শানে রিসালত : মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান

শানে রিসালত : মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান

শানে রিসালত : মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান >

মহান রব ও রসূল এবং মুসলমানদের সম্মান
আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ ফরমান-
وَلِلهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُوْلِه وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَلكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لاَ يَعْلَمُوْنَ
তরজমা: আর সম্মান তো আল্লাহ্, তাঁর রসূল ও মু’মিনদের জন্যই; কিন্তু মুনাফিক্বদের নিকট খবর নেই।
[সূরা মুনাফিক্বূন: আয়াত-৮, কানযুল ঈমান] এ আয়াত শরীফও হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর সুস্পষ্ট প্রশংসা। এ’তে হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর সম্মানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তাঁর মাধ্যমে মুসলমানদের প্রাপ্ত সম্মানের কথাও প্রকাশ করা হয়েছে।

আয়াতের শানে নুযূল (অবতরণের প্রেক্ষাপট)
হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম যখন মুরায়সী’র যুদ্ধ থেকে অবসর হলেন, তখন এক কূপের নিকট যাত্রাবিরতি করলেন। সেখানে হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর খাদিম জাহ্জাহাহ্ গিফারী এবং আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাই মুনাফিক্বের বন্ধু সিনান ইবনে ওয়াবর জাহান্নামীর মধ্যে ঝগড়া হলো। তখন আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাই মুনাফিক্ব সিনানের পক্ষ অবলম্বন করে হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালামের শানে বেয়াদবীপূর্ণ প্রলাপ বকলো। আর বললো, ‘মদীনা পৌঁছে আমরা সম্মানিতরা লাঞ্ছিতদের বের করে দেবো’। সে ‘লাঞ্ছিতগণ’ বলে মুহাজির সাহাবীদের কথা বুঝিয়েছে। (না‘ঊযুবিল্লাহ্) আর সে তার সম্প্রদায়ের লোকদেরকে বলতে লাগলো, ‘যদি তোমরা ওই মক্কাবাসীদেরকে তোমাদের উচ্ছিষ্ট (খাবার) না দিতে, তা হলে তারা তোমাদের ঘাড়ে উঠে বসতো না। এখন থেকে তোমরা তাদেরকে কিছু দিওনা; যাতে তারা মদীনা ছেড়ে পালিয়ে যায়’। (না‘ঊযুবিল্লাহ্)।
হযরত যায়দ ইবনে আরক্বাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু একথা শুনে বরদাশ্ত করতে পারলেন না। তিনি ওই মুনাফিক্বের উদ্দেশে বললেন, ‘‘তুইই লাঞ্চিত। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শির মুবারকের উপর মি’রাজের মুকুট শোভা পাচ্ছে। পরম করুণাময় (রাহমান) তাঁকে শক্তি ও সম্মান দিয়েছেন।’’

ইবনে উবাই মুনাফিক্ব বললো, ‘চুপ হয়ে যাও! আমি তো একথা মযাক (কৌতুক) করে বলছিলাম।’ হযরত যায়দ ইবনে আরক্বাম তার কথাগুলো হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিলেন। হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাই মুনাফিক্বকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তুমি কি একথাগুলো বলেছিলে?’’ সে শপথ করে ফেললো। আর বললো, ‘আমি বলিনি’। তার সম্প্রদায়ের লোকেরা আরয করলো, ‘আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাই বৃদ্ধ লোক। মিথ্যা বলতে পারে না। হয়তো যায়দ ইবনে আরক্বাম ধোঁকা খেয়েছেন। (তাঁর ভুল হচ্ছে)’! তখনই এ আয়াত শরীফ ইবনে উবাইকে মিথ্যুক এবং হযরত যায়দ ইবনে আরক্বাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে সত্যবাদী প্রমাণ করার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে।

তাফসীর-ই রূহুল বয়ান প্রণেতা মহোদয় এ আয়াত শরীফের তাফসীরে বলেছেন, ‘‘আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাইর পুত্র অত্যন্ত মর্যাদাবান সাহাবী ছিলেন। তাঁর নামও ‘আবদুল্লাহ্’ ছিলো। যখন তিনি খবর পেলেন যে, তাঁর পিতা এমন অভিশপ্ত বাক্য মুখে উচ্ছারণ করেছে, তখন তিনি মদীনা মুনাওয়ারায় তাঁর পিতাকে ধরলেন এবং তরবারি উঁচিয়ে নিলেন। আর মদীনা-ই পাকে ঢুকতে তাকে বাধা দিলেন এবং বললেন, ‘‘হে আমার পিতা তুমি স্বীকার করো যে, আল্লাহ্ সম্মানের মালিক, হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সম্মানের অধিকারী। অন্যথায় এক্ষুণি তোমার গর্দান উড়িয়ে দেবো’। সুতরাং ভয়ে তাকে তা স্বীকার করতে হলো। হুযূর-ই আক্রাম এ ঘটনা শুনে ওই সন্তানের জন্য দো‘আ করে ধন্য করলেন।’’

এ থেকে বুঝা গেলো যে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মানের উপর মাতা, পিতা, সন্তান-সন্তুতি ও মান-সম্মান সবকিছু উৎসর্গ করা সাহাবা-ই কেরামের ত্বরীক্বা ছিলো। আর হুযূর-ই আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর প্রতি কতর্ব্যরে মোকাবেলায় অন্য কারো প্রতি কর্তব্য বা অধিকার নেই।
এ আয়াত শরীফে আল্লাহ্ তা‘আলা এবং তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য আর হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ওসীলায় মুসলমানদের জন্য সম্মান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
‘ইয্যাত’ মানে বিজয় এবং শক্তি। আর ঘটনাও এ-ই যে, বিজয় আল্লাহরই, তাঁর রসূল আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর এবং মুসলামানদেরই। এ বিজয় ক্বিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী হবে। ‘আল্লাহর ইয্যাত’ বা সম্মান হচ্ছে, ‘দুনিয়ায় কোন কাজই আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত হতে পারে না; তিনিই মহত্বের মালিক; তিনিই প্রকৃত ক্ষমতার অধিপতি, সর্ববিজয়ী ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই, তিনিই সবার প্রকৃত অভিভাবক ও সাহায্যকারী। তিনি যাকে সম্মান দেন, তাকে কেউ অপমানিত করতে পারেনা। পক্ষান্তরে, তিনি যাকে অপমানিত করেন, তাকে কেউ সম্মান দিতে পারে না। তাঁর মহত্ব সর্বদা আছে এবং সর্বদা থাকবে। সবাই বিলীন হবে, তিনি চিরস্থায়ী। সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী, তিনিই অমুখাপেক্ষী।

রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ইযযাত (সম্মান) হচ্ছে পরিণাম মন্দ হবার ভয় তাঁর মোটেই নেই। তাকে মহান প্রতিপালক সম্মান দিয়েছেন, তাঁর দ্বীনকে সকল ধর্মের উপর বিজয়ী করেছেন, যার উল্লেখ পূর্ববর্তী আয়াতে করা হয়েছে। তাঁর জন্য মহান রবই যথেষ্ট, কোন সৃষ্টির তিনি মুখাপেক্ষী নন; বরং সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী। তাঁকে সম্মান করা মহান রবকে সম্মান করার নামান্তর। পক্ষান্তরে তাঁর মানহানি করা মহান রবের মাহনহানি করারই নামান্তর। তাঁর আনুগত্য করা মহান রবের আনুগত্য করার সামিল, পক্ষান্তরে তাঁর বিরোধিতা করা মহান রবের বিরোধিতার সামিল। তাঁর সত্তা মুবারক আল্লাহর পবিত্র সত্তার প্রকাশস্থল। সমস্ত গুনাহ্গারকে তাঁরই পবিত্র দরজায় হাযির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুনিয়ার প্রতিটি বস্তুর উপর তার শাসন ক্ষমতা রয়েছে। পশু, পাথর ও গাছপালা ইত্যাদি তাঁকে সালাম দেয়, জিন, ইনসান ও ফেরেশতারা তাঁরই দো‘আপ্রাথী, বিশ্বের রাজা-বাদশাহ্গণ তাঁর দরজার ভিখারী, জিবরাঈল আমীন তাঁর পবিত্র দরজার খিদমতগার, আরশ-ই আযম তাঁর জ্যোতির প্রকাশস্থল, ফরশে তাঁর সিংহাসন, ক্বিয়ামত দিবসে সবার (আরজুর) দৃষ্টি তাঁর হস্ত মুবারকযুগলের দিকে তাকিয়ে থাকবে।

মোটকথা, আমার মুখের কি সাধ্য যে, আমি তাঁর সম্মানের কোটি ভাগের একভাগও বর্ণনা করে শেষ করতে পারবো?
ব্যাস, তিনি ওই সম্মান পেয়েছেন, যা সম্পর্কে তার দাতাই জানেন অথবা যিনি নিয়েছেন তিনি জানেন; অর্থাৎ মাহবূব আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালামই জানেন। আমরা তো শুধু এতটুকু বলে ক্ষান্ত হবো- بعد از اخدا برزگ توئى قصه مختصر
সংক্ষিপ্ত কথা হলো, আল্লাহ্ তা‘আলার পর বুযুর্গ (সম্মানিত) হলেন, হে আল্লাহর হাবীব! আপনিই।
‘মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়াহ্’য় লিপিবদ্ধ আছে, মুসলমান যে সৎকর্মই করে, সেটার একটি সাওয়াবতো সমাধাকারী, দু’টি তাঁর মুর্শিদ (পথপ্রদর্শক), চারটি তার মুর্শিদের মুর্শিদ এবং আটটি তাঁর মুর্শিদ, এভাবে যতটুকু উপরে যাবেন, পরম্পরা বাড়তে থাকবে। যখন এ সাওয়াব হুযূর মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে পৌঁছে তখন তা বে-শুমার ও বে-হিসাব (অগণিত ও হিসাবহীন) হয়ে পৌঁছে। এটাতো একজন উম্মতের নেক কাজ, এখন প্রত্যহ কতজন উম্মত, কত নেক কাজ করছে, আর হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর পবিত্র দরবারে কতবেশী পরিমাণে সাওয়াব পৌঁছানো হচ্ছে, তাতো হিসাবের বাইরে। হাদীস শরীফে আছে-مَنْ دَلَ عَلى خَيْرٍ فَلَه مِثْلُ اَجْرٍ فَاعِلِه অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন নেক কাজের প্রতি পথ দেখায়, সে সেটা সম্পন্নকারীর মতো সাওয়াব পায়।
বস্তুতঃ সমগ্র বিশ্বের সর্বোচ্চ পথ প্রদর্শক তো হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম। যে কেউ যে কোন প্রকারের নেক কাজ করে অথবা ক্বিয়ামত পর্যন্ত করবে সে হুযূর-ই আক্রামের পথ প্রদর্শনের কারণেই করে থাকে। সুতরাং হুযূর-ই আক্রামের সাওয়াব যে কতবেশী তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

মজার কথা
‘দাবা খেলা’ (شطرنج)’র আবিষ্কারক দাবার ছকটি নিয়ে তাঁর বাদশার নিকট গেলেন। বাদশাহ্ বললেন, ‘কিছু পুরস্কার চাও!’ তিনি বললেন, ‘আমার দাবার ছকের খানাগুলোকে চাউল দিয়ে এভাবে ভর্তি করে দিন যেন প্রত্যেক অগ্রবর্তী খানায় সেটার পূর্ববর্তী খানা অপেক্ষা দ্বিগুণ চাউল হয়। অর্থাৎ প্রথম খানায় একটি চাউল, দ্বিতীয় খানায় দু’টি চাউল, তৃতীয়টিতে চারটি চাউল, চতুর্থটিতে আটটি চাউল, পঞ্চমটিতে ষোলটি চাউল হয়। বাদশাহ্ বুঝতে পারেননি। তিনি বললেন, ‘‘যাও, এত হিসাব করবে কে? দু’ বস্তা চাউল আমার বাবুর্চিখানা থেকে নিয়ে যাও!’ তিনি বললেন, ‘হুযূর, আমাকে এ হিসেব অনুসারে দিন!’’ যখন হিসাব করা হলো, তখন বুঝা গেলো গোটা পৃথিবী পৃষ্ঠেও তত পরিমাণ চাউল উৎপন্ন হয়নি, যতটুকু তিনি ওই হিসাব অনুযায়ী চেয়েছেন। এর কারণ এ যে, দাবার ছকে ৬৪টি খানা থাকে। আর আটটি চাউলে এক রত্তি, আট রত্তিতে এক মাশাহ্, বার মাশায় এক তোলা, আশি তোলায় এক সের হয়। সুতরাং হিসাব করে দেখা গেলো ছাব্বিশ খানায় এক মণ হয়ে যায়। এখন প্রতিটি খানার দ্বিগুণ করা হলে শেষ পর্যন্ত এত বেশী চাউল হয় যে, যদি ওই চাউলের মূল্য হিসেবে স্বর্ণ দেওয়া হয়, যদি চাউল প্রতি টাকায় চার সেরও হয়, আর স্বর্ণের মূল্য প্রতি তোলা শুধু পঁচিশ টাকাও হয়, তবে স্বর্ণের পরিমাণ দাঁড়ায় উনিশ কোটি মণ। চাউলের তো হিসাবই করা যায় না।
এটা তো চৌষট্টি খানার হিসাব ছিলো, যা ওই যুগের বাদশাহ্ পরিশোধ করতে পারেননি, কিন্তু আমার আক্বা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র দরবারে, উম্মতের আমল যখন পৌঁছে, তখন দ্বিগুণ, চারগুণ, আটগুণ হয়ে এতবেশী হয়ে যায়, যেখানে সংখ্যাও নির্ণয় করা যায়না; কিন্তু হিসাব বেড়ে গেলে কি হবে? দাতাতো হলেন রব্বুল আলামীন। তাঁর ধনভান্ডারে কমতি কিসের? এটাও রসূল আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর একটি দিক মাত্র। এরশাদ হয়েছে- وَاِنَّ لَكَ لاَجَرًا غَيْرَ مَمْنُوْنٍ (এবং নিশ্চয় আপনার জন্য রয়েছে অন্তহীন সাওয়াব)

বাকী রইলো মুসলমানদের ইয্যাত (সম্মান)
মুসলমানগণ দোযখে স্থায়ী শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকবে। তারা আপন রবের সাচ্চা বান্দা এবং বিশ্বস্ত প্রজা তুল্য। তাঁদের সামনে ধর্মীয় বিবেচনায় সমস্ত জনগোষ্ঠীহীন যেমনটি পূর্ববর্তী আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। আর যদি তারা সাচ্চা মুসলমান থাকে, তাহলে সিংহাসন ও রাজমুকুট তাদের জন্যই। যেমন এরশাদ হয়েছে وَاَنْتُمْ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنيْنِ (এবং তোমরাই উন্নীত, যদি তোমরা সাচ্চা মুসলমান থাকো।)
ক্বিয়ামত পর্যন্তের জন্য তাঁদের ধর্ম স্থায়ী, তাঁদের কিতাব অবিকৃত (নিরাপদ)। তাঁদের মধ্যে ওলীগণ, আলিম-ওলামা, গাউস ও কু¦ত্বুব সর্বত্র মওজূদ। ক্বিয়ামতে তাঁদের হাত, চেহারা ও পাগুলো পূর্ণিমা রাতের চাঁদের মতো চমকদার হবে ওযূর প্রভাবে। সমস্ত উম্মতের আগে জান্নাতে তাঁরা যাবেন। জান্নাতের অর্দ্ধেকের মালিক হবেন তাঁরা। বাকী অর্ধাংশে অন্য সব উম্মত থাকবে।

পূর্ববর্তী আয়াতে আমি কয়েক প্রকারে মুসলমানদের সম্মান এবং তাঁদের দ্বীনের বিজয়ের কথা বর্ণনা করেছি। আরেকটা কথাও বুঝে নিন, বায়তুল মুক্বাদ্দাস খ্রিস্টান, ইহুদী ও অন্যান্য কিতাবী সম্প্রদায়ের ক্বেবলা। আর কা’বা-ই মু‘আয্যামাহ্ শুধু মুসলমানদের ক্বেবলা; কিন্তু হজ্জ্ব শুধু কা’বা ঘরেরই করা হয়; বায়তুল মুক্বাদ্দাসের করা হয় না। যেমন জাঁকজমক এটার (কা’বা) হয়, ওটার (বায়তুল মুক্বাদ্দাস) তেমনি হয়না। বায়তুল মুক্বাদ্দাস নির্মাণকারী ছিলো জিনেরা, নির্মাণ করিয়েছেন হযরত সুলায়মান আলায়হিস্ সালাম; কিন্তু কা’বা-ই মু‘আয্যামাহ্ নির্মাণের নির্দেশদাতা হলেন মহান রব। সেটার চিহ্ণ বলে দিয়েছেন হযরত জিবরাঈল আলায়হিস্ সালাম, নির্মাণ করেছেন হযরত খলীল আলায়হিস্ সালাম। নির্মাণ কাজে সহযোগিতা করেছেন হযরত যবীহুল্লাহ্ আলায়হিস্ সালাম। সেটার আবাদকারী হলেন হযরত মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। বায়তুল মুক্বাদ্দাসে হাজারো সম্মানিত নবী আরাম করছেন; কিন্তু মদীনা মুনাওয়ারায় শুধু সাইয়্যেদুল আম্বিয়া আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম আরাম ফরমাচ্ছেন। মদীনা মুনাওয়ারায় যে পরিমাণ যিয়ারতকারী যান, বায়তুল মুক্বাদ্দাসে এর এক দশমাংশ পরিমাণও যায়না। মোটকথা, সব দিক দিয়ে দ্বীনী, দুনিয়াবী সম্মান আল্লাহ্ তা‘আলা মুসলমানদেরকেই দিয়েছেন। ধনী হওয়া, না হওয়া, বাদশাহ্ হওয়া, না হাওয়া, এর উপর সম্মানের বিষয়টি নির্ভরশীল নয়। এটাতো চলমান চাঁদনীই।

হিদায়াত (পথনির্দেশনা)
এ আয়াতে তো ইয্যাত তিন সত্তার জন্য সাব্যস্ত হলো- আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য; রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য এবং সমস্ত মুসলমানের জন্য। কিন্তু অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে- اِنَّ الْعِزَّةَ للهِ جَمِيْعًا (নিশ্চয় সম্মান তো সবটুকুই আল্লাহর জন্য)। এর জবাব হচ্ছে প্রকৃত ও স্বত্তাগত ইয্যাত (সম্মান), চিরস্থায়ী ও অবিনশ্বর ইয্যাত তো শুধু আল্লাহ্ তা‘আলার জন্যই; কিন্তু আত্বাঈ (আল্লাহর দানক্রমে) পরবর্তীতে খোদাপ্রদত্ত ইয্যাত নবীগণ, ওলীগণ এবং সমস্ত মুসলমানেরই অর্জিত। অথবা (এভাবে বলা যায়) এ সবের সম্মান আল্লাহরই সম্মান। [সূত্র. শানে হাবীবুর রহমান (উর্দু)]