্তম বন্ধুর প্রয়োজন হবে। কেবলমাত্র ঈমানদার ব্যক্তিরাই হতে পারেন এমন বন্ধু।
অসৎ বন্ধু পরিত্যাগের ক্ষেত্রে কোরআনের ভাষ্য হলো হাশরের ময়দানে একদল জাহান্নামিকে জিজ্ঞাসা করা হবে কোন্ জিনিস তোমাদেরকে জাহান্নামে এনেছে? জবাবে তারা কয়েকটি কারণ বলবে। সেগুলোর মধ্যে একটি হলো, আমরা (সত্যের আহবানের বিরুদ্ধে) বিতর্ক উত্থাপনকারীদের দলে ভিড়ে নিজেরাও বিতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়তাম এবং আমরা শেষ বিচারের দিন সম্পর্কে মিথ্যা ধারণা পোষণ করতাম। (সুরা মুদ্দাসসির: ৪৫-৪৬)।
এক কথায় আমরা এমন লোকদের সঙ্গে চলাফেরা করতাম যারা ছিল অসৎ।
পবিত্র কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘মোমিনরা যেন অন্য মোমিনকে ছেড়ে কোনো কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এমনটি করবে, আল্লাহ তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখবেন না। (সুরা আলে ইমরান-২৮)
যারা দুনিয়াতে খারাপ লোককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, তাদের ক্বিয়ামতের দিন আফসোসের সীমা থাকবেনা।
পবিত্র ক্বোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘সীমালঙ্ঘনকারী সেদিন নিজের দুহাত দংশন করতে করতে বলবে, হায়, আমি যদি রাসুলের সঙ্গে সৎপথ গ্রহণ করতাম! হায়, আমার দুর্ভাগ্য, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছিল। শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোঁকা দেয়। (সুরা ফুরকান : ২৭-২৯)
উকবা ইবনে আবি মু‘ঈত মক্কার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি ছিল। সে একবার অনেকের সঙ্গে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও ভোজনের নিমন্ত্রণ করল। সে নবীজির সামনে খাবার উপস্থাপন করলে নবীজি বললেন, আমি তোমার খাবার গ্রহণ করতে পারি না, যে পর্যন্ত তুমি সাক্ষ্য না দাও যে আল্লাহ এক, তার কোন শরীক নেই এবং আমি তার রাসূল। শর্ত মোতাবেক উকবা নবীজির কাছে কালিমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করল। নবীজি নিমন্ত্রণে অংশগ্রহণ করে খাবার গ্রহণ করলেন। এদিকে উকবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল উবাই ইবনে খালফ। এ ঘটনায় সে খুবই অসন্তুষ্ট হলো। উকবা বলল, কোরাইশ বংশের সম্মানিত অতিথি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মতো ব্যক্তি আমার নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করলে তা আমার জন্য লজ্জাজনক ছিল, তাই আমি তাঁকে রাজি করতে কালেমা পড়েছি। উবাই এতেও সন্তুষ্ট হতে পারেনি। সে বলল, তোমার সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক শেষ। তবে তুমি যদি মুহাম্মদের মুখে থুথু মেরে আসতে পারো, তাহলে আমাদের বন্ধুত্ব বহাল থাকবে। হতভাগা উকবা বন্ধুত্ব রক্ষা করতে গিয়ে নবীজির সাথে এই ধৃষ্টতা প্রদর্শনে সম্মত হল এবং তদ্রƒপ করেও ফেলল। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে উকবার পরিণতি বর্ণনা করে আল্লাহ উপরিউক্ত আয়াতগুলো নাজিল করেন।

অসৎ সঙ্গ থেকে বেঁচে থাকার গুরুত্ব
কথায় আছে, সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। জীবনের প্রয়োজনে যেমন সৎ লোকের সাথে বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে একই প্রয়োজনে অসৎ সঙ্গ থেকে দূরে থাকার নির্দেশনাও কোরআন ও হাদিসে এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلاَ تَرْكَنُواْ إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُواْ فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ اللّهِ مِنْ أَوْلِيَاء ثُمَّ لاَ تُنصَرُونَ
আর পাপিষ্ঠদের প্রতি ঝুঁকবে না। নতুবা তোমাদেরকেও আগুনে ধরবে। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু নেই। অতএব কোথাও সাহায্য পাবে না। (সূরা হূদ-১১৩)
হাশরের মাঠে খারাপ বন্ধুদেরকে খুঁজা হবে। যাতে করে প্রতিশোধ নেওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
কাফিররা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! যেসব জিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদেরকে দেখিয়ে দাও, আমরা তাদেরকে পদদলিত করব, যাতে তারা যথেষ্ট অপমানিত হয়। (সূরা হা-মীম- সাজদাহ:২৯)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৎ সঙ্গী গ্রহণে উৎসাহিত করেছেন, এবং অসৎ সঙ্গী থেকে দূরে থাকতে তাকিদ দিয়েছেন।
وَعَن أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه أَنَّ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: إِنَّمَا مَثَلُ الجَلِيسِ الصَّالِحِ وَجَلِيسِ السُّوءِ، كَحَامِلِ المِسْكِ، وَنَافِخِ الْكِيرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ: إمَّا أنْ يُحْذِيَكَ، وَإمَّا أنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإمَّا أنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحاً طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الكِيرِ : إمَّا أنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإمَّا أنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحاً مُنْتِنَةً.
হযরত আবূ মূসা আশআরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হল, কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) ও হাপরে ফুৎকারকারী (কামারের) ন্যায়। কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) হয়তো তোমাকে কিছু দান করবে অথবা তার কাছ থেকে তুমি কিছু খরিদ করবে অথবা তার কাছ থেকে সুবাস লাভ করবে। আর হাপরে ফুৎকারকারী (কামার) হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে। (সহীহ বুখারী- ২১০১, মুসলিম ২৬২৮)

সৎ বন্ধু আল্লাহর নিয়ামত
সৎ বন্ধু আল্লাহ তালার পক্ষ থেকে একটি নিয়ামত। ওই সব বন্ধু আপন বন্ধুকে ভালো কাজে সহযোগিতা করে, কোন কিছু ভুলে গেলে স্মরণ করিয়ে দেয়। আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে উত্তম সঙ্গী দান করেন।
হাদিসে রয়েছে
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا أَرَادَ اللهُ بِالأَمِيرِ خَيْرًا جَعَلَ لَهُ وَزِيرَ صِدْقٍ إِنْ نَسِىَ ذَكَّرَهُ وَإِنْ ذَكَرَ أَعَانَهُ وَإِذَا أَرَادَ اللهُ بِهِ غَيْرَ ذَلِكَ جَعَلَ لَهُ وَزِيرَ سُوءٍ إِنْ نَسِىَ لَمْ يُذَكِّرْهُ وَإِنْ ذَكَرَ لَمْ يُعِنْهُ-
হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যখন কোনো শাসক বাদশার জন্য কল্যাণের ফায়সালা করেন, তখন তিনি তাকে সত্যবাদী, ন্যায়নিষ্ঠ উজির দান করেন। যদি সে (শাসক) কিছু ভুলে যায়, তখন সে (উজির) তাকে তা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর শাসক যদি তা স্মরণ রাখে, তখন উজির তাকে সাহায্য করে। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলা কোনো শাসকের জন্য অকল্যাণের ফায়সালা করলে তাকে অযোগ্য উজির দান করেন। ফলে যখন সে (শাসক) কিছু ভুলে যায়, তখন সে (উজির) তাকে তা স্মরণ করিয়ে দেয় না। আর শাসক যদি স্মরণ রাখে, তখন সে তাকে সাহায্য করে না।
(আবু দাউদ- ২৯৩২)

নেককার বন্ধু কেয়ামতের ময়দানে উপকারী হবে
ঈমানদার ও আল্লাহভীরু লোকদের পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের ভিত্তিতে হয়, আর এই দ্বীন ও ঈমানই হল কল্যাণ ও সওয়াব লাভের মাধ্যম, সেহেতু তাঁদের এই বন্ধুত্বে কোন বিচ্ছেদ ঘটবে না। আখেরাতেও তাঁদের এই বন্ধুত্ব অটুট থাকবে, যেমন দুনিয়াতে ছিল।
প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট উত্তম আমল হলো, আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য অন্যের সঙ্গে দুশমনি করা”। (আবু দাউদ- ৪৫৯৯)
অপর একটি হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ أَعْطَى لِلّهِ، وَمَنَعَ لِلّهِ، وَأَحَبَّ لِلّهِ، وَأَبْغَضَ لِلّهِ، وَأَنْكَحَ لِلّهِ، فَقَدْ اسْتَكْمَلَ إِيمَانَهُ
“যে আল্লাহর জন্য দান করে, আল্লাহর জন্য বারণ করে, আল্লাহর জন্য মহব্বত করে, আল্লাহর জন্য দুশমনি করে, আল্লাহর জন্য বিবাহ শাদী দেয়, তার ঈমান পরিপূর্ণ হয়ে যায়”। (তিরমিযি-২৫২১)
আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক লোক রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলো, অতঃপর বললো, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!) কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে? তিনি বললেন, তুমি সেদিনের জন্যে কি পাথেয় সংগ্রহ করেছ? সে বললো, আমি আল্লাহ ও তার রসূলকে মহব্বত করি। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তুমি তার সাথে থাকবে যাকে তুমি মুহাব্বাত কর। আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, ইসলাম কবুলের পরে আমরা এত বেশি আনন্দিত হইনি যতটা আনন্দবোধ করছি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ বাণী থেকে- ‘‘তুমি তার সাথেই থাকবে যাকে তুমি ভালোবাস’’।
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আমি আল্লাহ ও তার রসূল, আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ও উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কে মহব্বত করি। সুতরাং আমি আশা রাখি যে, কিয়ামতের দিনে আমি তাদের সাথে থাকব, যদিও আমি তাদের সমান আমল করতে পারিনি। (সহীহ বুখারী -৬১৬৭, সহীহ মুসলিম -২৬৩৯)

খারাপ বন্ধু থেকে বেঁচে থাকার দোয়া
প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খারাপ বন্ধুর আচরণ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় নিতে বলেছেন। তিনি বলেছেন,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ يَوْمِ السُّوْءِ وَمِنْ لَيْلَةِ السُّوْءِ وَمِنْ سَاعَةِ السُّوْءِ وَمِنْ صَاحِبِ السُّوْءِ وَمِنْ جَارِ السُّوْءِ فِي دَارِ الْمَقَامَةِ
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই খারাপ দিন, খারাপ রাত, বিপদ মুহূর্ত, অসৎসঙ্গী এবং স্থায়ীভাবে বসবাসকারী খারাপ প্রতিবেশী থেকে। (জামেউস সগির-১২৯৯)

সৎ লোকের মজলিসে বসলে গুনাহ মাফ হয়ে যায়
আল্লাহ তাআলার বান্দাগণের মধ্যে কিছু বান্দাহকে বলা হয় আহলে জিকির। তারা সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহর জিকিরের মধ্যে নিয়োজিত থাকেন। আল্লাহ তাআলা ঐ নেককার লোকদের উসিলায় তাদের মজলিসে যারা বসবে তাদেরকেও ক্ষমা করে দিবেন। নেককার বান্দাগণের সাথে বন্ধুত্ব করলে এবং তাদের মজলিসে বসলে কি উপকার লাভ হয় এই সম্পর্কে দীর্ঘ হাদিসে এসেছে,
فَيَقُولُونَ رَبِّ فِيهِمْ فُلاَنٌ عَبْدٌ خَطَّاءٌ إِنَّمَا مَرَّ فَجَلَسَ مَعَهُمْ قَالَ فَيَقُولُ وَلَهُ غَفَرْتُ هُمُ الْقَوْمُ لاَ يَشْقَى بِهِمْ جَلِيسُهُمْ ‏”‏ ‏.‏
তারা (ফেরেশতারা) বলবে, হে আমাদের রব! তাদের মাঝে তো অমুক পাপী বান্দা ছিল, যে তাদের সাথে বৈঠকের নিকট দিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে বসেছিল। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ বলবেন, আমি তাকেও মাফ করে দিলাম। তারা তো এমন একটি জাতি যাদের সঙ্গীরা দুর্ভাগা হয় না। (সহীহ মুসলিম- ২৬৮৯)
প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম এরশাদ করেছেন তোমাদের মধ্যে যদি কেউ কোন ভাইকে ভালোবাসে, তাহলে সে যেন তাকে জানিয়ে দেয়। (তিরমিজি -২৫০২)
ইসলামের দাবি হলো কেউ কারো সাথে বন্ধুত্ব করলে তা প্রকাশ করা। সুতরাং বন্ধুত্ব হতে হবে পরকালীন কল্যাণের জন্য। সৎ বন্ধুদের কারণে মানুষ ইহকালে যেমন সম্মানিত হয় পরকালেও তেমনি আল্লাহ তাআলার কাছে মর্যাদা প্রাপ্ত হবেন।

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা), চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজ।

Share:

Leave Your Comment