ওমান সফর ও কিছু কথা..

ওমান সফর ও কিছু কথা..

অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়্যদ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান আলকাদেরী

গত ৯ অক্টোবর ২০২২ খ্রিস্টাব্দ রবিবার মধ্যপ্রাচ্যের নেহায়ত আকর্ষণীয় বিশ্বের অন্যতম সৌন্দর্যমন্ডিত পরিচ্ছন্ন দেশ ওমানে সফর করি। ওইদিন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া ময়দানে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম মাহফিলে অংশ গ্রহণ শেষে ইউএস বাংলা বিমানযোগে ওমানের সময় রাত ১২ঃ৩০ টায় মাস্কাট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করি। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে বের হয়ে দেখি বিমান বন্দরে অপেক্ষমান গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ ওমান কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, সভাপতি আবুল কালাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি স্নেহের আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুস সালাম আল কাদেরী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক রুকনুদ্দিন রোকন, যুগ্ম সেক্রেটারী বাবু ভাই, হাজী জসিম, আলহাজ্ব কামাল পাশা, গোফরান পাটোয়ারী, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও গাউসিয়া কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তাঁদের সাথে আন্তরিক শুভেচ্ছা বিনিময় করে ওমানের রাজধানী মাস্কাটের আল কুরমে স্নেহের মাওলানা আব্দুস সালামের বাসভবনে রাত যাপন করি। তিনি সেখানে দীর্ঘদিন ধরে স্ব-পরিবারে রয়েছেন। মাশাআল্লাহ! আলিশান আরবিদের স্টাইলে চমৎকার ঘর দেখে মুগ্ধ হয়েছি। ওমানের দুই সপ্তাহ সফরে সেখানে অবস্থান করে বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও মাহফিলে অংশ গ্রহণ করি।

ওমানে প্রবাসী বিপুল সংখ্যক আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারি দেখে আনন্দে মন ভরে যায়। বিশেষত গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ এর বিভিন্ন শাখা কমিটি ও আমাদের পীরভাইদের সাংগঠনিক অবস্থান খুব মজবুত। তারা প্রতি বছর জশনে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মাহফিল অত্যন্ত শানদার ভাবে আয়োজন করে থাকেন। ওইসব মাহফিলে এ দেশের বহু আলিমকে তারা সফরের ব্যবস্থা করেন। ইতিপূর্বে হুজুর কেবলায়ে আলম, শায়খে ফা‘আল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ মুদ্দাজিল্লুহুল আলী ৬ বার সফর করেছেন। চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসার দীর্ঘ সময়ের অধ্যক্ষ খতিবে বাঙ্গাল, আমার শিক্ষাগুরু আল্লামা জালাল উদ্দিন আল কাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, জামেয়ার দীর্ঘদিনের শায়খুল হাদীস, শেরে মিল্লাত, উস্তাযি আল্লামা মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, জামেয়ার প্রধান মুহাদ্দিস বন্ধুবর হাফেজ মাওলানা সুলাইমান আনসারী, জামেয়ার আরবি প্রভাষক স্নেহের হাফেজ মাওলানা কবি আনিসুজ্জামান ও জামেয়ার মুহাদ্দিস স্নেহের মাওলানা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন আল আযহারী ওমান সফর করেছেন এবং তাঁরা ওমানের বিভিন্ন মাহফিলে সারগর্ভ বয়ান পেশ করেছেন। আমি বিগত সময়ে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মিশর, পাকিস্তান, ভারত, ইরাক, ইসরাইল, ফিলিস্তিন বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ সফর করলেও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম আরব দেশ ওমানের সফর ইতোপূর্বে হয়নি। এই প্রথমবার ওমান সফরে যতটুকু উপলব্ধি করলাম গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ ওমান কেন্দ্রীয় পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় পরিষদের আওতাধীন গাউসিয়া কমিটির বিভিন্ন শাখার দায়িত্ববান প্রবাসী ভাইদের আন্তরিকতা, আতিথেয়তা, দয়া-মায়া সুন্নিয়াত ও গাউসিয়তের খেদমতে একনিষ্ঠতা ও সেবা দান কখনো ভুলা যাবে না। তাঁরা সুন্নিয়াত ও গাউসিয়তের যে বাগান সাজিয়েছেন, আমাদের মাশায়েখ হযরাত বিশেষতঃ কুতুবুল আউলিয়া বানিয়ে জামেয়া,আল্লামা হাফেয ক্বারী সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি রাহমতুল্লাহি আলায়হি, গাউসে জামান মুর্শিদে করিম আল্লামা হাফেয ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ মুদ্দাজিল্লহুল আলীর সুদৃষ্টি ও আধ্যাত্মিক ক্ষমতার ফসল মনে করি। গাউসিয়া কমিটির ভাইদের আন্তরিকতা, মাজহাব-মিল্লাতের খিদমত আমাকে মুগ্ধ করেছে। বিভিন্ন স্থানে গাউসিয়া কমিটির শাখা কমিটি আয়োজিত মাহফিলে অংশ গ্রহণের পাশাপাশি তাদের সাথে অনেক ঐতিহাসিক পবিত্র স্থান পরিদর্শনের সুযোগ হয়।

ওমান সফরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও আকর্ষণীয় দিক
সাহাবীয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত মাজেন বিন গাদুবা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এর মাজার শরীফ (যা ওমান সামায়েল শহরে অবস্থিত) ১৫ অক্টোবর শনিবার জোহরের নামাজের পর জিয়ারত করি। তিনি ওমানের প্রথম মুসলমান। ষষ্ঠ হিজরীতে মূর্তি পূজা ত্যাগ করে মদিনা শরীফ হাজির হয়ে প্রিয় নবী সরকারের দো-আলম রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর নূরানী হাতে ইসলাম কবুল করেন। প্রিয় নবীর নির্দেশে ওমানে ফিরে এসে ইসলাম প্রচার করেন এবং ওমানের সামাইল এলাকায় প্রথম মসজিদ কায়েম করেন। যা পরবর্তীতে ওমানের দীর্ঘদিনের বাদশা সুলতান কাবুস বিন সাঈদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি স্বউদ্যোগে বড়ই চমৎকার ডিজাইনে ২০১৭ ইংরেজি সনে নতুনভাবে সংস্কার করতঃ দেশি-বিদেশি সকল মুসলমানের ইবাদতের জন্য উন্মুক্ত করেছেন। উক্ত মসজিদের নাম মসজিদে মাজেন বিন গদুবা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু। আরবি- ইংরেজিতে মসজিদের সামনে যার বিবরণ নেইম ফলকে স্পষ্ট ভাষায় পরিলক্ষিত হয়।

উক্ত সাহাবিয়ে রাসূলের জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তিনি সহ তাদের গোত্রের সবাই মূর্তি পূজা ও নানা পাপাচারে লিপ্ত ছিল। তাদের মূর্তির নাম ছিল বাজের। অন্যদিনের ন্যায় একদিন পূজা করতে আসলে আল্লাহর কুদরতে পাথরের মূর্তি বাজের হতে আওয়াজ আসলো, তুমি আমার পূজা করলে ক্ষতি ছাড়া কোন উপকার হবে না বরং যদি উভয় জাহানের কল্যাণের প্রত্যাশা করো তবে কাল বিলম্ব না করে এখনই মুহাম্মদে আরবি কুরাইশী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের নিকট মদিনায় চলে যাও। তিনি মক্কা শরীফ হতে হিজরত করে বর্তমানে মদিনা মনোয়ারায় অবস্থান করছেন। তিনদিন যাবত পাথরের মূর্তি হতে এই জাতীয় শব্দ ও বাক্য তিনি প্রত্যক্ষ করলেন। অতঃপর সফরের অনেক কষ্ট স্বীকার করে মদিনা শরীফে পৌঁছে ইসলাম কবুল করলেন। ওমান বাসীর হেদায়ত, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য প্রিয় নবীর খেদমতে দোয়া কামনা করে ওমান ফিরে আসলেন। ওমানে ফিরে তিনি ইসলাম প্রচার করেছেন ও মূর্তি ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ করেছেন। তিনি বেশ কয়েকবার হজ্ব করেছেন এবং অর্ধেক কুরআন হিফজ করেছেন। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রাহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘আল এসাবা’ গ্রন্থের তৃতীয় খন্ডের ৪৪৬ পৃষ্ঠায়, ইমাম বায়হাকী ও তাবরানির সূত্রে হযরত মাজেন বিন গাদুবা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে সাহাবায়ে রাসুলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

১৮ই অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল ৮:৩০ ঘটিকায় ওমান মাস্কাট হয়ে বিমানযোগে সালালায় পৌঁছে হযরত আইয়ুব নবী আলায়হিস সালাম, হযরত ইমরান নবী আলায়হিস সালাম, শ্রেষ্ঠ ফকীহ্ ও আলিমে রব্বানী মাওলা আলী মুশকিল কোশার নুরানী আওলাদ হযরত মুহাম্মদ বিন আলী উলুবী রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং ইয়ামেন সীমান্তের নিকটে সালালায় অবস্থিত অদ্বিতীয় আশেকে রাসূল শ্রেষ্ঠতম তাবেয়ী হযরত ওয়ায়সুল করনী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সহ বেশ কয়েকজন বুজুর্গানে দ্বীনের মাজার শরীফ জিয়ারত করি। বিশেষতঃ সালালায় হযরত সালেহ নবীর উটের স্থান জিয়ারত করার সৌভাগ্য নসিব হয়। সেখানে সালেহ নবীর বিশেষ উটের পদচিহ্ন ও রক্তের দাগ হাজার হাজার বৎসর পর এখনো পরিষ্কার দেখা যায়। ওমান সরকার নেহায়েত যতœ সহকারে তা সংরক্ষণ করেছেন। এবং জিয়ারতকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে রেখেছেন। ওমানের রাজধানী মাস্কাট সহ প্রতিটি শহরে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামা উদ্যাপন উপলক্ষে অতি শানদারভাবে মাহফিল আয়োজন অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। সালতানাতে ওমানের প্রতি লাখো লাখো শুকরিয়া ও মোবারকবাদ। বর্তমান সৌদি আরব সরকারকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সৌন্দর্য্যমন্ডিত আরব দেশ ওমান থেকে শিক্ষা ও সবক গ্রহণের আহ্বান করছি। মাগরিবের পর ওমান এয়ার যোগে আমি এবং আমার সফরসঙ্গী সকলে মাস্কাটে ফিরে রাত ১০ টায় মাহফিলে যোগদান করি। মধ্যপ্রাচ্যের খুবই সুন্দরতম দেশ ওমানের রাজধানী মাস্কাটসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার মাহফিল সমূহে প্রচুর প্রবাসী ও ওমানী আরবীদের উপস্থিতি আমাকে আকর্ষণ করেছে। তদ্রুপ নবী, সাহাবী ও বিশিষ্ট অলিগণের মাজার শরীফ জিয়ারত আমি এবং আমার সঙ্গীদেরকে অনেক আনন্দ দিয়েছে। সকল প্রবাসী ও ওমান ভ্রমনকারীগণকে এসব জিয়ারত ও আল্লাহর বন্ধুদের ফয়েজ বরকত হাসিল করা থেকে বঞ্চিত না হওয়ার অনুরোধ রাখছি। আরো খুশির বিষয় অনেক খাস ওমানি, আরবি জ্ঞানীগুণীকেও এসব মাজারে জিয়ারত করতে ও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম মাহফিলে দাঁড়িয়ে ‘‘ইয়া নবী সালামু আলাইকা’’, ‘‘তালায়াল বাদরু আলাইনা’’ আদব ও ভক্তির সাথে পাঠ করতে এবং মোনাজাতের পর মিলাদুন্নবী এর তাবারুক (বিরানি) ও জিয়াফত অত্যন্ত আনন্দে গ্রহণ করতে দেখে উৎফুল্ল হয়েছি। মহান আল্লাহ এ জজবা যেন সালামত রাখেন। আমীন। ওমানি বড় বড় জ্ঞানী আরবি শায়খদের মধ্যে যাঁরা আমার সাথে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন এবং দাঁড়িয়ে কিয়াম ও সালাত সালাম পাঠ করেছেন তাদের মধ্যে শেখ সাঈদ বিন হাবিব বিন হেলাল আল সাদী (নায়েবে রইস মজলিসে শুরা, ওমান), শেখ হামেদ বিন নাসির বিন আলী আল ঘারবী এবং শেখ সাইফ আল গাফেরী (খতিব মসজিদে আবু বক্কর মাওয়ালেহ, ওমান) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি গাউসিয়া কমিটি মাওয়ালেহ শাখা কর্তৃক আয়োজিত ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম মাহফিলে আরবিতে তকরীর করেছেন এবং প্রিয় নবীর মিলাদ তথা শুভাগমনের বিষয়ে আরবিতে অনেক কসিদা পড়েছেন। এবং ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর উপর আরবি ভাষায় আমার তকরির শুনে অনেক মুগ্ধ হয়েছেন এবং শ্রদ্ধাভরে বাংলাদেশের জনগণের ও প্রবাসীদের প্রশংসা করেছেন।

১৯ অক্টোবর বুধবার ওমানের গ্র্যান্ড মুফতি সমগ্র আরব বিশ্বের অন্যতম ইসলামী স্কলার শেখ আহমদ বিন হামদ আল খলিলির বিশেষ আমন্ত্রণে তাঁর সরকারি বাসভবনে দুপুরে আপ্যায়নে অংশগ্রহণ করি। তিনি উঁচু পর্যায়ের আলেমেদ্বীন- ওমান সরকারের নিকট তার বিশাল মর্যাদা। তিনি বিশাল মেহমানদারীর আয়োজন করেছেন, আমার সাথে দীর্ঘক্ষণ কথাবার্তা বলেছেন। বাংলাদেশের অবস্থা জেনেছেন তাঁর লিখিত বিশাল ফতোয়া ভান্ডার আমাকে উপহার দিয়েছেন এবং সময় সুযোগ মতো ওমান সফর করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি আমাকে ‘মুফতিয়ে বাংলাদেশ’ বলে সম্বোধন করেছেন। মূলত; এটা আমার মাশায়েখ হযরাতের মেহেরবানী। আমার সাথে গ্র্যান্ড মুফতির রাজকীয় আলীশান ভবনে রাষ্ট্রীয় অতিথিদের মধ্যে আল জাজিরা ও আমেরিকার বড় আলিম এবং গাউসিয়া কমিটি ওমান কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি হাজী আবুল কালাম, প্রধান উপদেষ্টা মনজুরুল ইসলাম মঞ্জু, সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী আব্দুল মতিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি মুজাহিদে মিল্লাত মাওলানা আব্দুস সালাম আল কাদেরী, জেনারেল সেক্রেটারি শামসুল আলম, সৈয়দ নাসির, জসীম উদ্দীন, হাজী মুসা, হাজী ইয়াকুব, হাজী কামাল পাশা, নাছির উদ্দিন বয়ান, বাবু ভাই প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা প্রায় সব প্রোগ্রামে আমার সফর সঙ্গী ছিলেন- তাদের প্রতি শুকরিয়া।

গত ১০ অক্টোবর ২০২২ ইং বাদ এশা মাস্কাট হামেরিয়া খানকায়ে কাদেরিয়া সৈয়দিয়া তৈয়বিয়ায় ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে আজিমুশশান মাহফিলে আমি বয়ান পেশ করি। প্রচুর বাঙালি প্রবাসীদের বিশেষতঃ গউসিয়া কমিটি ওমানের বিভিন্ন শাখার পীর ভাইদের উপস্থিতি দেখে মনে হল আমি যেন মাতৃভূমি স্বদেশে তথা চট্টগ্রামে মাহফিলে তকরির করছি। ১২ অক্টোবর বুধবার বাদ এশা ওমান সরকার কর্তৃক অনুমোদিত “বাংলাদেশ স্যোশাল ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত মাস্কাটের ফাহামবল হলে উক্ত ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব সিরাজুল হকের সভাপতিত্বে, ১৪ অক্টোবর শুক্রবার বাদে এশা ওমান সানাইয়া এলাকায় সৈয়দ জাহাঙ্গীর সাহেবের (সভাপতি গাউসিয়া কমিটি সানাইয়া) সভাপতিত্বে, ১৫ অক্টোবর ২০২২ বাদ এশা গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ আল আমিরাত শাখার ব্যবস্থাপনায় হযরত ওসমান বিন আফফান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু জামে মসজিদে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ আল আমিরাত শাখার সভাপতি সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে, ১৬ই অক্টোবর রবিবার বাদ এশা গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ আল খাব্বা আল খামিছ শাখার ব্যবস্থাপনায় উক্ত শাখার সভাপতি মুহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে, ১৭ই অক্টোবর সোমবার বাদ এশা ভি. পি. মাবেলা শাখা গাউসিয়া কমিটির ব্যবস্থাপনায়, ১৮ অক্টোবর মঙ্গলবার বাদ এশা গাউসিয়া কমিটি ওমান সেব শাখার আয়োজনে মুহাম্মদ ইলিয়াস সাহেবের সভাপতিত্বে ওমান সেব মসজিদে, ১৯ অক্টোবর বুধবার ওমান আল-ওয়াজা শাখা গাউসিয়া কমিটির উদ্যোগে উক্ত শাখার সভাপতি মুহাম্মদ আবু বকর সাহেবের সভাপতিত্বে, ২০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ওমান মাওয়ালেহ গাউসায়া কমিটির ব্যবস্থাপনায়, ২১ অক্টোবর শুক্রবার গাউসিয়া কমিটি ওমান বৃহত্তর সুর শাখার ব্যবস্থাপনায় উক্ত শাখার সভাপতি সৈয়দ হোসেন তালুকদারের সভাপতিত্বে ও জামেয়ার প্রাক্তন ছাত্র মাওলানা সোহেলের পরিচালনায়, ২২ অক্টোবর গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ আল সুইক শাখার ব্যবস্থাপনায় আল সুইক পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন ময়দানে উক্ত শাখার সভাপতি আলহাজ্ব মুহাম্মদ আজাদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান হুসাইন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম মাহফিলে প্রধান আলোচক হিসাবে বয়ান করি। সব মাহফিলে প্রচুর প্রবাসীদের এবং ওমানী আরবীদের সমাগম হয়। চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের ন্যায় ওমানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রবিউল আউয়াল মাসে নেহায়েত আদব ভক্তি সহকারে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন করা হয়। প্রতিটি মাহফিলে সালাত-সালাম, মিলাদ- কিয়াম ও দো’য়া মোনাজাতসহ তাবারুক বিতরণের মাধ্যমে মাহফিলের কর্মসূচি সমাপ্ত হয়।

আমি এ সফরে উপলব্ধি করেছি গাউসে জামান, আলম বরদারে আহলে সুন্নাত আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন ১৯৮৬ ইংরেজি সনে এক মহান মাকসাদ ও উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে। আল্লাহর প্রকৃত আউলিয়ায়ে কেরাম খোদায়ী ইশারায় মহৎ উদ্দেশ্যে কোন কর্ম আনজাম দিয়ে থাকেন! স্বীয় নফসকে খুশি করার জন্য বা কুপ্রবৃত্তির কারণে নয়। তাই আমি সকল পীরভাইদের অনুরোধ করব হিংসা-বিদ্বেষ, পরস্পরের মধ্যে কাদা ছুড়াছুড়ি নয় বরং ইখলাস, আন্তরিকতা ও মোহাব্বতের মাধ্যমে এ বাগানের যথাযথ পরিচর্যা করতে পারলে বিশ্ব ভূমন্ডলে বিশেষতঃ পাক-ভারত উপমহাদেশ সহ আরব দুনিয়ায় সুন্নিয়াত ও গাউসিয়তের জোয়ার সৃষ্টি হবে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ! এ কথা বুকে হাত রেখে বলতে পারি নির্দ্বিধায় ।

পরম করুনাময় রাব্বুল আলামিন দেশী-প্রবাসী সকল সুন্নি নবীপ্রেমিক ওলি আল্লাহর অনুসারী সবাইকে যেন আনজুমান, জামেয়া, সিলসিলা, শরীয়ত, তরিকত, গাউসিয়া কমিটি, দাওয়াতে খায়র ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সহি খেদমত আঞ্জাম দেয়ার তৌফিক দান করেন সে প্রার্থনা করে ইতি টানলাম। আমিন ইয়া রব্বাল আলামীন। ওমানের সকল প্রবাসী ভাইদের আবারো জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা ও মোবারকবাদ।

লেখক: অধ্যক্ষ (সাবেক) জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা, চট্টগ্রাম।

Share:

Leave Your Comment