প্রিয়নবীর জীবনাদর্শ থেকে নেয়া মানবতার কয়টি খণ্ডচিত্র
প্রিয়নবীর জীবনাদর্শ থেকে নেয়া মানবতার কয়টি খণ্ডচিত্র
* আবু তালেব বেলাল *
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান। যা রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেষট্টি বছর হায়াতে জিন্দেগিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ জীবন ব্যবস্থা ছিল নিখুঁত, সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য, সকল মানুষের কল্যাণকামী, সকল সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির, সৌহার্দ্যরে ও শান্তির উদ্যান। কিন্তু ¯্রষ্টার কুদরতি হাতে সাজানো রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দয়ার পরশে সৃজিত এ দ্বীনের স্বর্ণযুগের পর আর বিশেষ পরিচার্য আমরা করিনি। বরং মহান প্রভুর মনোনীত এ দ্বীনকে আমরাই বিনাশ করেছি। ইসলামের মূল যে আহবান, সুশীতল স্বর্গীয় ছায়া তা ক্রমান্বয়ে লোপ পেতে শুরু করেছে।
আমরা ইতিহাসের পোড়াপাতাগুলো যদি উল্টে দেখি, দেখা যাবে তৎকালীন আরব সমাজে যেখানে মানুষের কোন অধিকার ছিলো না, বর্বরতার রাহুগ্রাসে ছিল প্রতিটি মানুষ, রক্ত, খুন, ধর্ষণ, অবিচার, অত্যাচার, নারী ও শিশু নির্যাতন যেসব মানুষের নিত্যকর্ম ছিল। আর সেই পথহারা মানুষদেরকে আলোর পথ,শান্তির পথ দেখানোর জন্যে এই নশ্বর পৃথিবীতে ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দে আগমন করেছিলেন বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত নবী মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি শিখিয়ে ছিলেন মানুষের মানবীয় অধিকার। তিনি শিখিয়েছিলেন দুখীর সাথে সুখীর বসবাস, গরিবের সাথে ধনীর মিলামেশা। দেখিয়েছিলেন সত্য সুন্দর পথের আলো। শুনিয়েছিলেন আল্লাহর কালাম থেকে মহাসত্যের বাণী। জাগিয়েছিলেন সুপ্ত চেতনাকে, মানবতাকে, ভালবাসাকে। যার পরশে সমগ্র আরবময় শান্তির বসন্ত ফুটে উঠেছিলো।
মহানবীর আবির্ভাবকালে বিশ্বের
সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি
মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আবির্ভাবকালে কেবল আরব নয় বরং সারা বিশ্ব হতে মানুষে মানুষে ভালবাসা ও জাতিতে জাতিতে সম্প্রীতি ভূলুন্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। আরব উপসাগর থেকে শুরু করে পারস্য উপসাগরীয় এলাকার সকল দেশ পেরিয়ে ভারত, গ্রীস ও চীনে মানব সভ্যতা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। রোম ও পারস্য আজকের ইউরোপ আমেরিকার মত সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধ্বজাধারী ছিল। কিন্তু বাস্তবতা বলতে কিছুই ছিলনা। সন্ত্রাস নির্মূল ও বিশ্বশান্তির নামে পাশ্চাত্য জগত আজ যেমন সারা বিশ্বে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। রোমক ও ইরানীগণ তখন নিজেদের মাঝে হানা-হানিতে কেবল সীমাবদ্ধ ছিলনা বরং গোত্রে গোত্রে হানা-হানি ও সাম্প্রদায়িকতা সভ্যতার আড়ালে ছড়িয়ে দিত। রোমান ও পারস্য সম্রাটগণ শুধু অবতার হওয়ার দাবী করতনা বরং তারা খোদা হয়ে মানব সমাজে জেঁকে বসেছিল। তাদের সাথে আতাঁত করে সাধারণ জনগনের উপর প্রভুত্ব চালাত ভূমিপুত্র ও ধর্মযাজকগণ। তাদের শোষন নিষ্পেষনে মানুষ শ্বাসরুদ্ব হয়ে মরতে বসেছিল। কর্তৃত্বশীল শ্রেণীর ভোগ-বিলাস তাদের নৈতিক সত্তাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। ক্ষমতার পালাবদল হত লড়াই সংঘর্ষের মাধ্যমে। নিত্যনতুন শাসক ক্ষমতার মসনদে আসীন হওয়ার পর জনগন ভাবত আগেরটির চেয়ে এটি আরও ভয়ানক শোষক। সারাবিশ্ব স্বজনপ্রীতি ও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে ভরপুর হয়ে গিয়েছিল। মানুষের সামনে ক্ষীণতম আশার আলো জ্বালানের মত কোন মতবাদ ছিলনা। তারা আর্তনাদ করত কিন্তু তাতে সাড়া দেয়ার কেউ ছিলনা। বিকৃতি ও অপব্যাবহারের ফলে দুনিয়া থেকে উঠে গিয়েছিল নবী আলঅইহিস সালামদের শিক্ষ ও আদর্শ। গ্রীক দর্শন, কনফুসিয়াস, মনুসংহিতা, বাইবেল, ইঞ্জিন, তাওরাত, যবুর, বেদ বেদান্ত, বৌদ্ধ ধর্ম ও জাষ্টিনিন ও সোলুওনর আইন সবই হয়ে পড়েছিল নিষ্প্রাণ ও নিস্ক্রীয়। কোন দিক হতে কোন আশার আলো দৃষ্টিগোচর হচ্ছিলনা। বিশ্বজুড়ে যখন ইতিহাসের ভয়াবহতম বীভৎসতা ছড়িয়ে পড়লো, অরাজকতার ঘুট ঘুটে অন্ধকারে মানবতা ঢাকা পড়লো, তখন আকস্মিকভাবে শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, প্রেম ও ভালোবাসার প্রদীপ নিয়ে প্রেরিত হলেন মানবতার শ্রেষ্ঠতম বন্ধু ¯্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ নবী রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহর ভাষায় ইরশাদ হয়েছে-“তোমাদের প্রতি আল্লাহ যে অনুগ্রহ করেছেন তা স্মরণ কর। তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুন্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ তা হতে তোমাদেরকে রক্ষা করেছেন। [আলে-ইমরান-১০৩] উল্লেখ্য যে, জাহিলিয়া যুগে ইয়াসরিবে (হিজরতের পর মদিনায়ে মনোয়ারা) আউস ও খাজরায পরস্পর প্রতিদ্বন্ধী দু’টি সম্প্রদায় ছিল। এদের মাঝে যুদ্ধ-বিগ্রহ ও পরস্পর হানা-হানি এত চরমে পৌছে ছিল যে, শুরু হওয়ার পর আর তা শেষ হয়না। বাসুস নামক একটি যুদ্ধ তাদের মধ্যে চল্লিশ বছর পর্যন্ত চলেছিল। মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সম্প্রীতির অমীয় বাণী নিয়ে এধরাতে আবির্ভুত হলে তারা তা শুনে নবীজির দরবারে এসে আকাবা উপত্যকায় বসে নবীজির দস্ত মোবারকে হাত রেখে পরপর তিনবার শপথ নিয়ে ইসলামের শান্তির বাণীকে বুকে ধারন করল। ফলে তাদের মধ্যকার চিরাচরিত হানা-হানি কেবল বন্ধই হয়নি বরং তারা সম্প্রীতি ও ভালবাসার বন্ধনে আপন ভাইয়ের মত হয়ে গিয়েছিল। আল-কুরআনে বিষয়টি এভাবে তুলে ধরা হয়েছে। [ইবন কাসীর, ১খ. ৩০৫] তাঁর আদর্শ সমাজ-রাষ্ট্র গঠনের কিছু নমুনা তুলে ধরছিঃ
হিলফ উল ফুজুল
পারস্পরিক সহযোগিতা ও ঐক্যের অঙ্গীকারমূলক একটি সংঘের নাম ছিল হিলফ উল ফুজুল। শান্তির অগ্রদূত নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সবে মাত্র কিশোর, বয়স ১২/১৮(মতান্তর) বছর, হরবুল ফুজ্জার (অন্যায় সমর) এর ৪র্থ যুদ্ধ তখন চলছিল। বিবদমান দু’টি গোত্রের মাঝে প্রধানত কুরাইশ ও হাওয়াযিন মতান্তর কায়েস গোত্র ছিল। এতে কুরাইশগণ ছিল মূলত আত্মরক্ষার ভুমিকায়। তারা ছিল সম্পূর্ণ নির্দোষ। রনাঙ্গনে চাচা আবু তালিবের সাথে উপস্থিত থাকায় যুদ্ধের বিভীষিকা তিনি প্রত্যক্ষ করেন। গোত্রে গোত্রে এরূপ তান্ডব লীলা তাঁকে প্রচন্ডভাবে আহত করে। আরবদের মাঝে এরূপ নির্মমতা চিরকাল হতে চলে আসছে। কোন দিনেই তাদের পাষাণ হৃদয়ে সহমর্মিতার উদ্রেক হয়নি। এবারই ব্যতিক্রম, কতিপয় যুবকের অন্তরে যুদ্ধ বন্ধ ও মানব সমাজে সম্প্রীতির ভাবনা তৈরী হয়। কারণ বিশ্ব মানবতার ত্রাণকর্তা, করুণার ছবি ও ইনসানিয়্যাতের রবির আলোকচ্ছটা পড়েছে সেই যুবসমাজের অন্তরে। যুদ্ধে বনু হাশিম গোত্রের পতাকা উড্ডয়নকারী যুবায়ের ইবনে আবদুল্লাহ (মহানবীর কনিষ্ট চাচা) একটি শান্তি সংঘ প্রতিষ্ঠার কথা ভাবতে লাগলেন। তার অন্তরেই রাহমাতুল্লিল আলামীনের পবিত্র হৃদয়ের প্রতিচ্ছায়া সম্যক রূপে প্রতিফলিত হয়েছিল। সমাজে সম্প্রীতি সৃষ্টির ভাবনা তাঁর হৃদয়ে সঞ্চারিত হয়েছিল। মহানবী চাচা যুবায়রকে মক্কা নগরী থেকে সকল রক্তপাত ও অন্যায়-অত্যাচার বন্ধে যুবকদের নিয়ে একটি সংঘ গঠন করার প্রস্তাব করলে চাচা যুবায়রসহ বেশ কিছু যুবক স্বতঃস্ফুর্তভাবে তাতে সাড়া দিলেন। আপন গোত্রের কেউ কোন অন্যায় করলে তাকে সর্বাত্মক সমর্থন করা, তার মান ইজ্জত রক্ষার্থে অকাতরে ধন-প্রাণ বিলিয়ে দেয়া ছিল আরবে সাধারণ নিয়ম। এ প্রথাকে বিসর্জন দিয়ে যুবকদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞায় ঐক্যমত পোষন করায় বালক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মনেপ্রাণে খুশি হয়েছিলেন। সাথে সাথে আব্দুল্লাহ ইবন জুদ’আনের গৃহে একটি সম্মেলনের মাধ্যমে হিলফ উল ফুজুলের কার্যক্রম শুরু হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এ সম্মেলনে স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন। অন্যতম সদস্য হিসেবে তিনি শপথ গ্রহণ করেন। হিজরতের পর তিনি বলতেন, আব্দুল্লাহ ইবন জুদ’আনের গৃহে শপথ করে যে প্রতিজ্ঞা করে ছিলাম তার বিনিময়ে আমাকে লাল লাল উট দান করলেও আমি সেই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে সম্মত নই। আজও যদি কোন নিপীড়িত ব্যক্তি হে হিলফ উল ফূজূলের সদস্যগণ! বলে আহ্বান করে তবে আমি তার সে ডাকে সাড়া দেব। কারণ ইসলাম ইনসাফ প্রতিষ্ঠা এবং নির্যাতিতের সাহায্যের জন্যই এসেছে।
হাজরে আসওয়াদ প্রতিস্থাপনে
সৃষ্ট সাম্প্রদায়িকতার নিরসন
জাহেলিয়া যুগে কা’বা ঘর ও হাজারে আসওয়াদ ছিল ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল গোত্রের কাছে সম্মানিত। সেই আদম আলায়হিস্ সালাম হতে তা সকল শ্রেণীর মানুষের প্রিয় স্থান বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নুবুওয়াত তখনো প্রকাশ হয়নি। তাঁর পবিত্র বয়স তখন ৩৫ বছর বা এর চেযৈ কিছুটা কম। এসময় আরবে প্রচণ্ড বন্যা হয়। বন্যার ¯্রােতে কা’বা গৃহের দেয়াল এবং হাজরে আসওয়াদ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে পবিত্র কাবাগৃহ মেরামত করার প্রয়োজন পড়ে। সকলে মিলে মিশে কা’বার নির্মান কাজ করতে লাগলেন। মক্কার কোন গোত্রই যেন এবরকতময় কাজ হতে বঞ্চিত না হন, সেজন্য ঘরের প্রতিটি অংশকে এক এক গোত্রের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়। সম্মিলিত ভাবে কা‘বার কাজ চলছিল। হাজরে আসওয়াদ যেই স্থানে সংস্থাপন করার কথা সেখানে আসার পর কর্মরত গোত্রগুলোর মাঝে মতভিন্নতা সৃষ্টি হলো। কোন গোত্রের লোকজন পাথরটিকে যথাস্থানে স্থাপন করবেন তা নিয়ে মহা বিভ্রাট সৃষ্টি হলো। কারণ এর সাথে সামাজিক মর্যাদার বিষয় জড়ানো ছিল। প্রতিটি গোত্র এমর্যাদায় ছাড় দিতে নারাজ। এর ফলে দ্বন্ধ চরম আকার ধারন করল। গোটা শহর হাঙ্গামার ভয়ে আতংকিত হয়ে ওঠল। চারদিন পর্যন্ত থম থমে ভাব বিরাজ করছিল। এরই মাঝে রণ প্রস্তুতি চলছিল। কোন কোন গোত্র তৎকালীন আরবের প্রথা অনুযায়ী রক্তে হাত ডুবিয়ে মরণের প্রতিজ্ঞা পর্যন্ত করে ফেলল। যুদ্ধ বন্ধে বয়োজ্যেষ্ঠ আবু উমাইয়া (মতান্তরে তার ভাই ওয়ালীদ) বিবদমান দলগুলোকে যুদ্ধ বন্ধে একটি প্রস্তাব পেশ করলেন। তিনি বললেন, বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য আমি প্রস্তাব করছি যে, আগামী দিন ভোরে বনু শায়বা নামক গেইট দিয়ে যিনি প্রথম প্রবেশ করবেন তার হাতে এ ঝগড়ার মীমাংসার ভার দেয়া হোক। এ প্রস্তাবকে মীমাংসার সুন্দরতম পন্থা বলে সকলে মেনে নিলেন। তবে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাঝে উদ্বেগের কারণ ছিল সেই ফটক দিয়ে কে প্রবেশ করে তার কৌতুহল নিয়ে। অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হল সেই গেইট দিয়ে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রবেশের মাধ্যমে। তাকে দেখে সবাই বলে উঠল, সে তো ‘আল-আমীন’ আমরা তাঁর উপর সন্তুষ্ট। তাঁকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলা হল, তিনি বললেন যে সকল সম্প্রদায় হাজারে আসওয়াদ যথা স্থানে স্থাপনের অধিকারী বলে দাবীদার, তারা নিজ নিজ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নির্বাচন করুন। তিনি নিজের পরিধেয় চাদরখানা বিছিয়ে দিয়ে তাতে হাজারে আসওয়াদকে এর মাঝ খানে রেখে গোত্রের প্রতিনিধিগণকে চাদরের এক প্রান্তে ধরে তা উঠাতে বললেন ফলে সম্মিলিতভাবে তারা তা যথা স্থানে স্থাপনের সুযোগ লাভ করল। অতঃপর তিনি নিজ হাতে চাদর হতে পাথরটিকে যথাস্থানে রেখে দিলেন। এতে সকলেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। এভাবে রক্তক্ষয়ী সাম্প্রাদায়িক দাঙ্গার একসম্ভাবনা তিরোহিত হয়ে গেল।
[সীরাতে রাসূল, ইবনে ইসহাক, সীরাতে আবনে হিসাম, দ্যা স্প্রিট অব ইসলাম]
মুহাজির ও আনসারদের মাঝে ভ্রাতৃতের বন্ধন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মাদীনায় হিজরতের পর দেশ ত্যাগী সাহাবায়ে কেরাম ও আশ্রয়দাতা আনসারগণের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে সম্প্রীতির এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। দু‘টি অঞ্চলের মানুষ, যারা পেশা ও সংস্কৃতিতে ভিন্ন ভিন্ন ধারায় অভ্যস্থ, তাদেরকে এক সুতোয় গাঁথার জন্য যেই কর্ম কৌশল অবলম্বন করার প্রয়োজন ছিল, তাহল, তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ পয়দা করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তা-ই করে গোটা উম্মাহকে সোনালী সমাজে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ইরশাদ হয়েছে : আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আমার গৃহে কুরাইশ ও আনসারদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করছিলেন, তার থেকে বর্ণিত অন্য রেওয়ায়াতে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আবূ উবায়দা ইবনুল র্জারাহ ও আবূ তালহার মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে দিয়েছিলেন।
[ইমাম মুসলিম, আস-সাহীহ, ২খ. ৩০৮] এই ভ্রাতৃত্ব এমনভাবে সুদৃঢ় করে দেয়া হয়েছিল যে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে এর দ¦ারা পরস্পর উত্তরাধিকারও হওয়া যেত। পরবর্তীকালে আল-কুরআনে উত্তরাধিকার আইন স্পষ্ট ভাবে নাযিল হলে এর কার্যকারিতা রহিত হয়ে যায় [ইমাম নাওয়ায়ী, (পাদটীকা সাহীহ মুসলিম, প্রাগুক্ত]
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং মহানবীর জীবনের ঘটনা
শান্তি-সৌহার্দ্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষায় ইসলামের রয়েছে শাশ্বত আদর্শ ও সুমহান ঐতিহ্য। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিটি আচরণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরল ও উজ্ব¡ল দৃষ্টান্ত। এক অমুসলিম বৃদ্ধার ঘটনা ইতিহাসে আমরা জেনেছি। যে বৃদ্ধা প্রতিদিন মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর চলার পথে কাঁটা দিত। একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দেখলেন, পথে কাঁটা নেই, তখন তিনি ভাবলেন, হয়তো ওই বৃদ্ধা অসুস্থ হয়েছে বা কোন বিপদে আছে, তার খোঁজ নেয়া দরকার। এরপর দয়ার নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ওই বৃদ্ধার বাড়িতে পৌঁছে দেখেন ঠিকই সে অসুস্থ। তিনি বৃদ্ধাকে বললেন, আমি আপনাকে দেখতে এসেছি। এতে বৃদ্ধা অভিভূত হয়ে গেল যে, আমি যাকে কষ্ট দেয়ার জন্য পথে কাঁটা পুঁতে রাখতাম, সে-ই আজ আমার বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছে? ইনিই তো সত্যিকার অর্থে শান্তি ও মানবতার অগ্রদূত। মুমিনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যার মুখ ও হাতের অনিষ্ট থেকে লোকজন নিরাপদ থাকে, সেই মুসলমান এবং যার নির্যাতন থেকে মানুষ নিরাপদ; তাকে মুমিন বলে।’
নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজেকে তিনটি বিষয় হতে সম্পূণরূপে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন :
১. ঝগড়া-বিবাদ, ২. বেশি কথা বলা, ৩. অনর্থক বিষয়াদি হতে। অনুরূপ তিনটি বিষয় হইতে অন্যকেও বাঁচিয়ে রেখেছিলেন : ১. কারো নিন্দা করতেন না, ২. কাউকে লজ্জা দিতেন না, ৩. কারো দোষ তালাশ করতেন না।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও মদীনা সনদ
মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনা হিজরত করার পর যে ‘মদিনা সনদ’ প্রণয়ন করেন তা ইসলাম তথা বিশ্ব ইতিহাসের সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান এবং শান্তি-সম্প্রীতির ঐতিহাসিক দলিল। মদীনায় বসবাসরত বিভিন্ন গোত্র, উপগোত্র, সম্প্রদায় ও গোষ্ঠী, দল ও উপদলের সহাবস্থান, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, পারস্পরিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম একটি লিখিত চুক্তি সম্পাদন করেন, যা ইতিহাসে ‘মদীনা সনদ’ নামে খ্যাত। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষাসহ সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা প্রদান সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য ধারা রয়েছে। অতুলনীয় চরিত্র মাধুর্য, অনুপম শিক্ষা ও আদর্শ, আমল ও আখলাক দ্বারা তিনি মানুষকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়েছিলেন। মদীনায় মুসলমান, ইহুদী এবং আওস ও খাযরায গোত্রসহ ১২টি উপগোত্রের বসবাস ছিল। চরম গোষ্ঠীগত মতানৈক্য ও সংঘাতের মধ্যে সকল গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে কিভাবে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করা যায় মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মদীনাকে তার একটি অতুলনীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। মদিনা সনদের মাধ্যমে শান্তির বার্তাবাহক বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের মাঝে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি, সাম্য-মৈত্রীর সুদৃঢ় বন্ধন রচনা করে আদর্শ কল্যাণ রাষ্ট্রের অদ্বিতীয় নজির স্থাপন করেন। যেমন- সনদে স্বাক্ষরকারী সকল গোত্র-সম্প্রদায় ‘মদিনা রাষ্ট্রে’ সমান অধিকার ভোগ করবে, সকল ধর্মসম্প্রদায়ের স্ব-স্ব ধর্ম-কর্ম পালনের স্বাধীনতা ও অধিকার যথারীতি বহাল থাকবে; কেউ কারও ওপর কোনরূপ আক্রমণ করবে না, সন্ধিভুক্ত কোন সম্প্রদায় বহিঃশত্রুকর্তৃক আক্রান্ত হলে উক্ত আক্রান্ত সম্প্রদায়কে সম্মিলিতভাবে সহযোগিতা করতে হবে এবং শত্রুদের প্রতিহত করতে হবে, কোন নাগরিক কোন অপরাধ করলে তা তার ব্যক্তিগত অপরাধ বলে গণ্য করা হবে। বহু ধর্ম, জাতি, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ক্ষেত্রে মদীনার সনদ একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মদীনার সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার পর তৎকালীন সমাজের গোত্রসমূহের আন্তঃকলহের অবসানসহ নৈরাজ্যমুক্ত, মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
মুসলিম ও কুরাইশদের মাঝে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার সন্ধির বেশক’টি ধারা ছিল মুসলিম স্বার্থবিরোধী। এতদসত্ত্বেও সুদূরপ্রসারী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তা মেনে নেন। কিন্তু প্রতিপক্ষের প্রতিনিধি সুহাইল ইবনে আমর সন্ধিতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর নামের সাথে ‘রাসূলুল্লাহ’ লেখা যাবে না মর্মে আপত্তি জানিয়ে বলল, আমি যদি সাক্ষ্য দিতাম যে, আপনি আল্লাহর রাসূল, তাহলে তো আর আপনার সাথে যুদ্ধ-বিগ্রহ হতো না, আপনাকে বায়তুল্লাহ যেতে বাধা দিতাম না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে বললেন ‘রাসূলুল্লাহ’ শব্দটি কেটে দিয়ে ওর ইচ্ছানুযায়ী শুধু আমার নাম লিখ। এতে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু অপারগতা প্রকাশ করায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতেই তা কেটে দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও উদারতার অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত পেশ করেন।
মক্কা বিজয়ের দিন মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিজয়ীবেশে মক্কায় প্রবেশ করলে কুরাইশদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিজিত শত্রুদের প্রতি কোন ধরনের দুর্ব্যবহার করেননি বরং দুশমনদের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘হে কুরাইশগণ! আমি তোমাদের সাথে কেমন ব্যবহার করবো বলে তোমরা মনে করো? তারা বললো, ‘আপনি আমাদের প্রতি ভালো ব্যবহার করবেন বলে আমাদের ধারণা। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের সাথে সেই কথাই বলছি, যে কথা হযরত ইউসুফ আলায়হিস্ সালাম তার ভাইদের উদ্দেশে বলেছিলেনÑ ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। যাও তোমরা সকলেই মুক্ত।’ ইসলামে জাতি, শ্রেণি ও বর্ণবৈষম্য নেই। আরবের উপর অনারবের এবং অনারবের উপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠত্বের একমাত্র ভিত্তি হচ্ছে তাকওয়া বা পরহেজগারি। নারীদের বিষয়ে বিদায় হজের ভাষণে বলা হয়েছে ‘তাদের উপর তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের উপর তাদেরও অধিকার রয়েছে’। একজন বেদুঈন এসে মসজিদের ভেতরে পেশাব করতে লাগল। এতে উপস্থিত সাহাবীগণ তাকে ধমক দিলে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে পেশাব করা থেকে বাধা প্রদান করো না। তাকে সুযোগ দাও; যাতে সে পেশাবের প্রয়োজন সেরে নিতে পারে, কারণ মধ্যখানে বন্ধ করলে ক্ষতি হবে। সে বেদুঈনের পেশাব করা শেষ হলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন যে, এটা পেশাবের স্থান নয়; বরং এটা আমাদের ইবাদতখানা, পবিত্রস্থান। এ বলে তিনি তাকে বিদায় করে দিলেন এবং এক সাহাবীকে পানি নিয়ে আসতে বললেন। অতঃপর মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজেই সাহাবীগণকে সাথে নিয়ে মসজিদ থেকে উক্ত পেশাব ধুয়ে দিলেন।” ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করানোর ক্ষেত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবাগণ কোন রকম জোর-জবরদস্তি করেননি। নায়েবে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া, পীর-মাশায়েখ, অলি-আউলিয়া, হাক্কানী আলেম-ওলামা যুগ যুগ ধরে দুনিয়ার বুকে দ্বীনি দাওয়াতের কাজে নিরলসভাবে মেহনত করে চলছেন। যুগে যুগে যারা মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন, তারা অসাধারণ মানবপ্রেম, অনুপম চারিত্রিক মাধুর্য, অতুলনীয় মানবিক মূল্যবোধ, দৃষ্টান্তমূলক সৎকর্ম, নিষ্ঠাপূর্ণ আমল ও পরিশুদ্ধ মননশীলতা দ্বারা বিশাল জনগোষ্ঠীকে ইসলাম গ্রহণে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়েছিলেন। এর ফলে দলে দলে মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেয়।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ইসলাম এতই সোচ্চার যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজেদের জানমালের পাশাপাশি সংখ্যালঘু অমুসলিম সম্প্রদায়ের জানমাল রক্ষায় সচেষ্ট থাকার জন্যও মুসলমানদের প্রতি তাগিদ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, অন্য ধর্মাবলম্বী ও তাদের উপাসনালয়ের ওপর আঘাত-সহিংসতাও ইসলামে জায়েজ নেই। সহিংসতা তো দূরের কথা অন্য ধর্মের প্রতি সামান্য কটূক্তিও না করার জন্য কুরআনে আল্লাহপাক নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, “তোমরা তাদের মন্দ বলো না, যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহকে ছেড়ে।”
[আনআম-১০৮] জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস থেকে পরিত্রাণের জন্য পবিত্র কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যা এবং নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস বিরোধী আয়াত ও ইসলামের মানবতাবাদী শিক্ষা সমাজের সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করা প্রয়োজন।
নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শিক্ষার প্রত্যক্ষ ফল হল গোত্রভিত্তিক সমাজের আধিপত্য বিলোপ সাধন করে ইসলামী ভ্রাতৃত্বে অনুপ্রাণিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ গঠন করা। তিনি কেবল আরববাসীদের মধ্যে কিংবা শুধু মুসলিম উম্মাহর মধ্যেই নয় বরং জাতি বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের সকল মানবের মধ্যে সম্প্রীতি, শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দুনিয়ায় এক অক্ষয় আদর্শের প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাঁর আদর্শের মূল ভিত্তি হল ধর্ম, জাতি, দেশ ভিন্ন হলেও সকল মানুষ মূলত একই পরিবারভুক্ত। মুসলিম-অমুসলিম সকল বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে তিনি উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন অমুসলিমদের জান ও মাল এবং আমাদের জান ও মাল এক ও অভিন্ন।
লেখক : সহ সম্পাদক, দৈনিক পূর্বদেশ, চট্টগ্রাম।