প্রশ্নোত্তর : অধ্যক্ষ মুফ্তী সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান

প্রশ্নোত্তর : অধ্যক্ষ মুফ্তী সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান

 মুহাম্মদ খোরশেদ আলম
দুবাই প্রবাসী।

 প্রশ্ন: জুমার খুতবার পূর্বের আযান কি মিম্বরের সামনে অর্থাৎ ইমাম সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে দিবে, নাকি মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে দিবে।

উত্তর: খুতবার পূর্বে জুমআর ২য় আযান সর্বসম্মতিক্রমে সুন্নাত। ওই আযান ইমামের সামনা-সামনি মসজিদের দরজায় অথবা মসজিদের ভিতরে মিম্বরের কাছে খতিবের সামনে দেয়া যায়। উভয়টা শরীয়ত সম্মত। এ সম্পর্কে ওমদাতুর রিআয়া হাশিয়ায়ে শরহে বেকায়া ও হেদায়াসহ বহু ফিকহের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে। সুতরাং যেখানে যেভাবে প্রচলন আছে সেভাবেই আমল করা উচিত। এটা নিয়ে (অর্থাৎ খুতবার আযান মসজিদের দরজায় অথবা খতিবের সামনে মিম্বরের কাছে দেয়া) যাতে ফিতনা সৃষ্টি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা বাঞ্চনীয়। তাছাড়া জুমআর ২য় আযান খতিবের সামনে দেয়ার বিধান ও আমল যুগ যুগ ধরে চলে আসছে যাকে বিভিন্ন ফিকহের কিতাবে جرى به التوارث হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ যুগ যুগ ধরে এ নিয়ম চলে আসছে। توارث (তাওয়ারুস্) সম্পর্কে রদ্দুল মোহতার তথা ফতোয়ায়ে শামীতে উল্লেখ রয়েছে المتوارث لايكون مكروها অর্থাৎ যা যুগ যুগ ধরে প্রচলিত তা মাকরূহ হতে পারে না। আরো উল্লেখ করা হয়েছে- وكذالك تقول فى الاذان بين يدى الخطيب فيكون بدعة حسنة اذ ما رأه المسلون حسنًا فهو عند الله حسن-
অর্থাৎ- যেভাবে তুমি বলবে খতিবের সামনে প্রদত্ত আযান সম্পর্কেও সুতরাং তা বিদআতে হাস্না। কেননা মুমিনগণ যে বস্তুকে ভাল হিসেবে জানে তা আল্লাহ্র কাছেও উত্তম হিসেবে পরিগণিত। সুতরাং হাজার বছরের চেয়ে আরো অধিককাল থেকে আপন আপন যুগের ফোকাহায়ে কেরাম ও মুমিনগণ যখন এটাকে আমলে পরিণত করেছে তাহলে আমাদের বুঝে নিতে হবে এটা আল্লাহ্র কাছে উত্তম/ভাল। আর এটা চিরসত্য ও স্বীকৃত যে, ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি (ফতোয়ায়ে শামীর) লেখক ও ইমাম মরগিনানী (হেদায়া গ্রন্থের লেখক) তাদের পরবর্তী ওলামায়ে কেরাম ও ফকিহগণের চেয়ে অনেক বেশী বিজ্ঞ ও ফিকহ্-ফতোয়া সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। অতএব এ মাসআলা নিয়ে অহেতুক বিতর্কে না জড়ানো উচিত। তবে আরব দেশসহ যেখানে জুমার খুতবার পূর্বের আযান মসজিদের দরজায় দেয়ার নিময় প্রচিলিত আছে সেখানে সেভাবে আমল করবে। যেহেতু তা হাদীস শরীফের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত। [হেদায়া, শরহে বেকায়া, ওমদাতুর রিয়ায়া, রদ্দুল মুখতার ও আমার রচিত যুগ জিজ্ঞাসা ইত্যাদি]

 মুহাম্মদ সোহেল রানা
মোহাম্মদপুর, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম।

প্রশ্ন: ১. বর্তমানে বিশেষত অনলাইন মাধ্যমগুলোতে কিছু লোক হযরত আমীরে মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে কাফির, মুনাফিক, বাগী ইত্যাদি বলছে। এদের ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি?

উত্তর: ১. প্রিয়নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার সাহাবী হযরত আমীরে মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু একজন জলীলুল কদর কাতেবে ওহী ও মুজতাহিদ সাহাবী ছিলেন। তিনি কাফির, ফাসিক ছিলেন ইত্যাদি বলা বা মনে করা হারাম, নিন্দনীয় ও গুনাহের কারণ এবং গুমরাহীর নামান্তর। কারণ, সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা শান- মান, সাধারণ মুসলমান ও ওলী আবদালের চেয়ে অনেক অনেক ঊর্ধ্বে এবং তাঁদের শান-মানে নিন্দা বা গালমন্দ করা থেকে অথবা কু-ধারণা হতে বিরত থাকার জন্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বারবার সতর্ক করেছেন এবং কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন- সহীহ্ বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে- عن ابى سعيد الخدرى رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لاتسبّوا اصحابى فلوان احدكم انفق مثل احدٍ ذهبًا مابلغ مُدًّ احدهم ولا نصيفه – (رواه البخارى- جلد-১৪) অর্থাৎ: প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদুরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালমন্দ করো না। তোমাদের কেউ যদি পাহাড় সমান স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় দান করে তবে তাদের এক মুদ বা অর্ধমুদ এর সম-পরিমাণ সাওয়াবও হবে না। উল্লেখ্য যে একেবারে সামান্য পরিমাণকে মুদ বলা হয়। [সহীহ্ বুখারী শরীফ: ১৪ তম পারা]
অপর হাদিসে উল্লেখ রয়েছে- প্রিয়নবী রাউফুর রহীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
عن ابن عمر رضى الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا رايتم الذين يسبّون اصحابى فقولوا لعنة الله على شركم-(رواه الترمذى- مشكوة شريف- صف-৫৫৪)
অর্থাৎ: বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা যখন ঐ সমস্ত লোকদেরকে দেখবে, যারা আমার সাহাবীদেরকে গালি দেয়, তখন বলবে তোমাদের এ ঘৃণ্য কাজের উপর আল্লাহর অভিশাপ।
[তিরমিযী ও মিশকাত শরীফ, পৃ.৫৫৪ ]
সাহাবীদের মন্দ বলা ও গালি দেয়ার পরিণাম প্রসঙ্গে প্রিয়নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
فَمَنْ سبّهم فعليه لعنة الله والملائكة والناس اجمعين- অর্থাৎ যারা আমার সাহাবায়ে কেরামকে গালি দেয় তাদের উপর আল্লাহর, ফেরেশতাগণের এবং সকল মানুষের অভিশাপ । [নুযহাতুল মাজালিস, কৃত, ইমাম আব্দুর রহমান সফূরী (রহ.), ২য় খন্ড, ৫২০ পৃষ্টা]
সাহাবীদের সম্মান করা প্রসঙ্গে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- اكرموا اصحابى فانهم خياركم-
অর্থাৎ: তোমরা আমার সাহাবায়ে কেরামকে সম্মান করো, কেননা তাঁরা তোমাদের চেয়ে অনেক উত্তম। [মেশকাত শরীফ: পৃ. ৫৫৪]
আর আমীরে মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু একজন প্রখ্যাত সাহাবী ছিলেন। এটাই সকল সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তবে তাবেঈন, মুজতাহেদীন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সকল মুহাদ্দিস ও ফকিহ্গণের অভিমত। তাঁর ফজীলত বা মর্যাদা প্রসঙ্গে বহু হাদীস শরীফ বর্ণিত হয়েছে। স্বয়ং হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য দোয়াও করেছেন। হাফেজুল হাদিস হারেস ইবনে ওসামা একটি বড় হাদীস শরীফ রেওয়ায়ত করেছেন। যার মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদীন ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের ফজীলতসমূহ বর্ণিত রয়েছে। উক্ত হাদীসে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে বর্ণিত আছে- প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- ومعاوية ابن ابى سفيان اعلم امتى واجودها-
অর্থাৎ: হযরত আমিরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আমার উম্মতের বড় জ্ঞানী ও বড় দানবীর ।
[তাতহীরুল জিনাহ্ ও হযরত আমীরে মুয়াভিয়া পর এক নজর কৃত. হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহ.]
উল্লেখ্য যে, সমস্ত ওলামা-মাশায়িখ মুহাদ্দেসীন ও সাহাবায়ে কেরাম হযরত আমীরে মুয়াবিয়ার প্রশংসা করেছেন। যেমন ইমাম কাস্তলানী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর শরহে সহীহ বোখারীতে উল্লেখ করেছেন যে, হযরত আমির মুয়াবিয়া একান্ত প্রশংসার পাত্র ও অনেক মহৎ গুণাবলীর অধিকারী। তিনি ন্যায়পরায়ণ, জ্ঞানী, ভদ্র, দয়ালু, বুদ্ধিমান, ওহী লেখক সাহাবী ছিলেন । শুধু তাই নয়, হযরত আমীরে মুআবিয়া রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হতে ১৬৩ টি হাদীস বর্ণনা করেছেন । সহীহ বুখারী শরীফে ৪টি , সহীহ মুসলিম শরীফে ৫ টি হাদীস এককভাবে স্থান পেয়েছে। তাছাড়া বাকী হাদিস শরীফসমূহ হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।
আর সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদা বা দৃঢ় বিশ্বাস হলো- جماعة الصحابة رضى الله عنهم كلهم عدول وهم قدوة اولى لهذه الامة المسلمة الى يوم القيامة- অর্থাৎ: সাহাবায়ে কেরামের সকলেই ন্যায়পরায়ণ ও নির্ভরযোগ্য। কিয়ামত পর্যন্ত এ উম্মতে মুসলিমার জন্য তারাই প্রথম আদর্শ। (শরহে আকায়েদে নাসাফী, কৃত: আল্লামা ইমাম সাদ উদ্দীন তাফতাযানী (রহ.)। উক্ত কিভাবে আরো উল্লেখ রয়েছে, সাহাবায়ে কেরামের একজনকে বেশি মুহাব্বত করে অন্যজনের সাথে শত্রুতা পোষণ করার কোন সুযোগ নেই। এ কারণে সাহাবায়ে কেরামের ভালো দিকগুলো আলোচনার কেবল বৈধতা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শরহে আকায়েদে নাসাফীতে উল্লেখ রয়েছে- لايجوز ذكرهم اِلَّا بالخير حبُّهم من علامات الايمان مَنْ اَبْغَضَهُمْ فَقَدْ كَفَرَ ونافق وطغى-
অর্থাৎ: সাহাবায়ে কেরামের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র তাদের ভালো দিক নিয়েই আলোচনা বৈধতা আছে। তাদেরকে ভালোবাসা ঈমানের আলামত। যারা তাদের সাথে শত্রুতা করে তারা নাফরমানী, মুনাফেকী এবং সীমালঙ্ঘন করে ।
উপরোক্ত আলোচনা হতে প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবায়ে কেরামের প্রতি ভালবাসা পোষণ করা, সম্মান করা, শ্রদ্ধা করা ওয়াজিব এবং রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সম্মান করার নামান্তর । তাছাড়া সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে ভাল ধারণা পোষণ করা মুসলমানের ঈমানের পরিচয়। এবং তাদের ব্যাপারে মন্দ, খারাপ ধারণা করা মুনাফেকির আলামত। যেকোন সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে কু-ধারণা হতে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। স্বয়ং হযরত সিদ্দিকে আকবর, হযরত ওমর ফারূকে আযম, ও হযরত ওসমান গণি, হযরত মাওলা আলী মুশকিল কোশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমসহ কোন সাহাবী, সম্মানিত তাবেঈন, তবে তাবেঈন, মাযহাবের ইমামগণ এবং তরিকতের শাইখগণ সকলেই হযরত আমিরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে নেহায়ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছেন। তাঁর শানে কাফির, মুনাফিক ও ফাসিক এ জাতীয় শব্দ প্রয়োগ করা ভন্ড, মুনাফিকের চরিত্র, কোন প্রকৃত ঈমানদারের চরিত্র হতে পারে না।
উল্লেখ্য যে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের দৃষ্টিতে ‘‘আহলে বায়তে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ও সাহাবা-ই কেরামের মর্যাদা’’ শীর্ষক কিছু দিন পূর্বে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে এ ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বিদা ও চূড়ান্ত ফায়সালা তুলে ধরা হয়েছে। যা সুস্পষ্টভাবে মাসিক তরজুমান সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ও প্রচার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। সুতরাং এ ব্যাপারে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
তবে সাহাবায়ে কেরাম বিশেষত: হযরত মাওলা আলী মুশকিল কোশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এবং হযরত আমীরে মুবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মধ্যে যুদ্ধ, বিদ্রোহ এবং দ্বন্ধ যা সংঘটিত হয়েছিল তা একমাত্র ইজতিহাদগত ভুল। যার দরুণ কোন সাহাবীয়ে রাসূলকে সন্দেহ ও দোষারূপ করা যাবে না, বরং দোষারূপ করা হারাম। এ বিষয়ে ‘শরহুল মাওয়াক্বিফ’ সহ ইসলামী আকায়েদ গ্রন্থসমূহে অধিকাংশ হক্কানী ইমাম মুজতাহিদ, ফকিহ ও ওলামায়ে রব্বানীর চূড়ান্ত অভিমত/ ফায়সালা এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে- ماشجر بين على ومعاوية رضى الله عنهما كان على على الصواب كان ومعاوية على الخطاء-
অর্থাৎ মাওলায়ে কায়েনাত হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এবং হযরত আমিরে মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর মধ্যে যুদ্ধ-বিদ্রোহ/রক্তপাত যা হয়েছে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর ইজতিহাদ সঠিক ছিল আর হযরত আমিরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর ইজতিহাদ ভুল ছিল। উভয়ে যেহেতু মুজতাহিদ ছিলেন বিধায় মুজতাহিদের ইজতিহাদগত ভুল দোষণীয় না বরং আল্লাহ্ তা‘আলা সম্মানিত মুজতাহিদগণকে এমন মর্যাদা দান করেছেন যে, তাঁদের ইজতিহাদে ভুল হলেও তারা একটি সওয়াব ও একটি পুরষ্কারের অধিকারী হবেন। আর তাদের ইজতিদাদ বিশুদ্ধ হলে দুটি সাওয়াব ও দুটি পুরষ্কারের অধিকারী হবেন। স্বয়ং বিশ্ব বিখ্যাত মুফাসসির প্রিয় নবীর সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা বলেন যে, হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ফকিহ তথা মুজতাহিদ সাহাবী ছিলেন।
[সহীহ বোখারী: মানাকিব অধ্যায়, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৩১]

 প্রশ্ন: ২. কিছু লোক আছে যারা বলছে সাহাবায়ে কেরাম রিদ্বুয়ানুল্লাহি আলায়হিম আজমাঈন বিদ্বেষ বশত: পবিত্র ক্বোরআন শরীফ হতে মাওলা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ও আহলে বায়তের ফযীলত সংক্রান্ত আয়াতগুলো বাদ দিয়েছেন। এ আক্বিদায় বিশ্বাসী লোক ঈমানদার থাকবে?

 উত্তর: ২. এটা (ক্বোরআন শরীফ হতে মাওলা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও আহলে বায়তের ফযীলত সম্পর্কিত আয়াত বাদ দেয়া হয়েছে) একটি ভ্রান্ত ধারণা এবং শিয়াদের নিকৃষ্ট আক্বিদা। যা বানোয়াট, মিথ্যা ও মনগড়া। এই আক্বিদা পোষণ করলে ঈমান ও ইসলাম হতে পরিষ্কার খারিজ হয়ে যাবে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত সহ জমহুরের আক্বিদা হলো ক্বোরআন শরীফ শাশ্বত এবং অবিকৃত, অপরিবর্তীত। এ ব্যাপারে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করা যাবে না। কেউ সন্দেহ করলে সাথে সাথে ঈমান ও ইসলাম হতে খারিজ হয়ে যাবে। আল ক্বোরআন অখণ্ড, অপরিবর্তীত, অবিকৃত আছে এবং থাকবে। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা সূরা বাকারার শুরুতেই ইরশাদ করেছেন- ذٰلِكَ الْكِتابُ لَا رَيْبَ فِيهِ هُدىً لِلْمُتَّقِينَ- الۤم অর্থাৎ- আলিফ-লাম-মীম, এটা সেই উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন কিতাব (ক্বোরআন মজীদ) যেখানে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। তাতে হিদায়ত রয়েছে খোদাভীরু সম্পন্নদের জন্য। [সূরা বাকারা: আয়াত-১,২]
সুতরাং ক্বোরআন শরীফের সূরা, আয়াত সংখ্যা নিয়ে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করা যাবে না। আর ক্বোরআন মজীদ সংরক্ষণ অবিকৃত ও অপরিবর্তিত রাখা স্বয়ং আল্লাহ্ তা‘আলা নিজের কুদরতের জিম্মায় রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ইরশাদ করেছেন-
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ(سورة الحجر–৯)অর্থাৎ- আমিই ক্বোরআন মজীদ অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক। [সূরা হিজর: আয়াত-৯]
এ আয়াতে করীমা দ্বারা শিয়াদের ভ্রান্ত দাবি ক্বোরআন পরিবর্তন (তথা আয়াত বাদ দেয়া হয়েছে) করা হয়েছে তা মিথ্যা প্রমাণিত হলো। তাছাড়া যারা দাবি করে ক্বোরআন শরীফ পরিবর্তন করা ও পরিবর্ধন করা যায় তাদের ভ্রান্ত দাবি মিথ্যা আখ্যায়িত করে মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন-
وَإِن كُنتُمْ فِى رَيْبٍۢ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا فَأْتُواْ بِسُورَةٍۢ مِّن مِّثْلِهِ-(سورة البقره-২৩)
অর্থাৎ- আমি আমার প্রিয় বান্দা (নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্) এর ওপর যা নাযিল করেছি তাতে তোমাদের সন্দেহ থাকলে! তোমরা তার অনুরূপ কোন সূরা নিয়ে আস! [সূরা বাকারা: আয়াত-২৩]
শুধু তাই নয় মহান আল্লাহ্ তা‘আলা নিশ্চিতভাবে ঘোষণা করেছেন ক্বোরআনের অনুরূপ পেশ করা একেবারে অসম্ভব। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেছেন-
قُلْ لَّئِنِ ٱجْتَمَعَتِ ٱلْإِنسُ وَٱلْجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأْتُوا۟ بِمِثْلِ هٰذَا ٱلْقُرْءَانِ لَا يَأْتُونَ بِمِثْلِهِۦ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍۢ ظَهِيْرًا–অর্থাৎ- হে হাবীব! আপনি বলুন! এই ক্বোরআনের অনুরূপ ক্বোরআন নিয়ে আসার জন্য যদি মানুষ ও জিন একত্রিত হয় এবং তারা যদি পরস্পরকে সাহায্য করে, তবুও তারা এর (ক্বোরআন শরীফ) অনুরূপ নিয়ে আসতে পারবে না। [সূরা ইসরা: আয়াত-৮৮]
উপরোক্ত আলোচনা হতে প্রতীয়মান হয়ে যে, ক্বোরআন শরীফ নাযিলের পর হতে আজ অবধি আল ক্বোরআনের শুরু হতে শেষ, সূরা ফাতিহা হতে সূরা নাস, বিসমিল্লাহ্-এর বা (ب) হতে সূরা নাসের (س) পর্যন্ত অপরিবর্তিত ও অপরিবর্ধিত আল্লাহ্র কালাম ও ওহী, যা তিনি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর নাযিল করেছেন। সুতরাং আল ক্বোরআনে রদবদল বা বিকৃত করা হয়েছে যে মনে করবে, বিশ্বাস করবে সে মূলত আল্লাহর কালামকে অস্বীকার করল, যে ক্বোরআন মজীদের ১টি হরফ ও ১টি আয়াত অস্বীকার করল সে বেঈমান ও কাফির। এবং এটা শিয়াদের ভ্রান্ত আক্বিদা। আল্লাহ্ তা‘আলা পথভ্রষ্ট শিয়াদের খপ্পর হতে সরলমনা সাধারণ মুসলমানদেরসহ সবাইকে হেফাজত করুন। আমীন।

 আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবদুল হাই
টাঙ্গাইল।

প্রশ্ন: ১. আমরা জানি কবরের উপর বাড়ি ঘর নির্মাণ করা সম্পূর্ণ হারাম। এমনকি মসজিদও নির্মাণ করা যাবে না। আমার দাদা দাদীর কবরের উপর চাচাতো ভাই ও তার ছেলেরা ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছে। অনেক সালিশ দরবার করেও কবরের উপর থেকে ঘর সরানো সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে শরীয়তের ফয়সালা কি? অনুগ্রহ করে বিস্তারিত জানাবেন।

উত্তর: ১. কোন মুসলমানের কবর বা কবরস্থানের উপর যদিও তা পুরাতন হোক না কেন মসজিদ-মাদরাসা, ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা নাজায়েয ও হারাম। এমনকি মুসলমানের এমন পুরাতন কবরস্থান যেখানে কবরের কোন নিশানাও নেই বা মুছে গেছে, মৃত ব্যক্তিদের হাড্ডিসমূহেরও কোন অস্তিত্ব নেই তবুও উক্ত কবরস্থানে ক্ষেত-খামার, বসত-বাড়ি, ঘর এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ, মাদ্রাসা ইত্যাদি নির্মাণ করা নাজায়েয ও হারাম। হুযূর আকরাম প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ان الميت تياذَّى مِمَّا تياذَّى منه الحىُّ-
অর্থাৎ জীবিত ব্যক্তিরা যেসব কাজে কষ্ট পায় মৃতরাও ওইসব কাজের দরুণ কষ্ট অনুভব করেন। আরো ইরশাদ করেছেন- لاتصلوا على قبر অর্থাৎ তোমরা কবরের ওপর নামায পড়ো না। অপর হাদিসে ইরশাদ করেছেন-
لَأَنْ يجلِسَ احدكم على جمرة فتحرق ثيابهُ حتى تخلص الى جلده خيرٌ لَه مِنْ أنْ يَجْلِسَ على قبر- (ابو داؤد)
অর্থাৎ- তোমাদের কেউ জ্বলন্ত আগুনের অঙ্গারে বসলো। অতঃপর ওই আগুন তার কাপড় জ্বালিয়ে তার শরীরের চামড়া পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছল, এটা ওই ব্যক্তির জন্য কবরের উপর বসা থেকে উত্তম।
[আবূ দাঊদ শরীফ, কিতাবুল জানায়েয, পৃষ্ঠা-১০৪]
আমাদের হানাফী মাযহাবের আলিম ও মুফতিগণ কবরের উপরের ছাদকে মৃত ব্যক্তির অধিকার বলে ফতোয়া দিয়েছেন। যেমন: ফতোয়া-ই আলমগীরীতে উল্লেখ রয়েছে-
عن القنية قال علاء الدين الترجمانى ياثم بوطى القبور لان سقف القبر حق الميت-
অর্থাৎ কুনিয়া নামক কিতাবে বর্ণিত আছে যে, ফক্বীহ আলা উদ্দীন তরজুমানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেছেন, কবরের ওপর দিয়ে চলেফেরা করা গুনাহ্। কেননা কবরের ছাদ মৃতের অধিকারভুক্ত।
ফতোয়ায়ে আলমগীরী কিতাবুল ওয়াক্ফ এর ২য় পরিচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে-
سئل (اى الامام سمش الائمة محمود الازوجندى)عن المقبرة فى القرى اذا اندرست ولم يبق فيها اثر الموتى ولا العظم ولاغيره هل يجوز زرعها قال لا ولها حكم المقبرة كذا فى المحيط-
অর্থাৎ শামসুল আইম্মা কাজী মাহমুদ থেকে লোকেরা ফতোয়া তলব করলেন যে, গ্রামের এমন পুরাতন কবরস্থান, যাতে কবরের কোন চিহ্ন অবশিষ্ট নেই, এমনকি মৃত ব্যক্তির হাড্ডি ইত্যাদিরও কোন অস্তিত্ব নেই, সুতরাং সেখানে ক্ষেত-খামার করা জায়েয কিনা? তিনি উত্তরে বললেন- না, জায়েয নেই বরং তা কবরস্থানের অন্তর্ভুক্ত। মুহীত নামক গ্রন্থেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। সুতরাং কোন নতুন বা পুরাতন কবরস্থানের উপর বসতবাড়ি-ঘর, দালান-কোটা, ক্ষেত-খামার, দোকান-পাট, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি নির্মাণ এমন কি মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ করা হারাম, গুনাহ্ ও না-জায়েয। কেউ নির্মাণ করলে, বাঁধা দেওয়া, ভেঙ্গে দেওয়া মুমিন মুসলমানদের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। যদি বাঁধা দেয়ার বা ভেঙ্গে ফেলার শক্তি না থাকে তখন উক্ত ব্যক্তির এ হারাম কাজকে অন্তর ও মনে-প্রাণে ঘৃণা করবে। وذالك اضعف الايمانকারণ এটা সম্পূর্ণ হারাম এবং মুর্দাকে কষ্ট দেয়ার নামান্তর।
[সুনানে আবু দাউদ শরীফ, কুনিয়া, মুহীত, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ও আমার রচিত যুগজিজ্ঞাসা ইত্যাদি]

 প্রশ্ন: ২. এই কথাটি কতটুকু সত্য যে, একজন মানুষকে তার জীবদ্দশায় আঘাত করলে সে যতটুকু কষ্ট অনুভব করে একজন কবরবাসীও ঠিত তেমন কষ্ট অনুভব করে? কবর জিয়ারতের গুরুত্ব বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।

 উত্তর: ২. ইসলাম সাম্য মানবতা এবং মানবাধিকার রক্ষার ধর্ম। ইসলাম জীবিত ও মৃত সকলের অধিকার সংরক্ষণ করেছে। তাই ইসলাম জীবিত সম্মানিত ব্যক্তিগণের ন্যায় মুসলিম নর-নারী মৃতদের ব্যপারেও সম্মান করার এবং তাদের কবরকে ইজ্জত করার তাগিদ দিয়েছে। হাদীসে পাকে বর্ণিত রয়েছে প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আম্মার বিন হাজম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত-
قال رأنى رسول الله صلى الله عليه وسلم جَالِسًا على قبر فقال يا صاحب القبر انزل لاتُوذى صاحب القبر ولا يُوذِيك- (المستدرك للحاكم)
অর্থাৎ- তিনি বলেন, আল্লাহ্র রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম একটি কবরের ওপর আমাকে উপবিষ্ট ও বসা অবস্থায় দেখে বলেন, হে কবরে উপবিষ্ট বসা ব্যক্তি! কবর থেকে নেমে যাও। কবরবাসীকে কষ্ট দিওনা এবং সেও যেন তোমাকে কষ্ট না দেয়। [আল্ মুস্তাদরক-কৃত: হাকেম রাহ. হাদীস নং-৬৫৭৯]
মুসলিম মৃতদের সম্মান ও মর্যাদা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট ফকীহ্ হেদায়া গ্রন্থের ব্যাখ্যাকারী আল্লামা ইবনুল হুমাম রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর ‘‘ফতহুল কাদির’’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন-
الادفاقُ على أنَّ حرمةَ المسلم مَيَّتًا كحرمَتَه حَيًّا-
অর্থাৎ- এ বিষয়ে ফকীগণের ঐক্যমত হয়েছে যে, জীবিত মুসলমানের মত মৃত মুসলমানকেও সম্মান করতে হবে। [ফতহুল কাদির: ৩য় খণ্ড, ৪৩১ পৃষ্ঠা]
এ ছাড়া হাদীসে পাকে উল্লেখ রয়েছে- মৃতকে তার কবরে ঐ জিনিস কষ্ট দেয় বা তাকে তার ঘরের মধ্যে (জীবিত অবস্থায়) কষ্ট দেয়।
[আবূ দাঊদ ও ইবনে মাজাহ্ শরীফ]
অন্য হাদীসে রঈসূল ফোকাহা বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ বিন মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে হযরত ইবনে আবী শায়বাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেন-
أذى المؤمِن فى مَوْتِهِ كأذاه فى حَيَاتِه-
অর্থাৎ মুমিনকে মৃত্যুর পর কষ্ট দেয়া তাঁকে জীবিত অবস্থায় কষ্ট দেয়ার মত।
[আল্-মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ্: ৩/৩৬৭, হাদীস নং ১২১১৫]
সুতরাং মুসলমানদের নতুন ও পুরাতন কবরস্থানের প্রতি যত্নবান হওয়া-সম্মান করা প্রত্যেক জীবিত মুসলমানের একান্ত ঈমানী দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্বীয় উম্মতকে মৃত ব্যক্তি তথা ঈমানদার নর-নারীর কবর জিয়ারত করার শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন ইরশাদ করেছেন-
عن ابن مسعود رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كنت نهيتكم عن زيارة القبور فزروها فانها تزهد فى الدنيا وتذكر الاخرة- (سنن ابن ماجة)
অর্থাৎ- হযরত আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদেরকে পূর্বে কবর জিয়ারত হতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা জিয়ারত কর কেননা কবর জিয়ারত দুনিয়া হতে বিমুখ করে এবং পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। [বর্ণনায় ইবনে মাজাহ্]
সুনান আবূ দাউদ শরীফের বর্ণনায় এসেছে তোমরা কবর জিয়ারত কর কেননা কবর জিয়ারতের মধ্যে উপদেশ রয়েছে। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হাদীসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, কবর জিয়ারত জিয়ারতকারীর অন্তরকে নরম করে দেয় এবং চক্ষু হতে অশ্রু বের করে। মুস্তাদরকে ইমাম হাকেমের বর্ণনায় এসেছে প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা কবর জিয়ারত কর, কেননা কবর জিয়ারত তোমাদের অন্তরে মৃত্যুর স্মরণ করে দেয়। কবর জিয়ারত ইসলামী শরীয়তের বিধান মতে সুন্নাত ও অনেক ফযীলতপূর্ণ ইবাদত।

 মাওলানা মুহাম্মদ মনিরুল আলম আশরাফী
প্রেমাশিয়া, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম।

 প্রশ্ন: ইমামের পেছনে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযে এক রাকাআত চলে যাওয়ার পর দ্বিতীয় রাকাআতে মুক্তাদী শরিক হলো, যা ঐ মুক্তাদীর জন্য প্রথম রাকাত এখন প্রশ্ন হলো দ্বিতীয় রাকাআতে (যা ঐ মুক্তাদীর জন্য প্রথম রাকাআত) বৈঠকে ঐ মুক্তাদী তাশাহুদ পড়বে নাকি চুপ থাকবে? তদ্রুপ কোন মুসল্লি যদি চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযের জমাতে ৪র্থ রাকাতে ইমামের সাথে শরিক হন সে বাকি ফরয নামায কিভাবে পড়বে?

উত্তর: তাশাহুদ পড়বে শুধুমাত্র। কোন ব্যক্তি/মুসল্লী ইমামের সাথে জামাআতে চতুর্থ রাকাআতে এসে শামিল হল, ইমাম সালাম ফিরানোর পর বাকী তিন রাকা’আত নিন্মের এই নিয়মে পড়বে- ইমামের সালাম ফিরানোর পর সে দাঁড়িয়ে দু’আ-এ সানা পড়বে, অতঃপর ‘তা’উয’ (আউযু বিল্লাহ্) থেকে শুরু করবে, আলহামদু শরীফ ও অন্য সূরা পড়ে যথারীতি রুকূ, সাজদা করে বসবে এবং উক্ত বৈঠকে শুধুমাত্র ‘আত্তাহিয়্যাতু পড়ে দাঁড়িয়ে যাবে। তারপর দ্বিতীয় রাকাআতে আলহামদু শরীফের সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়বে, রুকু, সিজদা করে কা’দা (বৈঠক) করা ছাড়াই সোজা দাঁড়িয়ে যাবে এবং তৃতীয় রাকাআতে শুধুমাত্র আলহামদু শরীফ পড়ে রুকূ, সিজদা করে শেষ বৈঠকে বসবে এবং নামায পূর্ণ করবে। [ফাতওয়া এ রযভীয়্যাহ, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৯৩]
অর্থাৎ উক্ত মুসল্লি তাঁর প্রথম রাকাআতে সানা, আলহামদু শরীফ ও সূরা পড়ে রাকাআত পূর্ণ করে প্রথম বৈঠকে বসবে। দ্বিতীয় রাকাআতেও ‘আলহামদু শরীফ’ ও সূরা পড়ে কা’দা (বৈঠক) না করে সাজদা থেকে সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। আর তৃতীয় রাকাআতে শুধু আলহামদু শরীফ পড়ে রুকূ সাজদা করে শেষ বৈঠক করবে এবং আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ শরীফ, দু’আ-এ মাসূরা পড়ে সালাম ফিরাবে ও নামায পূর্ণ করবে ।
[দুররে মুখতার, রাদ্দুল মুহতার, গুনিয়া, খোলাসা, বাহারে শরীয়ত, খন্ড-৩, পৃ. ১৩৬, ফতোয়ায়ে এ রয়ভীয়্যাহ, খন্ড-৩য়, পৃ;-৩৯২-৩৯৩ ও মুমিন কি নামায, ৭ম ও চৌদ্দতম অধ্যায় ইত্যাদি]

 মুহাম্মদ আবদুল আউয়াল
লাকশাম।
 প্রশ্ন: দাওয়াতে খায়র মজলিশে একজন মুয়াল্লিম বল্লেন আসর এবং এশা নামাযের ফরযের পূর্বে যে চার রাকা’আতে সুন্নাত তথা সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ রয়েছে, তাতে প্রতি রাকআতে সুরা ফাতিহার সাথে অন্য সুরা মিলাতে হবে । অথচ আমরা শুধু ১ম দু রাকাতে সুরা মিলাতাম। আর এ চার রাকাআত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদার দু’রাকাত অন্তর ১ম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতুর পর (তাশাহুদ) দরুদ শরীফ ও দো’আয়ে মাসূরা পড়তে হবে কিনা? আমরা এতদিন পড়িনি। সহীহ ও সঠিক মাসআলা জানালে উপকৃত হব।
 উত্তর: আসর এবং এশা নামাযের ফরযের পূর্বের চার রাকাআত সুন্নাত, সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ্। ওই চার রাকাআত নামায এক সালামের মাধ্যমে আদায় করা হয়। আর দুই রাকাআতের পর ‘কুদায়ে উলা’ (প্রথম বৈঠক) জরুরী। আর প্রথম বৈঠকে ‘আত্তাহিয়্যাতুর পর দরূদ শরীফ পড়া সুন্নাত। আর তৃতীয় রাকাআতের জন্য দাঁড়ালে দু’আ-এ সানা পুরোপুরিভাবে এবং তা‘উযও পড়বে। কেননা, সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ্ নফলের মতো। আর নফল নামাযের প্রত্যেক বৈঠক শেষ বৈঠকের হুকুমে। এই জন্য প্রত্যেক বৈঠকে ‘আত্তাহিয়্যাতু’-এর সাথে দরূদ শরীফ ও দো‘আ পড়া চাই। এবং প্রথম বৈঠকের পর তৃতীয় রাকাআতের শুরুতে দো‘আ-এ সানা ও ‘তা‘উয’ (আউযু বিল্লাহ্)ও পড়া সুন্নাত। এবং প্রত্যেক রাকাআতে সূরা ফাতিহার পর সূরাও মিলাতে হবে। এটাই সহীহ ও সঠিক মাসআলা। না জানলে জেনে নেয়া প্রত্যেকের জন্য একান্ত কর্তব্য। [দুররে মুখতার, বাহারে শরীয়ত: ৩ খণ্ড, পৃষ্ঠা- ১৫, ফতোয়া-এ রযভীয়্যাহ্: খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪৬৯ ও মুমিন কি নামায, ৭ম অধ্যায়]

দু’টির বেশি প্রশ্ন গৃহীত হবেনা  একটি কাগজের পূর্ণপৃষ্ঠায় প্রশ্ন লিখে নিচে প্রশ্নকারীর নাম, ঠিকানা লিখতে হবে
 প্রশ্নের উত্তর প্রকাশের জন্য উত্তরদাতার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বাঞ্ছনীয় নয়। প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা:
প্রশ্নোত্তর বিভাগ, মাসিক তরজুমান, ৩২১, দিদার মার্কেট (৩য় তলা), দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম-৪০০০।

Share:

Leave Your Comment