চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত রাউজান উপজেলা শিক্ষাদীক্ষা- সংস্কৃতিতে অগ্রসর এলাকা। উপজেলার কেন্দ্রস্থলে রাউজান পৌরসভার এক বর্ধিষ্ণু গ্রামের নাম সুলতানপুর। এ গ্রামের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত মুকিম বাড়ির পূর্ব পুরুষ ছিলেন মোগল আমলের পদাতিক বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান শেখ বড় আদম লস্কর এর বংশধর। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব’র আমলে চট্টগ্রাম মোগল সাম্রাজ্য ভুক্ত হয়। ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে গৌড় হতে বড় আদম লস্করের সুলতানপুর আগমন ঘটে। এরই অধঃস্তন বংশধর মরহুম বেলায়েত আলী চৌধুরী ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার ঔরসে ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুলাইয়ের এক শুভক্ষণে একটি শিশুর জন্ম হয়। সেই আনন্দঘন মুহূর্তে ইসলামী শরীয়ত মতে সদ্যভুমিষ্ঠ শিশুটির নাম রাখা হয় মুহাম্মদ আবদুল খালেক। অতি অল্প বয়সেই তিনি পিতৃহারা হন। বড় বোন তামান্না ও বড় ভাই আবদুল গণি চৌধুরীর অতি আদরের ছোট ভাই আবদুল খালেক। গর্ভধারিণী মা ফজিলাতুন্নেছা একাধারে মা-বাবার দ্বৈত ভূমিকায় সন্তানদের আগলে রাখেন বহু কষ্টে। শোকাবহ পরিবারের হাল ধরে শক্ত হাতে। এমতাবস্থায় মরহুম বেলায়েত চৌধুরীর জ্ঞাতিভাই মরহুম আহমদ মিয়া চৌধুরী সহযোগীতার হাত বাড়ায়। ভাঙ্গা সংসারকে টিকিয়ে রাখতে তিনি অবদান রাখেন। তিনি আবু মুহাম্মদ তবিবুল আলমের পিতা ছিলেন। মরহুম তবিবুল আলম রাহমাতুল্লাহি আলায়হি কুতুবুল আউলিয়া আওলাদে রসূল হাফেজ সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র মুরিদ ও খলিফা। আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’র জেনারেল সেক্রেটারী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে আজীবন খেদমত করেছেন। আবদুল খালেক সাহেব বাল্যকালে শান্ত স্বভাবের ছিলেন। চলা-ফেরা করতেন ধীরলয়ে কথা বলতেন বিনয়ের সাথে নম্রস্বরে। আদুরে ছেলেটি প্রায়শঃ বড় ভাই আবদুল গনি চৌধুরীর কাঁদে চড়ে চলতেন। এতে বাড়ির ছোট ছেলে-মেয়েরা হাসতেন। অন্য সকলের খেলাধুলা উপভোগ করলেও নিজে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতেন না।
গরীব দুঃখী মানুষকে ভিক্ষা করতে দেখলে তিনি বেদনাহত হতেন। বাড়িতে ভিক্ষুক আসলে সবার অলক্ষ্যে মোটকা (চাউল রাখার ভান্ড) থেকে চাউল এনে বিলিয়ে দিতেন। একা একা বাড়ি হতে বেরোতেন না, মসজিদ মক্তবে যেতে হলেও কেউ একজন তাকে নিয়ে যেতেন। ঘরকুনো লাজুক প্রকৃতির বললেও অত্যুক্তি হবে না। ধার্মিক পরিবারের ছেলেটি শিশুকাল হতেই বড়দের সাথে মসজিদে যেতেন। শৈশব থেকেই তাঁর ব্যতিক্রমী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করে পাড়াপরশীরা ভবিষ্যতে বড় ভাল মানুষ হবে বলে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন। মসজিদ ঝাড়ু দেয়া, আযান দেয়া, ইমামতি করা (প্রয়োজন বোধে) তাঁর এক অনন্য স্বভাব ছিল। ধার্মিক ও সুস্থ মুল্যবোধ সম্পন্ন পরিবারে বেড়ে উঠার কারণে তাঁর মধ্যে উন্নত মানসিকতা ও নৈতিকতাসম্পন্ন চরিত্রের সমাহার ঘটে। নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী হয়ে তিনি নিজেকে বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন আলোকিত মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন বিধায় সমাজকে আলোকিত করতে অবদান রাখা সম্ভব হয়েছিল। পাঁচ বছর বয়সে রাউজান স্টেশন প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন। রজনী মাষ্টারের এই স্কুলটি পরবর্তীতে ভিক্টোরিয়া প্রাইমারি স্কুলে রূপান্তরিত হয়েছিল। ২য় ও ৫ম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। বৃটিশ সরকারের আমলে ২য়, ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষার বিধান ছিল। রাউজান আর আর এসি ইনস্টিটিউশন হতে ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে বঙ্গীয় বৃত্তি লাভ করে সকলের প্রশংসা অর্জন করেন। তৎকালে বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে হিন্দু ছাত্রদের একচ্ছত্র প্রাধান্য ছিল। সে সময়ে আবদুল খালেক ও তাঁর জ্ঞাতি ভাই ডা: আবুল হাশেম চট্টগ্রাম অঞ্চল হতে একই স্কুলের ছাত্র বৃত্তি পাওয়ায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। দু’জনের জন্য দুইবার সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ।
একই স্কুল থেকে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রাস (এস এস সি) পরীক্ষায় চট্টগ্রাম জিলায় প্রথম হয়ে প্রথম বিভাগে পাস করেন। এরকম প্রতিভাসম্পন্ন কৃতিছাত্রকে দেখার জন্য দশ গ্রামের অনেক মানুষ তাঁকে দেখতে আসতেন, দো’আ করতেন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে। ১৯১৪ সালে জেলা বৃত্তি নিয়ে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আই এস সি পাস করে কৃতিত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। মাসিক পনেরো টাকা বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা আদৌ সম্ভব হবে না ভেবে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন। সে সময় চাচা আহমদ মিয়া চৌধুরী (আবু মুহাম্মদ তবিবুল আলমের পিতা) কলিকাতায় ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল পদে সরকারি চাকুরী করতেন। ইতোমধ্যে তিনি ভাগ্নে ডা: আবুল হাশেমকে কলিকাতায় এম বি কোর্সে পড়াশোনা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। পরোপকারি শিক্ষানুরাগী ভদ্রলোক বললেন আবদুল খালেক কলিকাতায় তাঁর তত্ত্বাবধানে থেকে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করবে।
চাচা আহমদ চৌধুরীর বদান্যতায় পাঁচ বছর শিক্ষা গ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পাস করে ডিগ্রীপ্রাপ্ত হন। তিনি দেখতে আকর্ষণীয় চেহারার সুপুরুষ ছিলেন। উর্দুভাষী শিক্ষকরা তাঁকে উর্দুভাষী উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান বলে মনে করতেন। কেননা ইংরেজি ও উর্দুভাষায় তাঁর যথেষ্ট দখল ছিল। অকপটে বলতে লিখতে পড়তে পারতেন, চমৎকার ভাষায় শিক্ষকদের সাথে আলাপ করতেন। একবার এক পরীক্ষক তাঁকে পরখ করার জন্য ইংরেজি ও উর্দু দু’ভাষায় পরীক্ষা নেন, উভয় পরীক্ষায় তিনি সমান পারদির্শতার সাথে উত্তর দিয়ে পরীক্ষককে হতবাক করে দেন। ৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় তিনি ইংরেজিতে ৯৮ ও অংকে ১০০ নম্বর পেয়েছিলেন।
১৯২০ সালে চট্টগ্রাম ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানীতে সহকারি তড়িৎ প্রশৌশলী পদে চাকুরী শুরু করেন। কয়েক বছরের মধ্যে তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পান। অধিকতর মহত্বের কাজে মানব কল্যাণ ও সমাজ সেবার প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ থাকার কারণে তিনি ১৯৩২ সালে চাকুরীতে ইস্তফা দেন। কর্তৃপক্ষ আরো পদোন্নতি ও বর্ধিত বেতনে চাকুরীর প্রস্তাব দেয়াতেও তিনি চাকুরীতে পুনর্বাসিত হতে চাননি। কোনো এক সময় সহপাঠি আবদুল জলিল বি.এ. (আলীগড়) মাস্টারের সাথে স্বল্প সময়ের জন্য রেংগুন গমন করেন। জলিল সাহেব ইস্পাহানি আবাসিক স্কুলের শিক্ষক হিসেবে রেংগুনে কর্মরত ছিলেন, সেখানে থাকাবস্থায় বন্ধুবর জলিল সাহেবের সৌজন্যে আওলাদে রাসূল (৩৮তম) কুতুবুল আউলিয়া হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব হাফেজ সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বাঙ্গালী মসজিদের খতীব’র সাথে সাক্ষাৎ প্রাপ্ত হন। সে সময়েই ইঞ্জিনিয়ার সাহেব বন্ধু আবদুল জলিলের উৎসাহে হুজুরের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে ধন্য হন। কিছুকাল রেংগুনে অতিবাহিত করে স্বদেশে ফিরে আসেন। তারপর শুধুই ইতিহাস, আরো কয়েকবার তিনি রেংগুন ভ্রমণ করেন।
সাদা কালো শশ্রুমন্ডিত দুধে আলতা রং মেশানো সৌম্যকান্তি চেহারায় নূরানী ঝলক উদ্ভাসিত হতো সর্বদা। আকর্ষণীয় নূরানী চেহারার দিকে তাকালে অজান্তে শ্রদ্ধায় বিগলিত হয়ে উঠতো যে কারো মন। আমি (লেখক) অনেকবার গ্রামের বাড়িতে ও শহরে অনেকবার তাঁকে দেখেছি। এখনো আমার মনে তাঁর নূরানী জ্যোতির চেহারা খানা ভেসে উঠে। তিনি ছিলেন আমার জেঠতুত ভাইয়ের শ্বশুর। সে সুবাদে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি যখন তাঁর গ্রামের বাড়িতে তশরীফ নিয়ে অবস্থান করতেন তখন বহুবার সেখানে যেতাম, খাওয়া-দাওয়া করতাম। অল্প বয়সী হবার কারণে হুজুরের মাহাত্ম্য বোঝা তখন সম্ভব হয়নি।
ব্যবসায়ী জীবনের শুরুতে ১৯২৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন কোহিনূর লাইব্রেরি। অথচ তড়িৎ প্রকৌশলীর ব্যবসা হওয়া ছিল লব্ধ জ্ঞান বিষয়ভিত্তিক। জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের মহাসোপান হচ্ছে লাইব্রেরি বা পাঠাগার। বিনে পয়সায় গরীব শিক্ষার্থীদের বই প্রদান, পত্রিকা পড়া ও বই পড়ার সুযোগ ছিল কোহিনূর লাইব্রেরীতে। জ্ঞানার্জন ও পাঠক সৃষ্টি করার গভীর প্রত্যয় নিয়ে তিনি প্রথম এ ব্যবসার গোড়াপত্তন করেন। সম্মানজনক পদবী ও মোটা অংকের মাসোহারা ত্যাগ করে সামান্য একটা লাইব্রেরি স্থাপন করায় আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের অনেকেই মন ভারাক্রান্ত করেছিলেন সে সময়। কিন্তু স্থির প্রতিজ্ঞা ও লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করলে সুনাম অর্জনে সহায়ক হয়। তেমনি কয়েক বছরের মধ্যে কবি, সাহিত্যিক, জ্ঞানী-গুণী অনেকেই এ লাইব্রেরির নিয়মিত পাঠক বনে যান। জ্ঞান আহরণে সমৃদ্ধ হন। কিছুদিনের মধ্যে (১৯৩০ সালে) কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেস স্থাপন করেন। ছাপাখানা জগতে নবদিগন্তের সূচনা করেন। উভয় প্রতিষ্ঠান ঐতিহাসিক আন্দরকিল্লা মোড়ের দু’পাশে অবস্থিত। অর্থপ্রাপ্তির চেয়ে বইপড়া, জ্ঞানসমৃদ্ধ হবার অভ্যাস গড়ে তোলার প্রয়োজনেই তিনি পাঠাগার ও ছাপাখানা স্থাপন করেন একটি অপরটির পরিপূরক হিসেবে।
‘কোহিনূর’ পারিবারিক কারো নাম নয়। মুসলমানদের শৌর্যবির্যের প্রতীক মুঘল সাম্রাজ্যের মহামূল্যবান হীরক খন্ডের মুকুটকে স্মরণ করেই এ নামকরণ। মুসলমান কবি, সাহিত্যিকদের রচনা ছাপানোর জন্য কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বল্প অর্থে বা বিনা অর্থে ছাপার কাজ করে দিতেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন চলাকালীন ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে রফিক, জব্বার, বরকত, সালামসহ অনেক শহীদ হলে জলবসন্ত রোগে আক্রান্ত চট্টগ্রামের গৌরব লেখক কবি মাহবুব আলম চৌধুরী (গহিরা রাউজান উপজেলা) শহীদদের উদ্দেশ্য করে রচনা করেন ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’, এক অমরগাথাঁ দীর্ঘ কবিতা। তৎকালিন নুরুল আমিন সরকারের প্রশাসনের নির্যাতনের ভয়ে সেই কবিতাখানা ছাপাতে কেউই রাজি হননি। অমিত সাহসের অধিকারি ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের মাতৃভাষার প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধার কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁর প্রেস থেকে ছাপিয়ে দেন। ভোর হতে না হতেই পুলিশ প্রেসে এসে ম্যানেজার দবির উদ্দিন ছাহেবকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। প্রেস মালিককে গ্রেফতার করতে চাইলে দবির আহমদ চৌধুরী স্বেচ্ছায় মালিকের অজান্তে এ কবিতা ছাপিয়েছেন বলে পুলিশকে অবহিত করেন যদিও এটা সত্য নয়, তথাপি শ্রদ্ধাস্পদ গুণীজনকে গ্রেফতার এড়ানোর কৌশল ছিল এটি। দবির আহমদ সাহেব কয়েকমাস জেল খেটে মুক্ত হন। একুশের প্রথম কবিতা ছাপিয়ে ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। দৃঢ়তা ও সাহস প্রত্যক্ষ করে আপামর জনতা আরেকবার বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এ মহানূভব ব্যক্তিত্বকে।
শৈশব থেকে তিনি ধর্মানুরাগী ছিলেন। একথা পূর্বে বিধৃত হয়েছে। প্রাথমিক হতে কলেজে পড়া অবধি সবসময়ই ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ধর্মীয় কার্যাদি যথাসময়ে নিষ্ঠার সাথে পালন করতেন। কোহিনূর লাইব্রেরি ও কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেস স্থাপন করে লেখক পাঠক ও জ্ঞানচর্চার ধারা রচনা করলেও স্বাধীন মতামত প্রকাশ ও জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহের ব্যাপারে গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনা ও যুক্তিনির্ভর পরামর্শ উপস্থাপন করতে হলে একটি সংবাদপত্র প্রয়োজন, যেখানে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা সম্ভব হবে। এ উপলব্ধি হতে তিনি সাপ্তাহিক কোহিনূর এবং ১৯৬০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদী পত্রিকা বের করেন। ইতোপূর্বে চট্টগ্রামে বহু সংবাদপত্র বের হলেও কোনটি স্থায়ীভাবে টিকে থাকতে পারেনি।
দেনিক আজাদী প্রতিষ্ঠালগ্নে তিনি আপন মুর্শিদ আউলাদে রসূল কুতবুল আউলিয়া হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব হাফেজ সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর দো‘আ প্রার্থনা করেন। হুযুর পত্রিকার গ্রহণযোগ্যতা ও স্থায়িত্বের জন্য দোআ করেন এবং হুজুরের মুরীদানদের সকলকে একখানা পত্রিকা ক্রয় করে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। হুজুর আরো বলেছিলেন চট্টগ্রামে কোন পত্রিকার প্রকাশনা স্থায়ী হয়নি। এ পত্রিকা স্থায়ীভাবে দ্বীন মিল্লাত মাযহাব ও কওমের খেদমত আঞ্জাম দিবে ইনশাআল্লাহ্। অসংখ্য ঘাত-প্রতিঘাতের মুখোমুখি হয়েও বন্ধুরপথ পাড়ি দিয়ে ‘দৈনিক আজাদী’ বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে চলেছে। এ পত্রিকার বৈশিষ্ঠ্য হলো, শরীয়ত তরিকত তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের প্রচার প্রসারে অনন্য ভূমিকা পালন ও লেখক কবি সাহিত্যিক সৃষ্টি করা যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
ইমামে আহলে সুন্নাত শেরে বাংলা আজিজুল হক আলকাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র ওপর ওহাবীদের সশস্ত্র আক্রমণ ও দৈহিকভাবে লাঞ্চিত করার বিরুদ্ধে তিনি তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং আদালতে মামলা চলাকালে সার্বিকভাবে সহায়তা করার ফলে দোষীদের জেল জরিমানা হয়েছিল।
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের খতীব হিসেবে আউলাদে রসূল হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ আবদুল করিম (রাহ.)কে নিয়োগ দেয়া হলে একদল নবী-ওলী দুশমন মুসল্লিদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। তখন ইঞ্জিনিয়ার সাহেব বিজ্ঞপ্তি ছাপিয়ে যৌক্তিক বক্তব্য প্রদান করে মুসল্লীদের শান্ত করেন এবং খতীব সাহেব নির্বিঘ্নে বহু বছর ইমামত ও খেতাবতের দায়িত্ব পালন করেন। ভিক্ষুক আসলে তাকে আজাদী পত্রিকার কতগুলো কপি হাতে দিয়ে এগুলো বিক্রী করে কমিশন নিয়ে জীবিকার্জন করার পরামর্শ দিতেন। এভাবে অনেক পত্রিকা হকার সৃষ্টি করেছেন তিনি।
রেঙ্গুনে গিয়ে তিনি পীর ছাহেব ক্বিবলা সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হিকে চট্টগ্রাম আসার অনুরোধ জানান। ১৯৪১ সালে রেঙ্গুন ত্যাগ করে ছিরিকোট শরীফে প্রত্যাবর্তনকালে হুযুর চট্টগ্রামে সংক্ষিপ্ত অবস্থান করেন। কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেসের ওপর তলায় হুজুর ক্বিবলার অবস্থান ছিল বিধায় এটা খানকাহ শরীফ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখান হতে সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়া তথা সুন্নীয়তের আন্দোলনের গতি সঞ্চার হয়। ১৯৪২ সাল হতে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর হুজুর চট্টগ্রাম তথা পূর্ব পাকিস্তান সফরকালে কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেসের ওপরের তলায় অবস্থান করে শরীয়ত তরীক্বতের যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করতেন। ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের ধার্মিক স্ত্রী হুজুরের খানাপিনা, আগত মেহমানদের আপ্যায়ন প্রভৃতি কাজ অত্যন্ত আগ্রহ ও নিষ্ঠার সাথে সম্পাদন করতেন। হুজুর তাকেও খুবই স্নেহ করতেন। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই ছিলেন ফানফিশ্ শায়খ।
ঐতিহাসিক দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কোহিনূর লাইব্রেরির ওপর তলায় তাঁরই উপস্থিতিতে হতো। তিনি আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট ও জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া পরিচালনা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ একাধিক পদে অধিষ্ঠিত থেকে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন। বছরের পর বছর তিনি ও তাঁর বিদূষী স্ত্রী হুজুরের ও পীরভাইদের খেদমত করেছেন সদা প্রফুল্লচিত্তে। হুজুর সিরিকোটি (রাহ.) ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ছাহেবের খেদমত ও দ্বীন-মাযহাব মিল্লাতের প্রচার-প্রসারে নিঃস্বার্থ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রিয় মুরীদানকে সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়ার খেলাফতদানে গৌরবান্বিত করেন। নিরহংকার, সদা হাস্যোজ্জ্বল অভিব্যক্তি, স্নেহ-মমতায় কথোপকথন, প্রচার-বিমুখ কার্যক্রম তাঁকে পীর ভাইসহ সকল পেশা শ্রেণির মানুষের নিকট অত্যন্ত প্রিয়ভাজন করে তুলেছিলেন। কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবি, ব্যবসায়ী সরকারি আমলা থেকে শুরু করে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে এমন কি ভিক্ষুক পর্যন্ত সকলের নিকট ইঞ্জিনিয়ার সাহেব পরম শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। মুরুব্বীদের নিকট শুনেছি, আমি নিজেও প্রত্যক্ষ করেছি যে, তিনি যার সাথে কথা বলতেন, সেই তাঁকে আপন মনে করতেন। সকলের সুখ-দুঃখের সাথী হিসেবে তিনি নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। হুজুর ক্বেবলার সফরসঙ্গী হয়ে হজ্বব্রত পালন করেছেন। ১৯৫৮ সালে হুজুর দৌহিত্র সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী ও একমাত্র ছাহেবজাদা গাউসে জমান হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হিকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রাম সফরে এসে প্রায় ৬/৭ মাসব্যাপী অবস্থান করেন। হুজুর এখান হতেই ৩০/৩৫ জন মুরীদসহ ষ্টীমারযোগে হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে জেদ্দা যাত্রা করেন। হুজুর তৈয়্যব শাহ্ দেশে ফিরে যান। এটাই ছিল সিরিকোটি (রাহ.)’র শেষ হজ্ব এবং চট্টগ্রাম তথা পূর্ব পাকিস্তানে আখেরী সফর। হজ্ব শেষে হুজুর স্বদেশ (পেশোয়ার) প্রত্যাবর্তন করেন। সফরসঙ্গী মুরীদানবৃন্দ ষ্টীমার যোগে চট্টগ্রাম ফিরে আসেন। হুজুর দেশে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হুজুরকে চট্টগ্রাম আনার জন্য ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের নেতৃত্বে ৮/১০ জন নেতৃস্থানীয় পীরভাই সিরিকোট শরীফ গমন করেন। কিন্তু হুজুর আসেননি। হুজুর বলেন, মন চায় যাবার জন্য, কিন্তু ওপরওয়ালার হুকুম নেই। সুস্থ হলেই সফরে আসবেন এ রকম কথা বলে ভাইদের বিদায় দেন। মনঃক্ষুন্ন হয়ে ভাইয়েরা হুজুরের দোয়া নিয়ে চট্টগ্রাম ফিরে আসেন। তিনি প্রাণপ্রিয় মুর্শিদকে আনতে না পেরে খুবই ব্যথিত হয়েছিলেন। বুঝতে বাকি রইলোনা যে, হুজুর তাঁদের ছেড়ে চলে যাবেন।
১৯৬১ সালের ২২ মে শাহেনশাহে সিরিকোট আওলাদে রসূল, সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি ইন্তেকাল করেন (ইন্না……রাজেউন)। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব মুর্শিদের বিয়োগ ব্যথায় শোকাতুর হয়ে পড়েন।
মুর্শিদের সাথে বিচ্ছেদ তাঁকে খুব বেশী ব্যথিত করেছিল। অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে ১৯৬২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এ মহান ব্যক্তিত্ব সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়ার উজ্জ্বল নক্ষত্র পীরভাইদের নয়নমণি সাধারণ মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু সমাজ সচেতন আলোকিত মানুষ শ্রদ্ধাস্পদ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজেউন)
মানবসেবা ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। একথা তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস ও চর্চা করতেন কখনো নিরবে নিভৃতে, কখনো প্রকাশ্যে। ১৯৩৮ সালে তুরস্কে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প হলে হাজার হাজার মানুষ মারা যান এবং বেঁচে যাওয়া মানুষের চরম হতাশায় অসহায় হয়ে পড়লে ইঞ্জিনিয়ারের দরদী মন কেঁদে উঠে। তিনি তুরস্কের দুর্গত মানুষের সাহায্যার্থে রাজপথে নেমেছিলেন সাহায্য সংগ্রহে। খান বাহাদুর ফরিদ আহমদ চৌধুরী, মুসলিম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহমান এম.এ.বিটি ও ডা. আবুল হাশেমসহ অনেক বিশিষ্টজন তার সাথে ঐকব্যদ্ধ হয়ে সাহায্য সামগ্রী সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত অর্থ তুরস্কের দুর্গত মানুষের জন্য প্রেরণ করেছিলেন।
১৯৬০ সালের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামসহ দেশের উপকুলীয় অঞ্চলে প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লক্ষ লক্ষ আদম সন্তান মারা যায়। বাড়ি ঘর, সহায় সম্পত্তি সবকিছু হারিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ খোলা আকাশের নিচে অনাহারে অর্দ্ধাহারে পড়ে থাকে। মানবসেবক ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক কালবিলম্ব না করে চট্টগ্রাম রেডক্রস, মুসলিম লীগ চট্টগ্রাম চেম্বার ও আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া প্রভৃতি সংগঠনসমূহ একত্রিত করে তাঁরই উদ্যোগে ও নেতৃত্বে ত্রাণ কমিটি গঠন করেন। মরহুম জানে আলম দোভাষ, আবদুল গণি দোভাষ ও আলহাজ্ব মুন্সেফ আলীর নিকট হতে ৫টি ষ্টীমার বোঝাই চাল ডাল তেল শাড়ি, লুঙ্গিসহ মরহুম এডভোকেট কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে দক্ষিণ চট্টগ্রামের দুর্গত এলাকায় পাঠানো হয়। রিলিফ সামগ্রীর খাজাঞ্ঝীরূপে আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়ার সদস্য শেখ আফতাব উদ্দিন (শেখ সৈয়্যদ ক্লথ ষ্টোরের মালিক), ইসলাম ক্লথ (ষ্টোরের মালিক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম) ন্যাশনাল প্রেসের মালিক আবদুর রহিম, রাউজানের মাওলানা মুহাম্মদ জাকারিয়া, কাজির দেউরীর আবদুস সালাম, পাথরঘাটার আবদুল জলিল, জাকের হোসেন, মুহাম্মদ শরীফ, হাজী আবুল কাশেমসহ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার ২০ জন ছাত্রকে দূর্গত এলাকায় পাঠিয়ে ছিলেন। ‘মানুষ মানুষের জন্য’ ‘আর্ত মানবতার সেবাই পরম ধর্ম’ একথা তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪০ সালে চট্টগ্রামে যে লঙ্গরখানা খোলা হয়েছিল তারও অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন এ মানবপ্রেমিক।
মেধা ও মননের সংমিশ্রণে তিনি সৃজনশীল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। জ্ঞান নির্ভর সমাজ নির্মাণে আল্লাহ্-রসূল প্রেমে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষে তাঁর সমুদয় কর্মকান্ড আবর্তিত হতো। নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী, জনদরদী, ফানাফিশ্ শায়খ, সহজ-সরল, নিষ্ঠাবান, ধার্মিক ব্যক্তি আলহাজ্ব ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক বহুমুখি প্রতিভাসম্পন্ন এক বিরল ব্যক্তিত্ব। তিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের আদর্শ ব্যক্তি। তাঁর সমকক্ষ মানুষ এখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
তিনি শুধু লাইব্রেরি, ছাপাখানা, পত্রিকা, মাদরাসা, খানকা প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি নিজেও একজন সুলেখক, সমালোচক, সংবাদকর্মী হিসেবে সমধিক পরিচিত। মহাকবি স্যার আল্লামা ইকবালকে নিয়ে তাঁর লেখা কবিতার কয়েকটি চরণ:
কবি ইকবাল তুমি দিকপাল
বলিয়াছে কতজনে
আমি শুধু রূপ অভিনব,
আকিঁয়াছি মনে মনে।
ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের লিখিত ১৭টি বইয়ের নাম পাওয়া যায়। ১. প্রাথমিক ভূগোল বিজ্ঞান ও গ্রাম্যজীবন। ২. রচনার প্রথম ছড়া ৩. উর্দু প্রাইমার, ৪. বয়েস ইংলিশ গ্রামার, ৫. ফাস্ট বুক অব ট্রান্সলেশন, ৬. চাইল্ড পিকচার ওয়ার্ড বুক, ৭. ব্যাকরণ মঞ্জুষা, ৮. তাওয়াফ (হজ্বের বই) ৯. ঝলমল (শিশুপাঠ), ১০. মুসলিম বাল্য শিক্ষা, ১১. সহজ পাঠ (শিশু পাঠ)। এ ছাড়া সাপ্তাহিক কোহিনূর ও দৈনিক আজাদীতে অসংখ্য প্রবন্ধ সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে। কোহিনূর পত্রিকার ১ম সংখ্যা ওরছুন্নবী (মিলাদুন্নবী) উপলক্ষে ‘বিশ্বনবী সংখ্যা’ নামে বের করা হয়েছিল। উপমহাদেশের কবি সাহিত্যিক, রাজনীতিকদের অনেকের সাথেই তাঁর সখ্যতা ছিল।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি আপন মুর্শিদের দিকনির্দেশনা, হেদায়ত আমল করে কাটিয়েছেন। মরহুমের একমাত্র পুত্র দৈনিক আজাদীর মালিক সম্পাদক এম এ মালেক আনজুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সম্মানিত উপদেষ্টা, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ও তাঁর বিদূষী স্ত্রী মালেকা বেগমকে জামেয়া মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আনজুমান ও জামেয়া তথা সিলসিলার প্রচার-প্রসারে তাঁর অমূল্য অবদানের কারণে তিনি আমাদের গৌরবোজ্জ্বল পথিকৃৎ। তাঁর আদর্শ অনুসরণে আমরা হতে পারি আল্লাহ্-রসূল (দ.)এর নৈকট্যধন্য ও মুর্শিদে বরহকের যোগ্য মুরীদ। আমাদের এ অভিভাবকের দরজা আল্লাহ্ জাল্লাশানুহু বুলন্দ করুন। কবির ভাষায় বলা যায়!
এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ
মরণে তাহা তুমি করে গেলে দান।’’
আল্লাহ্ আমাদের সকলকে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে অনুসরণ করার তওফিক দিন। আ-মী-ন।