হুযূর-ই আকরাম- এর অতুলনীয় দানশীলতা

হুযূর-ই আকরাম- এর অতুলনীয় দানশীলতা

মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান

‘দানশীলতা’ বুঝাতে আরবীতে দু’টি শব্দ ব্যবহৃত হয়, ‘জূদ’ ও ‘করম’ (جود و كرم)। মুহাক্বক্বিক্ব আলিমগণ বলেছেন- اَلْجُوْدُ مَا كَانَ بِغَيْرِ سُوَالٍ وَالْكَرَمُ بِسُوَالٍ ‘জূদ’ বলে যা যাচ্না করা বা চাওয়া ছাড়া দান করা হয় আর ‘করম’ হচ্ছে তা, যা চাইলে পাওয়া যায়। হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে এ দু’টি গুণ পরিপূর্ণভাবে ছিলো। আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেছেন-
واه كيا جود وكرم هے شه بطحا تيرا
نهيں سنتا هى نهيں مانگنےوالا تيرا
তরজমা: ওহে ‘বাত্বহা’ তথা আরবীয় দেশসমূহের কেন্দ্রস্থল মক্কা মুকাররমার বাদশাহ! আপনার ‘জূদ’ ও ‘করম’ সম্পর্কে আর কী-বা বলার আছে, আপনার নিকট সাহায্যপ্রার্থী তো ‘না’ (শব্দ) কখনো শুনতে পায় না।
আল্লাহ্ তা‘আলা ক্বোরআন মজীদে এরশাদ করেছেন- وَامَّا السَّآئِلَ فَلاَ تَنْهَرْ তরজমা: এবং ভিখারীকে, হে মাহবূব! সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম! বঞ্চিত করে ফিরিয়ে দেবেন না। [সূরা দ্বোহা: আয়াত-৯]
সহীহ্ বোখারী শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত সাইয়্যেদাহ্ আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা বলেন-
اِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ اَجْوَدَ النَّاسِ مِنَ الرِّيْحِ الْمُرْسَلَةِ وَمَا رَدَّ سَائِلاً قَطُّ وَمَا سُئِلَ عَنْ شَئٍ فَقَا لَ لاَ ـ
অর্থ: নবী-ই পাক শাহে লাউলাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সমস্ত মানুষ অপেক্ষা বেশী দানশীল ছিলেন। তাঁর দান তীব্র ঝড়ের চেয়েও বেশী গতিশীল ছিলো। তিনি কখনো কোন ভিখারী (সাহায্যপ্রার্থী)কে ‘না’ বলেননি, যখনই তাঁর দরবারে চাওয়া হয়েছে, তখনই তিনি তাকে দিয়েছেন। মোটকথা প্রত্যেক সাহায্যপ্রার্থী তার প্রার্থনানুসারে পেতো, কেউই তাঁর পবিত্র দরজা থেকে বঞ্চিত হয়ে ফিরে যায়নি।

হুযূর-ই আকরামের ‘জূদ’ ও ‘করম’ সম্পর্কে কয়েকটা ঘটনা
এক।। একদা এক ভিখারী তাঁর পবিত্র দরবারে আসলো এবং সাহায্য চাইলো। তিনি বললেন, ‘‘এখন আমার নিকট কিছুই নেই, তবে তুমি কারো নিকট থেকে আমার পক্ষে কিছু কর্জ নিয়ে নাও। যখন আমার নিকট কিছু মাল-সামগ্রী এসে যাবে, তখনই আমি তা পরিশোধ করে দেবো।’’ হযরত ওমর ফারূক্ব আরয করলেন, ‘‘হে আল্লাহর রসূল! খোদা তা‘আলা আপনাকে এমনটি করার কষ্ট দেননি, যা আপনার আয়ত্ব নেই!’’ হযরত ওমর ফারূক্বে আ’যমের একথা হুযূর-ই আকরাম আলায়হিস্ সালাম-এর পছন্দ হয়নি। তখন আনসারের এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘ইয়া রসূলাল্লাহ্! দান করুন! আরশের মালিকের নিকট কোন কিছুর কমতির আশংকা করবেন না।’’ একথা শুনে তিনি মুচকি হাসলেন এবং তাঁর নূরানী চেহারার সজীবতা সুস্পষ্টভাবে দেখা গেলো। আর এরশাদ করলেন, ‘‘এটারই আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ [শামাইলে তিরমিযী: বাবু মা-জা-আ ফী খুলুক্বি রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম]

হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর ঘটনা
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বাহরাইনের মাল আনা হলো। মালও ছিলো প্রচূর। তিনি বললেন, ‘‘মসজিদে রেখে দাও।’’ যখন তিনি নামায সমাপ্ত করলেন, তখন ওই মালের নিকট বসে গেলেন এবং বন্টন করতে লাগলেন। তাঁর চাচা হযরত আব্বাস তাঁর নিকট আসলেন আর আরয করলেন, ‘‘ইয়া রসূলাল্লাহ্! আমাকে এ মাল থেকে দিন! কেননা, বদরের যুদ্ধের দিনে আমি মুক্তিপণ দিয়ে নিজেকে এবং আক্বীল ইবনে আবূ তালিবকে আযাদ করেছিলাম।’’ হুযূর-ই আকরাম বললেন, ‘‘নিয়ে নিন!’’ হযরত আব্বাস উভয় হাতে তাঁর কাপড়ে মাল নিয়ে নিলেন। এবার তা বহন করার জন্য তুলতে লাগলেন। কিন্তু তুলতে পারলেন না। আরয করলেন, ‘‘ইয়া রসূলাল্লাহ্! কাউকে বলুন যেন মালটুকু আমার উপর তুলে দেন।’’ তিনি বললেন, ‘‘আমি কাউকে তা তুলে দিতে বলবোনা।’’ হযরত আব্বাস বললেন, ‘‘তাহলে আপনি নিজে তুলে আমার উপর রেখে দিন।’’ হুযূর-ই আকরাম বললেন, ‘‘আমি তাও করবোনা।’’ এবার হযরত আব্বাস তা থেকে কিছু মাল নামিয়ে রাখলেন এবং নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে রওনা হলেন। হুযূর-ই আকরাম তাঁকে দেখতে থাকেন, যে পর্যন্ত না তিনি দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলেন। আর তিনি আশ্চর্যবোধ করতে লাগলেন। মোটকথা, হুযূর-ই আকরাম সেখান থেকে উঠলেন এবং সেখানে কিছুই অবশিষ্ট থাকেনি। [সহীহ্ বোখারী, কিতাবুল জিহাদ]
এখানে হুযূর আকরাম অসাধারণ দানের প্রমাণ মিলে, আর হযরত আব্বাসের প্রতিও কোনরূপ তিরস্কারের সুযোগ নেই।

হুনায়নের যুদ্ধের গণীমতের মাল বন্টন
এ যুদ্ধে হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দানশীলতা ধারণাতীত ছিলো। তিনি তখন গ্রাম্য লোকদের মধ্যে অনেককে একশ’ করে উট দিয়েছিলেন। অবশ্য ওই দিন তাঁর দান বেশীর ভাগ লোকের অন্তরকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্যই ছিলো (مؤلفة القلوب)। হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি (সাফ্ওয়ান ইবনে উমাইয়া) ওই সব মেষ-ছাগল চেয়েছিলো, যেগুলো দ্বারা একটি উপত্যকা (দু’পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানটি ভর্তি ছিলো)। তিনি ওই সবটুকুই তাকে দিয়ে দিয়েছিলেন। সে ওইগুলো নিয়ে গিয়ে আপন সম্প্রদায়কে বলেছিলো, ‘‘হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো! আল্লাহরই শপথ! (হযরত) মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এমন দানশীল যে, তিনি দারিদ্র্যকে ভয় করেন না। [মিশকাত]
এ সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া বলেছেন, ‘‘হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের দিনে আমাকে মাল-সামগ্রী দান করছিলেন, অথচ তিনি তখন আমার দৃষ্টিতে সর্বাপেক্ষা অপছন্দনীয় ব্যক্তি ছিলেন। অতঃপর তিনি আমাকে দান করছিলেন, শেষ পর্যন্ত তিনি আমার দৃষ্টিতে সৃষ্টির সবচেয়ে প্রিয় হয়ে গেলেন। [তিরমিযী শরীফ]

উহুদ পর্ব্বত
হযরত আবূ যার রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, একদিন আমি হুযূর পায়গম্বর-ই খোদা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। তিনি যখন উহুদ পর্ব্বত দেখলেন, তখন এরশাদ করলেন, ‘‘যদি এ পর্ব্বত আমার জন্য স্বর্ণ হয়ে যেতো, তবে আমি তা থেকে একটি দিনারও আমার নিকট তিন রাতের বেশী থেকে যাওয়াকে পছন্দ করতাম না, ওই দিনার ব্যতীত, যাকে আমি কর্জ পরিশোধের জন্য রাখতাম।

চাদর মুবারক
হযরত সাহল ইবনে সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, এক মহিলা একটি চাদর নিয়ে আসলেন। তিনি আরয করলেন, ‘‘হে আল্লাহর রসূল! এটা আমি আমার নিজ হাতে বুনেছি। আমি এটা আপনি পরার জন্য নিয়ে এসেছি।’’ চাদরটি হুযূর-ই আক্রামের প্রয়োজন ছিলো। তাই তিনি চাদরটি গ্রহণ করে নিলেন। তারপর তিনি আমাদের নিকট আসলেন। আর ওই চাদর তিনি লুঙ্গির মতো করে পরে নিয়েছিলেন। সাহাবা-ই কেরাম থেকে একজন তা দেখে আরয করলেন, ‘‘উত্তম চাদর। এটা আমাকে পরতে দিন!’’ হুযূর-ই আকরাম বললেন, ‘‘হাঁ দেবো।’’ কিছুক্ষণ পর তিনি মজলিস থেকে উঠে গেলেন। তারপর ফিরে আসলেন। চাদরটি ভাঁজ করে ওই সাহাবীর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। সাহাবা-ই কেরাম তাঁকে বললেন, ‘‘তুমি কাজটি ভাল করোনি। তুমি চাদরটি হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট চেয়ে বসেছো। অথচ তুমি জানো যে, তিনি কোন প্রার্থীর প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করেন না।’’ ওই সাহাবী বললেন, ‘‘আল্লাহরই শপথ! আমি তা শুধু এজন্যই চেয়েছি যে, আমি যেদিন মারা যাবো, সেদিন যেন চাদরটি আমার কাফন হয়।’’ হযরত সাহল বলেন, ‘‘সত্যি চাদরটি তাঁর কাফন হয়েছিলো। [বোখারী শরীফ]

কাফির অতিথি
হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, এক কাফির রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর অতিথি হলো। তাঁর নির্দেশে তার জন্য একটি ছাগীর দুধ দোহন করা হলো। অতিথিটা সেটার সব দুধটুকু পান করে ফেললো। দ্বিতীয় ছাগীর দুধ দোহন করা হলো। সে সেটার দুধটুকুও পান করে ফেললো। তারপর আরেকটি ছাগীর দুধ দোহন করা হলো। সে সেটার দুধও পান করে নিলো। এভাবে সে সাতটি ছাগীর দুধ পান করলো।
ভোরে ঘুম থেকে উঠে সে ইসলাম গ্রহণ করলো। তারপর রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তার জন্য একটি ছাগীর দুধ দোহনের নির্দেশ দিলেন। সে সেটার দুধটুকু পান করে নিলো। তারপর দ্বিতীয় ছাগীর দুধ দোহন করা হলো। কিন্তু সে সেটার দুধের সবটুকু পান করতে পারলোনা। তারপর রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, ‘‘মু’মিন একটি মাত্র অন্ত্রে পান করে আর কাফির পান করে সাত অন্ত্রে।’’

অতুলনীয় দানশীলতা
হযরত বেলাল মুআযযিন আঁ-হযরত সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর খাজাঞ্চী (কোষাধ্যক্ষ) ছিলেন। একদিন আবদুল্লাহ্ হাওযানী তাঁকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ‘খাযানাহ্’ (বায়তুল মাল)-এর অবস্থা জানতে চাইলো। তিনি বললেন, ‘‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কোন মাল জমা থাকতোনা। হুযূর-ই আক্রামের নুবূয়ত ঘোষণার পর থেকে তাঁর ওফাত শরীফ পর্যন্ত এ কাজ (বায়তুল মালের সংরক্ষণ) আমার হাতে ছিলো। যখনই কোন বস্ত্রহীন ও ক্ষুধার্ত মুসলমান তাঁর নিকট আসতো, তখন তিনি আমাকে নির্দেশ দিতেন। আমি কারো নিকট থেকে কর্জ নিতাম। তা দিয়ে চাদর কিনতাম আর ওই বস্ত্রহীনকে পরিয়ে দিতাম, খাবার কিনে এনে ক্ষুধার্তকে খাইয়ে দিতাম। একদিন এক মুশরিক আমার সাথে সাক্ষাৎ করলো। সে বলতে লাগলো, ‘‘বেলাল! আমার নিকট অর্থের প্রাচূর্য আছে। আমি ব্যতীত অন্য কারো থেকে কর্জ নিওনা।’’ আমিও তা-ই করলাম। একদিন আমি ওযূ করে আযান দিচ্ছিলাম। দেখতে পেলাম ওই মুশরিক ব্যবসায়ীদের একটি দলের সাথে আসছে। সে আমাকে দেখে বললো, ‘‘ওহে হাবশী!’’ আমি বললাম, ‘‘আমি হাযির।’’ তারপর সে রুক্ষ মেজাজে আমাকে কিছু অশালীন শব্দ বললো। আর বললো, ‘‘তোমার জানা আছে তো? কর্জ পরিশোধের প্রতিশ্রুতির আর কতদিন অবশিষ্ট আছে?’’ আমি বললাম, হাঁ, কর্জ পরিশোধের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এসেছে।’’ সে বললো, ‘‘শুধু চারদিন বাকী আছে। যদি এ সময়সীমার মধ্যে তুমি কর্জ পরিশোধ না করো, তবে তোমাকে গোলাম বানিয়ে মেষ চরানোর কাজে লাগিয়ে দেবো, যেভাবে তুমি তোমার প্রাথমিক জীবনে চরাতে।’’
মুশরিকটার কথা শুনে আমি (হযরত বেলাল) চিন্তিত হয়ে পড়লাম। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এশার নামায পড়ে হুজুরা শরীফে তাশরীফ নিয়ে গেলেন। আমি সেখানে গিয়ে হাযির হলাম। আর আরয করলাম, ‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম! আমার পিতামাতা আপনার উপর ক্বোরবান! ওই মুশরিক, যার নিকট থেকে আমি কর্জ নিয়েছিলাম, সে আমাকে এমন এমন বলেছে। অথচ আপনার নিকট তো ওই কর্জ পরিশোধ করার মতো কোন মাল-সামগ্রী মওজূদ নেই। আমার নিকটও নেই। সে আমাকে অপমানিত-লাঞ্ছিত করবে। আপনি অনুমতি দিলে আমি পালিয়ে মুসলমানদের কোন গোত্রে চলে যাবো। যখন কর্জ পরিশোধ করার জন্য আল্লাহ্ কোন ব্যবস্থা করে দেবেন, তখন ফিরে আসবো।’’

মোটকথা, আমি নিজের ঘরে এসে গেলাম আর তরবারি, থলে, জুতা ও ঢাল আমার শিয়রে রেখে দিলাম। সুবহে কাযিব হতেই আমি বের হয়ে পড়লাম এবং চলতে লাগলাম। কি দেখছিলাম? দেখলাম, একজন লোক দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আমার দিকে আসছে। আর বলছে, ‘‘বেলাল! রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তোমাকে স্মরণ করছেন। আমি সেখানে পৌঁছানো মাত্র দেখতে পেলাম, চারটি মাল বোঝাইকৃত উট বসানো আছে।

আমি অনুমতি নিয়ে হুযূর-ই আকরামের পবিত্র দরবারে হাযির হলাম। তিনি এরশাদ করলেন, ‘‘মুবারক হোক! আল্লাহ্ তা‘আলা কর্জ পরিশোধ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তুমি হয়তো দেখেছো চারটি উট উপবিষ্ট আছে?’’ আমি আরয করলাম, ‘‘হাঁ।’’ তিনি এরশাদ করলেন, ‘এ উটগুলো ফাদাকের শাসক পাঠিয়েছে। আর এ কাপড় ও শষ্যদানা, যেগুলো রয়েছে, সবাই তোমার তত্ত্বাবধানে থাকছে। সেগুলো বিক্রয় করে কর্জ পরিশোধ করে দাও!’’ আমিও ওই নির্দেশ মুবারক পালন করলাম। তারপর আমি মসজিদ শরীফে আসলাম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সালাম আরয করলাম। তিনি কর্জ পরিশোধ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলেন। আমি আরয করলাম কর্জ সবটুকু পরিশোধ করা হয়েছে। কোন কর্জ অপরিশোধিত নেই।’’ তিনি বললেন, ‘‘কোন কিছু বেঁচে নেই তো?’’ আমি আরয করলাম, ‘‘হাঁ, কিছুটা অবশিষ্ট রয়েছে। তিনি বললেন, ‘‘আমাকে তা থেকেও মুক্ত করে দাও! যতক্ষণ পর্যন্ত ওই অবশিষ্ট মাল কাউকে দেবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি ঘরে যাবো না।’’ তিনি এশার নামায সম্পন্ন করলেন। তখন আমাকে ডেকে অবশিষ্ট মাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। আমি আরয করলাম, তা আমার নিকট মওজূদ আছে। কোন প্রার্থী পাওয়া যায়নি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম রাতভর মসজিদেই অবস্থান করলেন। পরদিন এশার নামাযের পর আমাকে আবার ডাকলেন। আমি আরয করলাম, ‘‘ইয়া রসূলাল্লাহ্! খোদা তা‘আলা আপনাকে দায়মুক্ত করে দিয়েছেন।’’ এটা শুনে তিনি তাকবীর বললেন এবং আল্লাহ্ তা‘আলার শোকর আদায় করলেন। কেননা, তিনি আশঙ্কা করছিলেন, এমন যেন না হয় যে, মৃত্যু (ওফাত শরীফ) এসে যাবে, অথচ ওই মাল তাঁর নিকট থেকে যাবে!’’ তারপর তিনি ঘরে তাশরীফ নিয়ে গেলেন।
কতটুকু দান করেছেন?

কখনো এমনই হতো যে, হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যক্তির নিকট থেকে একটি জিনিস খরিদ করেছেন। সেটার মূল্যও তাকে পরিশোধ করে দিয়েছেন। এর পরক্ষণে ওই জিনিস তাকে (বিক্রেতা) কিংবা অন্য কাউকে দান করে দিয়েছেন। সুতরাং তিনি হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহর নিকট থেকে একটি উট ক্রয় করেছিলেন। তারপর ওই উটই তাঁকে দান করে দিয়েছেন। অনুরূপ, একদিন হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে একটি উট ক্রয় করে তারপর সেটা তাঁর (হযরত ওমর) সাহেবযাদাকে দান করে দিলেন। [বোখারী শরীফ]
—০—

মহাপরিচালক-আনজুমান রিসার্চ সেন্টার, চট্টগ্রাম।

Share:

Leave Your Comment