নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের পরম বন্ধু হযরত আবূ বকর সিদ্দীক

নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের পরম বন্ধু হযরত আবূ বকর সিদ্দীক

নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের পরম বন্ধু হযরত আবূ বকর সিদ্দীক –

ড. মুহাম্মদ খলিলুর রহমান >

সায়্যিদুনা আবূ বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ইসলামি ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য সোনালী অধ্যায় (Inseperable part of golden chapter)। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে সুবিখ্যাত, সুপরিচিত ও স্বনামধন্য। তাঁর আশৈশব পংকিলতামুক্ত জীবন ছিলো পুষ্পসদৃশ সুন্দর, সৌষ্ঠব ও অতীব প্রশংসনীয়। মানুষের সাথে তাঁর আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ ছিলো ঈর্ষণীয়। বিবাদ-বিসম্বাদ মীমাংসায় তিনি ছিলেন অতীব বিচক্ষণ ও অসাধারণ তীক্ষ্ম বোধ-বুদ্ধির অধিকারী। সত্যনিষ্ঠতা ছিলো তাঁর জীবনের অন্যতম ভূষণ। তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় যোগ্যতা ও লেনদেনের পরিচ্ছন্নতা ছিলো অতীব প্রশংসনীয়। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অসাধারণ যোগ্যতা ছিলো তাঁর। আবার, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তার বলিষ্ঠতা ও অনড়তা ছিলো বিস্ময়কর। যোদ্ধা হিসেবে তিনি ছিলেন অকুতোভয়। সেনাপতি হিসেবে ছিলেন অনন্য পারদর্শী। প্রশাসক হিসেবে ছিলেন সেরা ব্যক্তিদের মাঝে অনন্য। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি স্থাপন করেছেন অত্যুজ্জ্বল উদাহরণ। তিনি ছিলেন আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ পালনে নিবেদিতপ্রাণ। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের নূরানী জবানে জীবিতাবস্থায় যারা জান্নাতের সুসংবাদ লাভ করেছিলেন, তিনি ছিলেন তাঁদের প্রধান। বহুগুণে গুণান্বিত ও বহু অভিধায় বিভূষিত সায়্যিদুনা আবূ বকর সিদ্দীক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র জীবনের যৎকিঞ্চিৎ অংশ তথা তাঁর মর্যাদা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও বর্ণাঢ্য গুণাবলী সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনার প্রয়াস পাচ্ছিঃ

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
প্রকৃত নাম ‘আব্দুল্লাহ১, যার আভিধানিক অর্থ আল্লাহর বান্দা। ইসলাম কবূলের পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁর এ নামটি রাখেন। ইসলাম গ্রহণ পূর্ববর্তী সময়ে তাঁর নাম ছিলো ‘আব্দুল কাবা’২। উপনাম (কুনিয়াত) আবূ বকর। জাহিলি যুগ থেকে এ নামেই পরিচিত। তাঁর বহু উপাধি ছিল, যেগুলো তাঁর উচ্চ মর্যাদা, সত্যনিষ্ঠতা ও আভিজাত্যের প্রমাণ বহন করে। তন্মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো:৩
১. আল-আতীক্ব, ২. আস-সিদ্দীক্ব, ৩. আল-আওয়াহ, ৪. আল-আতক্বা, ৫. সাহিবু রাসূলিল্লাহ, ৬. খালীফাতু রাসূলিল্লাহ তবে উপর্যুক্ত দ্বিতীয় উপনাম ‘আসসিদ্দীক্ব’ নামেই তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেন।

সিদ্দীক’ নামকরণের কারণ
আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর উপাধি ‘আস-সিদ্দীক্ব’ অর্থ মহাসত্যবাদী কিংবা অতিশয় সত্য পরায়ণ। হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, একবার রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত আবূ বকর, ওমর ও ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমকে নিয়ে উহুদ পাহাড়ের উপর আরোহণ করলে পাহাড়টি কাঁপতে লাগলো, তখনি রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নূরানী জবানে পাহাড়কে উদ্দেশ্য করে বললেন :
اثبت احد فانما عليك نبى وصديق وشهيدان
অনুবাদ: হে উহুদ, স্থির হও! তোমার উপর রয়েছে একজন নবী, একজন সিদ্দীক্ব ও দু’জন শহীদ। এ প্রেক্ষাপটে তাঁর নামকরণ করা হয় ‘সিদ্দীক’।৭
এছাড়া আরো বহু কারণের মধ্যে হাদীসের বিভিন্ন রিওয়ায়ত থেকে জানা যায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পবিত্র মি‘রাজ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর বিস্ময়কর কাহিনী বর্ণনা করলে কাফিররা একে একেবারেই আজগুবি ও অলীক কাহিনী বলে উড়িয়ে দেয়; কিন্তু হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র জবান থেকে এ বিষয়টি শ্রবণ করা মাত্রই দ্বিধা-সংশয়হীনভাবে ‘সত্য’ বলে মেনে নেন বিধায় তাকে ‘আস্ সিদ্দীক্ব’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।৮

পিতা ও মাতা
হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আরবের সুবিখ্যাত কুরাইশ বংশের অন্যতম শাখা ‘তায়িম’১৭ গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ‘উসমান’ এবং উপনাম ‘আবূ কুহাফাহ’ ইবন আমির।
মাতার নাম ‘উম্মুল খায়র সালমা বিনতে সাখর’।১৮ তিনি স্বামী আবূ কুহাফার চাচাতো বোন।১৯ হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু পিতা-মাতা উভয়ের দিক দিয়েই ঊর্ধ্বতন সপ্তম পুরুষ ‘মুররা ইবনূ কা‘ব’Ñ এ উপনীত হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সাথে মিলিত হয়েছেন।২০ আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর পিতা-মাতা উভয়ই সাহাবী ছিলেন। তাঁর অন্যতম বৈশিষ্ট যে, তাঁর বংশের চার পুরুষ রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’কে তাঁর জীবদ্দশায় দেখতে পেয়েছিলেন ও তাঁর সাহচর্য লাভ করেছিলেন।২১

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মর্যাদা
হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র জীবদ্দশায় যেমনি সমগ্র মুসলিম সমাজের নিকট উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম পরিচিত ছিলেন, তেমনি তাঁর অন্তর্ধানের পরেও গোটা মুসলিম দুনিয়ায় তিনিই ছিলেন অবিসংবাদিত শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিত্ব। রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সম্পর্কে বলেন-রাসূলগণের পর হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু অপেক্ষা অন্য কোনো শ্রেষ্ঠতর মানুষের উপর সূর্য উদিতও হয়নি এবং অস্তও যায়নি।২৫
যে সকল উপাদান মানব চরিত্রকে অনিন্দ্য সুন্দর, উন্নত, মহৎ ও পরিপূর্ণ করে তুলতে পারে, তার সবগুলোই আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর মধ্যে বিদ্যমান ছিল। জাহিলী যুগেও তিনি পবিত্রতা, সততা, দানশীলতা, দয়া, সরলতা, ন্যায়পরায়ণতা ও আমানতদারী প্রভৃতি গুণে বিভূষিত ছিলেন। যে সমাজে মদ্যপান, ব্যভিচার ও পাপাচার সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করেছিল, আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সে সমাজের একজন প্রভাবশালী হওয়া স্বত্তেও তিনি ছিলেন সমস্ত কলুষ থেকে মুক্ত ও পঙ্কিলতা থেকে পূত:পবিত্র।

কুরআন মজীদে হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মর্যাদা
হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু উম্মতের মধ্যে যে সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন ও সৌভাগ্যবান ব্যক্তি ছিলেন তা কোনক্রমেই অস্বীকার করার জো নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সাথে নুবুয়াত প্রকাশের পূর্বেও যে আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল পবিত্র কুর’আনে সে সম্পর্কে অনেকস্থানে আলোচনা করা হয়েছে।
[কানযুল ঈমানের ভূমিকা দেখুন]

হাদীসের আলোকে হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র বৈশিষ্ট্য
হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সর্বশ্রেষ্ঠ ঘনিষ্ট ব্যক্তিত্ব। সুখে, দুঃখে, সফর, সমাবেশ ও নির্জনতায় তিনিই সবচেয়ে বেশি তাঁর সান্নিধ্য অর্জন করেন। ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য তিনি যে অসামান্য ও অবর্ণনীয় অবদান রেখে গেছেন, তা অন্য কোন সাহাবীর পক্ষে সম্ভব হয়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র বহু সংখ্যক হাদীসে তাঁর বিশিষ্ট মর্যাদার কথা বিধৃত যা কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও উচ্চ মর্যাদার প্রমাণ বহন করবে। কেননা তিনিই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তিনিই সর্বপ্রথম আল্লাহর পথে অত্যন্ত উদার হস্তে নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করেন।৩০ ‘আবদুল্লাহ ইবনু’ ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু একটি ‘আবা পরিধান করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসেছিলেন। আবাটি বুকের দিকে ছেঁড়া ছিল। ইতোমধ্যে জিবরাইল আলায়হিস্ সালাম আগমন করলেন এবং তাঁকে আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম বললেন। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
“মুহাম্মদ, এটা কেমন ব্যাপার যে, আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু তাঁর ‘আবাটি বুকের ওপর দিক থেকে কাঁটা দিয়ে জুড়ে রেখেছেন! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “জিবরাঈল, মাক্কা বিজয়ের পূর্বে তিনি তাঁর সমস্ত ধন-সম্পদ আমার জন্য ব্যয় করে ফেলেছেন।” জিবরা’ঈল আলায়হিস্ সালাম বললেন, “আপনি আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে আল্লাহ তা‘আলার সালাম পৌঁছিয়ে দিন এবং তাঁকে বলুন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছেন যে, তিনি তাঁর এ দরিদ্রতা নিয়ে আল্লাহ তা‘আলার ওপর সন্তুষ্ট না অসন্তুষ্ট?”
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর দিকে ফিরে বললেন, “আবূ বকর, ইনি হলেন জিবরাঈল। তিনি তোমাকে আল্লাহ তা‘আলার সালাম জানাচ্ছেন। আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে জিজ্ঞেস করেছেন যে, তুমি এ দরিদ্রতা নিয়ে তাঁর ওপর সন্তুষ্ট না অসন্তুষ্ট?”
এ কথা শুনে তিনি কাঁদতে কাঁদতে নিবেদন করেন, “আমি কি আমার রবের ওপর অসন্তুষ্ট থাকবো? তা হতেই পারে না। আমি আমার রবের ওপর সন্তুষ্ট, আমি আমার রবের উপর সন্তুষ্ট।”৩১

আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর গোলাম আযাদ করার বর্ণনা
ইসলাম গ্রহণের পর আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু নয়জন ঈমানদার গোলামকে, যারা কাফিরদের হাতে নির্যাতিত হতো, ক্রয় করে মুক্ত করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর এ কাজের প্রশংসা করে বলেন, “অতএব যে দান করে, আল্লাহকে ভয় করে চলে এবং কল্যাণকর বিষয়কে সত্য বলে বিশ্বাস করে, আমি সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য লাভের পথকে তাঁর জন্য সুগম করে দেবো।”৩২
এ আয়াতগুলো নাযিলের কারণ হলোÑ আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কাফিরদের হাতে নির্যাতিত গোলামদের ক্রয় করে আযাদ করে দিতেন। ওদের অধিকাংশই ছিল দুর্বল ও অসহায়।৩৩
আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু যখন হযরত বিলাল হাবশী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে ক্রয় করে আযাদ করে দেন, তখন মাক্কার কাফিররা বলতে লাগলো, আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর ওপর বিলালের নিশ্চয়ই কোনো অবদান ছিল, যার প্রতিদানস্বরূপ তিনি তাঁকে আযাদ করে দিয়েছেন। এ সময় পবিত্র কুর‘আন কাফিরদের কথার খন্ডন করে ঘোষণা করে৩৪Ñ “অচিরেই আল্লাহভীরু ব্যক্তিকে তা (অর্থাৎ জাহান্নামের আগুন) থেকে দূরে রাখা হবে। যে আত্মশুদ্ধির জন্য তার ধন-সম্পদ দান করে। তার ওপর কারো কোনো প্রতিদানযোগ্য অনুগ্রহ নেই- তার মহান রবের সন্তুষ্টি অন্বেষণ ছাড়া। সে সত্বরই সন্তুষ্ট হবে।”৩৫
অর্থাৎ আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু যে সব গোলামকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে মুক্ত করে দেন, তাদের কোনো পূর্বঅনুগ্রহ তাঁর ওপর ছিল না। তিনি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য এরূপ করেছেন। অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তাঁর ধন-সম্পদ ব্যয় করেছে এবং কোনো পার্থিব কল্যাণ চায়নি, আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সন্তুষ্ট করবেন এবং জান্নাতের মহা নি‘মাত তাকে দান করবেন। আয়াতের এ শেষ বাক্যটি আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর জন্য এক বিরাট সুসংবাদ। স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে দুনিয়াতে এ সংবাদ দান করেছেন।

আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর কথায় মক্কার বিশিষ্টজনদের ইসলাম গ্রহণের বিবরণ
আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর একান্ত দাওয়াতেই মাক্কার কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেন।
ইবনুল ‘আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ঈমান আনলেন এবং তাঁকে সত্য বলে বিশ্বাস করলেন, তখন সর্ব হযরত ১. ‘ওসমান, ২.আবদুর রাহমান ইবনে ‘আওফ, ৩. সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস, ৪. তালহা, ৫. যুবাইর ৬. সা‘ঈদ ইবনে যায়দ ৭. ওসমান ইবনে মায’উন ৮. আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহ ৯. আবূ সালমা ইবনে আবুল আস‘আদ ১০. আরকাম ইবনে উবাই রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম প্রমুখ তাঁর নিকট এসে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি ঈমান এনেছেন? আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু তখন তাঁদেরকে তাঁর ঈমান সম্পর্কে অবহিত করলেন। এরপর তাঁরা সকলেই ঈমান আনলেন।৩৭

সাওর পর্বতের গূহায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথী
ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হিজরতের সময় আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুই ছিলেন তাঁর একান্ত সাথী। সাওর পর্বতের গুহায় তাঁর সাথে আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আত্মগোপন করেছিলেন। পবিত্র কুর’আনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে- ثانى اثنين اذهما فى الغار
অনুবাদ : “সে (আবূ বকর) ছিল দু’জনের একজন, যখন তারা গুহার মধ্যে ছিল।”৩৮
এ আয়াতটি আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর উচ্চ মর্যাদা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য আত্মোৎসর্গের একটি বিরাট প্রমাণ। এটি কেবল আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এরই বৈশিষ্ট্য।

আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর গভীর রাত জাগরণের বর্ণনা
আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু রাত জেগে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করতেন। পবিত্র কুর’আনে তাঁর এ ‘আমলের সাক্ষ্য রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সাজদা অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রবের রহমত প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এরূপ করে না?…”৩৯
‘আবদুল্লাহ ইবনুল ‘আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এ আয়াতটিও আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর শানে নাযিল হয়।৪০

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘনিষ্ট সাথী ও সাহায্যকারী হওয়ার মর্যাদা অর্জন
আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একান্ত ঘনিষ্ঠ সাথী ও সাহায্যকারী। পবিত্র কুর’আনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে- هو مولاه وجبريل وصالح المؤمنين তবে আল্লাহ, জিবরাঈল ও সৎকর্মপরায়ণ লোকেরাই হলেন তাঁর সাহায্যকারী।”৪৫
এ আয়াতে وصالح المؤمنين (সৎকর্মপরায়ণ) বলে বিশেষভাবে আবূ বকর ও ‘ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমাকে বুঝানো হয়েছে। মুজাহিদ, দ্বাহ্হাক, সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর, ‘ইকরামাহ ও মুক্বাতিল রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম প্রমুখ মুফাসসিরগণ এরূপ মন্তব্য করেছেন।৪৬

আল্লাহ তা‘আলার শ্রেষ্ঠ কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপনকারী হিসেবে প্রসিদ্ধি অর্জন
আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আল্লাহ তা‘আলার বেশি পরিমাণে শোকর আদায় করতেন। পবিত্র কুর’আনে ‘কৃতজ্ঞ বান্দা’হ বলে তাঁর প্রশংসা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وسيجزى الله الشاكرين -“অচিরেই আল্লাহ তা‘আলা কৃতজ্ঞ বান্দাদের উত্তম প্রতিদান দেবেন।”৪৭ ‘আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, এ আয়াতের মধ্যে الشاكرين দ্বারা দৃঢ় ঈমানের অধিকারী আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ও তাঁর সাথীদের বুঝানো হয়েছে। ‘আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আরো বলেন, “আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ছিলেন একান্ত শোকরগুযার ও আল্লাহর প্রিয় বান্দা। তিনি শ্রেষ্ঠতম শোকরগুযার এবং আল্লাহ তা‘আলার প্রিয়তম বান্দাহ ছিলেন।”৪৮

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘনিষ্ঠতম সাথী ও শ্রেষ্ঠতম সহযোগী
আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সর্বাপেক্ষা বড় সহযোগী ও অন্তরঙ্গ সাথী। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য তাঁর জীবন, সব অর্থ-সম্পদ, বিবেক-বুদ্ধি, আরাম-আয়েশ সবকিছু উজাড় করে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “নিজের সঙ্গ ও সম্পদ দ্বারা যিনি আমার প্রতি সর্বাপেক্ষা অধিক অবদান রেখেছেন, তিনি হলেন আবূ বকর। আমি যদি আমার উম্মতের মধ্যে কাউকেও ঘনিষ্ট বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করি, তবে আবূ বকরকেই করবো। কিন্তু ইসলামের ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দই আমাদের জন্য যথেষ্ট। সুতরাং মাসজিদের মধ্যে আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু -এর গৃহ-দ্বার ছাড়া অন্য কারো গৃহ-দ্বার উন্মুক্ত না থাকা চাই।”৪৯
এ হাদীসটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাতের অল্প কয়েকদিন পূর্বেকার একটি বিস্তারিত ভাষণের অংশবিশেষ। এ রিওয়ায়াতটি (সামান্য শব্দগত পরিবর্তনসহ) ১৪ জন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু প্রমুখ বিশিষ্ট সাহাবীও রয়েছেন। জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হাদীসটিকে ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ের হাদীস রূপে গণ্য করেছেন। ইমাম তিরমিযী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি হাদীসের উপর্যুক্ত অংশের সাথে নিম্নের এ অংশও যোগ করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আমার প্রতি যত লোকের যত অবদান ছিল, সব অবদানের প্রতিদানই আমি দিয়ে দিয়েছি; কিন্তু আবূ বকর-এর অবদানের প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাই ক্বিয়ামাতের দিন তাঁকে দান করবেন। আবূ বকর-এর সম্পদ দ্বারা আমি যতটুকু উপকৃত হয়েছি, আর কারো সম্পদ দ্বারা তত পরিমাণ উপকৃত হইনি।৫০
আবূ আরওয়া আদ-দাওসী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাশে উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় আবূ বকর ও ‘ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা দু’জনেই সেখানে আগমন করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদেরকে দেখে বললেন, الحمد لله الذى ايدنى بهما -“আল-হামদু লিল্লাহ! আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের দুজনের মাধ্যমে আমার শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছেন।”৫১

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় সাহাবী
‘আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহাকে জিজ্ঞেস করলাম, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় সাহাবী কে ছিলেন?” তিনি জবাব দিলেন, “আবূ বকর।”৫২

নবী-রাসূলগণের পর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি
আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হলেন নবী-রাসূলগণের পর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি। হযরত আবুদল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু -এর আগে হাঁটতে দেখলেন। এমন সময় তিনি আমাকে বলেন, “আবুদ দারদা’! তুমি কি এমন ব্যক্তির আগে আগে চলছো, যিনি দুনিয়া ও আখিরাতে তোমার চেয়ে উত্তম? নবী-রাসূলগণকে বাদ দিলে আবূ বকর অপেক্ষা অন্য কোনো শ্রেষ্ঠতর মানুষের ওপর সূর্য উদিতও হয়নি এবং অস্তও যায়নি।”৫৩

উম্মতের প্রতি সর্বাপেক্ষা দয়ালু
আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আমার উম্মতের মধ্যে আমার উম্মতের প্রতি সর্বাপেক্ষা দয়ালু ব্যক্তি হলো আবু বকর।৫৪
এ হাদীস থেকে আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা জাতি সহজেই অনুধাবন করতে পারে।৫৫ আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে উম্মতের প্রতি সর্বাপেক্ষা দয়ালু ব্যক্তি বলে অভিহিত করা থেকে এ কথা বুঝা যায়-তিনিই হলেন উম্মতের মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও মহৎ ব্যক্তি এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাত শরীফের পরে তিনিই হবেন তাঁর স্থলাভিষিক্ত।

জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত প্রথম ব্যক্তি
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিভিন্ন হাদীসে আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু জান্নাতবাসী হবার কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। যেমনÑ
১. আবূ মুসা আশ‘আরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বাগানে প্রবেশ করেন এবং আমাকে বাগানের দরজা পাহারা দিতে নির্দেশ দিলেন। এ সময় হযরত বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এসে বাগানে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ائذن له وبشره بالجنة “তাঁকে অনুমতি দাও এবং জান্নাতের সুসংবাদ দাও।”৫৬ এরপর ‘হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এসে অনুমতি চাইলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ائذن له وبشره بالجنة -“তাঁকেও অনুমতি দাও এবং জান্নাতের সুসংবাদ দাও।” অতঃপর আসলেন ‘হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ائذن له و بشره بالجنة -“তাঁকে অনুমতি দাও এবং জান্নাতের সুসংবাদ দাও।” উল্লেখ্য যে, এ হাদীস বিবিধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। সাহাবীগণের মধ্যে আবূ মূসা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ছাড়াও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর৫৭ ও নাফি’ ইবনে ‘আবদিল হারিস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ৫৮ প্রমূখও এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
২. সা‘ঈদ ইবনু যায়েদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন-“দশ জন ব্যক্তি জান্নাতে যাবেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আবূ বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু) জান্নাতে যাবেন, ‘হযরত ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু) জান্নাতে যাবে…’ এভাবে তিনি সর্ব হযরত ‘ওসমান, ‘আলী, তালহা, যুবাইর, সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস, ‘আবদুর রাহমান ইবনে ‘আওফ ও (রাভী) সা‘ঈদ ইবনে যায়দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু প্রমুখের নাম উল্লেখ করলেন।৫৯
৩. জাবির ইবনে ‘আবদিল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে জনৈকা আনসারী মহিলার দাওয়াতে গিয়েছিলাম। মহিলাটি আমাদের আতিথেয়তার জন্য একটি ছাগল যাব্হ করেছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ليدخلن رجل من اهل الجنة “এখনই তোমাদের নিকট একজন জান্নাতী লোক প্রবেশ করবে।” পরক্ষণেই আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু প্রবেশ করলেন। আবার তিনি বললেন, ليدخلن رجل من اهل الجنة -“এখন আর একজন জান্নাতী লোক প্রবেশ করবে।” পরক্ষণে ‘ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু প্রবেশ করলেন। এরপর তিনি বললেন, ليدخلن رجل من اهل الجنة “এখন আরো একজন জান্নাতী লোক প্রবেশ করবেন।” এরপর তিনি এ বলে দু‘আ করলেন, اللهم إن شئت فاجعله عليا “হে আল্লাহ, আপনি যদি চান, এ সৌভাগ্য ‘আলীকে দান করুন!” পরক্ষণে ‘আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু প্রবেশ করলেন।৬০

ক্বিয়ামাতের দিন যমীন ভেদ করে উত্থিত উম্মতের প্রথম ব্যক্তি
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “(ক্বিয়ামাতের দিন) আমিই হবো যমীন ভেদ করে উত্থিত প্রথম ব্যক্তি। এরপর আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু, তারপর ‘হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু যমীন ভেদ করে ওঠবেন। এরপর আমি জান্নাতুল বাকী’র বাসিন্দাদের কাছে আসবো। তারা সকলেই আমার সাথে একত্রিত হবে। তারপর আমি মাক্কাবাসীদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকবো। এভাবে দু’হারামের মধ্যবর্তী স্থানে আমরা একত্রিত হবো।”৬১

জান্নাতীগণের সর্দার
আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর ও ‘হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মর্যাদা বর্ণনা করে বলেন, “এরা দুজন নবী-রাসূলগণ ছাড়া পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগসমূহের সকল প্রৌঢ় জান্নাতবাসীর সর্দার হবেন।”৬২

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাওযে কাউসারের সাথী
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ‘ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কে উদ্দেশ করে বলেন, انت صاحبى على الحوض وصاحبى فى الغار – “তুমি হাওযে কাউসারের পাড়ে আমার সাথী হবে, যেমন তুমি সাওর পর্বতের গুহায় আমার সাথী ছিলে।”৬৩
পরিশেষে, বলা যায় আল্লাহর সর্বশেষ নবী যখন ওফাত বরণ করেন তখন দিকভ্রান্ত মানবজাতি সর্বান্তকরণে কামনা করেছিল এমন এক বলিষ্ঠ মানুষকে, যিনি মানবীয় আবেষ্টনীর মধ্য থেকেই মানুষের আদর্শরূপে পরিগণিত হতে পারেন। নি:সন্দেহে ওই আদর্শ মানুষটি হচ্ছেন আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। নবী না হয়েও মানুষ যে কতো পরিপূর্ণ, সুন্দর, সুশীল, সৌম্য ও মহৎ হতে পারে হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু তার এক অনুপম প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র জীবনের সকল আদর্শ, লক্ষ্য ও ধ্যান-ধারণা তাঁর জীবনে গভীর রেখাপাত করেছিল। এককথায় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ওফাত পরবর্তী নাজুক ও ক্রান্তিকালে হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর প্রবল শক্তি, অপার বুদ্ধিমত্তা, অনুপম চরিত্র-মাধুর্য, তীক্ষ্ম মেধা ও অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইসলাম অতিদ্রুতই আবারো সমহিমায় পুন:প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র তিরোধানের পর হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ও হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মতো দু’জন মহান খলীফা যদি সর্বান্তকরণে খিলাফাতের দায়িত্ব আঞ্জাম না দিতেন, তবে ইসলামের যে কী দশা হতো, তা সত্যই কল্পনা ও চিন্তাতীত। তাই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ওফাতের পর আমরা এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতে উপনীত হই যে, যদি আল্লাহ তা‘আলা আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মাধ্যমে আমাদের ওপর অনুগ্রহ না করতেন, তাহলে আমরা প্রায় ধ্বংসই হয়ে যেতাম।৬৪ একথায় প্রতিধ্বনি করেই বিখ্যাত জার্মান ঐতিহাসিক Von Kremer বলেন : Of both (Abu Bakr and Omar) it might be truly said with on them Islam would have perished with the prophet ৬৫

তথ্যপঞ্জি
১. ক. তাবারী, তারীখুর রুসূল ওয়ালমুলূক খ.২, পৃ. ২১৮
খ. সুয়ূতী, তারীখুল খুলাফা, পৃ. ১১
২. ক. ইবনুল আসীর, উসদুলগাবা, খ. ২, পৃ. ১৩৮
খ. ইবনু আবদিল বার্র, আল-ইস্তি‘য়াব খ. ১ পৃ. ২৯৪
গ. ইবনুল মুতাহহিব, আল-বাদউ ওয়াত তারিখ, খ. ১, পৃ. ২৮৩
৩. ড. আহমদ আলী, খালীফাতু রাসূলিল্লাহ আবূ বকর আছ ছিদ্দীক (রা.) :
(ঢাকা : বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, অক্টোবর, ২১৩ খ্রি.) পৃ. ৩২-৩৯
৪. ইবনু মানযূর, লিসানুল আরাব খ. ৪, পৃ. ৭৬
৫. ইবনু মানযূর, প্রাগুক্ত
৬. ফাইয়ূমী, আল মিসবাহুল মুনীর, খ. ১, পৃ. ৩৫৬
৭. বুখারী, আস্-সাহীহ (কিতাবুল মানাকিব) হাদীস নং: ৩৩৯৯
৮. ক. হাকিম, আল মুস্তাদরাক, হা. নং : ৪৩৮১, ৪৪৩২
খ. তাবারানী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা. নং-১৫, ২০, ৪৯৪
গ. বায়হাকী, দালায়িলুল নাবুয়্যাহ হা. ৬৫২
৯. ক. তাবরানী, আলমু’জামুল কাবীর হা. ১৪, মারেফাতুস সাহাবা, হা : ৫৯
১০. ক. আবূ নু‘আয়ম ইসফাহানী, ফাযায়িলুল খুলাফায়ির রাশিদীন, হা : ১৮৮
খ. সুয়ূতী; প্রাগুক্ত, পৃ. ১১
১১. ড. আহমদ আলী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৯
১২. ইবনুল হাজার আল-আসকালানী, আল ইসাবা খ.২ পৃ. ১৫১
১৩. ইবনুল জাওযী, আল-মুনতাযিম, খ. ১, পৃ. ৪২৯
১৪. ক. ইবনু সায়্যিদিন নাস, উয়ূনুল আসার, খ. ১, পৃ. ৪০
খ. ইবন কাছীর, আস-সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ খ. ১, খ ২০৩
১৫. সুয়ূতী, প্রাগুক্ত পৃ. ১১
১৬. মুহাম্মদ রিজা, আবূ বকর আস সিদ্দীক (রা.) পৃ. ৫
১৭. ক. ইবনু হাজার, আল ইসাবাহ, খ. ২, পৃ. ১৫১
খ. ইনূ আব্দুল বারর, আস-ইস্তিয়াব খ. ১, পৃ. ২৯৪
গ. ইবনুল আসীর, উসদুল গাবাহ খ. ২, পৃ. ১৩৮
১৮. ইবনুল আসীর, উসদুল গাবাহ, খ.২, পৃ. ২৩৮
১৯. ইবনুল আসীর, প্রাগুক্ত।
২০. বালাযুরী, আনসাবুল আশরাফ খ.৩, পৃ. ৩০৬
২১. ইছামী, সিমতুন নুজুম, খ.১, পৃ. ৪১৯
২২. ক. ইবনু আবদিল বারর, প্রাগুক্ত খ.২, পৃ. ১৩৩
খ. ইবনুল মুতাহাহির, আলবাদ-উ ওয়াত তারীখ খ.১, পৃ. ২৮৩
২৩. ক. ইবনুল আসীর, আল-কামিল ফিত্তারিখ খ.২, পৃ. ১৩৩
খ. ইবনুল জাওজী, আল-মুনতাজিম খ.৪৩০
২৪. আল মুহিব্ব আত্ তারিখ, আর-রিয়াদু নাদিরাতু.. পৃ. ১৩০
২৫. আহমাদ, ফাযায়িলুস সাহাবাহ খ. ১, পৃ. ১৫৩, হা. ১৩৫, পৃ. ১৫৫, হা. ১৩৭,পৃ. ৪২৩, হা. ৬৬২
২৬. ক. আবু নুআয়ম, মা’রিফাতুস সাহাবা, হা.১০৩, খ. সুয়ুতী, তারীখুল খুলাফা. পৃ. ১২
২৭.ক. আবূ নূআয়ম, হিলয়াতুল আউলিয়া, খ.৩, পৃ.২২৫, খ. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশক খ.৩০, পৃ.৩৩৪
২৮. আল-কুরআন, সূরা : ৪৬ আল-হাদীদ : ১০
২৯. ক. ড.আহমাদ আলী, প্রাগুক্ত, পৃ.৬৯৬-৭০১.
৩০. ক. আলওয়াহেদী, আসবাবু নুযূলিল কুরআন পৃ.১৪৪,খ. কুরতুবী, আল-জামি খ.১৭, পৃ. ২৪০
৩১. ক. ইবনু কাছীর তাফসীরু কুরআনিল আযিম, খ.৮, পৃ.১৪
খ. বাগাভী, মা’ আলিমুত্ তানযীল, খ.৮, পৃ.৩৪
গ. আল-ওয়াহিদী, আসবাবু নুযূলিল কুরআন, পৃ.১৪৪
ঘ. আবু নুয়ায়ম, হিলয়াতুল আউলিয়া খ.৩, পৃ.১৯৮
ঙ. সুয়ূতী, প্রাগুক্ত, পৃ.৫৮
৩২. আলকুর’আন, সূরা ৯২ (আল-লায়াল) : ৫-৭
৩৩. ক. হাকিম, আলমুসতাদ্রাক (কিতাবুত্তাফসীর) হা.৩৯০৩,
খ. তাবারী, পাগুক্ত খ.২৪, পৃ.৪৭১
৩৪. ক. কুরতুবী, আলজামি’ লিআহকামিল কুরআন, খ.২০, পৃ.৮৯
খ. ইমাম আররাযী, মাফাতিহুল গায়ব, খ.১৭, পৃ.৬৭
৩৫. আলকুর’আন, সুরা:৯২ আল-লায়াল : ১৭-২১
৩৬. আলকুর’আন, সূরা: ৩৯ আয-যুমার : ১৭-১৮
৩৭. কুরতুবী, প্রাগুক্ত, খ.১৫, পৃ. ২৪৪
৩৮. আলকুর’আন, সূরা: ৯ আততাওবাহ: ৪০
৩৯. আলকুর’আন, সূরা: ৩৯ আয্যুমার:৯
৪০. ওয়াহিদী; আসবাবুন নুযূলিল কুর’আন, পৃ.১৩১, বাগাভী, মা’ আলিমুত তানযীল, খ.৭, পৃ.১১০
৪১. আলকুর’আন সূরা: ২৪ আননূর: ২২
৪২. বুখারী, আস-সাহীহ (কিতাবুল মাগাযী) হা.নং ৩৮২৬
৪৩. আররাযী, প্রাগুক্ত খ. ১১ পৃ.২৮৫
৪৪. আরবাযী, প্রাগুক্ত খ. ১১ পৃ.(২৮৫-২৮৮)
৪৫. আলকুর’আন, সূরা: ৬৬ আত্-তাহরীম: ৪
৪৬. ক. তাবারী, প্রাগুক্ত, খ.২৩, পৃ.৪৮৬
খ. ইবনু কাছীর, প্রাগুক্ত, খ.৮, পৃ. ৩১৪
৪৭. আলকুর’আন, সূরা : ৩, আলে-ইমরান:১৪৪
৪৮. ক. তাবারী, প্রাগুক্ত খ.৭, পৃ.২৫২
খ. আলখাযিন, লুবাবুত্-তাভীল খ.১ পৃ. ৪৮২
৪৯. বুখারী, আস-সহীহ (কিতাবুস সালাত) হা. ৪৪৬, ৪৪৭, কিতাবুল মানাকিব, হা: ৩৩৮১
৫০. তিরমীযি, আসসুনান, (আবওয়াবুল মানাকিব) হা. ৩৫৯৪
৫১. ক. হাকিম,আল-মুস্তাদরাক (কিতাবু মা’আরিফাতুস সাহাবাহ) হা. ৪২১
খ. তাবরানী, মুজামুল কবির, হা.১৮,৩৬১
৫২. তিরমীযি আল্-সুনান (আবওয়াবুল মানাকিব) হা: ৩৫৯০, ৩৭৩০
৫৩. বুখারী, আস-সাহীহ, (কিতাবুল মানাকিব) হা: ৩৩৮৯, (কিতাবুল মাগাযী) হা: ৪০১০
৫৪. আহমদ, ফাযায়িলুস সাহাবাহ: খ.১, পৃ. ১৫৩, হা: ১৩৫, পৃ. ১৫৫ হা: ১৩৭, পৃ. ৪২৩, হা: ৬৬২
৫৫. তিরমীযি, আস্সুনান, কিতাবুল বিরর, হা: ১৯১৯
৫৬. তিরমীযি, আসসুনান, (কিতাবুল বিরর) হা: ১৯১৯
৫৭. বুখারী, আস্সাহীহ (কিতাবুল মানাকিব) হা: ৩৩৯৮
৫৮. আহমাদ, আল-মুসনাদ হা: ৬২৬১
৫৯. আহমাদ, প্রাগুক্ত, হা: ১৪৮৩১,১৪৮৩২
৬০. আবূ দাউদ, আস-সুনান, (কিতাবুস সুন্নাহ, বাব : আল-খুলাফা) হা: ৪০৩১
৬২. তিরমীযি, আন্ সুনান, (আব্ ওয়াবুল মানাকিব) হা: ৩৩২৫
৬৩. তিরমীযি, প্রাগুক্ত, হা: ৩৫৯৭
৬৪. তিরমীযি, প্রাগুক্ত, হা: ৩৬০৩
৬৫. ইবনুল আসাকীর, আলকামিল ফিত্-তারীখ খ.১ পৃ.৩৬৫
৬৬. Von kremer, Politics in Islam P.13.