ঐতিহাসিক মক্কা বিজয় ক্ষমা ও উদারতার এক জ্বলন্ত নজির- মাওলানা মুহাম্মদ আবু তাহের

ঐতিহাসিক মক্কা বিজয় ক্ষমা ও উদারতার এক জ্বলন্ত নজির- মাওলানা মুহাম্মদ আবু তাহের

ঐতিহাসিক মক্কা বিজয় ক্ষমা ও উদারতার এক জ্বলন্ত নজির-
মাওলানা মুহাম্মদ আবু তাহের >

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আগমন
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন ঃ
وقل جاء الحق وزهق الباطل- ان الباطل كان زهوقا-
অর্থ ঃ এবং বলুন, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা তো বিলুপ্ত হবারই ছিল।
[কান্যুল ঈমান : সূরা বনি ই¯্রাঈল, আয়াত:৮১] পৃথিবীর সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত অনেক যুদ্ধ হয়েছে। যুদ্ধে একদল বিজয়ের স্বাদ আস্বাদন করেছে আরেক দল পরাজয়কে বরণ করে নিয়েছে। আর এ ধরণীতে আগমন ঘটেছিল অনেক দিগি¦জয়ী মহাপুরুষের। হিটলার, স¤্রাট আলেকজেন্ডার আর নেপোলিয়ান বেনাপোর্টের বিজয় অভিযানগুলো ছিল রক্ত পাতের ইতিহাস, মানুষ মারার মূলমন্ত্র। কিন্তু মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মক্কা বিজয় ছিল রক্তপাতহীন মহাবিজয়। যারা একসময় তাঁকে পদে পদে কষ্ট দিত, সময় অসময় সর্বদা তাঁকে অপমান করতো, এমনকি হত্যার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেছিল এবং দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছিল, মক্কা বিজয়ের পর এই সকল লোকদের তিনি সাধারণ ক্ষমা করে দেন। এটাই ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উদারতা ও মহনুভবতার উজ্জল দৃষ্টান্ত।

আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন ৩৩ বছর বয়সে হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়ার পর থেকে এপৃথিবীতে চরম অবক্ষয় নেমে আসে। রোম, পারস্য, মিসর ও ভারতবর্ষে চন্দ্র, সূর্য, তারকারাজি এবং মূর্তিপূজা হতো। দেবদেবীর জন্য নিষ্পাপ লোককে বলি দেওয়া হতো। প্রচীন ইরানিরা ইয়াযদান ও আহেরমানকে মঙ্গল ও অমঙ্গলের ¯্রষ্টা মনে করতো। আর খ্রিস্টানরা একত্ববাদের পরিবর্তে ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস করতো। সমাজে দাস প্রথা বিদ্যমান ছিল। শাসকরা প্রজাদের মৌলিক অধিকার হরণ করতো।
ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন- Never in the history of the world was the need of so great, the time so ripe, for the appearance of a deliverer.
অর্থাৎ বিশ্বের ইতিহাসে একজন পরিত্রাণকারীর আবির্ভাবের এত বেশি প্রয়োজন এবং এমন উপযুক্ত সময় আর অনুভূত হয়নি। “এমন পরিস্থিতিতে আবির্ভূত হন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল, রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ী মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
ঐতিহাসিক টমাস কার্লাইল জাহেলি যুগে মহানবীর এই আগমনকে জ্যোতির্ময় স্ফুলিঙ্গের সাথে তুলনা করে বলেন-
“These Arabs, the man Mohammad and that one century is it not as if a spork.
তাঁর আগমনের কিছু সময় পূর্বে লুটিয়ে পড়েছিল পারস্য রাজপ্রাসাদের ১৪টি মিনার, নিভে গিয়েছিল অগ্নিপূজকদের হাজার বছরের প্রজ্বলিত অগ্নিকুন্ড, লোহিত সাগরের পানি শুকিয়ে গিয়েছিল, নহর বয়ে গিয়েছিল সিরিয়ার মরুতে, ভূলুন্ঠিত হয়েছিল কাবাঘরের দেবমূর্তিগুলো।

রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের মক্কীজীবন
নবুয়াত লাভের পর ৩ বছর গোপনে ইসলাম প্রচার করেন, অত:পর আল্লাহর নির্দেশে প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। এই সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন ঃ فاصدع بما تؤمر وأعرض عن المشركين-
অর্থ ঃ অতএব, প্রকাশ্যভাবে বলে দিন যে কথা আপনাকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে এবং মুশরিকদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন। [কান্যুল ঈমান ঃ সূরা আল হিজর, আয়াত ঃ ৯৪] মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করলে মক্কার কাফের, মুশরিকরা, অগ্নিপূজারিরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর নির্যাতন শুরু করে। তাঁকে তারা ধর্মদ্রোহী পাগল আখ্যা দেয়, না’যুবিল্লাহ্, পাথর ছূড়ে আঘাত ও আবর্জনা ফেলে অপমান ও লাঞ্ছিত করে। কিন্তু তিনি দাওয়াতের কাজে অব্যাহত থাকেন। শত প্রলোভন দেখিয়েও সত্য পথ থেকে কেউ তাঁকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। শিয়াবে আবু তালিবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এবং তাঁর পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল কুরাইশরা। তায়েফে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। হযরত পথে বের হলে তারা হৈ চৈ করে চারিদিকে সমবেত হতে থাকতো। পথ চলতে লাগলে ইট পাথর মারতে মারতে তাঁর পিছু ছুটত। নরাধমগণ প্রায়ই তাঁর ঘরের দরজায় কাঁটা বিছিয়ে রাখতো। এমন কি হযরত কা’বা ঘরের সামনে নামাজরত থাকলে, তারা উটের নাড়িভূঁড়ি, কখনো বা সদ্য প্রসূত ছাগির ফুল তাঁর মাথা মোবারকের উপর চাপিয়ে দিত। এমন কি চাদর দড়ির মত করে তা দিয়ে হযরতকে পেছিয়ে অনবরত মোড়াতে থাকতো। এমনি হাজারো রকমে তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কষ্ট দিত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের পর তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার এক মহা সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু মানবতার মহান মুক্তির অগ্রদূত তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা করে উদারতার মহান মাইলফলক পৃথিবীতে স্থাপন করেন।

হিজরতের পর মদিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অবস্থান
মক্কা থেকে মহানবি আল্লাহর নির্দেশে মদিনায় পৌঁছলেও মক্কার কাফির, মুশরিকরা তাঁকে নিরাপদ থাকতে দেয় নি। মক্কার লোকদের ব্যবসা ছিল সিরিয়ার লোকদের সাথে। মদিনায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রাধান্য বৃদ্ধি পেলে তারা এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে বলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে হাঙ্গামা বাধানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মদিনায় ও শান্তিতে থাকতে দেয় নি।

৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মার্চ (১৭ ই রমযান, ২য় হিজরী) বদর যুদ্ধের অবতারণা ঘটে। ৬২৫ খ্রিস্টাব্দে উহুদযুদ্ধের মাধ্যমে রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দন্ত মোবারক শহিদ করেছিল। হযরত আমির হাম্জা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে নিষ্ঠুর ভাবে শাহাদাত করেছিল। পিছন থেকে হামলা করে মুসলমানদের পর্যুদস্ত করে দিয়েছিল। ৬২৭ খ্রিস্টাব্দে কুরাইশ, ইয়াহুদি, বেদুইনরা সম্মিলিত যুদ্ধ করেছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে। মানবতার মুক্তির দিশারী, উম্মতের কান্ডারী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের পর কাফিরদের এই সকল হাঙ্গামার কথা ভুলে গিয়ে তাদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং বলেছিলেন, “আজ তোমরা সবাই স্বাধীন, সবাই মুক্ত। তোমাদের সম্বন্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই।” রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের ক্ষমা করে দিয়ে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে গেলেন, তাঁর মক্কা বিজয় ছিল ক্ষমা, উদারতা ও শান্তির এক জ্বলন্ত প্রমাণ।

মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মক্কা বিজয়
ঐতিহাসিকদের মতে মক্কা বিজয় ইসলামের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয়, যদিও পবিত্র কুরআন শরীফে হুদায়বিয়ার সন্ধিকে প্রকাশ্য বিজয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হুদায়বিয়ার সন্ধির মধ্যেই মূলত: মক্কা বিজয়ের মূলমন্ত্র নিহিত ছিল। এই সন্ধির পর হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু, হযরত আমর ইবন্ আস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ও হযরত ওসমান বিন তালহা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এর মত বীররা ইসলাম গ্রহণ করলে মক্কার কাফির মুশরিকরা হুদায়বিয়ার সদ্ধিগুলো ভঙ্গ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিল। সেই সূত্র ধরে তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে মিত্রতা বন্ধনে আবদ্ধ বনু খোজা গোত্রের বিরুদ্ধে বনু বকর গোত্রেকে প্রকাশ্যে সাহায্য করেছিল এবং তাদের ২০ জন ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। এ কাপুরুষোচিত হামলার পর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিকট ৩ টি প্রস্তাব সম্বলিত শান্তিদূত প্রেরণ করেন।

প্রস্তাবগুলো ছিল
১. অন্যায়ভাবে নিহত বনু খোজা গোত্রের লোকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অথবা
২. বনু বকরকে সকল প্রকার সাহায্য থেকে বিরত থাকতে হবে। অথবা
৩. হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্তগুলো বাতিল বলে ঘোষণা করবে।
কুরাইশগণ তৃতীয় প্রস্তাবটি গ্রহণ করলে মহানবি হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বহুল প্রত্যাশিত মক্কা বিজয়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন। মহানবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ৮ম হিজরীর ১০ ই রমযান মতান্তরে ১৮ রমযান মোতাবেক ৬৩০ খ্রিস্টাব্দের ৬ই জানুয়ারি দশ হাজার ন্যায়নিষ্ঠ সহচরসহ অতি গোপনীয়তার মাধ্যমে মদিনা থেকে মক্কাভিমূখে যাত্রা করেন। তখন মুসলমানদের সবাই রোযা রেখেছিল। পথি-মধ্যে উসপান নামক এলাকায় একটি ঝর্ণার নিকট রোযা ভঙ্গ করেন। এরপর ঐ রমযান মাসে আর কেউই রোযা রাখেন নি। ১২ দিন পথ চলার পর মুসলিম বাহিনী মার-উজ-জাহরান নামক গিরি উপত্যকায় পৌঁছে। সাহাবিগণ শিবিরে অগ্নি প্রজ্জলিত করলে আলোক রশ্মির শিখা মক্কার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দেখা যায়। মক্কাভিযানের পূর্বায়োজন সম্পর্কে মক্কাবাসীগণ কিছু জানতে পারে নি। ফলে তারা ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়েছিল। দলপতি আবু সুফিয়ান দু’জন সঙ্গী নিয়ে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে এসে ধৃত হন। অল্প সময়ের মধ্যে অনেক ঘটনার অবতারণা হয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু সুফিয়ান এর দীর্ঘ ২১ বছরের অমানুষিক আচরণের কথা ভুলে গিয়ে তাকে ক্ষমা করে ক্ষমার এক মহা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে মক্কবাসীদের ক্ষমা করে দিলে তারা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বা ঘরকে পবিত্র করতে ৩৬০টি মূর্তি ভেঙ্গে পবিত্র ঘরে শুকরানা নফল নামাজ আদায় করেছিলেন।

মক্কা বিজয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উদারতা ও ক্ষমার উপমা
আবু সুফিয়ানকে ক্ষমা ঃ মক্কা বিজয়ের দিন আবু সুফিয়ানকে ক্ষমা করে রাসূল এক মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছিলেন। যে আবু সুফিয়ানের রণ প্রস্তুতির কারণে বদর যুদ্ধ হয়েছিল। উহুদযুদ্ধে ৭০ জন মুসলীম বীর শাহাদাত বরণ করেছিল। স্বয়ং মহানবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহত হয়েছিলেন। খন্দকের যুদ্ধে মুসলামানগণ চরম বিপদের মুখে পতিত হয়েছিল, তাও শুধু এই আবু সুফিয়ানের কারণেই। এমন ব্যক্তিকে ক্ষমা করা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উদারতা ব্যতীত আর কিছুই ছিল না।

রাসূলের মুখে করুণার কথা
রাসূলের নির্দেশে হযরত আবু সুফিয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে মুসলমানের শৌর্যবীর্য দেখানোর উদ্দেশ্যে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে গেলে, তিনি আনসারদের দল দেখে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, এরা কারা? জবাবে হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আনসার বাহিনী। এসময় দলনেতা হযরত সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেছিলেন, “আজ ঘোরতর যুদ্ধের দিন। আজ কা’বা ঘর পবিত্র করার দিন। পরবর্তিতে আবু সুফিয়ান মুহাজির বাহিনীকে দেখে আর্তনাদ করে বলেন, “মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম, তুমি কি তোমার স্বজনদের হত্যা করার আদেশ দিয়েছ?” রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, না, কখনো নয়, তাদের কথা ঠিক নয়, আজ প্রেম ও করুণার দিন। আজ কা’বার সম্ভ্রম চিরস্থায়ীভাবে স্থাপন করার দিন।” এই ধরণের প্রেমময় বাণী রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মনের প্রশস্ততাকে নির্দেশ করে।

রাসূলের সাধারণ ক্ষমা
পি. কে. হিট্রি মক্কা বিজয়কে প্রাচীন ইতিহাসে একটি তুলনাবিহীন মহাবিজয় বলে অভিহিত করেন। মক্কা বিজয় সমগ্র আরব দেশ বিজয়ের সমতুল্য ছিল। এই বিজয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের রক্ত ক্ষরণকে বন্ধের লক্ষ্যে কুরাইশদের উদ্দেশ্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বলেন ঃ
من دخل دار ابى سفيان فهو أمن ومن دخل دار حكيم بن حزام فهو أمن ـ ومن اغلق بابه فهو أمنن لا تثريب عليكم اليوم ـ
অর্থাৎ ঃ “যে আবু সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ, যে হাকাম ইবন্ হিযাম এর ঘরে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ। আর যে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখবে সেও নিরাপদ। আজ তোমাদের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই।”
এই ধরণের ক্ষমা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পক্ষ থেকে এসেছিল। যদিও বা একসময় তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল।

হত্যার জন্য জিজ্ঞাসা করা
হযরত খালেদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু মক্কায় প্রবেশ কালে কিছু সংখ্যক মক্কাবাসীকে হত্যা করলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রক্তপাত বন্ধের নির্দেশ দেন। সংবাদ বাহক মাঝপথে আরেকজন কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে খালেদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে হত্যা করার পরামর্শ দিলে হযরত খালেদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ৭০ জন কাফিরকে হত্যা করেছিলেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই জন্য তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। এর মাধ্যমে মহানবির উদারতা আর ক্ষমার জ্বলন্ত নজির পাওয়া যায়।

মহানবি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর উদারতার জ্বলন্ত প্রমাণ
যে মক্কাবাসী হুজুরকে পদে পদে অপমান, অত্যাচার, নির্যাতন আর অপবাদের বিষাক্ত চোবল, বৈরিতার বাণ আর যন্ত্রনা, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিজয়ীর আসনে বসে ন্যায়ের পাল্লা সামনে রেখে তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেন। মানুষের প্রতি প্রেমপুণ্যে উদ্ভাসিত এ সুমহান আদর্শ সম্ভব করেছিল হযরতের বিরাট উদারতা।
ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়ের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত বহু ঘটনার ক্ষেত্রে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মহানুভবতা, দয়া, উদারতা ও ভালবাসার রয়েছে জ্বলন্ত নজির। আমাদের বাস্তবিক জীবনে এ সব আদর্শ গ্রহণ করা উচিত। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন সকলকে তা গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: প্রভাষক- আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা, চট্টগ্রাম।